সড়ক-মহাসড়কের ৭০ ভাগের অবস্থা নাজুক : যাত্রীদুর্ভোগ চরমে
কাদের গনি চৌধুরী
সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৭০ ভাগের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কোথাও কোথাও বিশাল বিশাল খানাখন্দ। কোথাও সংস্কারের অভাবে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। কোথাও ভেঙে গেছে রাস্তা। সংস্কারের অভাবে ৯১ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক-মহাসড়কের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কাঁচা রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ। এদিকে ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
কোনো কোনো সড়কের অবস্থা এতই নাজুক যে, যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ হেঁটেও চলতে পারেন না। তারপরও বিশাল বিশাল খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এক গর্ত থেকে উঠে আরেক গর্তে পড়ার সময় টাল সামলাতে পারছেন না চালকরা। ফলে গাড়ি বিকল হয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গর্ত। খানাখন্দে ভরা এ রুটের সব বাস, ট্রাককে কচ্ছপ গতিতে পার হতে হয় বলে মাইলের পর মাইল সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্তসহ খানাখন্দে ভরা। মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের ২০ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ স্থানজুড়ে রয়েছে খানাখন্দ। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ধোপাদীঘির পাড় থেকে শুরু হয়ে কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে গর্ত, যানবাহন চলে কচ্ছপ-গতিতে : দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গর্ত। খানাখন্দে ভরা এ রুটে সব বাস, ট্রাককে কচ্ছপ-গতিতে পার হতে হয় বলে মাইলের পর মাইল সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার রাস্তা যানজটের কারণে দেড়ঘণ্টার পথ পার হতে ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। এ রুটের মিরসরাই সদর, নিজামপুর, হাদি ফকিরহাট, বারইয়ারহাট, মিঠাছড়া, বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ডের কিছু স্থানে গর্তগুলো দিন দিন বৃষ্টির পানিতে ছোট ছোট পুকুরের মতো হয়ে যাচ্ছে। গর্তের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক গাড়ির বডি রাস্তার সঙ্গে লেগে আটকে যাচ্ছে। এতে যানজট আরও তীব্রতর হচ্ছে। সকাল আটটায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে মিরসরাই পৌঁছতেই রাত হয়ে যাচ্ছে। টানা বর্ষণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে সেই পুরনো চেহারা আবারও ফিরে এসেছে। ফলে শুরু হয়েছে চিরচেনা যানজট। কোথাও কোথাও খানাখন্দগুলো এত বিশালাকার গর্তে পরিণত হয়েছে যে, সেসব স্থান দিয়ে যান চলাচল একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এই রাস্তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ রাস্তাতেই গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। এতে যানজট আবারও নিত্যসমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। নিজামপুর থেকে শুরু করে বড় দারোগারহাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস এলাকা ও বাজার, বাড়বকুণ্ড, ভাটিয়ারীসহ আরও কয়েকটি পয়েন্টে সড়কের গর্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এসব এলাকা দিয়ে গাড়ি অত্যন্ত ধীরে না চালালে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।
সড়কের সবচেয়ে করুণ অবস্থা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দুই লেনে মাত্র ২৪ ফুট চওড়া এ রাস্তাটিতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সঙ্গী। রাস্তায় একটু পরপরই দেখা যায় ট্রাক-বাস উল্টে আছে, কিংবা পাশে পড়ে আছে। রাস্তার গর্তে, দেবে যাওয়া অংশে পড়ে চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে অহরহ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অসংখ্য স্থানে ভেঙে গিয়ে বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে বাস ও ট্রাক উল্টে প্রতিদিনই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এই সড়কপথে প্রতিদিন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা জেলার হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল করে। সড়কপথে যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাকে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। এখানে যানবাহন চলতে হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দূরত্ব ১১৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ পয়েন্টে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে শতাধিক খানাখন্দ। অনেক জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গেছে। বিশেষ করে বোর্ডবাজার থেকে শালনা ও মাওনা হয়ে ত্রিশাল পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিশাল গত সৃষ্টি হয়েছে। টঙ্গীর বোর্ডবাজারের অদূরে মালেকের বাড়ি থেকে বাসন ইউনিয়নের ঢাকা বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বহুদিন ধরেই খারাপ। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অধীন এ মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে বোর্ডবাজার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট স্থায়ীরূপ নিয়েছে।
ভালুকার পর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। ১১৯ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে দুই ঘণ্টার স্থলে এখন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-ফুলবাড়ীয়া সড়ক, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক, ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়ক, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মধুপুর পর্যন্ত সড়কেরও করুণদশা বিরাজ করছে ।
মহাসড়কের টঙ্গী, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, বাসন, চান্দনা চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা, জৈনাবাজার, সিডস্টোর ও ভালুকা কলেজ এলাকায় অসংখ্য বড় বড় গর্ত রয়েছে। ভারীবর্ষণে গর্তগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। ছোট-বড় গর্তের খানাখন্দ দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক কোনোমতে ধীরে চলাচল করতে পারলেও প্রাইভেটকার, সিএনজি বেবিট্যাক্সি ও রিকশা চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
