About

ABC Radio

Blogger news

দুর্নীতি : সড়ক ও রেল খাতে অর্থ দিতে চায় না বিশ্বব্যাংক

দুর্নীতি : সড়ক ও রেল খাতে অর্থ দিতে চায় না বিশ্বব্যাংক

কাদের গনি চৌধুরী
দুর্নীতির কারণে সড়ক এবং রেল উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে চাইছে না বিশ্বব্যাংক। ফলে ৩০টিরও বেশি প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার চেষ্টা করেও অর্থছাড় করানো সম্ভব হয়নি। এমন একটি প্রকল্প হচ্ছে রেলওয়ের ‘আখাউড়া- লাকসাম সেকশন ডাবল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক এ খাতে প্রতিশ্রুত অর্থ দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
সড়ক ও রেল বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান এম. এমদাদুল হক সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়াকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে মডার্নাইজেশন’ শীর্ষক আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় ‘আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডাবল লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক থেকে ২২ মে ২০১১ তারিখের চিঠিতে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে মডার্নাইজেশন’ প্রকল্পটির জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সম্ভব হবে না মর্মে অবহিত করে এর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনটি সম্পূর্ণ ডাবল লাইনে উন্নীত করার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রকল্পটির জন্য অন্য কোনো আগ্রহী দাতা সংস্থার অর্থায়ন সংগ্রহের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রস্তাব পেশ করেছে। গত ৯ জুন চিঠিটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের হস্তগত হয় বলে সূত্র জানায়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
রেলওয়ের আরেকটি প্রকল্প ছিল ধীরাশ্রম (টঙ্গী) আইসিডি উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পটিও বাস্তবায়নের কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক এ খাতেও প্রতিশ্রুত অর্থ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেয়া হয় বিশ্বব্যাংকের অর্থ সাহায্যে। ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য বিশ্বব্যাংক ৮শ’ কোটি টাকাও দেয়। পরবর্তী সময়ে শুরুতেই দুর্নীতি দেখে বিশ্বব্যাংক এ টাকা ফিরিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, এ প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় পরামর্শকের পেছনে। এ অর্থ বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি।
বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়ায় সরকার নিজস্ব ৯০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ হাতে নেয়। কাজ শেষ করার জন্য ৩০ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কাজের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি চার অংশে বিভক্ত এই কাজের তিনটি অংশের কাজে হাতই দেয়া হয়নি। রায়মনি থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার অংশে ৩টি সেতু, ৩৫টি বক্স কালভার্ট, ২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কথা। কয়েকটি স্থানে পাইলিং কাজ হচ্ছে ধীর গতিতে। কোথাও কোনো মালামাল নেয়া হয়নি। জয়দেবপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর অংশে ১২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার কাজে এখনও হাত দেয়নি ঠিকাদার। সালনা রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ২৬টি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ জরুরি হলেও সার্ভের কাজই এখনও শেষ করা হয়নি। যন্ত্রপাতি ও মালামাল নেয়া হয়নি। গাছ অপসারণের কাজেও হাত দেয়া হয়নি। অথচ সওজ কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে অর্থের ৬০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ করে দিয়েছে। রাজেন্দ্রপুর থেকে মাওনা অংশে ১৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটারের কাজও শুরু হয়নি। তারা এখনও বেইজ ক্যাম্প স্থাপন, সড়ক সার্ভে ও গাছ অপসারণের কাজ করেনি। একমাত্র মাওনা থেকে রায়মনি পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করা হযেছে। চারটি অংশে বিভক্ত এই কাজে নিয়োজিত চারজন ঠিকাদারের প্রত্যেককে ষাট শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেয়ার পরও কাজের হতাশাজনক অগ্রগতিতে মন্ত্রণালয় থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে সওজ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার ও সওজের ইঞ্জিনিয়ারদের যোগসাজশেই কাজে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ সহজতর ও উন্নত করার জন্যই প্রকল্পটি নেয়া হয়। প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু এ প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারের একটি প্রভাবশালী মহলকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এ কাজ বাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়ায় বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থ ফিরিয়ে নেয় বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়েও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে সরকারের। সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন অর্থমন্ত্রীকে লিখা তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আনেন। আবার বিশ্বব্যাংক প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক স্বচ্ছতা দাবি করেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় এ পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতিশ্রুত প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক অপারগতা প্রকাশ করেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া সাপেক্ষেই তারা এ খাতে ঋণ দেয়ার কথা বলেছে। এর ফলে বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলার আওতায় সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৩০টিরও বেশি প্রকল্পে অর্থ ছাড় করাই সম্ভব হয়নি।
এদিকে অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করাসহ ২৫টি প্রকল্প রয়েছে এ মহাপরিকল্পনায়। বার বার উপস্থাপন করা হলেও এসব প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিশ্বব্যাংকসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা। এদিকে মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পও ফাইলবন্দি হয়ে আছে। এ কারণে ২৬ জুন ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও সুলতানা কামাল সেতু দিয়ে অবাধে চলাচল করতে পারছে না পর্যাপ্ত যানবাহন।
সূত্রে জানা গেছে, ১৭টি জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করাসহ ২৫টি প্রকল্পের পরিকল্পনা হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। সওজ তার ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২৫০ প্রকল্পের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ২৫ প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে এ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই সরকার প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে যাচ্ছে। জানা গেছে, বিভিন্ন সড়ক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু প্রকল্পে অর্থ সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে এসব প্রকল্পে অর্থ চাওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে এসব প্রকল্প নিয়ে বিপাকে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ১৭ প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও বহদ্দারহাট-তৃতীয় কর্ণফুলী সংযোগ সড়ক চার লেন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অন্যগুলোর মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পথে। অনেক প্রকল্পে আবার সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে। মূল্যায়নের জন্য এগুলো যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, ১৭ জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা, গাজীপুর-আজমতপুর-ইটাখলা, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড ও ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের ডিপিপি তৈরির কাজ মাঠপর্যায়ে শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই ডিপিপি তৈরি হবে ময়মনসিংহ-জামালপুর-শেরপুর, দৌলতদিয়া-মাগুরা-খুলনা, হাটিকামরুল-রংপুর, খুলনা-মংলা সড়কের। টঙ্গী-জয়দেবপুর, হাটিকামরুল-বনপাড়া-রাজশাহী, কাঁচপুর-সিলেট-তামাবিল, বনপাড়া-ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-যশোর সড়কেরও ডিপিপি তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সওজের একটি সূত্র জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতেই এসব জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলের সহ-সভাপতি ইসাবেল গুয়েরেরো অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করে বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এই খাতে তারা আর বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়ে দেন।
তবে বিশ্বব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের নৌ খাতের উন্নয়নে সহায়তা দিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ করার পর অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব দুর্নীতির সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও জড়িত। কারণ তারা এসব কাজ অনুমোদন করেছে। এরপরও বিশ্বব্যাংককে এই খাতে অর্থায়ন করার আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)