About

ABC Radio

Blogger news

হাসিনা বিরোধী দলকে নির্বাচন বয়কটের প্ররোচনা দিচ্ছেন


হাসিনা বিরোধী দলকে নির্বাচন বয়কটের প্ররোচনা দিচ্ছেন

জিয়াউদ্দিন সাইমুম
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার চলতি সংখ্যায়ও বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন ও ভাষ্য ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে নির্বাচন বয়কটের প্ররোচনা দিচ্ছেন। ড. ইউনূসকে শেখ হাসিনা আক্রমণ চালিয়ে তার হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর থেকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে বলেও পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে। এ সময়ে বাংলাদেশে একটি পত্রিকা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নির্যাতিত হয়েছেন।
‘পিতার নামে : বাংলাদেশের অতীত নিয়ে বদ্ধ-সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে’ শীর্ষক ইকোনমিস্টের মন্তব্য কলামে বেশক’টি ইস্যু আলোচিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু বিরোধী দলকে দমনই করতে চাইছেন না, বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে, সেই লক্ষ্যে তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় বিরক্তিকর মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন।
কলামটিতে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি সরকারে দায়িত্ব পালনকারী একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ‘নির্যাতন’, ‘হাতকড়া লাগানো’, ‘চোখ বাঁধা’, ‘উলঙ্গ করা’ ও ‘অনাহারে রাখা’ হয়েছে। অন্যদিকে ‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শীর্ষক আরেকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ঠিক উল্টোপথে চলছে’।
‘পিতার নামে’ ইকোনমিস্ট-এর কলামটিতে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে চল্লিশ বছর আগে বাংলাদেশ পৃথক হয়ে যায়। বাংলাদেশীদের জীবনযাত্রার মান এখন পাকিস্তানিদের চেয়ে কিছুটা উন্নত মনে হয়। দুই বছর আগে সেনাশাসকরাও ব্যারাকে ফিরে গেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি শেখ হাসিনার পক্ষেই যাওয়ার কথা, সরকারি কর্মকর্তারা যাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনে জেতে; কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর থেকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে।
এতে বলা হয়, কয়েক বছর পরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন। শেখ হাসিনা এটা প্রত্যাশা করতেই পারেন, জনগণ তাকে প্রথমবারের মতো আবারও নির্বাচিত করবে। কিন্তু তার সাম্প্রতিক আচরণ পর্যালোচনা করে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তিনি শুধু বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নই করতে চাইছেন না, বিরোধী দল যাতে নির্বাচন বয়কট করে বসে, তার জন্য তিনি স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় অস্বস্তিকর মন্তব্যও ছুড়ে দিচ্ছেন।
কলামটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পারস্পরিক শত্রুতা কিংবদন্তিতুল্য। স্বীকার করতেই হয়, অসহিষ্ণু পন্থায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনি হামলা পূর্ণগতিতে চলছে। চলতি মাসের ৮ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যেমন এনেছে, একই দিনে তার নির্বাসিত বড় ছেলের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আবার গত জুনে তার ছোট ছেলের অনুপস্থিতিতেই আদালত ছয় বছরের জেল দিয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের নভেম্বরে খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এসব পদক্ষেপ বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে আইনি বলে মনে হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় আনলে এতে প্রতিহিংসার চিত্রই ফুটে উঠেছে।
কলামটিতে বলা হয়, ‘আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, শেখ হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছেন। পরিণামে এই নোবেলজয়ীকে তারই গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে হয়। তিনি সম্ভবত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণা দিয়ে বড় ভুলটি করেছিলেন। ঢাকায় গুজব রয়েছে, ড. ইউনূসের অন্য পাপ হচ্ছে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন — অথচ শেখ হাসিনা একমাত্র নিজেকেই এই পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন।
