বরিশাল বিএম কলেজের একছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। গতকাল এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে খুলনায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাতিজির বাসায় কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে এক শিশু গৃহকর্মী। লাশের শরীরে আঘাত ও গোপনাঙ্গে ক্ষত দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাকে যৌন নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। বিস্তারিত আমার দেশ-এর আঞ্চলিক অফিসের পাঠানো খবর:
বরিশাল : ধারণকৃত নগ্ন ভিডিও চিত্র ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় আত্মহত্যা করেছে বিএম কলেজের একছাত্রী। সোমবার মধ্য রাতে সুপর্ণা নামের ওই ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় গতকাল পুলিশ নজরুল ইসলাম নয়ন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সম্প্রতি বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে একের পর এক এ ধরনের ভিডিও চিত্র বাজারজাতকরণের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন অনেকেই।
একাধিক সূত্র জানায়, আত্মহননকারী সুপর্ণা বালা বিএম কলেজের গণিত বিভাগের ৩য়বর্ষের ছাত্রী। তার স্বামী কামনাশীষ মণ্ডল একই কলেজের পদার্থবিদ্যা মাস্টার্সের শেষ বর্ষের ছাত্র। তাদের উভয়ের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার পুইজেলা গ্রামে। তারা নিজেদের পছন্দে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল। নগরীর কলেজ এভিনিউ সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থেকে লেখাপড়া করত এ দম্পতি।
সুপর্ণা বালার সঙ্গে সহপাঠী ছাত্রলীগ কর্মী নজরুল ইসলাম নয়নের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে পরকীয়ার প্রেমের সম্পর্কও ছিল বলে গুঞ্জন ছিল। সম্প্রতি সুপর্ণা বালার একাধিক নগ্ন ছবি কলেজ ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন জায়গায় মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় নয়ন। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সুপর্ণা বালা। এ নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহ চলছিল বলে জানা যায়। সোমবার গভীর রাতে সুপর্ণা বালা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। মধ্য রাতে দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ গতকাল এ ঘটনায় বিএম কলেজের ছাত্র নজরুল ইসলাম নয়নকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি ভোলা জেলায়। সুপর্ণার মামা এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
কামনাশীষ মণ্ডল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পুইজেলা গ্রামের সন্তান। তার বাবা পরিমল মণ্ডল পাশের দেবহাটা উপজেলার সেন্ট্রাল স্কুলের শিক্ষক। তার অপর এক ছেলে স্নেহাশিষ মণ্ডল কয়েক মাস আগে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে মারা যান। তিনি আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের ২ দিন আগে নিখোঁজ হন তিনি। একদিন পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী ট্যাংকিতে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। উদ্ধার শেষে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। গতকাল বিকালে শিক্ষক পরিমল মণ্ডলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ছেলে নিজেদের পছন্দে সুপর্ণাকে বিয়ে করলেও তারা পরবর্তীতে মেনে নিয়েছিলেন। শোকাহত পরিমল মণ্ডল তার পুত্রবধূর অকাল মৃত্যুতে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেন। আত্মহননকারী সুপর্ণা বালাও একই গ্রামের মেয়ে। সুবল চন্দ্র বাছাড়ের ২ মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে সুপর্ণা বড়। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে পরিবারের সবাই।
এ ঘটনায় কয়েক দিন আগে সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে দুই নরপশুর হাতে ধর্ষণের শিকার হয় এক স্কুলছাত্রী। ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে তা বাজারজাতও করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে মরিয়ম বেগম নামের এক তরুণীকে গ্রেফতার করলেও ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে পারেনি এখনও। নানার বাড়ি গিয়ে খালে গোসল করার সময় সহায়তাকারী মরিয়ম তাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয়। আগে থেকে ওই ঘরে থাকা পূর্বচর আইচা গ্রামের মৃত আমজাদ হাওলাদারের ছেলে জসিম ও আমির হোসেনের ছেলে অনিক পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। আর এ ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রানা নামের অপর এক যুবক। ধর্ষণের পর বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দেয়া হয়। পরে ধর্ষণের ওই ভিডিও চিত্র বাজারে ছেড়ে দেয় ধর্ষকরা।