সিলেট মহাসড়কের শুরুতেই খানাখন্দ : সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সিলেট অঞ্চলে যেখান থেকে জাতীয় মহাসড়কের শুরু, সেখানেই বিরাজ করছে বেহাল দশা। পর্যটন এলাকা জাফলংয়ের মামার দোকান থেকে জাতীয় মহাসড়কের শুরু। দীর্ঘদিন ধরেই মামার দোকানের সামনের সড়কে বড় বড় গর্ত। পুকুরসদৃশ এসব গর্তে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। এছাড়াও জাফলং থেকে তামাবিল হয়ে ঢাকা মহাসড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব রাস্তায় যানচলাচল অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থাও একই। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ১৪টি সেতুই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই বিধ্বস্ত : যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ৪ লেন করবেন। গত ৩ বছরে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ তো দূরের কথা, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখারও চেষ্টা করা হয়নি। ফলে বরিশাল থেকে মাদারীপুরের মস্তফাপুর পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের এখন চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে। এক ঘণ্টার পথ পার হতে লেগে যাচ্ছে ৩-৪ ঘণ্টা। সেইসঙ্গে অহরহ দুর্ঘটনা আর জরাজীর্ণ সড়কের কারণে যানবাহনের নিত্য বিকল হওয়া তো রয়েছেই। কেবল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়ক-মহাসড়কেরই এখন এরকম বেহাল দশা। চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলোর কারণে থমকে আছে দক্ষিণের অগ্রগতি আর উন্নয়নের চাকা। দেশের এই ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা হয় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা, দক্ষিণের ৬ জেলা এবং ৪০ উপজেলার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সিঙ্গেল লেন পদ্ধতিতে নির্মিত সড়কটি রয়ে গেছে এখনও সেই অবস্থায়। বরিশাল নগরী থেকে মাদারীপুরের আগ পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ব্যবহারের পুরোপুরি অনুপযোগী। অসংখ্য খানাখন্দ আর গর্তের কারণে প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে এখন চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেটে মহাসড়কটি চার লেন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরও আগে একই ঘোষণা দেন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। কিন্তু কোনো ঘোষণাই পরে আর আলোর মুখ দেখেনি।
আমাদের কুয়াকাটা প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কে বিরাজ করছে দৈন্যদশা। রাস্তার করুণ দশার কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে সব মিলিয়ে এক হাজার পর্যটকও যাননি সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। অথচ বর্ষায়ই অনন্য হয়ে ওঠে পর্যটনরানী এই সৈকত। সড়কটির উন্নয়ন এবং কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৩টি ফেরির স্থলে ব্রিজ নির্মাণে প্রায় ৩ বছর আগে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। মাঝে মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা দীর্ঘসূত্রতার পর নির্মাণকাজ শুরু হলেও অভিযোগ উঠেছে কাজে নিম্নমান এবং প্রচণ্ড ধীরগতির। ফলে এখন চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী ২২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে আলীপুর-কুয়াকাটা সড়কের অবস্থা নতুন চাষ দেয়া জমির মতো। কোথায় রাস্তা আর কোথায় খানাখন্দ, তা বোঝার উপায় নেই।
পটুয়াখালীর লেবুখালী থেকে দশমিনা পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সড়কে প্রায়ই বন্ধ থাকছে যানবাহন চলাচল। সামান্য বৃষ্টি হলেই আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। লেবুখালীর পাগলা থেকে বগা ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এতই করুণ যে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গর্তে পড়ে আটকে থাকে বিভিন্ন যানবাহন। এ তিনটি মহাসড়ক ছাড়াও গৌরনদী-আগৈলঝাড়া সড়ক, ঝালকাঠি-রাজাপুর-ভাণ্ডারিয়া সড়ক, রাজাপুর-বেকুটিয়া সড়ক, নলছিটি-মোল্লারহাট সড়ক, বরিশাল-নলছিটি সড়ক, বাকেরগঞ্জ-সুবিধখালী-বরগুনা সড়ক, বরগুনা-গর্জবুনিয়া-পাথরঘাটা সড়ক, আমতলী-তালতলী সড়ক এবং বরিশাল-মীরগঞ্জ-মুলাদীর প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই এখন চলাচলের অনুপযোগী।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্ত : ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্তসহ খানাখন্দে ভরা। মাওয়া গোলচত্বর থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি এতই সরু যে, দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। এই রাস্তার দু’পাশে মাটি নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দেবে গেছে বিভিন্ন স্থানে : বনপাড়া-হাটিকুমরুল জাতীয় মহাসড়ক বিভিন্ন স্থানে দেবে গিয়ে বেহাল দশা বিরাজ করছে। এছাড়াও নাটোর-দাশুড়িয়া মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার পথ চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আহাম্মদপুর থেকে মৌখাড়া ও লক্ষ্মীকোলবাজার হয়ে গুরুদাসপুর যাওয়ার রাস্তায় সোনাবাজু ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় এই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এসব রাস্তা ভালো না থাকায় জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের নাটোর অংশে এখনও ৭ কিলোমিটার নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রয়েছে। অর্থাভাবে এই সড়কের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় নাটোর-নওগাঁর যোগাযোগ সহজতর হচ্ছে না। নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংরক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় ৬টি পাকা সড়কের সর্বমোট ৮৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের অনেকাংশই চলাচলের অনুপযোগী।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নির্মাণকাজ হঠাত্ বন্ধ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইটিসিএল চলে গেছে। এতে গৌরীপুর উপজেলার বড়ইতলা থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা যায়, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব পায় আইটিসিএল। