কাঁদছে বাংলাদেশ। কাঁদছে আকাশ-বাতাস। মিরের সরাই ট্রাজেডী।
আর তারা কাউকে জ্বালাতন করবেনা, আর তারা সারাদিন একসাথে হৈ চৈ করে মানুষ পুরো পাড়া-গ্রামকে মাতিয়ে রাখবেনা। গতকালই ছিল তাদের শেষ ছুটির ঘন্টা। আজ তারা চলে গেছে আমাদের এ নশ্বর ধরা হতে দুর থেকে বহুদুরে। আর তারা কোনদিন তার মা-বাবাকে বিরক্ত করবেনা, পাড়া বা গ্রামের মানুষ আর তাদের নামে কোন বিচার নিয়ে আসবে না। তারা চলে গেছে সেই মহান বিচারকের কাছে। যেখান হতে কেউ আর ফিরে আসেনা। আসেনাই কোনদিন।
গতকাল সেই ভয়াল ট্রাজেডির দিন। বেলা ১ টার দিকে চট্রগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী গ্রাম এলাকায় প্রায় ৮০ জন স্কুলশিক্ষার্থী বহনকারী ওই মিনি ট্রাকটি (চট্ট মেট্রো-ড ১১-০৩৩৭) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের ডোবায় উল্টে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ট্রাকটি চালাচ্ছিল হেলপার। তার নাম জানা যায়নি। ঘটনার পর পর সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হতাহতরা সকলেই ওই এলাকার মায়ানী, সৈদালী ও আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। স্মরণকালের ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ওই এলাকাসহ পুরো মিরসরাইয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । ঘরে ঘরে চলছে শোকের মাতম। আকাশ-বাতাস যেন শোকে ভাড়ী হয়ে গেছে। সবাই বোবা হয়ে গেছে। কারও যেন কিছুই বলার নেই।
নিহতদের সবাই স্কুলের ছাত্র। তাদের বেশীর ভাগ বয়স ১৩-১৬ বছর। নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত জানা মতে ৫৩ ছাড়িয়ে গেছে।
বাবার কাঁদে পুত্রের লাশ নাকি পাহাড়ের সমান ভারী কিভাবে বহন করবেন বাবা তার পুত্রের লাশ ! কিভাবে মা খাবেন সেই রুইমাছ ! কচুরলতি গলা চুলকানো নিয়ে মায়ের কত চিন্তা, আর তার গলা চুলকাবেনা ! সে আর রুইমাছ, কচুরলতি খেতে আসবেনা ! মা কেমন করে বইবেন এই শোক !
নিহতদের পরিচয়: নিহত ৪৪ জনের মধ্যে ৪২ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো: মধ্যম মায়ানি গ্রামের রিয়াদ (১৪), পিতা নুরুল আফছার; জিল্লুর রহমান (১৫), পিতা মইনউদ্দিন; আরিফ (১৪), পিতা ছাদেকুল ইসলাম; তোফাজ্জল হোসেন (১৩), পিতা জহির আহমদ; তারেক (১৪), পিতা জয়নাল আবদিন; লিটন দাস, পিতা কেশব দাস; সুজন (১৩), পিতা রেদোয়ান; শামসুদ্দিন (১৪), পিতা নবী চাঁন; শরীফ (১৫), পিতা শিহাবউদ্দিন; সানি (১৪), পিতা বাহার; ইফতেখার (১৮), পিতা ফিরোজ; সাকিব (১৪), পিতা ওমর ফারুক; সুজন (১৪), পিতা জহির আহমদ; তারেক (১৪), পিতা আবুল কালাম; মঞ্জুরুল আলম (১৩), পিতা শামসুল হক; রনি (১৪), পিতা আমিরুল হক। পূর্ব মায়ানি গ্রামের সাজু (১৩), পিতা সন্তোষ; পারভেজ (১৫), পিতা ফজলুল করিম; ইমরান (১৪), পিতা আবুল কাশেম; শামসুদ্দিন (১৫), পিতা নূরুল আমিন; শাখাওয়াত হোসেন (১৪), পিতা আনোয়ার হোসেন; সাইফুল (১৩), পিতা নূরুল আলম; রাজীব ওরফে ননাই, পিতা আনোয়ার হোসেন; মইনউদ্দিন (১৩), পিতা মো. জাফর ও জাহিদুল ইসলাম (১৩), পিতা আবু জাফর। পশ্চিম মায়ানির আনোয়ার (৩০), পিতা বদিউল আলম; রুপম (১৩), পিতা ধণেশ চন্দ্র নাথ। পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামের সাইফুল (১৪), পিতা কামাল উদ্দিন। সরকার টোলা গ্রামের বাসু (১৫), পিতা খোকন ও জাহিদুল ইসলাম (১৫), পিতা মীর হেসেন। শেখের তালু গ্রামের রকিবুল ইসলাম (১৫), পিতা আফতাব ও কামরুল (১৫), পিতা আলী হোসেন। কচুয়া গ্রামের মেজবাহ উদ্দিন (১৪), পিতা ফজলুল করিম; জুয়েল (১৪), পিতা হুমায়ুন করিব ও আমিন শরীফ রনি (১৫), পিতা মো. শাহজাহান। মাহান্দাবাদ মাস্টারপাড়া গ্রামের পবনাথ (১৭), পিতা বীরেন্দ্র নাথ; নূর মোহম্মদ রাহাত (১৪), পিতা কবীর মোহাম্মদ; জান্নাতুল ফেরদৌস, পিতা অজ্ঞাত ও আশরাফ (১৪), পিতা নেজাম মিস্ত্রি। দাসপাড়া গ্রামের আনন্দ দাস (১২), পিতা স্বপন দাস ও টিটু দাস (১৫), পিতা দুলাল দাস। মগাদিয়া গ্রামের শুভ (১৩), পিতা শ্রধাম; মিঠু (১৫), পিতা জগন্নাথ।
এর দায় কি জাতী মুক্ত হতে পারবে ? পারবেনা। কারন যে বাহনে ওঠার কারনে তারা আজ অকালে পৃথিবী থেকে চলে গেল তার সেই বাহনটি কি যাত্রী বহনের জন্য অনুমোদীত ? যে ট্রাকটি চালিয়েছিল সে ছিল হেলপার, মানে তার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিলনা। এর দায়ীত্ব কি সরকার ও প্রশান এড়াতে পারেন ? কেন ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন হয় ? শুধু এইটিই নয় এভাবে অনেকে ট্রাক দুর্ঘনটা ঘটেছে যেখানে বহু মানুষ হতা-হয়েছে। এভাবে অবাধে চললে ট্রাফিক পুলিশ ও ট্রাফিক অফিসার তথা স্থানীয় প্রশাসনের দরকার কি ? তারা কি শুধু রাজনৈতিক লিডারদের প্রোটকল ও গোলটেবিল বৈঠক ও ফিতা কেটে মাস পার করে বেতন নেয়ার জন্য ? আমরা এর প্রকৃত জবাব চাই। সরকার আমাদরে কাছে এ জবাব দিতে বাধ্য। আমরা জাবাব চাই। আমরা এর সঠিক পদক্ষেপ চাই। আজকের ঘটনার দায় সরকার তথা স্খানীয় প্রশাসন মোটেই এড়াতে পারেনা, পারবেনা।
১২/০৭/২০১১।
লেখক আমিন আহম্মদ
- আমিন আহম্মদ -এর ব্লগ
- ৫১ টি মন্তব্য
- ১২ জুলাই ২০১১, ১৫:৩১
- সমাজ
প্রিন্ট করুন
- ৫১ টি মন্তব্য
প্রামাণিক জালাল উদ্দিন১২ জুলাই ২০১১, ১৫:৪৩
হৃদয়বিদারক ঘটনাটির জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।সাইফ সাইমুম১২ জুলাই ২০১১, ১৫:৫০
আমিন ভাই, পোস্টটা পড়ে আমি কাঁদছি, সত্যিই আমি কাঁদছি । কাল থেকে এই দূর্ঘটনা নিয়ে অনেক পোস্ট এসেছে ব্লগে । কিন্তু আমি একটা পোস্টও পড়িনি । কারণ ওরকম খবর পড়ে চোখের পানি সামলে রাখা কষ্টকর । কিন্তু এই পোস্টটি সঞ্চালক নির্বাচিত হওয়ায় পড়তে বাধ্য হলাম । আর তাতেই আমার কান্না চলে এলো । ২০০৯ এর শেষ দিকে সড়ক দূর্ঘটনায় আমার খুব প্রিয় একজনকে হারিয়েছি । তাই সড়ক দূর্ঘটনার খবর দেখলেই আমার তার কথা মনে পড়ে যায় । যার কারণে আমি কান্নাটা সামলে রাখতে পারিনা । পরিশেষে নিহতদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করি । আর দোয়া করি আল্লাহ সবাইকে নিরাপদে রাখুন । ধন্যবাদ ।হোসনে১২ জুলাই ২০১১, ১৬:০৪
