About

ABC Radio

Blogger news

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন


নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

কাজী জেবেল
পহেলা রমজান রাজধানীতে ভালো মানের ছোলা (অস্ট্রেলিয়ার ছোলা নামে পরিচিত) বিক্রি হয়েছে বাজারভেদে ৮০-১০০ টাকা। একই মানের ছোলা গতকাল কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল ও পলাশী বাজারের বেশিরভাগ দোকান থেকে উদাও হয়ে গেছে। খোঁজাখুিজর পর যেসব দোকানে পাওয়া গেছে সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে ৭০ টাকার কমে ছোলা পাওয়া যায়নি। সাধারণ মানের ছোলা ৭০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এক মণ ওজনের (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ছোলার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭৭ দশমিক ৭০ টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্য শহরগুলোতে ছোলা ৬৫-১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সরকার চিনির দাম প্রতি কেজি ৬৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও সিলেটসহ সারাদেশের শহরের বাজারগুলোতেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। পাড়া-মহল্লা ও গ্রামগঞ্জে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা দরে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ ডিলারই প্রতি মণ পরিশোধিত চিনি ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ হিসাবে পাইকারি বাজারেই চিনির দাম পড়েছে প্রতি কেজি ৬৯-৭১ টাকা।
ঢাকায় খোলা সয়াবিন তেল ১১৫ টাকা, খুলনায় ১২৪ টাকা, বরিশালে ১১৫-১১৮ টাকা, রংপুরে ১২৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১২১-১২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০-১০০ টাকা ও ধনিয়া পাতা ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ফল, কাঁচা তরকারি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য সব পণ্যের দাম আঁকাশছোয়া। সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ পণ্য কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় চাহিদা মতো খাদ্য আইটেম দিয়ে ইফতার করতেও পারছেন না। ফলে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রোজা রাখছেন দেশের সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে যখন ক্ষোভ বাড়ছে, ঠিক তখন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের কম খাওয়ার নছিহত যেন আগুনে ঘি ফেলেছে। মানুষের ক্ষোভের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে শীর্ষে ছিল দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ করা। এতে
‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা’ শিরোনামে বলা হয়, ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ অথচ আওয়ামী লীগের শাসনামলের আড়াই বছরে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এখনও চড়া দামেই সবকিছু বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও চাল, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজসহ বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির ফলে প্রশ্ন উঠেছে—বাজারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? দাম বাড়ার নেপথ্যে কে বা কারা কলকাঠি নাড়ছে? এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রীর হাঁকডাক, ব্যবসায়ীদের ‘নো লস, নো প্রফিট’ প্রতিশ্রুতি, টিসিবির কার্যক্রম, সংসদীয় কমিটির বাজার পরিদর্শন, মোবাইল কোর্টসহ সরকারের নেয়া সব পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছেই।
খুচরা বাজারে যা হচ্ছে : গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দামের চার্ট ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু চার্টে উল্লিখিত দামে তারা কোনো পণ্যই বিক্রি করছেন না। কারওয়ানবাজারের ফরিদগঞ্জ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর জানান, সরকারি কর্মকর্তারা সাদা কাগজে একটি চার্ট দিয়ে প্রতিদিন কি দামে কোন পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা লিখে রাখতে বলেছেন। আমরা সাদা কাগজটিতে লেমিনেটিং করে তাতে দর লিখে রেখেছি। ওই চার্টে ছোলার দাম ৭০-৭৫ টাকা লেখা রয়েছে। কিন্তু তিনি ছোলা ৭৫-৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এবং ভালো মানের ছোলা তার কাছে নেই বলেও জানান। চার্টের দামের চেয়ে বেশি দাম কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চার্টে দেশি ছোলার দাম লেখা রয়েছে। আমি মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি করছি। ওটার দাম বেশি। এদিকে রাজধানীর বাজার থেকে ভালো মানের ছোলা (অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে পরিচিত) উধাও হয়ে গেছে। যে কয়েকটি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে তা ১৫০-১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের আল আরাবিয়া দোকানের মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, অস্ট্রেলিয়ান ছোলা প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাজারে সরবরাহ কম। মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরে একই মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়। এ প্রসঙ্গে দোকানের বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, ‘ঘুইরা দেখেন না এই ছোলা পাবেন কিনা। আজ (গতকাল) যে দামে বেছছি, আগামীকাল দাম আরও বাড়বো।’ বাজারগুলোতে এখনও খোলা সয়াবিন তেল ও চিনি সঙ্কট রয়েছে। বাজারে খোলা চিনি ৬৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে তা ৭০-৮০ টাকা দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেল ১১০-১১৫ টাকা, পাম তেল ১০৪ টাকা, সুপার পাম তেল ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এক দানার রসুন ১৫০-১৬০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৭০-৮০ টাকা, পেঁয়াজ (দেশি) ৩৮ টাকা, আমদানি করা ৩৫ টাকা, দেশি আদা ১০০ টাকা, আমদানি করা আদা ৭০-৮০ টাকা, ভালো মানের মসুর ডাল ৯০-১০০ টাকা, সাধারণ মানের মসুর ডাল ৭৫-৯০ টাকা, মুগ ডাল ১১৫ টাকা ও আলু ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে কাঁচাবাজারের উত্তাপ এখনও রয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল, পলাশী ও নিউমার্কেটের বনলতা মার্কেট ঘুরে চড়া দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। টমেটো ৬০-৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, শসা ৪০-৪৫ টাকা, কাঁকরোল ৩০-৩৫ টাকা, করলা ৪০-৫০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৫-৪০, কাঁচা মরিচ ৬০-৭০ টাকা ও লেবু ২০ টাকা হালি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, খুচরা বাজারে চিনি, ছোলা, তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। ৩০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। সরকার নির্ধারিত দামে চিনি, ছোলা ও ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এখনও চলছে চিনি সঙ্কট। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির সঙ্কটের কথা বলে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কেজি প্রতি ৬৯ টাকার নিচে তারা চিনি বিক্রি করছেন না। এই দরে চিনি কিনে এনে তাই খুচরা বিক্রেতাদের ৭০ থেকে ৭৪ টাকায় চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক খুচরা দোকানদার ঝামেলা এড়াতে দোকানে চিনি রাখাই বন্ধ করে দিয়েছে। খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ ডিলারই প্রতি মণ পরিশোধিত চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজির বস্তা) ২৬শ’-২৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ হিসেবে পাইকারি বাজারেই চিনির দাম পড়েছে প্রতি কেজি ৬৯ টাকা থেকে ৭১ টাকা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ছোলা প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজির বস্তা) বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৯শ’ টাকায়। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা।
গতকাল শুক্রবার নগরীর মধ্যবিত্তের বাজার হিসেবে খ্যাত চকবাজার, বহদ্দারহাট, বক্সিরহাট ও আশপাশের খুচরা দোকান এবং অভিজাত কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১১৮ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০৯ টাকা বেঁধে দিয়েছে। চিনির অবস্থাও একই। সরকার চিনির কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকায়। নগরীতে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা, নগরীর বাইরে ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা ছোলার দাম বেঁধে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দামে কোথাও ছোলা পাওয়া যাচ্ছে না। ছোলা প্রতিকেজি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৬ থেকে ১৮ টাকায়। পাকা মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৮-৩০ টাকায়। কাঁকরোল মানভেদে ৩০-৪০ টাকা এবং করলা ৩৬-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা, কাঁচা মিষ্টি কুমড়া, লাউ, যশোরের বেগুন, কচুরছড়া প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। পটল ৩২-৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৫ ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। এছাড়া ঝিঙ্গা, দেশি বেগুন, বরবটি প্রতিকেজি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০-৭০ টাকায়। এছাড়া আদা প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, শুকনো মরিচ ১৩০ টাকা, দেশি হলুদ ১৯০ টাকা, দেশি মসুর ভালো মানের ৯০ টাকা, সাধারণ মানের মসুর ৭০ টাকা, দেশি মুগ ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৬৮ টাকা, খেসারি ডাল ৪০ টাকা, সয়াবিন ৫ লিটারের বোতল ৫৮৫ টাকা ও ৫৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খেজুর বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। নিম্নমানের