About

ABC Radio

Blogger news

ধর্ষণের ঘটনা বাড়লেও নারী সংগঠনগুলো নীরব


ধর্ষণের ঘটনা বাড়লেও নারী সংগঠনগুলো নীরব

অলিউল্লাহ নোমান
দেশে নারী, কিশোরী ও কন্যাশিশুদের ধর্ষণের হার ক্রমেই বাড়ছে। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ১৯৯৪ সালে দিনাজপুরের ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। নারী সংগঠনগুলো তুমুল আন্দোলন করেছিল। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী শুধু গত এপ্রিল মাসে ৮ জন নারী ও ২ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ নেই নারী সংগঠন বা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ গ্রামের ৫ বছরের এক কন্যাশিশুর ধর্ষণের ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার ছেলে এই পাশবিকতায় জড়িত। শুধু ধর্ষণ করেই শেষ নয়, কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে শিশুটির পরিবারকে। মামলা করতে গিয়েও শিশুটির পরিবার বিপাকে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয় কামনা করে। সমিতির পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টের আশ্রয় চেয়ে রিট করা হয়। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১২ মে শিশুটির পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। কেন রিট আবেদন করা হয়েছে এ নিয়ে ঘটনাটির তদন্তকারী
ঠাকুরগাঁও সদর থানার এক এসআই জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নিকে টেলিফোনে হুমকি দেন। ওই এসআই তাকে টেলিফোন করে জানতে চায় কেন মামলা করা হয়েছে। এও বলেছেন, জানেন ধর্ষণকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। ধর্ষণকারীর পক্ষে সরকারি সংস্থাগুলোর হুমকি-ধমকির এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত এপ্রিল মাসে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে তৈরি অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী এপ্রিল মাসে মোট ৬৩ নারী এবং কন্যাশিশু শিকার হয়েছে ধর্ষণের। এদের মধ্যে ২৪ জন নারী এবং ৩৯ জন কন্যাশিশু। এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ৩৯ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে যত জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে সে তুলনায় এপ্রিল মাসে অনেক বেশি হয়েছে। ৩ মাসে যা হয়েছে, এপ্রিল মাসেই হয়েছে তার অর্ধেক। এপ্রিলে ২৪ জন নারীর মধ্যে ৮ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৩৯ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহে অ্যাসিসটেম্লট সাব ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হক কর্তৃক ১ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এপ্রিলে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা আগের যে কোনো মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
‘অধিকার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ১২২ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩ জন প্রাপ্ত বয়স্কা নারী ও ৬৯ জন কন্যাশিশু। ৫৩ জন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর মধ্যে ১১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ২৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৬৯ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৫ জন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর একজন আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় এএসআই কর্তৃক একজন গৃহবধূ, যশোরে এক গৃহবধূ আনসার কর্তৃক এবং জয়পুরহাটে ৮ বছরের কন্যাশিশু গ্রাম পুলিশের ধর্ষণের শিকার হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার আলোকে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৈরি করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালে ২ হাজার ৯০০ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৯ জন ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালে ২২৬ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয় ৭৩ জন এবং ৩১ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
কেস স্টাডি-১ : গত ৩ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ গ্রামের আবু সাঈদের ৫ বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে সনেট। তার বাবা আবদুল কাদের আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। ধর্ষিতা শিশুটির বাবা ও মাকে নানাভাবে হুমকি দেয় ঘটনা কাউকে না বলার জন্য। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও তাদের হুমিক দেয়া হয়। এক পর্যায়ে থানা মামলা না নিতে চাইলে তারা জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয় নেয়। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন দায়ের করে প্রতিকার চায়। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ গত ১২ মে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় ধর্ষিতা শিশুটির পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। একই সঙ্গে ধর্ষিতা শিশুটির সব মেডিকেল রিপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপনের জন্য বলা হয়। ধর্ষণের সময় শিশুটির পরনের জামা সংগ্রহ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নিকে নির্দেশ দেয়া হয়। ধর্ষিতা শিশুটির মা হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নির চেম্বারে আমার দেশকে বলেন, ধর্ষণকারী সনেটের বাবা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। এলাকায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
