About

ABC Radio

Blogger news

জনসংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

জনসংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার
দেশের পঞ্চম আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে আদমশুমারির প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়। এ রিপোর্ট দেশব্যাপী ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত? কারণ, জাতিসংঘের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০১০’-এ বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার। আবার গত বছরের জুলাই মাসে আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৮৮৩ জন।
গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার পঞ্চম আদমশুমারির ফলাফল প্রকাশ করেন। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা ১০ বছর আগের চেয়ে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ কম। বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৬৪ জন।
প্রাথমিক ফল অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার পুরুষ এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার নারী। ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার। আদমশুমারির রিপোর্টে এবার উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পুরুষ ও নারীর সংখ্যায় সাম্য। এবার নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ২ লাখ বেশি। এর আগে ২০০১ সালে ১০০ জন পুরুষে ১০৬ জন নারী ছিল।
বিভাগগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সিলেটে সবচেয়ে বেশি, ২ দশমিক ১ শতাংশ। ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার নিয়ে এরপরই আছে ঢাকা। চট্টগ্রামে বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বরিশালে এ হার শূন্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের এলাকা ত্যাগকেই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ঢাকা জেলায়। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৮ হাজার ১১১ মানুষের বাস। সবচেয়ে কম জনঘনত্ব বান্দরবানে, ৮৬ জন। শহরের জনসংখ্যা বেশ বেড়েছে বলে আদমশুমারি রিপোর্টে বলা হয়।
দেশে মোট খানার (এক রান্নায় যতজন খায়) সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ ৬৮ হাজার। প্রতিটি খানায় সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ জন।
২০০১ সালের আদমশুমারিতে দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার। ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৩৪ জন।
দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সরকার আদমশুমারি করে। গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল-ইউএনএফপিএ তাদের হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ দেখালে তার কঠোর সমালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী।
তখন ইউএনএফপিএ জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ দেখালেও ২০০১-এর আদমশুমারির তথ্য হালনাগাদ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর জানায়, জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৬৬ লাখ। পঞ্চম আদমশুমারিতে এ সংখ্যা
আরও ৪৩ লাখ কম।
ইউএনএফপিএ তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪০ শতাংশ দেখিয়েছিলো। অন্যদিকে সরকারি হিসাবে তা ছিল ১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
পঞ্চম আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফলে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপে গতিহীনতার মধ্যেও এ ফলাফল এসেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেছেন, প্রাথমিক এ ফলাফল নিরীক্ষণের পরই আগামী নভেম্বরে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে।
দেশকে ১৩০টি শুমারি জেলায় ভাগ করে চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত জনগণনা করা হয়। একজন করে শুমারি সমন্বয়কারী প্রত্যেক শুমারি জেলার কাজ তদারক করেন। এ কাজে যুক্ত ছিলেন প্রায় চার লাখ ব্যক্তি। এতে ব্যয় হয়েছে আড়াইশ’ কোটি টাকা। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক মানুষই এ শুমারি থেকে বাদ পড়েছেন।
তবে আদমশুমারির প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দে বলেন, ‘আমরা যা পেয়েছি তা-ই তুলে ধরেছি।’ আর পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শাহজাহান আলী মোল্লা এবারের শুমারিকে অন্যগুলোর চেয়ে পরিশুদ্ধ বলে দাবি করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন্স সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক একেএম নুরুন্নবী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘শহর ও গ্রামের জনসংখ্যার ধরন নিয়ে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। এর সঙ্গে আশ্চর্য হয়েছি, নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান দেখে।’
এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক শাহজাহান আলী। তার বক্তব্য চাকরিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানকারীরা আদমশুমারিতে বাদ পড়েছে। গত ১০ বছরে ৪৪ লাখের বেশি মানুষ প্রবাসে ঠাঁই নিয়েছে, আর এর ৯৮ শতাংশই পুরুষ বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ২০০১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৯০ লাখ। ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে তা এখন ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার।
সিলেটের জনসংখ্যা ৭৯ লাখ ৪০ হাজার থেকে বেড়ে ৯৮ লাখ হয়েছে। বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ১ শতাংশ।
চট্টগ্রামে জনসংখ্যা ২০০১ সালে ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ। তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ। বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
খুলনায় জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০০১ সালে ছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ। এখন তা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ।
রাজশাহী ২০০১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ। এখন তা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ। বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ।
রংপুরে জনসংখ্যা ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়ে ১ কোটি ৩৮ লাখ থেকে ১ কোটি ৫৬ লাখ হয়েছে।
১০ বছরে বরিশালের লোকসংখ্যা ৮১ লাখ ৫০ হাজার থেকে মাত্র ২০ হাজার বেড়েছে।
দেশের সর্বশেষ ৫ম আদমশুমারিকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আদমশুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
দেশে ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনার শুরুতেই অনেকে বাদ পড়ার অভিযোগ আনেন। কিন্তু পরিসংখ্যান ব্যুরো তাতে কান দেয়নি।
আদমশুমারির কাজ পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়, তার সদস্যরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হওয়ার কারণে অনেকে বাদ পড়েন বলে জানা যায়। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাসায় যাননি গণনাকারীরা।
এদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিসংখ্যান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রীতিমত যাচ্ছেতাই অবস্থা চলছে। একেক সংস্থার পরিসংখ্যান একেক রকম। আর সর্বশেষ নজির এবারের জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) পরিসংখ্যান।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) পক্ষ থেকে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০১০’-এর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার। অথচ এ বছরের জুলাই মাসে আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৮৮৩ জন।
এর আগে ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি। আবার ২০০৭ সালে সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি। একই বছর (২০০৭) জাতিসংঘে এই সংখ্যা দেখানো হয় ১৫ কোটি ৯০ লাখ। একইভাবে ২০০৬ সালে ইউএনএফপিএর পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ, কিন্তু সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে ছিল ১৪ কোটি ৭০ লাখ। এছাড়া ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরো এবং আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের পৃথক পরিসংখ্যানে ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ। অন্যদিকে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে ছিল ১৪ কোটি ২০ লাখ। ইউএনএফপিএ ২০০৬ সালের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৪০ লাখ দেখানো হলেও এই সংখ্যাটি ২০০৩ সালে বাংলাদেশের এই জনসংখ্যা দেখিয়েছিল ১৫ কোটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, সর্বশেষ ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ওই সময় দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৯০ লাখ। এর আগের আদমশুমারিতে ১৯৯১ সালে ছিল ১১ কোটি ২০ লাখ। অর্থাত্ ওই ১০ বছরে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে জনসংখ্যা বেড়েছিল এক কোটি ৬০ লাখ।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)