ফারুকের ওপর পুলিশি নৃশংসতা : রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেন না মহাজোটের মন্ত্রী এমপি নেতারা
স্টাফ রিপোর্টার
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিন্দা জানাতে পারলেন না। কেউ কেউ ছিটেফোঁটা ‘নিন্দা’ বা ‘দুঃখজনক’ শব্দ উচ্চারণ করলেও জয়নুল আবদিন ফারুককেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। নোংরা ভাষায় তাকে গালমন্দ করেন। তাদের বক্তব্যে পুলিশকে আরও উসকে দেয়া হয়েছে।
মিডিয়া ওই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি তুলে ধরার পর সরকারের ইশারাতেই দোষী পুলিশ কর্মকর্তা এসি হারুনুর রশিদ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শুয়ে পড়েন। আবার রাতেই তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার। অথচ মানুষ আশা করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি দোষী পুলিশ কর্মকর্তাকে
তত্ক্ষণাত্ সাময়িক বরখাস্ত করবেন। কিন্তু তা না করে পুলিশকে অপরাধ করতে উত্সাহ দেয়া হলো। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পিটিয়ে একটি অপরাধ করা হলো এবং নাটক সাজাতে হাসপাতালে অযথা ভর্তি হয়ে আরেকটি অপরাধ করা হলো।
সব পত্রিকায় ছবি ছাপা হলো জয়নুল আবদিন ফারুকের হাতে মোবাইল সেট, অথচ প্রথম আলোতে বলা হলো তিনি ঢিল ছুড়ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তত্ক্ষণাত্ হাতের কাছে বড় একটি ‘প্রমাণ’ পেয়ে সংসদে প্রথম আলো উদ্ধৃত করে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিলেন। সেখানে যত দোষ সবই ফারুকের বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের বাধা পেয়ে বিএনপির মিছিল ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে তারা আবারও মিছিল নিয়ে এসে ১ নম্বর ন্যাম ভবনের বিপরীত দিকে অবস্থান নেন। এ সময় ফারুকসহ বিএনপির সংসদ সদস্যরা রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন। কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা এতে বাধা দিলে ফারুক উত্তেজিত হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ অবস্থায় একজন উপ-পুলিশ কমিশনার নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তিনি তাকে গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেন। ক্ষমতায় গেলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি (বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ) মাটিতে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এর আগের দিন অর্থাত্ বুধবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা পুলিশের ওপর আঘাত করার অভিযোগে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা হরতাল চলাকালে জয়নুল আবদিন ফারুকের পুলিশের হাতে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় তাকেই দায়ী করেন।
জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুকের আহত হওয়া নিয়ে সকাল থেকেই মিডিয়ায় নানা ধরনের গল্প শুনছি। পুলিশ নাকি তাকে পিটিয়েছে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে তিনি (জয়নুল আবদিন) পুলিশকে মারধর করেছেন। পুলিশের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ওপর আঘাত অবশ্যই অপরাধের মধ্যে পড়ে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের আচরণের সমালোচনা করে বলেন, তিনি (ফারুক) সংসদে অশালীন আচরণ করেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গায়ে হাত দিয়েছেন। এজন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
একই দিন বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পুলিশ নির্যাতন করে গুরুতর আহত করার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তার সচিবালয়ের কার্যালয়ে বলেন, পুলিশ আইনানুগ দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশের দায়িত্বই হচ্ছে জনগণের জানমালের হেফাজত করা। তারা সে দায়িত্ব পালন করেছে।
তিনি পুলিশের পক্ষ নিয়ে বলেন, মানিক মিয়া এভিনিউতে মিছিল করার সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ডিসি ও এডিসিকে কটূক্তি করে চড়-থাপ্পড় দিতে উদ্যত হওয়া এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়ার পরই এই অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি বর্বর হামলাকে প্রকারান্তরে বৈধতা দিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তত্কালীন এমপি সোহেল তাজ, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, সাবের হোসেন চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরীকে যেভাবে পুলিশ পৈশাচিকভাবে মেরেছিল জাতি তা ভোলেনি। জাতির মেমোরি অনেক লম্বা।
ফারুকের জন্য অনেকে মায়া কান্না করছে উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, গতকাল সব টেলিভিশন সচিত্র সংবাদ প্রচার করেছে। সৈয়দ আশরাফ মিডিয়াকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফারুকের পাশাপাশি বিএনপির শাসনামলে আমাদের যেভাবে প্রহার করা হয়েছিল তার ছবিও আপনারা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাদেরও প্রচলিত আইনে বিচার হবে। প্রচলিত আইন সবাইকে মানতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক একই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বা সংসদ সদস্য হলেও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন তার নিজ গতিতে চলে। অর্থাত্ তার ভাষায় আইন হলো প্রকাশ্যে রাজপথে এভাবে পিটিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মেরে ফেলা।