কেস স্টাডি-২ : গত ১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যশোরে দশম শ্রেণীর এক মুসলমান ছাত্রী সিঁদুর পরতে না চাওয়ায় তাকে গণধর্ষণ করা হয়। শিশির ঘোষ নামে এক যুবক এ ঘটনার মূল হোতা। শিশির ঘোষ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কেস স্টাডি-৩ : গত ২৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পূজামণ্ডপ থেকে ফেরার পথে এক কিশোরীকে অপহরণের পর ছাত্রলীগের ১০ কর্মী পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ধর্ষিতার বাবা যাতে আইনগত ব্যবস্থা না নেন সেজন্য দুর্বৃত্তরা ধর্ষিতার পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ৩টি সাদা কাগজে ধর্ষিতা ও তার বাবাকে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন।
অধিকারের বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পূজা দেখে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণীর এক কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী রাজিব, সোহেল, রানা, রিগ্যান, রাতুল, পবিত্র, আজিব, সুমন, রাজিব বিশ্বাস ও জুয়েল পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পুলিশ রাজিব ও সোহাগকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়।
কেস স্টাডি-৪ : পিরোজপুরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের সময় ভিডিওচিত্রে সেই অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করা হয়। ভিডিওচিত্রটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলে। পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসান কবীর মামুন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় তার বন্ধুদের দিয়ে ভিডিওচিত্রটি ধারণ করে। এই দৃশ্য সিডি করে বাজারজাত করা হয়। একজন নারী নেত্রী ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের এক নেতার ধর্ষণের সেঞ্চুরি উত্সবকেও হার মানাচ্ছে এসব ঘটনা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরি উত্সব করেছিল। পরে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
কেস স্টাডি-৫ : গত ৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার এক নববিবাহিত নারী তার স্বামীকে নিয়ে পাগলার নুরবাগে বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে গেলে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আবদুল হক ওরফে হক্কার নেতৃত্বে শরীফ, আমজাদ, স্বপন, তাজুল ইসলাম, ওসমান মোল্লা ও সুমন তাকে তুলে নিয়ে চান মিয়ার বাড়িতে গণধর্ষণ করে। পুলিশ এ ঘটনায় ৩ ধর্ষক আমজাদ, তাজুল ইসলাম ও ওসমান মোল্লাকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামি আবদুল হক ওরফে হক্কাকে গ্রেফতার করেনি।
কেস স্টাডি-৬ : গত ১৭ নভেম্বর নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১২) গণধর্ষণ করে ১২ যুবলীগ কর্মী। গণধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী দীর্ঘদিন নোয়াখালীর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিল। ধর্ষণের ঘটনায় পরিবারটি বিপন্ন হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় যুবলীগ কর্মী হেদায়েতউল্লাহ ও জহির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও অন্যদের ব্যাপারে তখন ছিল উদাসীন।
কেস স্টাডি-৭ : গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার সদরঘাটে ১১ বছরের এক কিশোরীকে ৫ জন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একটি ফাঁকা লঞ্চে ডেকে নিয়ে ভিক্ষুক কিশোরীকে ধর্ষণের পর অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
কেস স্টাডি-৮ : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নোয়াপাড়ায় চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার সময় গত ১ সেপ্টেম্বর অপহরণ করা হয়। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে লাশ গোয়ালঘরের মাটিতে পুঁতে রাখে ধর্ষকরা। পুলিশ ও গ্রামের মানুষ গত বছর ৩ অক্টোবর তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত দুই সহোদর মানিক ও সুজনসহ তাদের মাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ পরিবারটিও সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
কেস স্টাডি-৯ : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জলসুখা গ্রামের অধিবাড়ি এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার স্পিনিং মিলের শ্রমিক এক কিশোরী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে তাকে আটক করে দুর্বৃত্তরা। তাকে রাস্তার পাশে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)