জাকির হোসেন  বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি বসে থাকবে না। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার নীলনকশার অংশ হিসেবে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এইচএম এরশাদ নিশ্চিত করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ফলে আগামী নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি হবে প্রধানবিরোধী দল এবং এরশাদ হবে বিরোধীদলীয় নেতা। আর এ কারণেই এইচএম এরশাদ এরই মধ্যে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী দল শক্তিশালী করার কাজ করছেন। তবে নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল থাকবে কিনা এটা জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করছে বলে গতকাল মন্তব্য করেছেন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
এইচএম এরশাদ এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের জন্য সুপ্রিমকোর্টে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিকবার অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি না থাকে এবং বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কেউ বসে থাকবে না। জাতীয় পার্টি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে। এ বিষয়ে তিনি এর আগে কয়েক দফা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ ব্যাপারে তার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এইচএম এরশাদ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিশ্চিত করেছেন বলে জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা আমার দেশকে জানিয়েছেন। সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার শাসনামলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকা গৃহপালিত বিরোধী দল তৈরি করেছিলেন। এখন সেই এরশাদ অনুরূপ বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন— এ আলোচনা এবং সমালোচনা এখন চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে।
এদিকে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে এইচএম এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান কিনা এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সতর্ক মন্তব্য করেছেন। আর খোদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেলফোনে গতকাল সকাল সাড়ে দশটা এবং সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হয়। সকালে তিনি বলেন, এখন আমি খেলার মাঠে রয়েছি— কিছু বলতে পারব না। আর সন্ধ্যায় বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি— পরে কথা বল।
তবে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক দলেরই একটি রাজনৈতিক কৌশল আছে। নির্বাচনের এখনও আড়াই বছর বাকি। অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেব। এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা ঠিক হবে না।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এইচএম এরশাদের বৈঠকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু উপস্থিত ছিলেন। তিনি গতকাল আমার দেশকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। সে হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করব। তবে নির্বাচনের পর আমাদের অবস্থান বিরোধী দলে থাকবে কি-না সেটা জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করছে। এটা এখন আমরা বলতে পারব না।
এদিকে গত ৬ জুন বনানীর কার্যালয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা শুরুর আগে এইচএম এরশাদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে কে নির্বাচনে এলো কে এলো না তা জাতীয় পার্টির দেখার বিষয় নয়— আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।
এদিন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা রাজনৈতিক যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পার্টি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচনার পক্ষে অভিমত দিয়ে বক্তব্য রাখেন। সভায় পার্টির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করতে সুুনির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
আর গত ৭ জুন এক বৈঠকে উচ্চ আদালতের রায়ের পর বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার সুযোগ নেই বলে একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। |
|