About

ABC Radio

Blogger news

ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্মত্ততা : দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল চলছে


ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্মত্ততা : দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল চলছে

স্টাফ রিপোর্টার
হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর গতকাল পুলিশ ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালিয়েছে। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে পুলিশ তাকে বুটের আঘাত ও বেধড়ক পিটিয়ে রাজপথে রক্তাক্ত করে। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। জীবন বাঁচাতে এক পর্যায়ে দৌড়ে তিনি এমপি হোস্টেল ন্যাম ভবনের ভেতর আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে সেখানে গিয়েও একদল পুলিশ তার ওপর হামলা চালায়। নজিরবিহীন বর্বরোচিত এ হামলায় তিনি প্রায় মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এমন নৃশংস হামলা অতীতে কখনোই দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ হামলাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্মত্ততা হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
গতকাল এভাবে ব্যাপক পুলিশি অ্যাকশন ও গ্রেফতার-নির্যাতনের মধ্য দিয়েই ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথমদিন অতিবাহিত হয়েছে। তেমন কোনো পিকেটিং ছাড়াই সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হচ্ছে। হরতাল সমর্থকরা বিচ্ছিন্ন মিছিল বের করলে তাতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। সংসদ ভবন এলাকায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর দফায় দফায় হামলার ঘটনা হরতালে ভিন্ন রূপ দিয়েছে। রাজধানীতে মিছিল করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশকিছু হরতাল সমর্থককে দণ্ড দিয়েছেন। হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ ও র্যাব। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর অর্ধশতাধিক স্থানে ছোট ছোট মিছিল করেছে বিএনপি, জামায়াত, এর অঙ্গসংগঠন ও হরতাল আহ্বানকারী কয়েকটি দল। এসব মিছিল এবং বাসায় হানা দিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেটসহ বেশকিছু স্থানে হরতালের সমর্থনে বের হওয়া মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। হরতালের প্রথমদিন সারাদেশে তিন শতাধিক হরতাল সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি হামলায় চার শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে হরতাল ঠেকাতে পুলিশ ও র্যাবের বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ রাজধানীতে লাঠি হাতে ‘শান্তি’ মিছিল বের করে। 
ফারুকের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৫টি রাজনৈতিক দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিন গতকাল আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্মত্ততা ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠে। সংসদ এলাকায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের পদযাত্রায় দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা ও বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও বিপ্লব কুমারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর নির্মম বর্বরতা চালায়। পুলিশ সদস্যরা একযোগে তাকে রাজপথে ফেলে লাঠিপেটা, বুট জুতা দিয়ে বুক, মুখ ও মাথায় লাথি-ঘুষি মারে। এতে তার মাথা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলেও পুলিশের উন্মত্ততা কমেনি। এ সময় বিরোধী সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে অশ্রাব্য ও অশালীন ভাষায় গালাগালও করে পুলিশ সদস্যরা। এমনকি মহিলা সংসদ সদস্যদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালায় তারা। ঘটনাস্থল থেকে দুজন মহিলা সংসদ সদস্যকে পুলিশ প্রথমে আটক করার পর ছেড়ে দেয়। এদিকে গুরুতর আহত জয়নুল আবদিন ফারুক গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে গেলে সেখানে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পদত্যাগ ও দোষীদের বিচার দাবি করেছেন। 
সরেজমিন পরিদর্শন ও বিএনপির এমপিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হরতাল সমর্থনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় ১৫ সংসদ সদস্য গতকাল সকাল সোয়া ৬টায় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ফার্মগেট অভিমুখে পদযাত্রা বের করেন। এতে আশরাফ উদ্দিন নিজাম এমপি, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এমপি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, লায়ন হারুন এমপি, হাফিজার রহমান এমপি, মোস্তফা কামাল এমপি, লুত্ফর রহমান কাজল এমপি, শাম্মি আকতার এমপি, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, রুমানা মাহমুদ এমপি, রেহেনা আক্তার রানু এমপি, নিলুফা চৌধুরী মনি এমপি, রাশিদা বেগম হীরা এমপি ও শামসুন্নাহার চুমকি এমপি অংশ নেন। প্রত্যেকের বুকে সংসদ সদস্যের পরিচয়পত্র ঝুলানো ছিল। শান্তিপূর্ণ এ পদযাত্রাটি ফার্মগেটের