সেতুর টোল নিয়ে টেন্ডারবাজি
স্টাফ রিপোর্টার
দেশের বিভিন্ন স্থানের সেতুর টোল আদায়ের কাজ জোর করে বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য শুরু হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে। গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে তিনটি সেতু ভৈরব, ঘোড়াশাল ও কাঞ্চন ব্রিজের কাজ দলীয় নেতাদের পাইয়ে দেয়ার আয়োজনও এরই মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছে বলে পেশাদার ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি অনিয়মের মাধ্যমে এ তিন প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে ৩০ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সওজ’র কর্মকর্তা ও সরকারি দলের ক্যাডাররা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায়ে পিপিআর লঙ্ঘন করে ৩০ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন সম্পন্ন করেছে সরকারি দলের টেন্ডারবাজ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সওজ’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ও অ্যান্ড এম) টেন্ডার গত ১৪ আগস্ট গোপনে প্রচার করা হয়। প্রায় ৭০ কোটি টাকার এ কাজের টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রির শেষ দিন ছিল ২৪ আগস্ট। ২৫ আগস্ট ছিল টেন্ডার খোলার দিন। সরকারি ছুটি বাদ দিলে মাত্র ৮ কর্মদিবস দরপত্র জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়। প্রাক-টেন্ডার সিটিংয়ের ঘরেও কোনো তারিখ বা সময় উল্লেখ ছিল না। শুধু তা-ই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর ফলে এ টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি অধিকাংশ পেশাদার ঠিকাদার জানতে পারেননি। তাছাড়া এত বড় একটি টেন্ডারের জন্য কোনো প্রি-টেন্ডার মিটিং ডাকা হয়নি। সূত্র জানায়, এ ধরনের বড় টেন্ডারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু ৮ কর্মদিবসে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে টেন্ডারে অংশ নেয়ারও সুযোগ ছিল না।
সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায় প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী যে কোনো
কাজের টেন্ডার আহ্বানের পর দরপত্র জমা দেয়ার জন্য ২১ দিন সময় দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া টেন্ডারে অর্থের পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটেও দিতে হয়। অথচ এক্ষেত্রে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য সিপিটিইউ’র ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হওয়ার পর।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময় কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য ও অ্যান্ড এম খরচের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য না রেখে প্রায় তিন গুণ খরচ বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের ৩০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বিগত বছর রেজা কনস্ট্রাকশনকে তিন বছরের জন্য ভৈরব সেতুর টোল আদায়ের কাজ দেয়া হয়েছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। আর এবার ৫ বছরের জন্য দেয়া হয়েছে ৩৬ কোটি টাকায়। একইভাবে এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে ৩ বছরের জন্য ঘোড়াশাল সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় আর এবার একই প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরের জন্য দেয়া হলো ১৮ কোটি টাকায়। অথচ বর্তমান মূল্যের চেয়ে ৫শতাংশ কস্ট বৃদ্ধিই যথেষ্ট ছিল বলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়।
এদিকে সরকারি দলের এই চক্রের বাধার কারণে ঠিকাদাররা গত সোমবার খুলনায় রূপসা খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দিতে পারেননি । জানা যায়, খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের ৫ বছরের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল সোমবার দুপুর ২টা। মোট ৯টি ফরম (শিডিউল) বিক্রি হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাত্র ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে সড়ক ভবনে অবস্থান নিয়ে তাদের পছন্দের ৩টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। এমনকি বর্তমানে যৌথভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান টোল আদায় করছে তাদেরও টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজি লিমিটেড এত দিন এখানে টোল আদায় করে আসছিল।
দুর্নীতিবাজদের দখলে সড়ক বিভাগ : দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ বিভাগের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়। এসব দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট করে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের দুর্নীতির কারণেই রাস্তা মেরামতের কাজ সঠিক সময়ে হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পর সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। অবশেষে সরকার বাধ্য হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কয়েক দুর্নীতিবাজকে ওএসডি করা হয়। এখনও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাড়ি চলে বেশি, টোল আদায় কম : জানা গেছে, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের উত্তরাঞ্চলের সংযোগ সেতু বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বাড়লেও টোল আদায় কমেছে। ২০০৮ সালে ১৭ লাখ ৩৫টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে ২১ লাখ ৪৩ হাজার যানবাহন চললেও কমেছে টোল আদায়ের পরিমাণ। সে বছর আদায় হয় ১০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১০ সালের টোল আদায় ও গাড়ি চলাচলের পরিমাণ এখনও সেতু বিভাগের লিখিত পরিসংখ্যানে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে, গত বছর যে পরিমাণে গাড়ি চলাচল করেছে সে হারে টোল আদায় হয়নি।
