About

ABC Radio

Blogger news

মনমোহন আসছেন, শঙ্কায় বাংলাদেশ


মনমোহন আসছেন, শঙ্কায় বাংলাদেশ

বশীর আহমেদ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকা আসছেন, শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ—কী হতে যাচ্ছে কেউ কিছু জানেন না। সরকারের ভূমিকা রীতিমত রহস্যময়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত-হত্যা বন্ধসহ সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য বৈষম্য দূর, ট্রানজিটসহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ঠিক কী হতে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে সবাই অন্ধকারে। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। মনমোহন সিং কি শুধু ভারতের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে ঢাকা আসছেন—এ প্রশ্ন এখন সবার। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, মনমোহনের সফর নিয়ে সরকার যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে আমাদের বড় ধরনের মাশুল গুনতে হতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষে সবকিছু এমন দুই ব্যক্তি দেখাশোনা করছেন, যারা জনপ্রতিনিধি নন। তাদের দু’জনই এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে প্রকাশ্য মন্তব্য করেছেন। একজন তো এমন ভাষায় কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি ভারতেরই কেউ। তাই সন্দেহ এবং আশঙ্কা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
গতকাল ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রীর ঢাকা আসার কথা ছিল। তিনি আসেননি। গতকাল ৩ ঘণ্টার এক অনির্ধারিত সফরে ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন। এক সপ্তাহ আগেই তিনি ঢাকা ঘুরে যান। এবার ঝটিকা সফরে এসে তিনি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দুই উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে। কেন তিনি হঠাত্ ঢাকা এলেন, কী আলোচনা করে গেলেন, সে ব্যাপারে কিছুই বলছে না সরকার। সব মিলিয়ে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহত্ প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধান আসছেন—এটা নিশ্চিতভাবে খুশির খবর হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের জনগণের জন্য। কারণ ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলোর সমাধান হবে ভেবে। কিন্তু এ সফর নিয়ে যা হচ্ছে তাতে কেবল উদ্বেগ আর অজানা ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। ট্রানজিটের নামে ভারতকে করিডোর দিয়ে না জানি কী বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকার যা করছে এবং যেভাবে করছে তাতে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কী হতে যাচ্ছে এ সফরে—এমন প্রশ্ন সবার। অথচ সরকার স্পষ্টভাবে কিছুই বলছে না। তিনি বলেন, ভারতকে আমরা শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই না। ভারতকে আমরা সত্ প্রতিবেশী হিসেবে দেখতে চাই। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব চুক্তি হবে তা আগেই প্রকাশ করতে হবে। গোপন কোনো কিছু দেশের জনগণ মেনে নেবে না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের করদ রাজ্য হবে, তা কেউ মেনে নেবে না। তাই মনমোহন সিংয়ের উচিত বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে যায়, এমন কোনো কিছু না করা।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার মনমোহন সিংয়ের সফরে তেমন কোনো অর্জন হবে না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার এই সফর বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে তেমন কোনো চুক্তি হবে বলে আমি মনে করি না। ভারতকে করিডোর দেয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এতদিন যেসব কথা বলা হয়েছিল সে ব্যাপারে তেমন কিছু হচ্ছে না বলেই মনে হয়। শর্তের ওপর ভিত্তি করে তিস্তার পানিচুক্তির কথা বলা হচ্ছে। আর এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ কখনও রক্ষিত হবে না। চুক্তির অধীনে সীমান্ত-হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কিছুই হবে না। মুখরক্ষার জন্য ছিটমহল বিনিময়ের জন্য চুক্তি হতে পারে। আসলে ভারতের নেতারা কখনও বাংলাদেশের সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী নয়। মনমোহন সিংয়ের সফরের মাধ্যমে সেটা আবার প্রমাণিত হবে। চুক্তি হলেই যে আমরা অনেক কিছু পাব, এমন আশা করা ঠিক হবে না। ভারত অতীতে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে, কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন করেনি।
বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম উদ্বেগ প্রকাশ করে আমার দেশকে বলেন, ড. মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফর এবং ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে শুধু দেশের জনগণ নয়, ক্ষমতাসীন সরকারের বৃহত্ অংশকেও অন্ধকারে রাখা হয়েছে। শুধু অনির্বাচিত দু’জন উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি তদারকি করেছেন। এর ফলে আগামীতে বাংলাদেশকে যদি বড় ধরনের মাশুল দিতে হয় তাহলে এ দুই উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ অনেক বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তিস্তার পানি, সীমান্ত সমস্যাসহ চোরাকারবারী (মাদক) বন্ধ এবং বাণিজ্যের ভারসাম্য দূর করার ক্ষেত্রে ভারত কী করে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের জনগণ। এ তিনটি বিষয়ে আমাদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, ভারতের সঙ্গে কী কী বিষয়ে কী কী মর্মে চুক্তি সই হতে যাচ্ছে তা দেশের জনগণকে জানান। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, মনমোহন সিং ঢাকা সফরে আসছেন ৫ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। এছাড়া তিনি দিল্লিতে পররাষ্ট্র বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিরোধী দলসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে এ সফর নিয়ে বৈঠকে করেছেন। অর্থাত্ মনমোহন সিংয়ের প্রস্তুতির বিষয়টি অল ইনক্লুসিভ। অন্যদিকে এর বিপরীত অবস্থা বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে যা ইচ্ছা তা-ই করছেন। অর্থাত্ এখানে যা কিছু হচ্ছে তা অন এক্সক্লুসিভ।
বিশিষ্ট কূটনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু হয়নি বলেই বিভিন্ন জনে নানা আশঙ্কার কথা বলছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মনমোহনের সফর দিল্লির জন্য একটি বড় সুযোগ। এ সুযোগ তাদের কাজে লাগানো উচিত। ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রীর ঢাকা আসার কথা ছিল। তিনি আসেননি। তাই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির ব্যাপারে সংশয় তৈরি হয়েছে। সীমান্তের ব্যাপারে হয়তো একটি চুক্তি হয়ে যাবে। কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে ভারত। তবে সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে অনেক কিছু হয়; তাই মনমোহন সিংয়ের ঢাকা আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক তিনি শেষ পর্যন্ত কী করেন। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড. মনমোহন সিংয়ের সফরের বিষয়টি দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর দু’জন উপদেষ্টা, যারা জনপ্রতিনিধি নন। ভারতের সঙ্গে আমাদের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর ব্যাপারে তাদের কতটা ধারণা আছে সে প্রশ্ন রয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—যে দুই উপদেষ্টা সবকিছু করছেন তাদের একজন এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ট্রানজিটের জন্য মাশুল চাওয়া অসভ্যতা, এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান রীতিমত রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়গুলো কোথায়? পররাষ্ট্র, যোগাযোগ, বাণিজ্য, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন? কোথায় সংসদ এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটি? তিনি বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ঐতিহাসিকভাবে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে ১৪ হাজার কিউসেক পানি থাকে। আমাদের অর্ধেক পানি পেতে হবে। অর্থাত্ ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী আমাদের প্রাপ্য ৭ হাজার কিউসেক পানি। চুক্তি অনুযায়ী যদি আমরা ৭ হাজার কিউসেকের কম পানি পাই তাহলে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না।
তিনি বলেন, পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত-হত্যা বন্ধসহ সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর সমাধান না হলে ভারতকে কোনোভাবেই ট্রানজিট দেয়া ঠিক হবে না। একতরফা শুধু ভারতের চাহিদা মেটানো আর বিনিময়ে কিছু পাওয়া যাবে না, এটা কোনো বন্ধুত্ব নয়।
চীনকে রুখতেই মনমোহনের ঢাকা সফর : ট্রানজিট, সীমান্ত সমস্যা, নদীর পানিবণ্টন এসব বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং একথা সবারই জানা। কিন্তু এর বাইরেও মনমোহনের ঢাকায় আসার আরেকটা কারণ রয়েছে। আর তা হলো বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক রুখে দেয়া।
মনমোহনের বাংলাদেশ সফরের আগে নয়াদিল্লির ‘ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ ও অ্যানালাইসিস’ গঠিত টাস্কফোর্স শুক্রবার যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে বিষয়টি উঠে এসেছে। খবর বাংলা নিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজে চীন প্রচুর টাকা দিচ্ছে। চীনের এ প্রভাব এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত।’
আর তাই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উন্নত দেশগুলোর মতো ‘স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলার জন্য ‘ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ ও অ্যানালাইসিস’ মহাপরিচালক এন এস শিশোদিয়া রিপোর্টে সুপারিশ করেন।
এদিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে বারবার তাগাদা দিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে আরও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে।
তিনি জানান, ওয়াশিংটন-লন্ডন-প্যারিসের সঙ্গে যেমনি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি, তেমনি ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া উচিত। আর তা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই।
সে কারণেই নাকি এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দিকে বিশেষ নজর ফেলেছেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর করতে তিনি বাংলাদেশে আসছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে কলকাতার একটি সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)