কাছে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। প্রতিবাদে সংসদ সদস্যরা সেখানেই রাস্তায় বসে পড়েন। পুলিশ তাদের রাস্তায় বসতে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। কথা না শুনলে কঠোর অ্যাকশন নেয়ারও ঘোষণা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ২০-২৫ মিনিট রাস্তায় বসে থাকার পর পুলিশের অনুরোধে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আবার সংসদ ভবনের দিকে ফিরে যেতে থাকেন। পদযাত্রাটি সংসদ ভবনে ঢোকার পথে গেলেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই সামনের দিকে এগোতে থাকেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় বলেন, আমরা অ্যাকশনে যাব। ফারুক বলেন, যান না। কথা শেষ করতে পারেননি তিনি। এ সময় পুলিশের এসি বিপ্লব কুমার সরকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সামনে হাত তুলে বলেন, ‘শুয়োরের বাচ্চা, চড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দেব’। জয়নুল আবদিন ফারুকসহ উপস্থিত অন্য এমপিরা এর প্রতিবাদ জানালে পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এডিসি হারুন অর রশিদ পেছন থেকে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলা চালায়। তাকে পরপর কয়েকটি কিল-ঘুষি মারে। দুদিন আগে নয়াপল্টনে টিয়ার গ্যাস শেলে আহত ফারুকের হাতে স্ক্র্যাপ (ব্যান্ডেজ) ছিল। এডিসি হারুন টেনেহিঁচড়ে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে ও তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। পুলিশ সদস্যরা ফারুকের গায়ের গেঞ্জি খুলেও পেটায়। এ সময় উপস্থিত এসি বিপ্লব কুমার সরকারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুককে বুট দিয়ে সমস্ত শরীর, নাক-মুখ ও মাথায় লাথি মারে এবং লাঠিপেটা করতে থাকে। লাঠি দিয়ে তার নাক ও মাথা ফাটিয়ে দেয়। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বুট দিয়ে উপর্যুপরি লাথি মেরেছে। তার মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরতে থাকে। উপস্থিত সংসদ সদস্যরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদের ওপরও লাঠিচার্জ করে তারা। মহিলা সংসদ সদস্যদের পোশাক ধরেও তারা টানা-হেঁচড়া করে। 
এক পর্যায়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা থেকে মুক্তি পেতে ফারুককে নিয়ে সংসদ সদস্যরা ন্যাম ভবনের ভেতর প্রবেশ করার পথে পুলিশ দল ভারি করে আবারও তাদের ধাওয়া করে। ফারুক দৌড়ে লিফটে উঠার চেষ্টা করলে সেখান থেকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে ধরে নিয়ে এসে আবার লাঠিপেটা করে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে ওঠার জন্য নিয়েই সজোরে গাড়ি টান দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এ সময় জয়নুল আবদিনের জিহ্বা বের হয়ে যায় ও ভেতর থেকে গোঙানি শুরু হয়। এতে সংসদ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে উচ্চস্বরে চিত্কার করে বলেন, জয়নাল ভাইকে মেরে ফেলেছে। কে কোথায় আছেন বাঁচাও। তারপরও পুলিশ লাঠিচার্জ বন্ধ করেনি। এক পর্যায়ে বিএনপি সংসদ সদস্যরা ন্যাম ভবনের ভেতর ঢুকে যান। পুলিশের লাঠিপেটায় সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, শাম্মি আক্তার ও শামসুন্নাহার চুমকিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রাশিদা বেগম হীরা ও নিলুফার চৌধুরী মনিকে আটক করে নিয়ে যায়। তাদের ধানমন্ডির বিভিন্ন গলি ঘুরিয়ে এনে আবার সংসদ ভবন এলাকায় ছেড়ে দেয়। পাশাপাশি পুলিশ বিএনপি নেতাদের ন্যাম ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই হামলা চালিয়ে চিফ হুইপ জয়নুল আবদিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বারবার হামলা চালিয়েছে। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। অকথ্য ভাষায় সংসদ সদস্যদের গালাগাল করে জাতীয় সংসদের অবমাননা করেছে। এর মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের মুখোশ আবারও উন্মোচন হয়েছে। শাম্মি আকতার তার শরীরে রক্তের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, পুলিশ এমনভাবে জয়নুল আবদিনকে রক্তাক্ত করেছে তার চিহ্ন প্রতিটি সংসদ সদস্যের গায়ে রয়েছে। এমনকি ন্যাম ভবনেও তার রক্ত ছাপ পড়ে আছে। 
হাসপাতালে নেয়ার পথে বাঁধা : হাসপাতালে নেয়ার পথে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আতঙ্কে চিকিত্সাহীন অবস্থায় দুই ঘণ্টা ন্যাম ভবনে পড়েছিলেন গুরুতর আহত জয়নুল আবদিন ফারুক। তাকে গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পথেও পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এমপি। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিত্সা করতে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে গুলশান থানার ওসিসহ দুটি দল তাদের ফলো করে হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। কিন্তু শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটে। তিনি আরও বলেন, চিকিত্সার অভাবে জয়নুল আবদিনের শারীরিক ক্ষতি হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। এদিকে হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, আহত জয়নুল আবদিনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি নিউরো সার্জন বজলুল করিমের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ডা. হুমায়ুন আমার দেশকে বলেন, পরিষ্কার করার সময় তারা মাথা, দুই পায়ের হাঁটু ও বাঁ পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশের বক্তব্য : জয়নুল আবদিনের ওপর হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, বারণ করা সত্ত্বেও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বাস লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন। এমনি ফারুক নিজেও ইট ছোড়েন। তাদের এ ধরনের কাজ না করার অনুরোধ জানানো হলে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে আমার ওপর চড়াও হন তিনি। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি পড়ে যান। 
প্রসঙ্গত, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জামায়াতসহ চারদলীয় জোট ও সমমনা ১৫ দলের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালিত হচ্ছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে হরতাল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামীকাল ভোর ৬টায় হরতাল শেষ হবে। 
জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলুপ্তি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি তেলের চরম সঙ্কটের প্রতিবাদে বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। 
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দাবিগুলো হলো- সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা পুনঃস্থাপন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিনা বিচারে আটক মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ গ্রেফতারকৃত সব রাজবন্দির মুক্তি। 
চারদলীয় জোটের শরিক বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিশের দাবিগুলোও বিএনপির এবং জামায়াতে ইসলামীর মতোই। হরতাল আহ্বানকারী অন্য দলগুলো হলো জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, নেজামী ইসলাম বাংলাদেশ, ন্যাপ ভাসানী, মেহনতি জনতা পার্টি ও বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ পার্টি এবং ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ। 
অবরুদ্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় : হরতালে পুলিশ ও র্যাব অবরুদ্ধ করে রাখে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তিন স্তরের পুলিশি ব্যারিকেডে দলের কোনো নেতাকর্মী কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি, আবার কেউ বেরও হতে পারেননি। দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহিয়া মজলিস খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। পরে ফরিদ উদ্দিন আহমদকে ছেড়ে দেয়া হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৬ জন নেতাকর্মী কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। মির্জা আলমগীর সকাল ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে আসেন। আর মঙ্গলবার রাতেই কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, কেন্দ্রীয় নেতা তকদীর হোসেন জসীম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শাহজাহান সম্রাট, মাহবুবুল হক নান্নু, বেলাল আহমেদ, ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমুখ। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কার্যালয়ে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এছাড়া আইনি পরামর্শ করতে বিকাল পৌনে ৪টায় দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি কার্যালয়ে আসেন। বিকাল ৫টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে এসে পৌঁছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার হরতাল ঠেকাতে বর্বর কায়দায় হামলা চালাচ্ছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর হামলা করে রাজনীতিতে মধ্যযুগীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনের গতি আরও বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। 
এদিকে হরতালে মতিঝিল এলাকায় দুপুরের দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ হামলা চালিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আবদুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ গণতান্ত্রিক মিছিল-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না পুলিশ। সরকার নিজেদের ফ্যাসিবাদী চেহারা দেখাতে দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। 
গুলশানে সাবেক এমপিসহ ৮ জন গ্রেফতার : গতকাল ১১টা ২০ মিনিটে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি নূরী আরা সাফাসহ ৪ জন দুটি রিকশাযোগে মহাখালীর পানির ট্যাঙ্কের কাছে পৌঁছলে পুলিশ তাদের রিকশা থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করে। এ সময় অপর রিকশায় যাওয়া আরও দুই গৃহিণীকে পিকেটার সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাখালীতে ছাত্রদল একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেখান থেকে ছাত্রদলের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে হরতালের আগের দিন মঙ্গলবার মহাখালী এলাকা থেকে আটক ইন্স্যুরেন্স কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানকে গতকাল ৬ মাসের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 