সেতুর টোল নিয়ে টেন্ডারবাজি
স্টাফ রিপোর্টার
দেশের বিভিন্ন স্থানের সেতুর টোল আদায়ের কাজ জোর করে বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা। এ নিয়ে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য শুরু হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে। গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে তিনটি সেতু ভৈরব, ঘোড়াশাল ও কাঞ্চন ব্রিজের কাজ দলীয় নেতাদের পাইয়ে দেয়ার আয়োজনও এরই মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছে বলে পেশাদার ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি অনিয়মের মাধ্যমে এ তিন প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে ৩০ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সওজ’র কর্মকর্তা ও সরকারি দলের ক্যাডাররা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায়ে পিপিআর লঙ্ঘন করে ৩০ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন সম্পন্ন করেছে সরকারি দলের টেন্ডারবাজ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সওজ’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ও অ্যান্ড এম) টেন্ডার গত ১৪ আগস্ট গোপনে প্রচার করা হয়। প্রায় ৭০ কোটি টাকার এ কাজের টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রির শেষ দিন ছিল ২৪ আগস্ট। ২৫ আগস্ট ছিল টেন্ডার খোলার দিন। সরকারি ছুটি বাদ দিলে মাত্র ৮ কর্মদিবস দরপত্র জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়। প্রাক-টেন্ডার সিটিংয়ের ঘরেও কোনো তারিখ বা সময় উল্লেখ ছিল না। শুধু তা-ই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর ফলে এ টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি অধিকাংশ পেশাদার ঠিকাদার জানতে পারেননি। তাছাড়া এত বড় একটি টেন্ডারের জন্য কোনো প্রি-টেন্ডার মিটিং ডাকা হয়নি। সূত্র জানায়, এ ধরনের বড় টেন্ডারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু ৮ কর্মদিবসে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে টেন্ডারে অংশ নেয়ারও সুযোগ ছিল না।
সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায় প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী যে কোনো
কাজের টেন্ডার আহ্বানের পর দরপত্র জমা দেয়ার জন্য ২১ দিন সময় দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া টেন্ডারে অর্থের পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটেও দিতে হয়। অথচ এক্ষেত্রে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য সিপিটিইউ’র ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হওয়ার পর।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময় কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য ও অ্যান্ড এম খরচের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য না রেখে প্রায় তিন গুণ খরচ বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের ৩০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বিগত বছর রেজা কনস্ট্রাকশনকে তিন বছরের জন্য ভৈরব সেতুর টোল আদায়ের কাজ দেয়া হয়েছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। আর এবার ৫ বছরের জন্য দেয়া হয়েছে ৩৬ কোটি টাকায়। একইভাবে এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে ৩ বছরের জন্য ঘোড়াশাল সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় আর এবার একই প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরের জন্য দেয়া হলো ১৮ কোটি টাকায়। অথচ বর্তমান মূল্যের চেয়ে ৫শতাংশ কস্ট বৃদ্ধিই যথেষ্ট ছিল বলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়।
এদিকে সরকারি দলের এই চক্রের বাধার কারণে ঠিকাদাররা গত সোমবার খুলনায় রূপসা খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দিতে পারেননি । জানা যায়, খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের ৫ বছরের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল সোমবার দুপুর ২টা। মোট ৯টি ফরম (শিডিউল) বিক্রি হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাত্র ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে সড়ক ভবনে অবস্থান নিয়ে তাদের পছন্দের ৩টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। এমনকি বর্তমানে যৌথভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান টোল আদায় করছে তাদেরও টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজি লিমিটেড এত দিন এখানে টোল আদায় করে আসছিল।
দুর্নীতিবাজদের দখলে সড়ক বিভাগ : দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ বিভাগের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়। এসব দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট করে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের দুর্নীতির কারণেই রাস্তা মেরামতের কাজ সঠিক সময়ে হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পর সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। অবশেষে সরকার বাধ্য হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কয়েক দুর্নীতিবাজকে ওএসডি করা হয়। এখনও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাড়ি চলে বেশি, টোল আদায় কম : জানা গেছে, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের উত্তরাঞ্চলের সংযোগ সেতু বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বাড়লেও