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সালের মার্চে কাজ শুরু হয়। ২ বছর ৬ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও প্রায় ৫ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ধীরগতি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে এলাকাবাসী তত্পর থাকলেও কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছিল নিশ্চুপ। আরএনআইএমপি-১ প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে আইটিসিএল গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের বড়ইতলা থেকে শিবপুর পর্যন্ত হেরিংবন করে রেখেছে। পাথরের বদলে ব্যবহার করেছে ইটের নিম্নমানের সুরকি। মিশ্রণে উপাদান সঠিক না থাকায় পুরো রাস্তার ইটের সুরকি উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই বাস, ট্রাক এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে। শিবপুর বাজারের পর থেকে পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত একপাশ ৩ ফুট গভীর করে কেটে বিশাল খালে পরিণত করা হয়েছে। পশ্চিমপাড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ মরাখলা পর্যন্ত একপাশে বালু ফেলে রাস্তায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। পশ্চিমপাড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ নতুন ম্যাক্সিস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৩ ফুট মাটি কেটে গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ : যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা-পাগলা হয়ে যাওয়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের অবস্থাও গত ক’দিনের বর্ষণে নাজুক হয়ে পড়েছে। এ মহাসড়কের জুরাইন অংশে বছর না ঘুরতেই যথারীতি ভগ্নদশা ফিরে এসেছে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে জুরাইন রেলগেট হয়ে মাজারগেট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার ভাঙতে ভাঙতে এমন হয়েছে যে, এ অংশটি দিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরার ুেকানো সুযোগই নেই। পুরো সড়ক বড় বড় গর্তে ভরে গেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির সামনের অংশের অবস্থা আরও খারাপ। সড়কজুড়ে রয়েছে বিশাল গর্ত। একই অবস্থা চলছে বাবুবাজার থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন দিয়ে গাবতলী পর্যন্ত যাওয়া বেড়িবাঁধ সড়কেরও। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সওজের অধীনে বেড়িবাঁধ সড়কটি মেরামত করা হলেও ছয় মাসের মধ্যে তা ভেঙে যায়। বাবুবাজার, ফরাশগঞ্জ, সোয়ারীঘাট, ইসলামবাগ—এসব এলাকায় সড়কের মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানচলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে নারায়ণগঞ্জের সংযোগ সড়কটি শুরু থেকেই খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পর্যন্ত রোডডিভাইডার দিয়ে চারলেন করা হয়। ওই কাজ আজ অবধি শেষ হয়নি। চাষাঢ়া থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত বেহাল দশা। চানমারী মাজার, চাষাঢ়া এসি বাস কাউন্টার, জেলা পরিষদ, এলজিইডি ভবনের সামনের সড়কে রয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এসব গর্তে যানবাহন আটকে গিয়ে উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
শ্রীপুর-মাওনা সড়কটি যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে : প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রীপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী প্রধান সড়ক শ্রীপুর-মাওনা সড়কটি যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাওনা চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুর যাওয়ার পথে দুই কিলোমিটার সড়কে বেহাল অবস্থা এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার ফলে এবং বর্ষা মৌসুমে উপর্যুপরি বর্ষণে ইট, পাথর, সুরকি ও বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে রূপ নিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খানাখন্দে পানি জমে থাকে। দেখলে মনে হবে সড়ক নয় যেন খাল-নালা অথবা ছোট জলাশয়। ফলে দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে এ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। যাত্রীদের দুর্ভোগ অসহনীয় ও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে : কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কটিতে অসংখ্য গতের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কেশবপুর শহর থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাড়ি পর্যন্ত ১৩ কি.মি. সড়কে পর্যটকদের যাতায়াতের কারণে এমনিতে যানবাহনের চাপ দীর্ঘদিন ধরে। তারপরও শীত মৌসুমে শিক্ষাসফর, বনভোজনের বাস ও ২৫ জানুয়ারি থেকে মধুমেলার ৭ দিন ভিআইপিদের গাড়িসহ যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকে এ সড়কে। গত ৪ বছর চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের নওয়াপাড়া থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ৪ কি.মি. রাস্তা সংস্কারের নামে খুঁড়ে ফেলে রাখার কারণে পাটকেলঘাটা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের সব ভারী মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন বগা হাসানপুর হয়ে কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ও ভারী যানবাহনের চাপে এ সড়কটির অধিকাংশ স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে সড়কটির দু’পাশ একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে মালবাহী ট্রাক গর্তের মধ্যে আটকে রাস্তা বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গঙ্গাচড়ায় সড়কের বেহাল দশা : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিসামত-রংপুর সড়কটির বর্তমান বেহাল দশা বিরাজ করছে। সড়কটির গঙ্গাচড়া এলাকায় ৭০০ মিটার এবং রংপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ পাকা করা হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া অংশে ১ কিলোমিটার ও বাকি অংশ রংপুর সদর উপজেলার আওতাধীন। গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে কাঁচা এ রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে চরম যাত্রী দুর্ভোগ : মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কটিতে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে । দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট । সেতু বিভাগ আর সড়ক ও জনপথের রশি টানাটানির কারণে পঞ্চবটী থেকে মুন্সীগঞ্জ মুক্তারপুর ব্রিজ পর্যন্ত সংস্কার বন্ধ হয়ে আছে বছরের পর বছর। ফলে এ রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত ২৩ জুলাইয়ে এ সড়কের শাসনগাঁও এলাকায় একটি ট্রাক গর্তে পড়ে গেলে প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এছাড়া পরিবহন-মালিকদের আন্দোলনের মুখে ফতুল্লা থেকে পাগলা হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করা হলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়কটির চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির বেশির ভাগ অংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। অল্প বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে।