হে আল্লাহ তাদের পরিবার গুলোকে সহ্য করার শক্তি দান কর[-Oমোঃ শামসুল আরেফিন১৩ জুলাই ২০১১, ০৮:১০
আমরাও দোয়া করি।আলইমরান ১২ জুলাই ২০১১, ১৬:০৬
আমার মেয়েটা দুদিন ধরে আমার কাছ থেকে একটু দূরে আছে। আজ সকালে পত্রিকায় খবরটা পড়ার পর আমি সোজা চলে গিয়েছিলাম ওর কাছে। ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদেছি কিছুক্ষন। ও ছোট মানুষ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। নিহতদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করি । আর দোয়া করি আল্লাহ সবাইকে নিরাপদে রাখুন । ধন্যবাদ ।আলইমরান ১২ জুলাই ২০১১, ১৬:২৫
হাসনা-হেনা১২ জুলাই ২০১১, ১৬:২৮
পোষ্টটাকে স্টিকি করার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।নয়োনিকা নদী১২ জুলাই ২০১১, ১৬:৪৬
অসম্ভব বেদনাদায়ক।মাহমুদা সোনিয়া১২ জুলাই ২০১১, ১৮:০৪
আহারে বাছারা আমার! খেলা দেখতে গেলা ফিরে আসলা লাশ হয়ে!!!! আল্লাহ্ এই শোক বহন করার শক্তি দিক সবাইকে।সিলভিয়া চৌধুরী১২ জুলাই ২০১১, ১৮:১০
এ ধরনের দূর্ঘটনা মেনে নেয়া কষ্টকর। এর প্রতিরোধের জন্য - শিক্ষাবিদ, পিতা-মাতা, মন্ত্রী, ও পত্রিকা সম্পাদকদের পরামর্শ নিয়ে গণ-উদ্যোগ ও একটি আইন পাশ এবং প্রয়োগের ব্যাবস্হা করা। স্হানীয় নয় - "জাতীয় শোক" ঘোষনা করা হোক।মিনহাজ আহমেদ১২ জুলাই ২০১১, ১৮:২৭
কথাটি আক্ষেপে বলতেই হচ্ছে। ড্রাইভারের শাস্তি হওয়া উচিত এটাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু আমিতো ড্রাইভারের কোন দোষ দিব না। দোষ হল সরকারের। আমাদের দেশের সবকটি সরকার গদিতে এসছে নিজেদের অর্থ বানাতে। এরা জনগনদের বারে বারে ধোকা দিয়ে গদিতে আসে আর জনগনদের দেয় ধোকা। সরকার সব আলতু ফালতউ ব্যাপার নিয়ে সময় নষ্ট করছে অথচ সরকারের কি কোন আইন আছে যে কারা কারা গাড়ী চালাতে পারবে আর কোন কোন যানবাহন যাত্রী উঠাতে পারবে? অকর্মর ঢেকি হল আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী।দোয়েল১২ জুলাই ২০১১, ২০:৪২
বাবার কাঁদে পুত্রের লাশ নাকি পাহাড়ের সমান ভারী কিভাবে বহন করবেন বাবা তার পুত্রের লাশ ! কিভাবে মা খাবেন সেই রুইমাছ ! কচুরলতি গলা চুলকানো নিয়ে মায়ের কত চিন্তা, আর তার গলা চুলকাবেনা ! সে আর রুইমাছ, কচুরলতি খেতে আসবেনা ! মা কেমন করে বইবেন এই শোক ! গভীরভাবে শোকাহত আমিন ভাই।জাহাঙ্গীর আলম বাদল১২ জুলাই ২০১১, ২২:৪৯
তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।সজীব মোহন্ত ১২ জুলাই ২০১১, ২২:৫৫
দরবারী১২ জুলাই ২০১১, ২৩:১৪