টোল আদায় কমেছে। ২০০৮ সালে ১৭ লাখ ৩৫টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে ২১ লাখ ৪৩ হাজার যানবাহন চললেও কমেছে টোল আদায়ের পরিমাণ। সে বছর আদায় হয় ১০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১০ সালের টোল আদায় ও গাড়ি চলাচলের পরিমাণ এখনও সেতু বিভাগের লিখিত পরিসংখ্যানে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে, গত বছর যে পরিমাণে গাড়ি চলাচল করেছে সে হারে টোল আদায় হয়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায়ে পিপিআর লঙ্ঘন করে ৩০ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন সম্পন্ন করেছে সরকারি দলের টেন্ডারবাজ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সওজ’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ও অ্যান্ড এম) টেন্ডার গত ১৪ আগস্ট গোপনে প্রচার করা হয়। প্রায় ৭০ কোটি টাকার এ কাজের টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রির শেষ দিন ছিল ২৪ আগস্ট। ২৫ আগস্ট ছিল টেন্ডার খোলার দিন। সরকারি ছুটি বাদ দিলে মাত্র ৮ কর্মদিবস দরপত্র জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়। প্রাক-টেন্ডার সিটিংয়ের ঘরেও কোনো তারিখ বা সময় উল্লেখ ছিল না। শুধু তা-ই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর ফলে এ টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি অধিকাংশ পেশাদার ঠিকাদার জানতে পারেননি। তাছাড়া এত বড় একটি টেন্ডারের জন্য কোনো প্রি-টেন্ডার মিটিং ডাকা হয়নি। সূত্র জানায়, এ ধরনের বড় টেন্ডারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু ৮ কর্মদিবসে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে টেন্ডারে অংশ নেয়ারও সুযোগ ছিল না।
সূত্র জানায়, ভৈরব, ঘোড়াশাল এবং কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায় প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হয়নি। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী যে কোনো
কাজের টেন্ডার আহ্বানের পর দরপত্র জমা দেয়ার জন্য ২১ দিন সময় দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া টেন্ডারে অর্থের পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটেও দিতে হয়। অথচ এক্ষেত্রে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য সিপিটিইউ’র ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হওয়ার পর।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময় কম্পিউটারাইজড টোল আদায়ের জন্য ও অ্যান্ড এম খরচের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য না রেখে প্রায় তিন গুণ খরচ বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের ৩০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বিগত বছর রেজা কনস্ট্রাকশনকে তিন বছরের জন্য ভৈরব সেতুর টোল আদায়ের কাজ দেয়া হয়েছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। আর এবার ৫ বছরের জন্য দেয়া হয়েছে ৩৬ কোটি টাকায়। একইভাবে এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিংকে ৩ বছরের জন্য ঘোড়াশাল সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় আর এবার একই প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরের জন্য দেয়া হলো ১৮ কোটি টাকায়। অথচ বর্তমান মূল্যের চেয়ে ৫শতাংশ কস্ট বৃদ্ধিই যথেষ্ট ছিল বলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়।
এদিকে সরকারি দলের এই চক্রের বাধার কারণে ঠিকাদাররা গত সোমবার খুলনায় রূপসা খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দিতে পারেননি । জানা যায়, খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের ৫ বছরের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল সোমবার দুপুর ২টা। মোট ৯টি ফরম (শিডিউল) বিক্রি হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাত্র ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে সড়ক ভবনে অবস্থান নিয়ে তাদের পছন্দের ৩টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। এমনকি বর্তমানে যৌথভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান টোল আদায় করছে তাদেরও টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজি লিমিটেড এত দিন এখানে টোল আদায় করে আসছিল।
দুর্নীতিবাজদের দখলে সড়ক বিভাগ : দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ বিভাগের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়। এসব দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট করে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের দুর্নীতির কারণেই রাস্তা মেরামতের কাজ সঠিক সময়ে হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পর সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। অবশেষে সরকার বাধ্য হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কয়েক দুর্নীতিবাজকে ওএসডি করা হয়। এখনও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাড়ি চলে বেশি, টোল আদায় কম : জানা গেছে, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের উত্তরাঞ্চলের সংযোগ সেতু বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বাড়লেও টোল আদায় কমেছে। ২০০৮ সালে ১৭ লাখ ৩৫টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে ২১ লাখ ৪৩ হাজার যানবাহন চললেও কমেছে টোল আদায়ের পরিমাণ। সে বছর আদায় হয় ১০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১০ সালের টোল আদায় ও গাড়ি চলাচলের পরিমাণ এখনও সেতু বিভাগের লিখিত পরিসংখ্যানে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে, গত বছর যে পরিমাণে গাড়ি চলাচল করেছে সে হারে টোল আদায় হয়নি।