About

ABC Radio

Blogger news

উইকিলিকসে মার্কিন গোপন বার্তা ফাঁস


উইকিলিকসে মার্কিন গোপন বার্তা ফাঁস : শেখ হাসিনা বলেছিলেন সেনা হস্তক্ষেপ হলে ভালোই হবে : ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এক বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে রাজি ছিলেন খালেদা জিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি
২০০৭ সালের শুরুর দিনগুলোতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখেও তখনকার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ২২ জানুয়ারির নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় ছিলেন। খালেদা প্রস্তাব দেন, পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী ভোটার পরিচয়পত্র প্রবর্তনসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে তিনি আবারও নির্বাচন দিতে পারেন। বিরোধী দলহীন স্বল্পমেয়াদি একটি সরকার গঠনের কথা ভেবেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
কিন্তু ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের কোনো প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। তখনকার পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী যদি হস্তক্ষেপ করেই এবং তারা যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই পারে, তাহলে সেটা ভালোই হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসের গোপন তারবার্তা থেকে জানা গেছে এ তথ্য, উইকিলিকস যা প্রকাশ করেছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের হৈচৈ ফেলে দেয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস গত ৩০ আগস্ট প্রায় দেড় লাখ নতুন তারবার্তার সঙ্গে বিউটেনিসের এ সংক্রান্ত দুটি বার্তাও প্রকাশ করেছে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই তারিখের মাত্র দু’দিন আগে ৮ ও ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে দুটি বার্তা পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
বিউটেনিস লেখেন, সেনাবাহিনী ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করে অভ্যুত্থান করতে পারে কিংবা দু’নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠানো হতে পরে—এমন কোনো আশঙ্কা মনে ঠাঁই দিতে প্রস্তুত ছিলেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এ দুটি ‘গুজব’ উড়িয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাও; বরং তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন দিলে তার জন্য ভালোই হবে, কেননা তাতে তিনি নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।
তখনকার নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপির অনমনীয় অবস্থান, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যর্থতার মধ্যে ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা এবং ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ও ব্রিটিশ
হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।
উইকিলিকসে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক হস্তক্ষেপ কিংবা সামরিক আইন জারি এবং দু’নেত্রীকে দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো সম্ভাবনাগুলো নিয়ে খালেদা ও হাসিনাকে ‘সতর্ক’ করে ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ প্রস্তাব দেন এ দুই কূটনীতিক। দু’নেত্রীকেই তারা বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একটি অংশের অনুরাধে তারা সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন এবং তাদের দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের মতো কোনো অসাংবিধানিক ঘটনায় সমর্থন বা উত্সাহ দেবে না।
বিউটেনিস ও আনোয়ার এ-ও বলেন—কেবল দু’নেত্রীর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমেই এ রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হতে পারে। তাদের রাজনৈতিক সমঝোতা হলেই দেশজুড়ে সহিংসতা এবং সামরিক অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।
‘খালেদা জিয়ার প্রস্তাব’ : ৭ জানুয়ারির একান্ত বৈঠকে কোনো ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া পাল্টা অভিযোগ তোলেন—কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যই এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তবে দু’রাষ্ট্রদূতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিউটেনিসের পাঠানো বার্তায়। খালেদা দুই কূটনীতিকের কাছে দাবি করেন, তিনি সবসময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা কখনই সাড়া দেননি।
‘এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। এর বদলে খালেদা প্রস্তাব দেন, পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী ভোটার পরিচয়পত্র প্রবর্তনসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে ১২স থেকে ১৫ মাসের মধ্যে তিনি আবারও নির্বাচন দিতে পারেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালেও এভাবে একতরফা নির্বাচন করে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া। সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি অবশ্যম্ভাবীভাবে পুনর্নির্বাচিত হয়। ওই সরকারের সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চালু করে এবং জুনে আবারও নির্বাচন দেয়, যাতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