গত সপ্তাহে নগরীতে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও চিত্রধারণ করায় সরকারি বরিশাল কলেজের একছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নগরীর কাটপট্টি রোডের সিয়াম ফার্মেসির মালিক নুর মোহম্মদের ছেলে সাইফুলের সঙ্গে ধর্ষিতার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। গত শনিবার বিকালে মোবাইলে ধারণকৃত আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে নগরীর বগুরা রোডের আবাবিল নামের একটি আবাসিক হোটেলে যেতে বাধ্য করে। সেখানে সাইফুল তাকে আবার ধর্ষণ ও এসব দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে। ছাত্রীটি হোটেল থেকে বের হয়ে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ মোবাইলসহ সাইফুলকে আটক করে।
অপরদিকে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীর যৌন নিপীড়নের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে সিডি আকারে বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হাসান নামের এক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা যায়, হাসান দীর্ঘদিন ধরে ওই স্কুল ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এক পর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলছাত্রীকে শহরের একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে নেশাজাত দ্রব্য খাইয়ে হাসান তাকে ধর্ষণ করে। একই সঙ্গে সে এ নগ্ন দৃশ্য ভিডিও করে ওই ছাত্রীর বাবার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় হাসান ধারণকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।
এদিকে এ ধরনের একাধিক ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ও প্রকাশের ঘটনা যুব সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের ঘটনা কারও জন্য কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে গণসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মিন্টু বসু বলেন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের পাশাপাশি আপত্তিকর ভিডিও চিত্র ধারণ ও প্রকাশ উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হলেও টনক নড়ছে না প্রশাসনের। পুলিশ প্রশাসনের এক ধরনের উদাসীনতার কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে সমাজকে সুস্থ্য রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
খুলনা : খুলনার দৌলতপুর থানার আড়ংঘাটার এলাকার ফাতেমা (১২) ঢাকায় কাজের জন্য গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। যৌন নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার মা শরিফা বেগম। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ফাতেমার পরিবারিক সূত্র জানায়, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলী মাস্টারের ভাতিজি রুম্পার বাসায় কাজ দেবে বলে ৭-৮ মাস আগে আড়ংঘাটার আলতাফ হোসেনের মেয়ে ফাতেমাকে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নিয়ে যায়। এরপর গত রোববার দুপুরে দৌলতপুর থেকে দু’জন মহিলা ফাতেমার মা শরীফা বেগম ছুটুর কাছে এসে বলে, তার মেয়ে অসুস্থ। এখনই তাকে ঢাকায় যেতে হবে।
রোববার রাতে ছুটুকে ঢাকা নিয়ে ধামরাইল থানা এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। পরে বিকালের দিকে ছুটুকে বলা হয়, তার মেয়ে ফাতেমা স্ট্রোক করে মারা গেছে। পরে সোমবার রাত ৯টায় ফাতেমার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে আড়ংঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে তার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়।
গতকাল আড়ংঘাটা জামে মসজিদে জোহরবাদ ফাতেমার নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় মহেশ্বপাশা কালীবাড়ি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অপরদিকে ফাতেমাকে গোসল করানোর সময় উপস্থিত রাহেলা বেগম, জোহরা বেগম, সৌরভী বেগম সাংবাদিকদের জানান, লাশের হাত, পা, গলা, বুক ও যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। যৌনাঙ্গ ফোলা থাকায় যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছে।
ধামরাই থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। চিকিত্সক জানান, ফাতেমাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। লাশের অভিভাবক না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে থানা গ্রহণ করে।
বাগেরহাট : অবশেষে বখাটে যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাগেরহাট সদর থানা পুলিশ পাতিলাখালী এলাকা থেকে বখাটে আলতাফ হোসেন পিকলুকে আটক করে। সদর উপজেলার এক পল্লীতে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় সদর থানায় মামলা করা হয়। সোমবার বিকালে আটক আলতাফ হোসেন পিকলুকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাট সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবু জিহাদ জানান, সদর উপজেলার পাতিলাখালী গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে আলতাফ হোসেন পিকলু একই এলাকার মহাদেব মণ্ডলের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আলতাফ ওই ছাত্রীকে অপহরণের হুমকি দেয়। এ ঘটনা শনিবার ওই ছাত্রীর বাবা মহাদেব মণ্ডল আলতাফ হোসেনের চাচা মোকছেদুর রহমানকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়। পরে স্থানীয় বটতলা এলাকায় একটি দোকানের সামনে মহাদেব মণ্ডলকে আলতাফ হোসেন পিকলু বেধড়ক পেটায়। এ ঘটনায় মহাদেব মণ্ডল বাদী হয়ে লম্পট আলতাফ হোসেন ওরফে পিকলুর বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় একটি মামলা করে।