খেজুর প্রতিকেজি ৭০ টাকা, মাঝারিমানের ১২০ টাকা এবং উন্নতমানের খেজুর ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চালের মধ্যে পাকিস্তানি ও ভিয়েতনামি বেতি আতপ চাল প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩২ টাকা, থাইল্যান্ডের বেতি ৩৮ টাকা, পাইজাম ৪৪ টাকা, মিনিকেট আতপ ৪০ টাকা, বার্মা আতপ ৩০-৩২ টাকা এবং জিরাশাইল ৪২-৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চালের মধ্যে সিদ্ধ চালের দাম আতপের চেয়ে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি। বিভিন্ন বাজারে বার্মা রুই প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, দেশি রুই ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, প্রতিকেজি তেলাপিয়া ১৩০ টাকা, কাতল মাছ ১৬০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় মাপের ইলিশ ৫শ’ থেকে ৬শ’, ছোট মাপের ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী : রাজশাহী অফিস জানায়, অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে কাঁচা শাকসবজি ও নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দামের যাঁতাকলে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এজন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারদের, আর পাইকাররা দায়ী করছেন মজুতকারী সিন্ডিকেটকে। গতকাল রাজশাহীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দু’তিনদিনের ব্যবধানে বাজারে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে বেগুন, কাঁচামরিচ, শসা, লেবুসহ ইফতারি পণ্যের। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট, শালবাগান, কোর্ট বাজারে বেগুন ৩৬-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা ও লেবু ১৬ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৬ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৮ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, পটল ৩২ টাকা, করলা ৩২ টাকা, ঝিঙ্গা ২০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুরগির বাজারেও দাম বেড়েছে বলে জানালেন ক্রেতারা। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২৫-২৩০ টাকা। এছাড়া সোনালি কর্ক ২০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। ডালের বাজারে ছোলা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৩ টাকা দরে। এছাড়া মসুর ডাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। ভোজ্যতেলের বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০৯ টাকা থেকে ১১০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১১৯ থেকে ১২২ টাকা। সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ ও চিনি ৭০ টাকায়। এছাড়া আটাশ চাল ৩৬-৩৭ টাকা কেজি, পারিজা ৩৫-৩৭ টাকা, মিনিকেট ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫০ টাকা এবং পোলাওর চাল ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৫০-২৬০ টাকা, খাসি ৩৫০ টাকা, ইলিশ ৪০০-৬২০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬শ’ টাকা, দেশি কৈ ১৬০-৩০০ টাকা, বড় কাতল ২৫০-৩৫০ টাকা, বড় রুই ৩০০-৩৭০ টাকা, মাঝারি সিলভারকার্প ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসলার বাজারে এলাচ প্রতিকেজির দাম ৩ হাজার ২শ’ টাকা, জিরা ৩৮০ টাকা, দারুচিনি ২২০ টাকা ও ধনিয়া প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে।
রংপুর : রংপুর অফিস জানায়, খুচরা বাজারে মোটা চাল প্রতিকেজি ৩২-৩৫ টাকা, সরু চাল ৪৪-৪৭ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা, খেসারি ডাল ৩৫ টাকা, মুগডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৬৬-৭০ টাকা, আলু ১৬-২০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, পটল ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা, আদা ৮০ টাকা, রসুন ৭০ টাকা ও সয়াবিন তেল ১২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা : খুলনা অফিস জানায়, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, কাঁচামরিচসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১২০-১২৫ টাকা, সুপার তেল ১১২-১১৩ টাকা এবং পামওয়েল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা দরে। এছাড়া পেঁয়াজ (দেশি) ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬-৩৭ টাকা, পেঁয়াজ (আমদানিকৃত) ২৮ টাকা, পটল ২৪ টাকা, বেগুন ৩২-৩৪ টাকা, রসুন ৮২ টাকা, শসা ৬০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৩০-১৪০ টাকা এবং কক ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বরিশাল : বরিশাল অফিস জানায়, রমজান শুরুর পরপরই বরিশালে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩-৪ দিনের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে ইফতার সামগ্রীর বাজারদর ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। একদিনের ব্যবধানেই বেড়ে যাচ্ছে এসব পণ্যসামগ্রীর দাম। সঠিক মনিটরিং ও তদারকির অভাবে বিক্রেতারা খেয়ালখুশিমত দাম বাড়াচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল বরিশালের বাংলাবাজার, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩-৩৬ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, শসা ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, পটল ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, ১০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চিনি ৭৫-৭৬ টাকা, গুড় ৮০ টাকা, রসুন ও আদা ৮০ টাকা, ছোলা ৬৫-৭০ টাকা, চিড়া ৮০ টাকা, মুড়ি ৯০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা, আটা ২৮-৩০ টাকা, ময়দা ৩৫-৩৬ টাকা ও খেসারি ডাল ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রমজান শুরু হতেই বিভিন্ন পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। অব্যাহত পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাবাজার এলাকার শামসুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, এ সরকার ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দাম সরকারিভাবে বেঁধে দেয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ইচ্ছেমত দাম বৃদ্ধি করছে। তিনি সরকারিভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
সিলেট : সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের খোলাবাজারে চিনির সঙ্কট রয়েছে। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দাম বেশি হওয়ায় চিনি কেনাবেচা বন্ধ রেখেছেন। কেজিপ্রতি চিনির দামে বেশ পার্থক্যও দেখা গেছে। ক্রেতাদের ৮০-১০০ টাকা দরে চিনি কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া ভালোমানের ছোলা ৯০ টাকা ও সাধারণ মানের ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের ক্যান ৫৯৫-৬০৫ টাকা, প্রতিলিটার ১২৫ টাকা, পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২৮-৩০ টাকা, রসুন ৬০-৭০ টাকা, আদা ৮০-৯০ টাকা ও ডাল ৮০-১০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে প্রভাব ফেলতে পারেনি টিসিবি : বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অন্যতম হাতিয়ার টিসিবি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিসিবি ডিলারদের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পণ্য বাজারে ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এবছর তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা জানান, রোজা ও ঈদের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পণ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়া, নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করা, দলীয় বিবেচনায় ডিলার নিয়োগ ও নিয়ম মেনে ডিলাররা পণ্য বিক্রি না করায় টিসিবির কার্যক্রম বাজারে প্রভাব ফেলতে পারেনি। সরকারি এ সংস্থাটি দলীয় কর্মীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ডিলাররা একটি পণ্যের সঙ্গে আরেকটি কেনার শর্ত জুড়ে দেয়ায় অনেক ক্রেতা বিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, টিসিবি ২ হাজার ৪৬৩ জনের বেশি ডিলার নিয়োগ দিয়েছে সারাদেশে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৫০ জন ডিলারের প্রত্যেকে ২ টন চিনি, ১ হাজার ২০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি মসুর ডাল, ৫০০ কেজি ছোলা, ৫০০ কেজি খেজুর নিয়েছেন। তারা চিনি ৫৮ টাকা, সয়াবিন ১০২ টাকা, মসুর ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৫৮ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ ডিলার টিসিবি থেকে পণ্য নেননি এবং নিয়মানুযায়ী বিক্রি করেননি। ডিলাররা ‘প্যাকেজ সিস্টেমে’ বিক্রি করছেন। প্যাকেজে দুই কেজি চিনি, দুই কেজি সয়াবিনের সঙ্গে সমপরিমাণ মসুর ডাল আর খেজুর কেনা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি : এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর একের পর এক মুখরোচক মন্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমনকি সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ কয়েক নেতা বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। ওবায়দুল কাদের বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ.স.ম. হান্নান শাহ গতকাল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে সরে না দাঁড়ালে জনগণই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি আয়োজিত বিদ্যুত্, পানি সঙ্কট সমাধান ও দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজের টেবিলজুড়ে খাবার নিয়ে বসেন। আর দেশের মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটা খুবই হাস্যকর। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হলে এখন কারা দাম বাড়াচ্ছে—এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক গতকাল এক বিবৃতিতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)