হরতালের সমর্থনে বিজয়নগর এলাকায় দুপুরের দিকে মিছিল বের করে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন। 
এদিকে হরতালে নগরীতে দুই দফায় মিছিল বের করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে নগরীর পান্থপথে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ৯টার দিকে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে গ্রিন রোডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেন সহ-সভাপতি হায়দার আলী লেলিন, দুলাল হোসেন, ওমর ফারুক সাফিন, রফিকুল ইসলাম রাসেল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আবু সাইদ, আনোয়ার হোসেন টিপু, শহিদুল্লাহ ইমরান, মাহবুবুর রশিদ মাহবুব, রাজিব আহসান, মাহবুবুল আজম, তরিকুল ইসলাম টিটু, হাবিবুর রহমান সুমন, আবদুল করিম সরকার, মহিদুল ইসলাম হিরু, রাসেল মিয়া, আল আমিন সিদ্দিকী আকাশ, শফিকুল ইসলাম শফিক, মামুন হাশেমী দিপুসহ শতাধিক নেতকর্মী। সমাবেশে ছাত্রদল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের এ হরতালে সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে হামলা, গ্রেফতার করে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। সরকারের নির্যাতনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ গ্রেফতারকৃত সব ছাত্র রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সকাল ৮টায় ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের নেতৃত্বে নগরীর মালিবাগ রেলগেট থেকে শুরু করে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার রেলগেইটে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল শেষে সমাবেশ করে তারা। 
হরতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। ঘটেনি পিকেটিং। চারদলীয় ঐক্যজোটের ডাকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের গতকাল ছিল প্রথমদিন। গতকাল কোনো ক্লাস হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চলেনি। শিক্ষকরা ক্লাস ও অফিসে আসেননি। বিভাগ ও প্রশাসিক ভবনের অফিসে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে সকাল ও দুপুরের পর অনুপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের পাহারা ছাড়া পুরো ক্যাম্পাস ছিল প্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীশূন্য ও ফাঁকা। তবে কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতায় এবং ছাত্রলীগ ও পুলিশের পাহারায় কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না এলে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। 
এদিকে হরতাল চলাকালে ক্যাম্পাসে হরতাল সমর্থক ঐক্যজোটের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ইসলামীশিবির নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। তবে ছাত্রলীগ হরতাল বিরোধী মিছিল-সমাবেশ এবং সংগঠনের ক্যাডার বাহিনী হরতাল সমর্থকদের ঠেকাতে মোটরসাইকেলে করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। 
ছাত্রলীগের মিছিল সমাবেশ : বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি মিছিল বের করে চারুকলা অনুষদের সামনে সমাবেশ করে। ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের পরিচালনায় এ সমাবেশ হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আনিসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানার নেতৃত্বে বিক্ষোভমিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। মিছিলটি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূর্বের জায়গায়ই সমাবেশ করে। এতে অন্যদের মধ্যে নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, মিরাজ হোসেন, গোলাম সরওয়ার কবির, এস এম আবদুুর রহিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। 
পুরান ঢাকা : প্রথম দিনে পুরান ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন হয়েছে। হাজারীবাগ, আজিমপুর, লালবাগ, পোস্তা, চকবাজার, মিটফোর্ড রোড, বাবুবাজার, নয়াবাজার, সদরঘাট, বংশাল, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, নবাবপুর, কাপ্তানবাজার, এলাকার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় হকাররা তাদের দোকানের পসরা নিয়ে রাস্তায় বসেছিল। তবে বিক্রি তেমন ছিল না। রাস্তায় সিএনজি স্কুটার ছাড়া ইঞ্জিনচালিত গাড়ি দেখা যায়নি। রিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
এদিকে জজকোর্ট এলাকায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ৩ বার মিছিল করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহাম্মদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, আজিজুল হক খান বাচ্চু রেজাউল করিম মিজাম। এছাড়া মিছিলে আবুল কালাম আজাদ, আবুল কালাম খান, আবদুুল খালেক মিলন, হাফিজুর রহমান, ফারুক আহম্মদ, জয়নুল আবেদীন মেসবাহ, হযরত আলীসহ ২ দুইশতাধিক আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন। 