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের নাকাল দশা : ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের নগরকান্দার বাসাগাড়ির প্রায় তিন কিলোমিটার নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া বাসাগাড়ি থেকে ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারে অর্ধশতাধিক স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের নতুন ও পুরান বাসস্ট্যান্ডের কাছে খানাখন্দ এবং রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। রাস্তার অর্ধেকজুড়ে একদিকে বেহাল অবস্থা অন্যদিকে কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে যানবাহন চলাচল অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তার পরও বাধ্য হয়ে এ মহাসড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।
উত্তরা থেকে টঙ্গী-গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশাঃ উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের রাস্তায় অন্তত ৩০টি পয়েন্টে রয়েছে শতাধিক বিশাল খানাখন্দ। অনেক জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গেছে। চন্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া চৌরাস্তা, বড়বাড়ী মোড়, বোর্ডবাজার, মালেকেরবাড়ী মোড়, গাজীপুরা বাসস্ট্য্যান্ড, টঙ্গী সরকারি কলেজ মোড়, টঙ্গী পৌরসভার সামনে, মিলগেট, চেরাগ আলী ও টঙ্গী বাজারসহ অনেকগুলো স্পটে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু দুর্ভোগের মহাসড়ক : খানাখন্দে ভরা ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এখানে প্রাণ ও সম্পদহানি হচ্ছে অজস্র। তীব্র যানজটে স্থবির এ সড়কে এখন ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি। সরেজমিন দেখা গেছে, একটি মহাসড়কের যে ক’টি বৈশিষ্ট থাকে তার কোনোটিই নেই এখানে। পুরো সড়কটাই খানাখন্দে ভরা বেহাল। সড়কজুড়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিটুমিনের স্তর গলিয়ে বেরিয়ে আছে ইট। বৃষ্টিতে বড় বড় গর্তে পানি জমে একাকার হয়ে থাকে। এরই মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকে হাজারও গাড়ি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রতি ঘণ্টায় চলে আট শতাধিক গাড়ি। খানাখন্দের কারণে এসব গাড়ি পড়ছে দুর্ঘটনায়। সড়কের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টাঙ্গাইল অংশের প্রায় ৬৫ কিলোমিটারে। ভাঙাচোরা সড়ক ও তীব্র যানজটে এ অংশটুকু পাড়ি দিতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি সময় ব্যয় করতে হয় যাত্রীদের। সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যমুনা সেতু সড়কও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
চারঘাট-বাঘা মহাসড়ক রাস্তা খানাখন্দকে ভরা : খানাখন্দকে ভরা চারঘাট-বাঘা সড়কের এখন বেহালদশা বিরাজ করছে। চারঘাট-বাঘা মহাসড়কের লিলি সিনেমা হলের মোড়সহ প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তাটি খানা খন্দকের কারণে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা চলতে গিয়ে ঘটছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। চারঘাট-বাঘা সড়কটি গত প্রায় ৭-৮ মাস আগে খানাখন্দক মেরামত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বছর পেরুতে না পেরুতে চারঘাট-বাঘা সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বেহাল দশা : চরম দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে গত বছর সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু কাজে অনিয়মের ফলে বছর না ঘুরতেই সংস্কারকৃত স্থানগুলোতে আবারও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে আমাদের প্রতিনিধি জানান, দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন এ সড়কের মইজ্জ্যার টেক, শিকলবাহা, শান্তিরহাট, মনশার টেক , বাদামতল, নিমতল, শাহগদি মার্কেট, আম্জুর হাট, পটিয়া, চন্দনাইশের রোশনা হাট, বাদামতল, বাগিচা হাট, সাতকানিয়ার পাঠানীপুল ব্রিজ, হাসমত আলীর দোকান, শিশুতলা, মিঠাদীঘির পাড়, সিকদার দোকান, লোহাগাড়া অংশের ঠাকুরদীঘির পাড়, পদুয়া তেওয়ারী হাট, রাজঘাটা, আধুনগর, চুনতি, আজিজনগর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ইট, পাথর, বিটুমিন ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেকদিন আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে সড়কের বাগিচা হাট, হাসমত আলীর দোকান, মিঠাদীঘির পাড়, আধুনগর ও চুনতি এলাকায় অত্যন্ত নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক স্থানে পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। । সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
আড়াইহাজারের সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা : আড়াইহাজারে কয়েকটি সড়ক যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা থেকে আড়াইহাজারের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। আড়াইহাজার থেকে মেঘনা তীরবর্তী বিশনন্দী বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব আরও ১০ কিলোমিটার। এ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কে ২০টি স্থানে খানাখন্দকে ভরা। বিশনন্দী ঘাট থেকে কড়ইতলা হয়ে রামচন্দ্রদী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে অন্তত ১০-১২টি স্থানে ভাঙা। কোনো কোনো স্থানে মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে সড়কের দু’পাশ ভেঙে সরু হয়ে পড়েছে। রামচন্দ্রদী শিমুলতলা, সাদারদিয়া ব্রিজের গোড়ায়, বগাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের রাস্তা ভেঙে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্ট হলেই বাজারে অনেক পানি জমে যায়।
সড়কবিহীন দুই হাজার সেতু : সড়ক সংযোগ না থাকায় সারাদেশে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দুই হাজার সেতু। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ছোট সেতু নির্মাণের পর হতে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সেতুর ৭০ হতে ৯০টি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের এবং বাকিগুলি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদফতরের অধীন। নির্মিত হইয়াছে ১৯৯৩ হইতে ২০০৬ সালের মধ্যে। দুই পাশে রাস্তা নেই, কিন্তু মাঠ বা খালের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এসব পাকা সেতু।
