ইউরোপকে আহমাদিনেজাদের আহ্বান : মার্কিন ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতি করবেন না
বিবিসি, এএফপি
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইউরো নিউজ টিভি চ্যানেলকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাত্কারে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি সরাসরি সম্প্রচারিত ওই সাক্ষাত্কারে ইরান-ইউরোপ সম্পর্ক ও এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। প্রযুক্তি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইরান ও ইউরোপ পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে উল্লেখ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউরোপের জনগণের সঙ্গে ইরানের জনগণের কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না এবং আজ পর্যন্ত ইউরোপের কোনো ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ ইরান করেনি। কিন্তু ইউরোপের কোনো কোনো সরকার ইরানের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। তিনি বলেছেন, দখলদারিত্ব, দাসত্ব ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ সময়ের অবসান হয়েছে। এখন সব জাতি-রাষ্ট্রকে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতার মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে ইউরো নিউজের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যারা দাবি করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে, তারা পশ্চিমা বিজ্ঞানী নন বরং এটা পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের বক্তব্য। ইউরো নিউজকে দেয়া সাক্ষাত্কারে ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে ইরান-ইউরোপ সম্পর্ক চড়াই-উত্রাইয়ের নানা দিক ফুটে উঠেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বহু প্রাচীন এবং বেশকিছু বিষয় এ পারস্পরিক সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করেছে। মার্কিন চাপ সত্ত্বেও সীমিত সংখ্যক কয়েকটি দেশ ছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের ব্যাপক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে ইরান ও ইউরোপের অনেক দেশ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এসব বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে ইউরো নিউজ চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মার্কিন ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষী নীতির ফাঁদে পা দিয়ে ইউরোপের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যাতে ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইউরোপ মার্কিন নীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশটির সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন একতরফা নীতির বিরোধিতা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিদ্বেষী নীতি অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলেছে। অথচ ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র পূর্ণ তত্ত্বাবধানে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে যা চিকিত্সা গবেষণা ও ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হবে এবং ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের ইরানবিরোধী নীতি বা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোকেও শামিল করার মাধ্যমে আসলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সঙ্কট সৃষ্টির মূল কারণ সম্পর্কে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও জড়ানোর যে চেষ্টা করছে তাতে কেবল ইউরোপীয় দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।