দুপুর সাড়ে ১২টায় সূত্রাপুর থানার যুবদলের সভাপতি শরীফ আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিমের নেতৃত্বে টিপু সুলতান রোডে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি ওয়ারী এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। 
দুপুর সোয়া ১টায় কবি নজরুল ইসলাম কলেজের সামনে হরতালের বিপক্ষে ছাত্রলীগ একটি মিছিল করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মুন্না। 
হরতালের সমর্থনে গতকাল বিকাল তিনটায় বিজয়নগর মোড়ে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন টাওয়ারের কাছে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। মিছিলে জোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়াসহ জোটের অন্য নেতাদের মধ্যে অধ্যক্ষ নুর আফরোজ জ্যোতি, মো. জাকির হোসেন, অধ্যাপক রোকেয়া চৌধুরী বেবি, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বাদল প্রমখু ছিলেন। ভোরে ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান ধানমন্ডির বাসভবন এবং আশপাশ এলাকা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন পুলিশ ঘিরে রাখে। এ সময় তার বাসভবনে দলের কোনো নেতাকর্মীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। 
ঢাকা মেডিকেল : হরতালে প্রভাব পড়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। গতকাল হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল তুলনামূলক অনেক কম। রোগীর চাপ না থাকায় চিকিত্সকদের গল্প করে কাটাতে হয়েছে অধিকাংশ সময়। মেডিসিন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন মেডিসিন বিভাগে রোগীর সংখ্যা হয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার। কিন্তু গতকাল রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ শতাধিক। ঠিক একইরকম ছিল অন্যান্য বিভাগেও।
জামায়াতের মিছিল পিকেটিং : ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে পিকেটিং মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুর, মৌচাক, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডাসহ অন্তত ১৫টি পয়েন্টে হরতালের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ করে দলটি। বিভিন্ন স্থানে মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। গতকাল ঢাকা মহানগরী থেকে ৩৯ জনসহ সারাদেশে মিছিল থেকে প্রায় দেড়শ’ জনকে পুলিশ আটক করে বলে দলটি অভিযোগ করেছে।
সকাল ৯টায় কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ ও সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলের নের্তৃত্বে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশ চলাকালে পুলিশ তাতে লাঠিচার্জ ও হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সমাবেশে হামিদ আজাদ এমপি বলেন, জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে ব্যর্থ ও জালিম সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছে। তিনি জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সরকারকে সব প্রকার ষড়যন্ত্র ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারকে আরও কঠিন কর্মসূচির মুখোমুখি হয়ে দুর্বার গণআন্দোলনের মুখে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের মতিঝিল থানা আমির মোহাম্মদ লুত্ফুর রহমান, পল্টন থানা আমির অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান ও মতিঝিল থানা সেক্রেটারি কামাল হোসাইন প্রমুখ। 
এদিকে লস্কর মোহাম্মদ তাসলীম ও বেলাল হোসাইনের নের্তৃত্বে সকাল সাড়ে ৬টায় মিরপুর পূর্ব-পশ্চিম, দারুসসালাম ও কাফরুল থানার যৌথ উদ্যোগে মিরপুর ১০নং গোলচত্বর থেকে একটি মিছিল কাজীপাড়া যাওয়ার পথে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১৫-২০ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের নের্তৃত্বে বাড্ডা এলাকায় একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে অতর্কিত হামলা চালালে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। সাড়ে ৭টায় আবদুুস সবুর ফকিরের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকায় মিছিল করে যাত্রাবাড়ী থানা জামায়াত। মিছিলের পর একটি ম্যাচে তল্লাশি চালিয়ে তামিরুল মিল্লাত শাখা শিবির সভাপতিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮টায় এস এম রুহুল আমিন, মফিজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খন্দকারের নেতৃত্বে বংশাল, লালবাগ ও চকবাজার থানা একটি মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে হামলা করে ৯ জনকে আটক করে।
এছাড়া মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মৌচাক এলাকায় রমনা থানা, কবির আহমদের নেতৃত্বে খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা, হেমায়েত হোসেন ও শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ থানা, রফিক আহমদ ও দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা, কামাল উদ্দিন ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে কারওয়ানবাজার এলাকায় শেরে বাংলানগর ও তেজগাঁও থানা, আবদুুস সালামের নেতৃত্বে পল্লবী থানা, এ বি এম সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে, গেন্ডারিয়া এলাকায় সূত্রাপুর থানা, রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে শ্যামপুর থানা, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে মহাখালী থানা জামায়াতের উদ্যোগে হরতালের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে গণসংযোগকালে জামায়াতের তুরাগ থানা আমির এবং সেক্রেটারিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 