কলামটির মতে, সংক্ষেপে এটাই বলতে হয়, ড. ইউনূস শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছাপিয়ে আলোকিত হয়ে উঠছিলেন। শেখ হাসিনা বাবার সম্মানে তাকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাবার প্রতিকৃতি ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কলামটিতে বলা হয়, বংশ ঘিরে এতকিছু চর্চার একটা ফল হচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতার সমান বিশ্বাস করার শামিল হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি একটি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও দুর্নীতি চাঁদাবাজি ও হত্যার ষড়যন্ত্রসহ ১৩টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। অথচ আদালত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিরোধী দলের নেতারাও তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অবিচারের অভিযোগ এনেছেন। আবার বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও এই সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাকে গ্রেফতার করে ‘নির্যাতন’, ‘হাতকড়া পরানো’, চোখ বেঁধে নেয়া’, বিবস্ত্র করা’ ও ‘অনাহারে রাখা’ হয়েছে।
কলামটিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার লোকজন এসব অভিযোগকে অপবাদ হিসেবে উড়িয়ে দেন। মানবাধিকারকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েও এসব বেআইনি তত্পরতার কথা তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি ভয়াবহ। ‘অধিকার’-এর মতো স্পষ্টবাদী মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সরকার যেভাবে টাকা খরচের পন্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তাতে দেশ স্থবির হয়ে যেতে পারে। সরকার কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু ব্যক্তি এটাও দাবি করছেন, সরকার যেভাবে এগুতে চাইছে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ড হয়ে যেতে পারে। এটাকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতাদের বিচার বলছেন।
এতে বলা হয়, সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে, গত ৩০ জুন কেয়ারটেকার সরকারের বিধান বাতিল করে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে বলেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি কারও পরামর্শ না শুনে এই ব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলেছেন। এখানেই শেষ নয়, সংবিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলা হলেই নেমে আসে আইনের খড়্গ। খালেদা জিয়াকেও সম্প্রতি এই ইস্যুতে আদালত তিরস্কার করেছে।
কলামটির উপসংহারে বলা হয়, শেখ হাসিনা তার দেশকে ইন্দোনেশিয়া অথবা ভারতের মতো দেখতে চান না। তিনি তার দেশকে পিতার আমলের দিকে টেনে নিচ্ছেন।
এদিকে ইকোনমিস্টের এই সংখ্যায় ‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়, ‘২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ওই বিজয়ের পেছনে ছিল জাতির এক বুক আশা। প্রত্যাশা ছিল শেখ হাসিনা তার দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবেন, জাতীয় ঐক্য গড়বেন, আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির মধ্যকার ‘উইনার টেকস অল’ (বিজয়ীরাই সব পাবে) চক্রাকার রাজনীতির অবসান ঘটাবেন।’
সাময়িকীটি লিখেছে, ‘তবে আশঙ্কাও ছিল যে, তিনি ওই বিপুল ম্যান্ডেটকে দলীয় সুবিধার কাজে লাগাবেন।’ ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘নির্বাচনের আড়াই বছরের শেষে আশাবাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুরমার হলো। মোটামুটি প্রতিফলন ঘটল আশঙ্কারই।’
ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা সংবিধান সংশোধন। গত বছর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপাকসে যেমনটা করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাও তেমনটাই করেছেন।’
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘অন্যসব পরিবর্তনের মধ্যে এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে, যে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন তত্ত্বাবধান করত। বিএনপি নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাবে কি-না সেটা বলা মুশকিল।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শেখ মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করছেন, সে ব্যাপারে পাবলিক ডিবেট বা বিতর্কও সীমিত। এ সপ্তাহে ইস্যু করা ব্যাংক নোটসহ তার (শেখ মুজিবের) ছবি সর্বব্যাপী।
ইকোনমিস্টের এ বিষয়ে মন্তব্য, ‘কোনো এক দলের নিজেকে জাতির এত ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা সুস্থ স্বাভাবিক লক্ষণ নয়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে ওই সফরে স্বাক্ষর হতে পারে কয়েকটি চুক্তি। এ সফর সম্পর্কে ইকোনমিস্টের বক্তব্য, ‘তিনি (মনমোহন সিং) এবং বাংলাদেশের অন্য বিদেশি বন্ধুরা যদি তাদের বন্ধুত্বকে শুধু একটি দলের সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হিসেবে দেখেন তবেই ভালো।’
উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ : ইমবেসেবল ইউ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ ছেপেছে দি ইকোনমিস্ট। তবে বাংলাদেশের পাঠানো প্রতিবাদ ছাপা হয়েছে পত্রিকাটির চিঠিপত্র কলামে।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)