সওজ ও এলজিইডি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে অব্যবহুত সেতুগুলি ব্যবহার
কোনো কোনো সড়কের অবস্থা এতই নাজুক যে, যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ হেঁটেও চলতে পারেন না। তারপরও বিশাল বিশাল খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এক গর্ত থেকে উঠে আরেক গর্তে পড়ার সময় টাল সামলাতে পারছেন না চালকরা। ফলে গাড়ি বিকল হয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গর্ত। খানাখন্দে ভরা এ রুটের সব বাস, ট্রাককে কচ্ছপ গতিতে পার হতে হয় বলে মাইলের পর মাইল সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্তসহ খানাখন্দে ভরা। মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের ২০ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ স্থানজুড়ে রয়েছে খানাখন্দ। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ধোপাদীঘির পাড় থেকে শুরু হয়ে কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে গর্ত, যানবাহন চলে কচ্ছপ-গতিতে : দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার গর্ত। খানাখন্দে ভরা এ রুটে সব বাস, ট্রাককে কচ্ছপ-গতিতে পার হতে হয় বলে মাইলের পর মাইল সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার রাস্তা যানজটের কারণে দেড়ঘণ্টার পথ পার হতে ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। এ রুটের মিরসরাই সদর, নিজামপুর, হাদি ফকিরহাট, বারইয়ারহাট, মিঠাছড়া, বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ডের কিছু স্থানে গর্তগুলো দিন দিন বৃষ্টির পানিতে ছোট ছোট পুকুরের মতো হয়ে যাচ্ছে। গর্তের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক গাড়ির বডি রাস্তার সঙ্গে লেগে আটকে যাচ্ছে। এতে যানজট আরও তীব্রতর হচ্ছে। সকাল আটটায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে মিরসরাই পৌঁছতেই রাত হয়ে যাচ্ছে। টানা বর্ষণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে সেই পুরনো চেহারা আবারও ফিরে এসেছে। ফলে শুরু হয়েছে চিরচেনা যানজট। কোথাও কোথাও খানাখন্দগুলো এত বিশালাকার গর্তে পরিণত হয়েছে যে, সেসব স্থান দিয়ে যান চলাচল একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এই রাস্তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ রাস্তাতেই গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। এতে যানজট আবারও নিত্যসমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। নিজামপুর থেকে শুরু করে বড় দারোগারহাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস এলাকা ও বাজার, বাড়বকুণ্ড, ভাটিয়ারীসহ আরও কয়েকটি পয়েন্টে সড়কের গর্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এসব এলাকা দিয়ে গাড়ি অত্যন্ত ধীরে না চালালে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।
সড়কের সবচেয়ে করুণ অবস্থা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দুই লেনে মাত্র ২৪ ফুট চওড়া এ রাস্তাটিতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সঙ্গী। রাস্তায় একটু পরপরই দেখা যায় ট্রাক-বাস উল্টে আছে, কিংবা পাশে পড়ে আছে। রাস্তার গর্তে, দেবে যাওয়া অংশে পড়ে চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে অহরহ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অসংখ্য স্থানে ভেঙে গিয়ে বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে বাস ও ট্রাক উল্টে প্রতিদিনই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এই সড়কপথে প্রতিদিন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা জেলার হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল করে। সড়কপথে যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাকে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। এখানে যানবাহন চলতে হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দূরত্ব ১১৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ পয়েন্টে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে শতাধিক খানাখন্দ। অনেক জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গেছে। বিশেষ করে বোর্ডবাজার থেকে শালনা ও মাওনা হয়ে ত্রিশাল পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিশাল গত সৃষ্টি হয়েছে। টঙ্গীর বোর্ডবাজারের অদূরে মালেকের বাড়ি থেকে বাসন ইউনিয়নের ঢাকা বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বহুদিন ধরেই খারাপ। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অধীন এ মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে বোর্ডবাজার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট স্থায়ীরূপ নিয়েছে।
ভালুকার পর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। ১১৯ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে দুই ঘণ্টার স্থলে এখন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-ফুলবাড়ীয়া সড়ক, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক, ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়ক, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মধুপুর পর্যন্ত সড়কেরও করুণদশা বিরাজ করছে ।
মহাসড়কের টঙ্গী, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, বাসন, চান্দনা চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা, জৈনাবাজার, সিডস্টোর ও ভালুকা কলেজ এলাকায় অসংখ্য বড় বড় গর্ত রয়েছে। ভারীবর্ষণে গর্তগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। ছোট-বড় গর্তের খানাখন্দ দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক কোনোমতে ধীরে চলাচল করতে পারলেও প্রাইভেটকার, সিএনজি বেবিট্যাক্সি ও রিকশা চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