ইসলামী ঐক্যজোট : পুলিশি আতঙ্কে হরতালের প্রথম দিনে নগরীতে ইসলামী ঐক্যজোট বা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির তেমন কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি। তবে মিরপুর, সাভার, যাত্রাবাড়ী, আশুলিয়াসহ কয়েকটি জায়গায় তারা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে লাঠিচার্জ করে পণ্ড করে দেয় বলে দলীয় সূত্র জানায়। এদিকে পুলিশ ও আওয়ামী গুণ্ডা বাহিনীর নির্যাতন ও ত্রাস সৃষ্টির পরেও গতকাল সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে হরতাল পালিত হওয়ায় দেশবাসীর প্রতি মোবারকবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির মুফতি আমিনী। তিনি আগামী কালের হরতালসহ অন্যান্য সব কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান। গতকাল বিকালে লালবাগ কার্যালয়ে হরতাল বিষয়ে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হওয়ায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে, এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন। তাদের ক্ষমতায় থাকার আর অধিকার নেই।
খেলাফত মজলিস : দুপুরে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে থেকে খেলাফত মজলিস হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় তা ব্যর্থ হয়। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরী সভাপতি মাওলানা নোমান মাজহারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ৪৮ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতালে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীসহ নিরীহ জনতার ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে তা হিটলারের স্বৈরশাসনকেও হার মানিয়েছে। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম, দফতর সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুুল জলিল, মহানগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান প্রমুখ। 
ইসলামী ছাত্রসমাজ হরতালের সমর্থনে গতকাল ফকিরাপুল এলাকায় একটি মিছিল বের করে। মহানগর সভাপতি মাসুদ আল-হাসানের সভাপতিত্বে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াছ আতহারী, মহাসচিব সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, শামীমুজ্জামান প্রমুখ।
মতিঝিলে লেবার পার্টির বিক্ষোভ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালসহ অন্য দাবিতে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচির সমর্থনে গতকাল সকাল ১১টায় মতিঝিল এলাকায় মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর লেবার পার্টি। মিছিলটি নটরডেম কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে আরামবাগ, বাফুফে বিল্ডিং, কালভার্ট রোড হয়ে ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কির কাছে গেলে পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর আগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন লেবার পার্টির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক এআরএম জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, যুগ্ম মহাসচিব আহসান উল্লাহ শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান খোকন, কাজী মনির হোসেন, নগর যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ছগির হোসেন, নগরনেতা মো. গোলাম আজম, মো. আলম হোসেন প্রমুখ।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকসহ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের বর্বর হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। বিবৃতিদাতারা হলেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ এমপি, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গাণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব ও মহাসচিব আবদুুল লতিফ নেজামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ও সেক্রেটারি জেনারেল দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
রাতের ঢাকা : হরতালে গত রাতে ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকা। বিআরটিসি ও পুরনো কিছু গাড়ি চলতে দেখা গেছে। হরতাল সমর্থকদের কোনো পিকেটিং দেখা যায়নি। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে তেমন লোকজন ছিল না। বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ রয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া কেউ কার্যালয়ে ঢুকতে ও প্রবেশ করতে পারছেন না। হরতালের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ রয়েছে। সেখানেই তারা কয়েকজন নেতাকর্মী রাত কাটাচ্ছেন। এদিকে গতকাল বিকালে কাকরাইল এলাকার একটি বাসা থেকে যুবদল ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)