দেশে আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলছে পুলিশের নির্যাতন। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকার বরং পুলিশের পক্ষে সাফাই গেয়ে নির্যাতনে উত্সাহ দিচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নির্যাতন এবং ভিন্নমত দলনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে এখন পুলিশ। যদিও পুলিশের বেতন হয় জনগণের টাকায়। অতি আওয়ামী পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারের আশকারা পেয়ে আরও বেপরোয়া। বিশেষ করে ডিবি পুলিশের প্রধান কাজই এখন বিরোধী দল দমন ও বিরোধীদলীয় নেতাদের নির্যাতন করা। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের কেন্দ্র হচ্ছে মিন্টু রোডের ডিবি অফিস অথবা ক্যান্টনমেন্ট থানা। অনেক সময় নির্যাতনের জন্য ডিবি অফিস থেকে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। নির্যাতিতদের মতে, ডিবির প্রধান কার্যালয় ও ক্যান্টনমেন্ট থানা যেন বর্তমান সরকারের আমলে বিরোধী নেতাদের টর্চার সেল। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ রয়েছে, যে থানার মামলায় গ্রেফতার করা হয় সেই থানা ছাড়া গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে অন্য কোথাও নেয়া যাবে না। নির্ধারিত তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনা বহাল থাকলেও মানছে না পুলিশ। আইনে রয়েছে পুলিশ রাতের আঁধারে কারও বাড়িতে তল্লাশি বা গ্রেফতার অভিযান চালাতে পারবে না। গ্রেফতারের পর কেউ অসুস্থবোধ করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দিয়ে চিকিত্সা করানোর জন্য পুলিশ রেগুলেশনে (পিআরবি) স্পষ্ট করেই বলে দেয়া আছে। পিআরবির ৩২১নং ধারায় বলা আছে, পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সা দিতে হবে। সরকারি ডাক্তার পাওয়া না গেলে বেসরকারি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে এই বিধানে। যে কর্মকর্তার হেফাজতে অসুস্থ হবেন সেই কর্মকর্তাকেই চিকিত্সার দায়িত্বের কথা পিআরবিতে বলা আছে। কিন্তু এই বিধান কাগজেই সীমাবদ্ধ। অথচ পুলিশ সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা ও আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। অহরহ আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নির্যাতনের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্নজনকে গুম করার পর আর খোঁজ পাওয়া যায় না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার চৌধুরী আলমকে গত বছরের জুন মাসে গুম করেছিল সাদা পোশাকধারী পুলিশ। এরপর বছর পার হয়ে গেছে। চৌধুরী আলমের কোনো খোঁজ নেই।
গত বছরের ১ জুন গ্রেফতার করা হয় দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। তাঁকে ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অভিযান চালায় উর্দিপরা ও সাদা পোশাকের পুলিশ। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাজানো মামলায় তাঁকে অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ৪টি মামলায় তাঁকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। হাইকোর্ট বিভাগ নির্দেশ দেন এসব
রিমান্ডে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। এছাড়া এর আগে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশ মেনে চলতে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এসব আদেশ ও আইনের তোয়াক্কা না করেই গভীর রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় তাঁকে নির্যাতন করে পুলিশ। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ৩ ঘণ্টার বেশি অজ্ঞান থাকার পর জ্ঞান ফিরে তাঁর। ক্যান্টনমেন্ট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। শুধু নির্যাতনের জন্যই তাঁকে নেয়া হয় সেখানে। নির্যাতনে অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়লেও তাঁকে কোনো চিকিত্সা দেয়া হয়নি; বরং যারা ক্যান্টনমেন্ট থানায় গিয়ে নির্যাতন করেছিল, তারা অজ্ঞান অবস্থায় মাহমুদুর রহমানকে ফেলে রেখে সেখান থেকে চলে যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি অফিসে নেয়া হয়। সেখানে তাকে নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে রক্তাক্ত করে পুলিশ। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। পুলিশের নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে তত্ক্ষণাত্ কোনো চিকিত্সা দেয়া হয়নি। পরে আদালত থেকে নির্দেশনা নিতে হয়েছে চিকিত্সার জন্য।
গত ১০ আগস্ট আটকের পর ডিবি পুলিশের নির্যাতনে ২৬ আগস্ট প্রাণ হারিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমেদ। ডিবি পুলিশ বিধি লঙ্ঘন করে রাতের আঁধারে তার বাসায় হামলা চালিয়ে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। ধরে নিয়ে আসে এমইউ আহমেদকে। তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। ডিবি অফিসে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে। নির্যাতনের একপর্যায়ে ডিবি অফিসেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা ১৬ দিন পুলিশ হেফাজতে চিকিত্সাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় এমইউ আহমেদের। পুলিশি নির্যাতনে এমইউ আহমেদের মৃত্যুর পর পুলিশ ও অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন ভিন্ন কথা।
জাতীয় সংসদ সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়াসহ তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছিল ডিবি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় শাহবাগ থানায়। গ্রেফতারের পর তাদের নেয়া হয় ডিবি অফিসে। শুধু ডিবি অফিসে নয়, সংসদ সদস্য পাপিয়াকে রাতের আঁধারে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখানে তাকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বিশ্রী ভাষায় গালি দেয় ডিবি কর্মকর্তারা। টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে বাথরুমে যেতে দেয়নি ডিবি পুলিশ। জাতীয় সংসদের সদস্য এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের এ আচরণই প্রমাণ করছে সাধারণ নাগরিকদের কী পরিণতি হয় ডিবি অফিস ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় নেয়ার পর।
শুধু ডিবি অফিস বা ক্যান্টনমেন্ট থানার টর্চার সেলে নয়, রাজপথেও পুলিশ বেপরোয়া। প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হচ্ছে সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের। গত ৬ জুলাই বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে শেরেবাংলানগরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে রাজপথে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করার দৃশ্য অবাক করেছে সবাইকে। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তখন প্রশ্ন ছিল একটাই—পুলিশ এত সাহস ও ক্ষমতা পায় কোথায়। যার উত্তর পরের দিনই পাওয়া গেছে সরকারদলীয় নেতাদের মুখে। সরকারদলীয় নেতারা পুলিশের পক্ষেই প্রকাশ্যে সাফাই গাইলেন জাতীয় সংসদেও।
৪ জুন বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত এক মহিলা কমিশনারকেও পুলিশ প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে। পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত মহিলা কমিশনার মনোয়ারা মনিকে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় এনে চিকিত্সা দিতে হয়েছে। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য তিনি দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু রেহাই পাননি। তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে বাসার ছাদে ফেলে রাখে পুলিশ। মনোয়ারা মনির মতে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার নয়, লাঠিপেটা করার উদ্দেশেই হামলা চালায়। দীর্ঘদিন চিকিত্সার পর তিনি স্বাভাবিক হয়েছেন।
গত ২৩ এপ্রিল সূত্রাপুর থানায় পুলিশের নির্যাতনে শফিকুল ইসলাম রাজা নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ সুস্থ অবস্থায় ধরে নেয়ার পর থানায় নির্যাতনে সে মারা যায়। গত ২৭ জুলাই খিলগাঁও থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধারী ছাত্র কাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করে পুলিশ। তার পা ভেঙে দেয়া হয় নির্যাতন করে। তাকে ডাকাতির একটি সাজানো মামলায় আসামি দেখিয়ে পরে অসুস্থ অবস্থায় আদালতে পাঠানো হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কাদের নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচ্ছিন্নভাবে দু’-একটি ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিলেও হাইকোর্ট রাজনৈতিক নেতাদের প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনা এড়িয়ে যান। প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনায় বা ডিবিতে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের ঘটনায় কখনও হাইকোর্টকে কোনো নির্দেশনা দিতে দেখা যায়নি। এমনকি কমিশনার চৌধুরী আলম অপহরণ হওয়ার পর হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। যে বেঞ্চ কথায় কথায় সুয়োমোটো রুল জারি করে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের তলব করেন, সেই বেঞ্চ চৌধুরী আলমের বিষয়ে কোনো রুল দিতে রাজি হননি।
ডিবিতে নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিবির ৪ এডিসি ও একজন এসির নেতৃত্বেই চলে সব নির্যাতন। ডিবির এই পাঁচ কর্মকর্তা নির্যাতনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে জুনিয়রদের তারা উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দেন।
গত বছরের ১ জুন গ্রেফতার করা হয় দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। তাঁকে ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অভিযান চালায় উর্দিপরা ও সাদা পোশাকের পুলিশ। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাজানো মামলায় তাঁকে অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ৪টি মামলায় তাঁকে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। হাইকোর্ট বিভাগ নির্দেশ দেন এসব
রিমান্ডে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। এছাড়া এর আগে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশ মেনে চলতে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এসব আদেশ ও আইনের তোয়াক্কা না করেই গভীর রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় তাঁকে নির্যাতন করে পুলিশ। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ৩ ঘণ্টার বেশি অজ্ঞান থাকার পর জ্ঞান ফিরে তাঁর। ক্যান্টনমেন্ট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। শুধু নির্যাতনের জন্যই তাঁকে নেয়া হয় সেখানে। নির্যাতনে অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়লেও তাঁকে কোনো চিকিত্সা দেয়া হয়নি; বরং যারা ক্যান্টনমেন্ট থানায় গিয়ে নির্যাতন করেছিল, তারা অজ্ঞান অবস্থায় মাহমুদুর রহমানকে ফেলে রেখে সেখান থেকে চলে যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি অফিসে নেয়া হয়। সেখানে তাকে নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে রক্তাক্ত করে পুলিশ। পরের দিন আদালতে হাজির করা হলে তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। পুলিশের নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে তত্ক্ষণাত্ কোনো চিকিত্সা দেয়া হয়নি। পরে আদালত থেকে নির্দেশনা নিতে হয়েছে চিকিত্সার জন্য।
গত ১০ আগস্ট আটকের পর ডিবি পুলিশের নির্যাতনে ২৬ আগস্ট প্রাণ হারিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমেদ। ডিবি পুলিশ বিধি লঙ্ঘন করে রাতের আঁধারে তার বাসায় হামলা চালিয়ে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। ধরে নিয়ে আসে এমইউ আহমেদকে। তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। ডিবি অফিসে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে। নির্যাতনের একপর্যায়ে ডিবি অফিসেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা ১৬ দিন পুলিশ হেফাজতে চিকিত্সাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় এমইউ আহমেদের। পুলিশি নির্যাতনে এমইউ আহমেদের মৃত্যুর পর পুলিশ ও অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন ভিন্ন কথা।
জাতীয় সংসদ সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়াসহ তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করেছিল ডিবি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় শাহবাগ থানায়। গ্রেফতারের পর তাদের নেয়া হয় ডিবি অফিসে। শুধু ডিবি অফিসে নয়, সংসদ সদস্য পাপিয়াকে রাতের আঁধারে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখানে তাকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বিশ্রী ভাষায় গালি দেয় ডিবি কর্মকর্তারা। টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে বাথরুমে যেতে দেয়নি ডিবি পুলিশ। জাতীয় সংসদের সদস্য এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের এ আচরণই প্রমাণ করছে সাধারণ নাগরিকদের কী পরিণতি হয় ডিবি অফিস ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় নেয়ার পর।
শুধু ডিবি অফিস বা ক্যান্টনমেন্ট থানার টর্চার সেলে নয়, রাজপথেও পুলিশ বেপরোয়া। প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হচ্ছে সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদের। গত ৬ জুলাই বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে শেরেবাংলানগরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে রাজপথে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করার দৃশ্য অবাক করেছে সবাইকে। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তখন প্রশ্ন ছিল একটাই—পুলিশ এত সাহস ও ক্ষমতা পায় কোথায়। যার উত্তর পরের দিনই পাওয়া গেছে সরকারদলীয় নেতাদের মুখে। সরকারদলীয় নেতারা পুলিশের পক্ষেই প্রকাশ্যে সাফাই গাইলেন জাতীয় সংসদেও।
৪ জুন বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত এক মহিলা কমিশনারকেও পুলিশ প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করে। পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত মহিলা কমিশনার মনোয়ারা মনিকে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় এনে চিকিত্সা দিতে হয়েছে। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য তিনি দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু রেহাই পাননি। তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে বাসার ছাদে ফেলে রাখে পুলিশ। মনোয়ারা মনির মতে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার নয়, লাঠিপেটা করার উদ্দেশেই হামলা চালায়। দীর্ঘদিন চিকিত্সার পর তিনি স্বাভাবিক হয়েছেন।
গত ২৩ এপ্রিল সূত্রাপুর থানায় পুলিশের নির্যাতনে শফিকুল ইসলাম রাজা নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ সুস্থ অবস্থায় ধরে নেয়ার পর থানায় নির্যাতনে সে মারা যায়। গত ২৭ জুলাই খিলগাঁও থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধারী ছাত্র কাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করে পুলিশ। তার পা ভেঙে দেয়া হয় নির্যাতন করে। তাকে ডাকাতির একটি সাজানো মামলায় আসামি দেখিয়ে পরে অসুস্থ অবস্থায় আদালতে পাঠানো হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কাদের নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচ্ছিন্নভাবে দু’-একটি ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিলেও হাইকোর্ট রাজনৈতিক নেতাদের প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনা এড়িয়ে যান। প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনায় বা ডিবিতে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের ঘটনায় কখনও হাইকোর্টকে কোনো নির্দেশনা দিতে দেখা যায়নি। এমনকি কমিশনার চৌধুরী আলম অপহরণ হওয়ার পর হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। যে বেঞ্চ কথায় কথায় সুয়োমোটো রুল জারি করে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের তলব করেন, সেই বেঞ্চ চৌধুরী আলমের বিষয়ে কোনো রুল দিতে রাজি হননি।
ডিবিতে নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিবির ৪ এডিসি ও একজন এসির নেতৃত্বেই চলে সব নির্যাতন। ডিবির এই পাঁচ কর্মকর্তা নির্যাতনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের ক্ষেত্রে জুনিয়রদের তারা উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দেন।