দেশের চারজন বিশিষ্ট রাজনীতিক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকে নজিরবিহীন বর্বরতা বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, এ হামলা ক্ষমার অযোগ্য। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ফারুকের ওপর হামলাকারীদের বিচার না হলে পুলিশের ওপর থেকে জনগণের আস্থা চলে যাবে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ফারুকের ওপর হামলা পুলিশি গুণ্ডামি। জাসদের সভাপতি আ স ম রব বলেছেন, ফারুকের ওপর হামলা ক্ষমার অযোগ্য, নিষ্ঠুর ও নির্মম।
দোষী পুলিশের বিচার চাই— বি. চৌধুরী : বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি নির্যাতনকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তদন্ত করে দু্রত বিচার দাবি করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপের ওপর পুলিশের এ ধরনের জুলুম-অত্যাচার প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে এমন দানবিক ঔদ্ধত্য প্রকাশের সাহস পায় কোথায়? পুলিশের কর্তব্য জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা রক্ষা করা, লাঞ্ছিত করা নয়। এর মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন কলঙ্কিত হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার না হলে পুলিশের ওপর থেকে জনগণের আস্থা চলে যাবে। এতে সরকারের অস্তিত্বই সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়বে।
ভীষণ কষ্ট পেয়েছি— ড. কামাল : বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে সংবিধান প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন আমার দেশকে বলেন, যেখানে আমাদের দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী সেখানে পুলিশের এ ধরনের কার্যকলাপ এবং ভূমিকা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে থাকে তাহলে তার ব্যাপারে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। জয়নাল আবদিন ফারুককে পুলিশ যেভাবে লাঠিপেটা করেছে তা টেলিভিশনে দেখে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। তাই এ ঘটনাকে তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ফারুকের ওপর হামলা পুলিশি গুণ্ডামি— কাদের সিদ্দিকী : হরতালে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকে পুলিশি গুণ্ডামি বলে উল্লেখ করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল দুপুর ২টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কাদের সিদ্দিকী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন ঘটনা বিরল। পুলিশের এ আচরণ সরকারি কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে না। ফারুকের আহত হওয়ার ঘটনাকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাজানো নাটক বলা হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের এ নেতা বলেন, এমন বর্বরোচিত নাটকের প্রয়োজন নেই। যারা এ ঘটনাকে নাটক বলছে তাদের উচিত এমন বর্বর নাটকে নিজে অংশ নেয়া। তাহলে বুঝবে এটা কতটা ভয়ানক।
ফারুকের ওপর হামলা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও থাকবে। বিরোধী দল নানা দাবিতে আন্দোলন করবে। আন্দোলন ঠেকানোর নামে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের ওপর নির্মম নির্যাতন সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনা মেনে নেয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, বিএনপিসহ চারদলের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন বুধবার সকাল ৭টায় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে পুলিশ বেধড়ক পেটায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে। এতে তার মাথা ফেটে যায়। বর্তমানে তিনি গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছে পুলিশ।
ফারুকের ওপর পুলিশি হামলা ক্ষমার অযোগ্য— রব : বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের হামলাকে ক্ষমার অযোগ্য, নিষ্ঠুর ও নির্মম ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। গতকাল গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ফারুককে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, গণতন্ত্রের এখন প্যান্ট খোলা বাকি আছে।
বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। যেদিন তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেদিনই তাকে রাজনৈতিক বিরোধের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য কাজ করার দীক্ষা তাকে নিতে হবে।
সরকার যদি আগামী আড়াই বছরে এ অবস্থার উন্নতি করতে না পারে তবে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি