লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা তাহেরের ছোট ছেলে শিবলুর নেতৃত্বে এ হামলায় তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। বহরে থাকা সাংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ তিনটি প্রাইভেট কার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে হামলাকারীরা। আহতরা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। আহত সাংবাদিকরা গত রাতে ঢাকায় ফেরেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লক্ষ্মীপুরে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস উল্লেখ করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এলডিপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা থেকে গিয়ে গতকাল লক্ষ্মীপুর ও সেনবাগে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত পৃথক দুটি সমাবেশে যোগ দেন। বেলা আড়াইটার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের ওয়েলকাম কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জেলা বিএনপির সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সমাবেশ শেষে তার গাড়িবহর স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়ির দিকে রওনা হলে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা তাহের বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। বহরের পেছনের দিকে সাংবাদিকদের গাড়িসহ তিনটি মাইক্রোবাস হামলার শিকার হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা রেডিও টুডের চিফ রিপোর্টার সাহাবউদ্দিন চৌধুরী, বার্তা ২৪ ডটনেটের স্টাফ রিপোর্টার মহসিন হোসেন, আমাদের সময়ের তারেক সালমান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া মঞ্জু, আজিজুল হাকিম আরজুসহ ১৩ জনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত হন। এতে তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
এদিকে লক্ষ্মীপুরে তাহের বাহিনীর এ হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অংশ অভিহিত করে গতকাল তাত্ক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা বিবৃতির মাধ্যমে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা তাহেরের খুনি ছেলে বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড রাষ্ট্রপতির মওকুফ এবং তার ছোট ছেলের নেতৃত্বে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।’
বিকালে সেনবাগের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি খুনিদের ক্ষমা করে দিয়ে বিরোধী মত দমনে কাজে লাগাচ্ছেন—এটা লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসী তাহেরের ছেলেরা দেশবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সরকার পুরো দেশ ও জাতিকে আক্রান্ত করে চলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঈদের পর গণআন্দোলন : বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিকালে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলা চত্বরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দেবেন। আমি তার পক্ষ থেকে সেই আন্দোলনের আমন্ত্রণ জানাতে আপনাদের কাছে এসেছি। তিনি বলেন, আর বিলম্ব নয় আর সময় দেয়া যায় না। আন্দোলনের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুক শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একজন সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ। তার ওপর আক্রমণ গণতন্ত্র ও সংসদের ওপর আক্রমণ। আজ গোটা দেশের মানুষের ওপর এই আক্রমণ নেমে এসেছে।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির যুুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু এমপি, মো. শাহজাহান, মাহবুবউদ্দিন খোকন এমপি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এমপি, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, জয়নুল আবদিন ফারুকের মেয়ে তামান্না ফারুক থিমা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী সারাদেশের মানুষের ওপর হিংস্র হায়েনার মতো হামলা চালাচ্ছে। তারা বিরোধী দল ও মতকে সহ্য করতে পারছে না। লক্ষ্মীপুরে কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে পেছন থেকে লক্ষ্মীপুরের কুখ্যাত তাহের বাহিনীর ক্যাডাররা আমাদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। তারা গাড়ি ভাংচুর করেছে। এমনকি সাংবাদিকদেরও নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই।
তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে, যাতে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যাওয়া যায়। তারা সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এদেশের জনগণ সরকারের এই স্বৈরাচারী ও হঠকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। আগামী নির্বাচনে জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করবে।
তামান্না ফারুক বাবার ওপর হামলার বিচার দাবি করে বলেন, আমার বাবাকে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা আক্রমণ করেছে। দু’জনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। একজন দ্বৈত নাগরিক কীভাবে সরকারি চাকরি করতে পারে? তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে আসিনি। আমি আপনাদের কাছে বাবার ওপর নির্মম হামলার বিচার দিতে এসেছি।
লক্ষ্মীপুরে সমাবেশ : এর আগে দুপুরে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি তাহেরপুত্র খুনি বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেয়ার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুর শহরের ওয়েলকাম কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ সরকার নিজেদের হামলা ও মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কোকোকে সাজা দিয়েছে। এভাবে মামলা দিয়ে জিয়া পরিবার ও বিএনপি ধ্বংসের কর্মসূচি নিয়ে নেমেছে এ সরকার।
তিনি বলেন, এ সরকার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেশের অন্য খুনিদের আরও খুনে উত্সাহিত করেছে। এই সরকার মুখে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা বললেও কোনোটাই মানে না। তারা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষ সুবিচার পাবে; কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন করেনি। তিনি বলেন, এখন এমন সব লোকদের বিচারপতি বানানো হয়েছে, যারা আওয়ামী লীগের ক্যাডার। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বিনামূল্যে সার দেয়ার কথা বলে তিনশ’ টাকার টিএসপি নয়শ’ টাকায় বিক্রি করছে।
মির্জা আলমগীর বলেন, বিদেশিরা বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিচ্ছে, বিদেশ থেকে শ্রমিক ফেরত আসছে, সেদিকে সরকারের খেয়াল নেই। তারা বিরোধী দল নির্মূলে ব্যস্ত। যখন এসব সমস্যার কথা আমরা বলি তখন তারা বলে, এরা সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে একথা বলছে। আসলে সরকার মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়ার জন্য ভিন্ন পথে কথা বলছে।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আপনারা ভাগ্যবান বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় এমপিদের হারাতে পারেনি। এই এমপিদের বাদ দিয়ে সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। এই পঞ্চদশ সংশোধনীতে ভয়ঙ্কর কথা রয়েছে। এক নম্বর কোনো কথা বলা যাবে না। বললে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তিনটি অনুচ্ছেদ আছে, যা কোনোদিন পরিবর্তন করা যাবে না। এটা হলো তাদের পিতার কথা, যা কোরআন-বাইবেলের চেয়েও পবিত্র বলে তারা মনে করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়া হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশী আর জাতি হিসেবে বাঙালি। উপজাতিরা এটা মানেনি।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী আহ্বান করেছেন, এখন দলমত নির্বিশেষে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। আর সে আন্দোলন লক্ষ্মীপুর থেকে শুরু করতে হবে। এখানকার জনপ্রিয় এক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। রমজানের পরে দেশনেত্রী গোটা বাংলাদেশ সফর করবেন। তার নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সক্ষম হব। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়া এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূইয়া, আশরাফ উদ্দিন নিজান, রেহেনা আক্তার রানু প্রমুখ।
আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার সত্যতা স্বীকার করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ছারোয়ার। তিনি জানান, কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক গাড়ি ভাংচুর করেছে। আমরা গিয়ে তাদের পাইনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এ হামলার ঘটনায় পৌর মেয়র তাহেরের সন্ত্রাসী ছেলে শিবলু ও তার বাহিনীকে দায়ী করেছেন।
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, যাত্রাপথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সোনাইমুড়ী উপজেলার বাইপাস মোড়ে উপস্থিত হাজারো জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সভায় তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ এ সরকারের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিন। তিনি বলেন, এই সরকার জুলুমবাজ। তাই জুলমবাজ এই সরকারকে দেশের জনগণ আর এক মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ সরকার দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছে। দেশে জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী, চাল, তেল, ডাল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। একের পর এক গণধোলাইয়ে মানুষ মৃত্যুর ঘটনাই এর প্রমাণ।
সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল হক কামালের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান, পৌর মেয়র মোতাহার হোসেন মানিক, বিএনপি নেতা ওমর ফারুক পাটোয়ারী প্রমুখ।
সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সেনবাগে আয়োজিত সমাবেশ বানচাল করতে স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা গতকাল অটো রিকশা ধর্মঘট ডাকে। উপজেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন নামে একটি গ্রুপ ওই প্রতিবাদ সমাবেশকে রোববার রাতে মাইকিং করে ওই সিএনজি অটোরিকশা ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে সেনবাগ থানার ওসি রতন দাস গুপ্ত জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সিএনজি অটোরিকশা ধর্মঘট চলছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
মির্জা আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস : খালেদা জিয়া
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ নেতা তাহের বাহিনীর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে সব রীতিনীতি উপেক্ষা করে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামের খুনি তাহেরপুত্র বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এ ক্ষমার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও বেশি উত্সাহ দিয়েছেন তিনি। এ হামলার মাধ্যমে প্রমাণ হয় তাহেরের পরিবার কতটা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে একথা জানানো হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরও বিবৃতি দিয়েছেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম ও বিকল্পধারার বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী।
কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলবে আর অন্যদিকে বিরোধী দলের ওপর হামলা চালাবে। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলতে পারে না। বর্তমান সরকার সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমেদ বলেন, সরকার এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করার সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী পৃথক বিবৃতিতে বলেন, এসব হামলার মাধ্যমে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ ধরনের আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ হামলায় আহত সংবাদকর্মীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ঢাকায় যুবদলের পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খুনির ফাঁসির দণ্ড রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের ফল জাতি আজ দেখেছে। খুনি বিপ্লবের ছোট ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা করে সাংবাদিক ও নেতা-কর্মীদের আহত করে প্রমাণ করেছে, সরকার ও রাষ্ট্রপতি দেশব্যাপী সন্ত্রাসকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, লক্ষ্মীপুরের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। গতকাল নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। মহানগর বিএনপি নেতা মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তি, কাউন্সিলর দিদারুল আলম লাভু, কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি, জসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মহিলা নেত্রী জেলি চৌধুরী, বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী, কামরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশের আগে এক বিক্ষোভ মিছিল লাভলেইন, জুবিলী রোড হয়ে দলীয় কার্যালয় এসে শেষ হয়।
এদিকে সন্ত্রাসী তাহেরপুত্রের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা করে সাংবাদিকসহ নেতা-কর্মীদের আহত করার ঘটনায় পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জিয়া পরিষদের সভাপতি কবীর মুরাদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক অলিউল্লাহ নোমান, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহিম, জিয়া ব্রিগেডের সভাপতি জাহিদ ইকবাল, মহাসচিব আলহাজ আবুল হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি আবদুুল লতিফ সম্রাট, অস্ট্রেলিয়া বিএনপির নেতা মনিরুল হক জর্জ, মোসলেহ উদ্দিন আরিফ, ফিনল্যান্ড বিএনপি নেতা কামরুল হাসান জনি প্রমুখ।