একই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা সংসদ সদস্য তাদের সতর্ক থাকা উচিত। শালীনতা বিবর্জিত এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয় যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নিজ দায়িত্ব পালনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। সংসদ সদস্যদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বিএনপি নেতাদের উপদেশ দিয়ে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সংযত আচরণ করুন।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, পুলিশের বেধড়ক পিটুনির জন্য বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ওই পুলিশ অফিসার উঠতে গেলে তিনি (ফারুক) মৃদু আঘাত পান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তিনি (ফারুক)— বিএনপির এ নেতা যে ভাষায় কথা বলেন, নোংরা আচরণ করেন, তাতে আমাদের সন্দেহ হয়, ভাবতে কষ্ট হয়, উনি (ফারুক) চিফ হুইপ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এ ভাষায় মাঠপর্যায়ের সন্ত্রাসীরা কথা বলে। তবে এ ঘটনা দুঃখজনক মন্তব্য করে হানিফ বলেন, আশা করি পদমর্যাদার দিকে খেয়াল রেখে ভবিষ্যতে সবাই আচরণ করবেন।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা জেলা শাখার উদ্যোগে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুক মারের ভয়ে নাটক করছেন। আমরা অনেক মার খেয়েছি। কখনও মারের ভয়ে দৌড়ে পালাইনি। আমাদের কর্মীরা আমাদের রক্ষা করেছে। তাদের তো কর্মীই নেই, রক্ষা করবে কে?
তিনি ফারুকের সমালোচনা করে বলেন, একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি কীভাবে গাড়িতে ঢিল ছোড়েন? পুলিশের গায়ে হাত দেন? জয়নুল আবদিন ফারুক নিজের মর্যাদা নিজে রক্ষা করতে পারেননি।
সর্বশেষ সবাই আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী হয়তো ওই ধরনের আচরণ করবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই আচরণ করলেন। সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বললেন, গাড়িতে ঢিল মারা এবং পুলিশের গায়ে আঘাত করার আচরণ আশা করিনি। ঘটনাটি দুঃখজনক এবং প্রকৃতপক্ষেই আমরা দুঃখিত।
সব দলের নেতারা যখন ওই ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচার চাইলেন, তখন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নব্বইয়ের স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ একেবারে টুঁ-শব্দটি করছেন না।
মিডিয়া ওই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি তুলে ধরার পর সরকারের ইশারাতেই দোষী পুলিশ কর্মকর্তা এসি হারুনুর রশিদ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শুয়ে পড়েন। আবার রাতেই তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার। অথচ মানুষ আশা করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি দোষী পুলিশ কর্মকর্তাকে
তত্ক্ষণাত্ সাময়িক বরখাস্ত করবেন। কিন্তু তা না করে পুলিশকে অপরাধ করতে উত্সাহ দেয়া হলো। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পিটিয়ে একটি অপরাধ করা হলো এবং নাটক সাজাতে হাসপাতালে অযথা ভর্তি হয়ে আরেকটি অপরাধ করা হলো।
সব পত্রিকায় ছবি ছাপা হলো জয়নুল আবদিন ফারুকের হাতে মোবাইল সেট, অথচ প্রথম আলোতে বলা হলো তিনি ঢিল ছুড়ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তত্ক্ষণাত্ হাতের কাছে বড় একটি ‘প্রমাণ’ পেয়ে সংসদে প্রথম আলো উদ্ধৃত করে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিলেন। সেখানে যত দোষ সবই ফারুকের বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের বাধা পেয়ে বিএনপির মিছিল ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে তারা আবারও মিছিল নিয়ে এসে ১ নম্বর ন্যাম ভবনের বিপরীত দিকে অবস্থান নেন। এ সময় ফারুকসহ বিএনপির সংসদ সদস্যরা রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন। কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা এতে বাধা দিলে ফারুক উত্তেজিত হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ অবস্থায় একজন উপ-পুলিশ কমিশনার নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তিনি তাকে গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেন। ক্ষমতায় গেলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি (বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ) মাটিতে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এর আগের দিন অর্থাত্ বুধবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা পুলিশের ওপর আঘাত করার অভিযোগে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা হরতাল চলাকালে জয়নুল আবদিন ফারুকের পুলিশের হাতে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় তাকেই দায়ী করেন।
জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুকের আহত হওয়া নিয়ে সকাল থেকেই মিডিয়ায় নানা ধরনের গল্প শুনছি। পুলিশ নাকি তাকে পিটিয়েছে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে তিনি (জয়নুল আবদিন) পুলিশকে মারধর করেছেন। পুলিশের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ওপর আঘাত অবশ্যই অপরাধের মধ্যে পড়ে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের আচরণের সমালোচনা করে বলেন, তিনি (ফারুক) সংসদে অশালীন আচরণ করেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গায়ে হাত দিয়েছেন। এজন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
একই দিন বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পুলিশ নির্যাতন করে গুরুতর আহত করার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তার সচিবালয়ের কার্যালয়ে বলেন, পুলিশ আইনানুগ দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশের দায়িত্বই হচ্ছে জনগণের জানমালের হেফাজত করা। তারা সে দায়িত্ব পালন করেছে।
তিনি পুলিশের পক্ষ নিয়ে বলেন, মানিক মিয়া এভিনিউতে মিছিল করার সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ডিসি ও এডিসিকে কটূক্তি করে চড়-থাপ্পড় দিতে উদ্যত হওয়া এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়ার পরই এই অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি বর্বর হামলাকে প্রকারান্তরে বৈধতা দিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তত্কালীন এমপি সোহেল তাজ, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, সাবের হোসেন চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরীকে যেভাবে পুলিশ পৈশাচিকভাবে মেরেছিল জাতি তা ভোলেনি। জাতির মেমোরি অনেক লম্বা।
ফারুকের জন্য অনেকে মায়া কান্না করছে উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, গতকাল সব টেলিভিশন সচিত্র সংবাদ প্রচার করেছে। সৈয়দ আশরাফ মিডিয়াকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফারুকের পাশাপাশি বিএনপির শাসনামলে আমাদের যেভাবে প্রহার করা হয়েছিল তার ছবিও আপনারা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাদেরও প্রচলিত আইনে বিচার হবে। প্রচলিত আইন সবাইকে মানতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক একই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বা সংসদ সদস্য হলেও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন তার নিজ গতিতে চলে। অর্থাত্ তার ভাষায় আইন হলো প্রকাশ্যে রাজপথে এভাবে পিটিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মেরে ফেলা।
একই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা সংসদ সদস্য তাদের সতর্ক থাকা উচিত। শালীনতা বিবর্জিত এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয় যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নিজ দায়িত্ব পালনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। সংসদ সদস্যদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বিএনপি নেতাদের উপদেশ দিয়ে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সংযত আচরণ করুন।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, পুলিশের বেধড়ক পিটুনির জন্য বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ওই পুলিশ অফিসার উঠতে গেলে তিনি (ফারুক) মৃদু আঘাত পান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তিনি (ফারুক)— বিএনপির এ নেতা যে ভাষায় কথা বলেন, নোংরা আচরণ করেন, তাতে আমাদের সন্দেহ হয়, ভাবতে কষ্ট হয়, উনি (ফারুক) চিফ হুইপ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এ ভাষায় মাঠপর্যায়ের সন্ত্রাসীরা কথা বলে। তবে এ ঘটনা দুঃখজনক মন্তব্য করে হানিফ বলেন, আশা করি পদমর্যাদার দিকে খেয়াল রেখে ভবিষ্যতে সবাই আচরণ করবেন।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা জেলা শাখার উদ্যোগে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুক মারের ভয়ে নাটক করছেন। আমরা অনেক মার খেয়েছি। কখনও মারের ভয়ে দৌড়ে পালাইনি। আমাদের কর্মীরা আমাদের রক্ষা করেছে। তাদের তো কর্মীই নেই, রক্ষা করবে কে?
তিনি ফারুকের সমালোচনা করে বলেন, একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি কীভাবে গাড়িতে ঢিল ছোড়েন? পুলিশের গায়ে হাত দেন? জয়নুল আবদিন ফারুক নিজের মর্যাদা নিজে রক্ষা করতে পারেননি।
সর্বশেষ সবাই আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী হয়তো ওই ধরনের আচরণ করবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই আচরণ করলেন। সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বললেন, গাড়িতে ঢিল মারা এবং পুলিশের গায়ে আঘাত করার আচরণ আশা করিনি। ঘটনাটি দুঃখজনক এবং প্রকৃতপক্ষেই আমরা দুঃখিত।
সব দলের নেতারা যখন ওই ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচার চাইলেন, তখন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নব্বইয়ের স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ একেবারে টুঁ-শব্দটি করছেন না।