সিলেট মহাসড়কের শুরুতেই খানাখন্দ : সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সিলেট অঞ্চলে যেখান থেকে জাতীয় মহাসড়কের শুরু, সেখানেই বিরাজ করছে বেহাল দশা। পর্যটন এলাকা জাফলংয়ের মামার দোকান থেকে জাতীয় মহাসড়কের শুরু। দীর্ঘদিন ধরেই মামার দোকানের সামনের সড়কে বড় বড় গর্ত। পুকুরসদৃশ এসব গর্তে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। এছাড়াও জাফলং থেকে তামাবিল হয়ে ঢাকা মহাসড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব রাস্তায় যানচলাচল অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থাও একই। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ১৪টি সেতুই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই বিধ্বস্ত : যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ৪ লেন করবেন। গত ৩ বছরে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ তো দূরের কথা, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখারও চেষ্টা করা হয়নি। ফলে বরিশাল থেকে মাদারীপুরের মস্তফাপুর পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের এখন চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে। এক ঘণ্টার পথ পার হতে লেগে যাচ্ছে ৩-৪ ঘণ্টা। সেইসঙ্গে অহরহ দুর্ঘটনা আর জরাজীর্ণ সড়কের কারণে যানবাহনের নিত্য বিকল হওয়া তো রয়েছেই। কেবল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের সব সড়ক-মহাসড়কেরই এখন এরকম বেহাল দশা। চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলোর কারণে থমকে আছে দক্ষিণের অগ্রগতি আর উন্নয়নের চাকা। দেশের এই ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা হয় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা, দক্ষিণের ৬ জেলা এবং ৪০ উপজেলার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সিঙ্গেল লেন পদ্ধতিতে নির্মিত সড়কটি রয়ে গেছে এখনও সেই অবস্থায়। বরিশাল নগরী থেকে মাদারীপুরের আগ পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ব্যবহারের পুরোপুরি অনুপযোগী। অসংখ্য খানাখন্দ আর গর্তের কারণে প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে এখন চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেটে মহাসড়কটি চার লেন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরও আগে একই ঘোষণা দেন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। কিন্তু কোনো ঘোষণাই পরে আর আলোর মুখ দেখেনি।
আমাদের কুয়াকাটা প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কে বিরাজ করছে দৈন্যদশা। রাস্তার করুণ দশার কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে সব মিলিয়ে এক হাজার পর্যটকও যাননি সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। অথচ বর্ষায়ই অনন্য হয়ে ওঠে পর্যটনরানী এই সৈকত। সড়কটির উন্নয়ন এবং কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৩টি ফেরির স্থলে ব্রিজ নির্মাণে প্রায় ৩ বছর আগে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। মাঝে মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা দীর্ঘসূত্রতার পর নির্মাণকাজ শুরু হলেও অভিযোগ উঠেছে কাজে নিম্নমান এবং প্রচণ্ড ধীরগতির। ফলে এখন চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী ২২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে আলীপুর-কুয়াকাটা সড়কের অবস্থা নতুন চাষ দেয়া জমির মতো। কোথায় রাস্তা আর কোথায় খানাখন্দ, তা বোঝার উপায় নেই।
পটুয়াখালীর লেবুখালী থেকে দশমিনা পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সড়কে প্রায়ই বন্ধ থাকছে যানবাহন চলাচল। সামান্য বৃষ্টি হলেই আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। লেবুখালীর পাগলা থেকে বগা ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এতই করুণ যে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গর্তে পড়ে আটকে থাকে বিভিন্ন যানবাহন। এ তিনটি মহাসড়ক ছাড়াও গৌরনদী-আগৈলঝাড়া সড়ক, ঝালকাঠি-রাজাপুর-ভাণ্ডারিয়া সড়ক, রাজাপুর-বেকুটিয়া সড়ক, নলছিটি-মোল্লারহাট সড়ক, বরিশাল-নলছিটি সড়ক, বাকেরগঞ্জ-সুবিধখালী-বরগুনা সড়ক, বরগুনা-গর্জবুনিয়া-পাথরঘাটা সড়ক, আমতলী-তালতলী সড়ক এবং বরিশাল-মীরগঞ্জ-মুলাদীর প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই এখন চলাচলের অনুপযোগী।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্ত : ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাওয়া অংশের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই গর্তসহ খানাখন্দে ভরা। মাওয়া গোলচত্বর থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি এতই সরু যে, দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। এই রাস্তার দু’পাশে মাটি নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দেবে গেছে বিভিন্ন স্থানে : বনপাড়া-হাটিকুমরুল জাতীয় মহাসড়ক বিভিন্ন স্থানে দেবে গিয়ে বেহাল দশা বিরাজ করছে। এছাড়াও নাটোর-দাশুড়িয়া মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার পথ চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আহাম্মদপুর থেকে মৌখাড়া ও লক্ষ্মীকোলবাজার হয়ে গুরুদাসপুর যাওয়ার রাস্তায় সোনাবাজু ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় এই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এসব রাস্তা ভালো না থাকায় জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের নাটোর অংশে এখনও ৭ কিলোমিটার নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রয়েছে। অর্থাভাবে এই সড়কের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় নাটোর-নওগাঁর যোগাযোগ সহজতর হচ্ছে না। নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংরক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় ৬টি পাকা সড়কের সর্বমোট ৮৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের অনেকাংশই চলাচলের অনুপযোগী।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নির্মাণকাজ হঠাত্ বন্ধ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইটিসিএল চলে গেছে। এতে গৌরীপুর উপজেলার বড়ইতলা থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা যায়, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব পায় আইটিসিএল। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সালের মার্চে কাজ শুরু হয়। ২ বছর ৬ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও প্রায় ৫ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ধীরগতি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে এলাকাবাসী তত্পর থাকলেও কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছিল নিশ্চুপ। আরএনআইএমপি-১ প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে আইটিসিএল গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের বড়ইতলা থেকে শিবপুর পর্যন্ত হেরিংবন করে রেখেছে। পাথরের বদলে ব্যবহার করেছে ইটের নিম্নমানের সুরকি। মিশ্রণে উপাদান সঠিক না থাকায় পুরো রাস্তার ইটের সুরকি উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই বাস, ট্রাক এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে। শিবপুর বাজারের পর থেকে পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত একপাশ ৩ ফুট গভীর করে কেটে বিশাল খালে পরিণত করা হয়েছে। পশ্চিমপাড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ মরাখলা পর্যন্ত একপাশে বালু ফেলে রাস্তায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। পশ্চিমপাড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ নতুন ম্যাক্সিস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৩ ফুট মাটি কেটে গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ : যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা-পাগলা হয়ে যাওয়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের অবস্থাও গত ক’দিনের বর্ষণে নাজুক হয়ে পড়েছে। এ মহাসড়কের জুরাইন অংশে বছর না ঘুরতেই যথারীতি ভগ্নদশা ফিরে এসেছে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে জুরাইন রেলগেট হয়ে মাজারগেট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার ভাঙতে ভাঙতে এমন হয়েছে যে, এ অংশটি দিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরার ুেকানো সুযোগই নেই। পুরো সড়ক বড় বড় গর্তে ভরে গেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির সামনের অংশের অবস্থা আরও খারাপ। সড়কজুড়ে রয়েছে বিশাল গর্ত। একই অবস্থা চলছে বাবুবাজার থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন দিয়ে গাবতলী পর্যন্ত যাওয়া বেড়িবাঁধ সড়কেরও। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সওজের অধীনে বেড়িবাঁধ সড়কটি মেরামত করা হলেও ছয় মাসের মধ্যে তা ভেঙে যায়। বাবুবাজার, ফরাশগঞ্জ, সোয়ারীঘাট, ইসলামবাগ—এসব এলাকায় সড়কের মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানচলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে নারায়ণগঞ্জের সংযোগ সড়কটি শুরু থেকেই খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পর্যন্ত রোডডিভাইডার দিয়ে চারলেন করা হয়। ওই কাজ আজ অবধি শেষ হয়নি। চাষাঢ়া থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত বেহাল দশা। চানমারী মাজার, চাষাঢ়া এসি বাস কাউন্টার, জেলা পরিষদ, এলজিইডি ভবনের সামনের সড়কে রয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এসব গর্তে যানবাহন আটকে গিয়ে উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
শ্রীপুর-মাওনা সড়কটি যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে : প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রীপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী প্রধান সড়ক শ্রীপুর-মাওনা সড়কটি যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাওনা চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুর যাওয়ার পথে দুই কিলোমিটার সড়কে বেহাল অবস্থা এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার ফলে এবং বর্ষা মৌসুমে উপর্যুপরি বর্ষণে ইট, পাথর, সুরকি ও বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তে রূপ নিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খানাখন্দে পানি জমে থাকে। দেখলে মনে হবে সড়ক নয় যেন খাল-নালা অথবা ছোট জলাশয়। ফলে দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে এ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। যাত্রীদের দুর্ভোগ অসহনীয় ও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে : কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কটিতে অসংখ্য গতের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কেশবপুর শহর থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাড়ি পর্যন্ত ১৩ কি.মি. সড়কে পর্যটকদের যাতায়াতের কারণে এমনিতে যানবাহনের চাপ দীর্ঘদিন ধরে। তারপরও শীত মৌসুমে শিক্ষাসফর, বনভোজনের বাস ও ২৫ জানুয়ারি থেকে মধুমেলার ৭ দিন ভিআইপিদের গাড়িসহ যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকে এ সড়কে। গত ৪ বছর চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের নওয়াপাড়া থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ৪ কি.মি. রাস্তা সংস্কারের নামে খুঁড়ে ফেলে রাখার কারণে পাটকেলঘাটা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের সব ভারী মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন বগা হাসানপুর হয়ে কেশবপুর-সাগরদাড়ি সড়কে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ও ভারী যানবাহনের চাপে এ সড়কটির অধিকাংশ স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে সড়কটির দু’পাশ একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে মালবাহী ট্রাক গর্তের মধ্যে আটকে রাস্তা বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গঙ্গাচড়ায় সড়কের বেহাল দশা : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিসামত-রংপুর সড়কটির বর্তমান বেহাল দশা বিরাজ করছে। সড়কটির গঙ্গাচড়া এলাকায় ৭০০ মিটার এবং রংপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ পাকা করা হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া অংশে ১ কিলোমিটার ও বাকি অংশ রংপুর সদর উপজেলার আওতাধীন। গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে কাঁচা এ রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে চরম যাত্রী দুর্ভোগ : মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কটিতে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে । দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট । সেতু বিভাগ আর সড়ক ও জনপথের রশি টানাটানির কারণে পঞ্চবটী থেকে মুন্সীগঞ্জ মুক্তারপুর ব্রিজ পর্যন্ত সংস্কার বন্ধ হয়ে আছে বছরের পর বছর। ফলে এ রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত ২৩ জুলাইয়ে এ সড়কের শাসনগাঁও এলাকায় একটি ট্রাক গর্তে পড়ে গেলে প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এছাড়া পরিবহন-মালিকদের আন্দোলনের মুখে ফতুল্লা থেকে পাগলা হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করা হলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়কটির চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির বেশির ভাগ অংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। অল্প বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে।