আমার কষ্টটা মনে হয় অন্য সবার চাইতে একটু বেশী। কারণ আমার আছে ওদের মত দুটি সন্তান এবং প্রায় ঐ গাড়ীটার মত একটি গাড়ী। কয়দিন পূর্বে মটর সাইকেল চালিয়ে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরছিলাম। এরকম একটি খেলা শেষে ময়মনসিংহ শেরপুর রাস্তার উপর ফুলপুরের কাছাকাছি ছেলরা যেভাবে আন্দ মিছিল করছিল তাতে মটর সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তখন আমার দুটি ছেলেমেয়ের কথা ভেবে রাস্তার পাশে নির্বাক দাড়িয়ে ছিলাম। ওরাও নিশ্চয়ই এরকম আনন্দ করে। তাই ওদের মধ্যেই কল্পনা করছিলাম নিজের সন্তানের মুখ। গত কালের দূর্ঘটনার পর একইভাবে কল্পনা করলাম ওদের মধ্যে নিজের সন্তানদের।হাসনা-হেনা১৩ জুলাই ২০১১, ০০:২৮
ব্লগার সকল, মারভিন কে বয়কট করুন, এতো সুন্দর একটা পোষ্টের মধ্যে এইরুপ বেয়াদপের মতো লিংক দেওয়াটা ও বেয়াদপি ছাড়া কিছু না। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য এই পোষ্টটা দিলাম।ইরতিয়ায দস্তগীর১৩ জুলাই ২০১১, ০১:৩৮
গতকাল থেকে এই দৃশ্য যতবার দেখছি ততবারই বুক ভেঙে কান্না আসছে।আসমা সুলতানা মিতা১৩ জুলাই ২০১১, ০১:৩৮
......ফুলের মত শিশুওদর যেখানে আমরা অবলীলায় ঝরে দিতে দেই ... কিছু বলতে ও ভাবতে ভালো লাগে না ... বুকে কষ্ট জমে ওঠে...গলা ভারী হয়ে ওঠে এই ফেরেস্তা গুলোর কথা স্মরণ করে কি আমরা আমাদের কে আরো বেশী সচেতন ও মানোবিক করে তুলতে পারি কিনা আবারো ভেবে দেখাবার বিষয় !আমিনুল করিম মাসুম১৩ জুলাই ২০১১, ০১:৪১
-আমরা কবে নিরাপদ সড়ক পাবো? -কবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য স্কিল পরীক্ষাগুলো সত্যিকার অর্থেই পরীক্ষা হবে? -চালক আর হেলপাররা কি সতর্ক হবে না আদৌহারমিট পল্লব ১৩ জুলাই ২০১১, ০১:৪৫
এ রকম ঘটনা যেন আর কখনোই না ঘটে তাঁর জন্য সরকার কে অতি অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।সাইফুল রনি১৩ জুলাই ২০১১, ০৩:০১
আর কত মৃত্যুর পরে আমাদের দেশের কতিপয় চালক আর হেলপাররা সতর্ক হবে? মাসুম ভাইয়ের সাথে একমত। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষার ব্যাপারে আরো কঠোর হলে আর এসব বিষয় সবসময় নজরদারিতে রাখলে, এ ধরনের দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমানো যায়। আল্লাহ নিহতের পরিবারদেরকে ধৈর্য ধারন করবার শক্তি দিন।ড. কৃষ্ণ জি নাথ১৩ জুলাই ২০১১, ০৬:৫৫
দেখেছেন, কি মনের মিল ওদের. একসাথে খেলা দেখতে এলো, মজা করলো আবার একসাথে চলে গেলো. আমরা সবাই শোকাহত। মর্মাহত। কালকে রাতে টিভি দেখছিলাম, তবে বেশিসময় নিয়ে দেখতে পারিনি, বুকে কষ্ট নিয়ে কি এটা দেখা যায়? আমরা সবাই শোকাহত। মর্মাহত।মোঃ শামসুল আরেফিন১৩ জুলাই ২০১১, ০৮:০৮
গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।সত্যিই নির্মম।আসমা সুলতানা মিতা১৩ জুলাই ২০১১, ০৮:২৭
মিনহাজ আহমেদ১৩ জুলাই ২০১১, ০৮:৩১
@আসমা সুলতানা মিতা: এইটার মানেটা কি?