কাদেরের শরীরের ক্ষত সেরেছে, মনের ক্ষত যাচ্ছে না
আহমেদ জায়িফ | তারিখ: ২৯-০৮-২০১১
পুলিশের নিষ্ঠুরতার শিকার কাদেরের শরীরের ক্ষতগুলো সেরে গেলেও মনের ক্ষত যাচ্ছে না। দগদগে স্মৃতিগুলো এখনো তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
‘আগে যখন-তখন হল থেকে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন একা যেতে ভয় হয়। কেউ একজন সঙ্গে না গেলে চলতে ভয় লাগে।’ নিজের শঙ্কার কথাগুলো এভাবেই প্রথম আলোকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের।
কাদের বলেন, সেদিনের ঘটনা তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। ১৫ জুলাই, আত্মীয়ের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের হলের উদ্দেশে যাত্রা, পথে ডাকাত সন্দেহে পুলিশের হাতে ধরা পড়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) চাপাতির কোপ, রক্ত, কারাগার, আদালত, হাসপাতাল—সবই মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্নের মতো ভর করে তাঁর ওপর।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাদের বলেন, ‘খিলগাঁও থানায় ওসি যখন চাপাতি হাতে নিলেন, তখনো আমার বিশ্বাস ছিল তিনি নিছকই ভয় দেখাচ্ছেন। কিন্তু দেখতে না দেখতেই ধারালো চাপাতিটা ঠিকই আমার পায়ে এসে পড়ল। আর তখনই রক্ত পড়া শুরু হলো। পানিভর্তি জগ মেঝেতে পড়লে যেভাবে পানি গড়ায়, আমার পা থেকে সেভাবেই রক্ত পড়ছিল। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এখন মনে হয়, এটা আমার দ্বিতীয় জীবন।’
কাদেরের হাতে-পায়ের ক্ষত শুকিয়েছে, তবে আঘাতের চিহ্ন রয়ে গেছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে থেঁতলে যাওয়া আঙুলের নখগুলো রক্ত জমে কালো হয়ে রয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন নখগুলো সব উঠে যাবে। পা, হাত, পিঠ আর আঙুলের জোড়ায় জোড়ায় এখনো ব্যথা।
এ ঘটনা পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবনকে। বন্ধুদের সঙ্গেও আর আগের মতো মিশতে পারছেন না তিনি। তাঁর বন্ধু আনিসুর রহমান বলেন, ‘কাদের এখনো আতঙ্কে থাকে। তার মধ্যে আগের উচ্ছ্বাস নেই।’
তবে বন্ধুরা কাদেরকে আগলে রেখেছেন। বিভাগের শিক্ষকেরাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সবার ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি।
কাদের বলেন, ‘পুলিশের অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই প্রক্টর স্যার আমাকে ডাকাত বলেছেন। আমাকে হল থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রভোস্ট স্যারকে বলেছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’
কাদের জানান, তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন।
কাদেরকে গত ১৫ জুলাই রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে আটক করে খিলগাঁও থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পুলিশ। পরে তাঁর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানার একটি গাড়ি ছিনতাই মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ নিয়ে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনে নামেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে কাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও এই ঘটনায় জড়িত খিলগাঁও থানার তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। ৩ আগস্ট পুলিশের তিনটি মামলা থেকেই জামিনে মুক্তি পান কাদের।
তদন্ত: কাদেরের ঘটনা তদন্তে গত ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ। তাঁরা প্রায় এক মাস তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করেছেন।
কমিটির একটি সূত্র জানায়, তদন্ত প্রায় শেষ। এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। তদন্তে কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতি প্রস্তুতি, অস্ত্র বহন ও গাড়ি ছিনতাই—এসব কোনো অভিযোগেরই ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন কম্পাইল করা হচ্ছে। কাদের আসলেই অপরাধী, না নির্দোষ—সে বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছিনি।’
তবে কমিটির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তদন্তে এমন কিছু পাওয়া যায়নি যে কাদেরকে অপরাধী বলা যায়।’
‘আগে যখন-তখন হল থেকে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন একা যেতে ভয় হয়। কেউ একজন সঙ্গে না গেলে চলতে ভয় লাগে।’ নিজের শঙ্কার কথাগুলো এভাবেই প্রথম আলোকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের।
কাদের বলেন, সেদিনের ঘটনা তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। ১৫ জুলাই, আত্মীয়ের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের হলের উদ্দেশে যাত্রা, পথে ডাকাত সন্দেহে পুলিশের হাতে ধরা পড়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) চাপাতির কোপ, রক্ত, কারাগার, আদালত, হাসপাতাল—সবই মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্নের মতো ভর করে তাঁর ওপর।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাদের বলেন, ‘খিলগাঁও থানায় ওসি যখন চাপাতি হাতে নিলেন, তখনো আমার বিশ্বাস ছিল তিনি নিছকই ভয় দেখাচ্ছেন। কিন্তু দেখতে না দেখতেই ধারালো চাপাতিটা ঠিকই আমার পায়ে এসে পড়ল। আর তখনই রক্ত পড়া শুরু হলো। পানিভর্তি জগ মেঝেতে পড়লে যেভাবে পানি গড়ায়, আমার পা থেকে সেভাবেই রক্ত পড়ছিল। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এখন মনে হয়, এটা আমার দ্বিতীয় জীবন।’
কাদেরের হাতে-পায়ের ক্ষত শুকিয়েছে, তবে আঘাতের চিহ্ন রয়ে গেছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে থেঁতলে যাওয়া আঙুলের নখগুলো রক্ত জমে কালো হয়ে রয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন নখগুলো সব উঠে যাবে। পা, হাত, পিঠ আর আঙুলের জোড়ায় জোড়ায় এখনো ব্যথা।
এ ঘটনা পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবনকে। বন্ধুদের সঙ্গেও আর আগের মতো মিশতে পারছেন না তিনি। তাঁর বন্ধু আনিসুর রহমান বলেন, ‘কাদের এখনো আতঙ্কে থাকে। তার মধ্যে আগের উচ্ছ্বাস নেই।’
তবে বন্ধুরা কাদেরকে আগলে রেখেছেন। বিভাগের শিক্ষকেরাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সবার ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি।
কাদের বলেন, ‘পুলিশের অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই প্রক্টর স্যার আমাকে ডাকাত বলেছেন। আমাকে হল থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রভোস্ট স্যারকে বলেছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’
কাদের জানান, তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন।
কাদেরকে গত ১৫ জুলাই রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে আটক করে খিলগাঁও থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পুলিশ। পরে তাঁর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানার একটি গাড়ি ছিনতাই মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ নিয়ে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনে নামেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে কাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও এই ঘটনায় জড়িত খিলগাঁও থানার তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। ৩ আগস্ট পুলিশের তিনটি মামলা থেকেই জামিনে মুক্তি পান কাদের।
তদন্ত: কাদেরের ঘটনা তদন্তে গত ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ। তাঁরা প্রায় এক মাস তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করেছেন।
কমিটির একটি সূত্র জানায়, তদন্ত প্রায় শেষ। এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। তদন্তে কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতি প্রস্তুতি, অস্ত্র বহন ও গাড়ি ছিনতাই—এসব কোনো অভিযোগেরই ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন কম্পাইল করা হচ্ছে। কাদের আসলেই অপরাধী, না নির্দোষ—সে বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছিনি।’
তবে কমিটির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তদন্তে এমন কিছু পাওয়া যায়নি যে কাদেরকে অপরাধী বলা যায়।’