উইকিলিকস প্রকাশিত বার্তায় বিউটেনিস লিখেছেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন হলে অনেকেই যে প্রশ্ন তুলবে, সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন খালেদা। তবে তার যুক্তি ছিল, প্রশ্ন উঠলেও তার সেই সম্ভাব্য সরকার হবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ।
আলোচনার একপর্যায়ে বিউটেনিস প্রশ্ন রাখেন, দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার যদি ২২ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে না নেয়, সেক্ষেত্রে বিএনপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কি না।
‘কিন্তু দেশের মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে—এমন সম্ভবনা হেসেই উড়িয়ে দেন খালেদা জিয়া। বড় ধরনের গণআন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সামর্থ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।’
দুই কূটনীতিক বিএনপি চেয়ারপার্সনকে জানান, সংবিধান পরিপন্থী যে কোনো ঘটনা এড়াতেই তারা রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। এসব বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা।
নিজের সরকারের কাছে পাঠানো বার্তায় মন্তব্যের অংশে বিউটেনিস লিখেছেন, বিএনপির একতরফা নির্বাচন পরিকল্পনার সমালোচনা করায় খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন তারা। খালেদা জিয়ার ধারণা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের পিঠ এবার সত্যি সত্যি দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং এ অবস্থা থেকে তারা আর ফিরে আসতে পারবে না।
‘তারচেয়ে সেনা হস্তক্ষেপ শ্রেয়’ মন্তব্য ছিল হাসিনার : খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগের দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে তাকে একই বিষয়ে সতর্ক করে সমঝোতার প্রস্তাব দেন বিউটেনিস ও আনোয়ার চৌধুরী। কিন্তু নির্বাসনে পাঠানোর সম্ভাবনার বিষয়টি হেসেই উড়িয়ে দেন হাসিনা। সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নিয়েও দুই কূটনীতিকের সঙ্গে হালকা মেজাজে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
৮ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে পাঠানো বার্তায় বিউটেনিস লেখেন, ‘হাসিনা পুরো বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি দেশত্যাগে বাধ্য করার গুঞ্জন বিষয়ে তিনি রসিকতা করে বলেছেন, সে রকম কিছু হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও খুব একটা গুরুত্ব দেননি তিনি। সরাসরি সেনা হস্তক্ষেপ বা জরুরি অবস্থা জারির সম্ভবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী যদি হস্তক্ষেপ করেই এবং তারা যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই পারে, তাহলে সেটা ভালোই হবে।’
একবার ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় আবার রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে—এমনটা কেন ভাবছেন, জানতে চাইলে হাসিনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, তেমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলেই তার বিশ্বাস; কেননা অভ্যুত্থান করার মতো বলিষ্ঠ কোনো নেতা সেনাবাহিনীতে নেই বলে মনে করেন তিনি।
তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে যে সময় প্রয়োজন, তার বেশি সেনাবাহিনী ক্ষমতায় থাকতে চাইলে জনগণও তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। দুই কূটনীতিককে তিনি বলেন, তেমন কিছু ঘটার পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হলে দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, রক্তপাত হবে, পুরো রাষ্ট্রই ভেঙে পড়বে।
২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, সেজন্য বিএনপিকেই দায়ী করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি জানত যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই জিতবে। এ কারণে তারা যাতে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে, সুপরিকল্পিতভাবে তেমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আবার বিএনপির হাতে ক্ষমতা তুলে দিতেই ২২ জানুয়ারি নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন হাসিনা।
আপাতত একতরফা নির্বাচন হলেও বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের দাবি পূরণ করে এক বছরের মধ্যে আবারও নির্বাচন দিতে পারে—এমন সম্ভবনার কথা তুলে ধরে দুই কূটনীতিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান—খালেদা জিয়া কোনো সমঝোতার প্রস্তাব দিলে আওয়ামী লীগ তা মানবে কি না।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বরং সামরিক হস্তক্ষেপের মতো বিকল্প নিয়ে ভাবতে রাজি, বিএনপিকে আবারও ক্ষমতায় যেতে দিতে নয়—লিখেছেন বিউটেনিস।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)