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের নাকাল দশা : ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের নগরকান্দার বাসাগাড়ির প্রায় তিন কিলোমিটার নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া বাসাগাড়ি থেকে ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারে অর্ধশতাধিক স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের নতুন ও পুরান বাসস্ট্যান্ডের কাছে খানাখন্দ এবং রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। রাস্তার অর্ধেকজুড়ে একদিকে বেহাল অবস্থা অন্যদিকে কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে যানবাহন চলাচল অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তার পরও বাধ্য হয়ে এ মহাসড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।
উত্তরা থেকে টঙ্গী-গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশাঃ উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের রাস্তায় অন্তত ৩০টি পয়েন্টে রয়েছে শতাধিক বিশাল খানাখন্দ। অনেক জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গেছে। চন্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া চৌরাস্তা, বড়বাড়ী মোড়, বোর্ডবাজার, মালেকেরবাড়ী মোড়, গাজীপুরা বাসস্ট্য্যান্ড, টঙ্গী সরকারি কলেজ মোড়, টঙ্গী পৌরসভার সামনে, মিলগেট, চেরাগ আলী ও টঙ্গী বাজারসহ অনেকগুলো স্পটে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু দুর্ভোগের মহাসড়ক : খানাখন্দে ভরা ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এখানে প্রাণ ও সম্পদহানি হচ্ছে অজস্র। তীব্র যানজটে স্থবির এ সড়কে এখন ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি। সরেজমিন দেখা গেছে, একটি মহাসড়কের যে ক’টি বৈশিষ্ট থাকে তার কোনোটিই নেই এখানে। পুরো সড়কটাই খানাখন্দে ভরা বেহাল। সড়কজুড়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিটুমিনের স্তর গলিয়ে বেরিয়ে আছে ইট। বৃষ্টিতে বড় বড় গর্তে পানি জমে একাকার হয়ে থাকে। এরই মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকে হাজারও গাড়ি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রতি ঘণ্টায় চলে আট শতাধিক গাড়ি। খানাখন্দের কারণে এসব গাড়ি পড়ছে দুর্ঘটনায়। সড়কের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টাঙ্গাইল অংশের প্রায় ৬৫ কিলোমিটারে। ভাঙাচোরা সড়ক ও তীব্র যানজটে এ অংশটুকু পাড়ি দিতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি সময় ব্যয় করতে হয় যাত্রীদের। সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যমুনা সেতু সড়কও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
চারঘাট-বাঘা মহাসড়ক রাস্তা খানাখন্দকে ভরা : খানাখন্দকে ভরা চারঘাট-বাঘা সড়কের এখন বেহালদশা বিরাজ করছে। চারঘাট-বাঘা মহাসড়কের লিলি সিনেমা হলের মোড়সহ প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তাটি খানা খন্দকের কারণে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা চলতে গিয়ে ঘটছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। চারঘাট-বাঘা সড়কটি গত প্রায় ৭-৮ মাস আগে খানাখন্দক মেরামত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বছর পেরুতে না পেরুতে চারঘাট-বাঘা সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বেহাল দশা : চরম দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে গত বছর সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু কাজে অনিয়মের ফলে বছর না ঘুরতেই সংস্কারকৃত স্থানগুলোতে আবারও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে আমাদের প্রতিনিধি জানান, দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন এ সড়কের মইজ্জ্যার টেক, শিকলবাহা, শান্তিরহাট, মনশার টেক , বাদামতল, নিমতল, শাহগদি মার্কেট, আম্জুর হাট, পটিয়া, চন্দনাইশের রোশনা হাট, বাদামতল, বাগিচা হাট, সাতকানিয়ার পাঠানীপুল ব্রিজ, হাসমত আলীর দোকান, শিশুতলা, মিঠাদীঘির পাড়, সিকদার দোকান, লোহাগাড়া অংশের ঠাকুরদীঘির পাড়, পদুয়া তেওয়ারী হাট, রাজঘাটা, আধুনগর, চুনতি, আজিজনগর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ইট, পাথর, বিটুমিন ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেকদিন আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে সড়কের বাগিচা হাট, হাসমত আলীর দোকান, মিঠাদীঘির পাড়, আধুনগর ও চুনতি এলাকায় অত্যন্ত নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক স্থানে পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। । সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
আড়াইহাজারের সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা : আড়াইহাজারে কয়েকটি সড়ক যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা থেকে আড়াইহাজারের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। আড়াইহাজার থেকে মেঘনা তীরবর্তী বিশনন্দী বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব আরও ১০ কিলোমিটার। এ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কে ২০টি স্থানে খানাখন্দকে ভরা। বিশনন্দী ঘাট থেকে কড়ইতলা হয়ে রামচন্দ্রদী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে অন্তত ১০-১২টি স্থানে ভাঙা। কোনো কোনো স্থানে মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে সড়কের দু’পাশ ভেঙে সরু হয়ে পড়েছে। রামচন্দ্রদী শিমুলতলা, সাদারদিয়া ব্রিজের গোড়ায়, বগাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের রাস্তা ভেঙে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্ট হলেই বাজারে অনেক পানি জমে যায়।
সড়কবিহীন দুই হাজার সেতু : সড়ক সংযোগ না থাকায় সারাদেশে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দুই হাজার সেতু। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ছোট সেতু নির্মাণের পর হতে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সেতুর ৭০ হতে ৯০টি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের এবং বাকিগুলি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদফতরের অধীন। নির্মিত হইয়াছে ১৯৯৩ হইতে ২০০৬ সালের মধ্যে। দুই পাশে রাস্তা নেই, কিন্তু মাঠ বা খালের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এসব পাকা সেতু।
সওজ ও এলজিইডি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে অব্যবহুত সেতুগুলি ব্যবহার