ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরের আগেই বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। তারা বলেন, এ সফরে দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ ঠেকাতে সরকার খালেদা জিয়াসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঘায়েলের চেষ্টা করছে।
গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব অভিযোগ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার নামে মামলা ও তারেক রহমানের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
পরিষদের আহ্বায়ক ও দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, এ সরকারের দেশবিরোধী চক্রান্ত ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণমানুষ জেগে উঠছে। এ জাগরণ থামাতে ডিজিএফআই
এক-এগারোর খেলা শুরু করেছে। এর ফাঁদে পা দিয়ে রাজনীতিক ও পেশাজীবীদের মধ্যে আপসকামিতাও শুরু হয়ে গেছে। দেশরক্ষায় আপসকামিতার চোরাবালিতে পা না দিতে তিনি সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য-সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাদা দলের আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, সাবেক সচিব প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব চাষী নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গণশিক্ষা সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্ম সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ড্যাব নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ড. এম এ করিম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, রফিক সিকদার, এনার্জি সল্যুশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও জিয়া ব্রিগেডের মহাসচিব আলহাজ আবুল হোসেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তিতে যেন বিরোধিতা করতে না পারেন, সেজন্যই বেগম খালেদা জিয়ার নামে মামলা দেয়া হয়েছে। দুদক আইনে এ মামলা চলতে পারে না। শুধু বক্তৃতা দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের হটাতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হচ্ছে। অথচ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের ৭-এর (ক) ও (খ) ধারা পরিবর্তনের জন্য যদি জীবন দিতে হয় তাও দেবেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের সব জায়গায় অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ঢাকা আসার আগেই খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে ভারতকে সব উজাড় করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড মেনে নেবে না। এর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, দেশে এখন আইনের মাধ্যমে কোনো রায় হয় না। প্রধানমন্ত্রী রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিচার বিভাগ চালান।
বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী অভিহিত করে প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে দানবীয় পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। এ থেকে রক্ষা পেতে গণআন্দোলন দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই কেবল এ ধরনের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল বলে তার বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানি চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার ভাবছে জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে দেশের স্বাধীনতা ভারতের পদমূলে নিবেদন করতে পারবে। সরকারের এ ভাবনা সফল হবে না। গণমানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। এটা রুখতে এক-এগারোর আদলে ডিজিএফআইর খেলাও শুরু হয়েছে। এ ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও আপসকামিতা শুরু হয়েছে। এসব পরিহার করে জনগণকে নিয়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা হবে।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এ সরকার ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। জনগণের ওপর এ সরকারের কোনো আস্থা নেই। তাই জুলুম-নির্যাতন করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে দমনের চেষ্টা করছে। অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে জনরায়ের বুলেটে আওয়ামী ষড়যন্ত্র নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস ও দেশরক্ষার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এ মামলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।
ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, জনসম্পৃক্ততা ও গণঐক্যের কাছে এ দানব সরকার টিকতে পারবে না। মনোবল নিয়ে রাজপথে থাকলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে চিরতরে বিদায় করা সম্ভব হবে।