ভয়ংকর সাপ
বুশমাস্টার
আমাজনের তীরে কিলবিল করে বিষাক্ত সব সাপ। বুশমাস্টার সেগুলোরই একটা। পনের ফুট লম্বা এই সাপের সবচেয়ে চওড়া অংশ এক ফুটও হয়ে থাকে। ভয়ানক হিংস্র স্বভাব এর। ওদের বিষাক্ত ছোবলে মুহুর্তে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে কারও।
আর একটা বিষাক্ত সাপ হল নাকানিনা। এরা দেখতে বিশাল। কোর প্ররোচনা ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। চোখের সামনে মানুষ দেখতে পেলেই হল হা হা করে ছুটে আসে। এরা অবিশ্বাস্য গতিতে আক্রমন করতে পারে।
যে সাপকে নিয়ে আমাজনের গল্প কিংবদন্তীর পর্যায়ে গেছে তার নাম অ্যানাকোন্ডা।। আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সকল সাপের রাজা এরা। কেউ কেউ বলেন তারা ৬৫ ফুট লম্বা অ্যানাকোন্ডাও দেখেছেন। এরা জলে স্থলে সমান ভয়ংকর। পানিতে এদের নাম ওয়াটার বোয়া। পাখি কিংবা স্তন্যপায়ী প্রাণীই এর প্রধান লক্ষ্য। সুযোগ পেলে মানুষকেও খপ করে ধরে ফেলে। এরা কাউকে একবার ভয়ংকর বাঁধনে জড়ালে পারলে তার দফা-রফা শেষ।
অ্যানাকোন্ডার নি:শ্বাসে ভয়ানক দূর্গন্ধ। নি:শ্বাসের গন্ধ দিয়ে এরা নাকি শিকারকে সম্মোহিত করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ১১ টি সাপ!!(বি.দ্র.-ভীতুদের না দেখাই ভাল)
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সাপকে খুব ভয় পান। সাপ দেখলেই গা শিরশির করে উঠে। আসলে আমিও তাদের একজন।
লিখার আগে নিজেকে অনেক সাহসী সাহসী লাগলেও এখন আমার রীতিমত ভয় লাগছে। যদি স্বপ্নে সাপগুলো দেখি। আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা কর। একটা ভাল উদ্দেশ্যে শুধু সবাইকে জানানো ও সাবধান করার জন্যই আমি এ টিউনটি করেছি।
এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে, সাপ পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত এবং ভয়ংকর প্রানীর একটি। কিন্তু আমাদের বাস্তুতন্ত্রের জন্য সাপের গুরত্ব অপরিসীম। বিরক্ত করা ছাড়া সাপ সাধারণত কোন প্রানীকেই আক্রমন করে না। এরা শুধু আত্নরক্ষার জন্যই ছোবল মারে।
প্রকৃতপক্ষে আমরা সাপকে যেমন প্রচন্ড ভয় পাই, সাপও আমাদেরকে এবং অন্যান্য বড় প্রানীকে প্রচন্ড ভয় পায়। শুধু আগ্রহের কারনেই নয়, নিজের বা অন্য কারো জীবন বাচানোর জন্যে হলেও বিষাক্ত সাপ সম্পর্কে সামান্য ধারনা থাকা উচিত।
নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ১০ টি সাপের সচিত্র বর্ণনা দেয়া হল:
হাইড্রোফিলিস বেলচেরি (Hydrophis Belcheri )
অনেকে ইনল্যান্ড তাইপানকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হিসেবে ধারনা করলেও পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হল বেলচেরি। প্রকৃতপক্ষে এটি ইনল্যান্ড তাইপানের চেয়েও প্রায় ১০০ গুন বেশি বিষাক্ত।
সমুদ্রে বসবাসকারী এ সাপটি ০.৫ মিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথা শরীর থেকে ছোট এবং এর পেছনে মাছের মত সাতারে সহায়ক লেজ রয়েছে। এ সাপটি একবার শ্বাস নিয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পানির নিচে ঘুরে বেড়াতে বা ঘুমাতে পারে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত এ সাপটি খুবই ভদ্র স্বভাবের। এটি সাধারনত কাউকে কামড়ায় না। তবে বার বার একে বিরক্ত করলে এটি কামড় দিতে পারে। এ সাপটি নিয়ে বেশি ভয়ের কারনও নেই কারন এটি কাউকে কামড়ালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষ ডুকায় না। তবে কারো ভাগ্য খারাপ হলে এর বিষাক্ত ছোবলে ১৫মিনিটের কম সময়েই তার মৃত্যু ঘটতে পারে। মাত্র কয়েক মিলিগ্রাম বেলচেরির বিষ ১০০০ এর বেশি লোক বা ২৫ লক্ষ ইদুরকে মারার জন্য যথেষ্ট্য।
তাইপান সর্প পরিবার (Taipan Snake Family)
সমগ্র পৃথিবীতে না হলেও ভূমিতে বসবাস কারী সাপগুলোর মধ্যে তাইপান সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত এবং প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর প্রজাতির সাপ।এর বিষাক্ত ছোবলে একজন মানুষ সর্বোচ্চ এক ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকারও কোন রেকর্ড নেই।
তাইপান সর্প পরিবারের পাঁচটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইনল্যান্ড তাইপান অনেক বেশি বিষাক্ত। ইনল্যান্ড তাইপানের ক্ষেত্রে এক ছোবলে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বিষ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। এর কয়েক মিলিগ্রাম বিষই ১০০ লোক বা প্রায় ২.৫ লক্ষ ইদুর মারার জন্য যথেষ্ট।
এ সাপগুলো ১.৮ মিটার থেকে ৩.৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সবচেয়ে ভয়ংকর ধারনা করা হলেও এরা খুব সহজেই বশ মানে। তবে একে কোন কারনে বিরক্ত করা হলে শিকার জায়গা থেকে নড়ার আগেই এটি প্রচন্ড বেগে কয়েক বার ছোবল দিয়ে দিতে পারে।
ক্রেইট (Krait)
তাইপানের পর এ সাপটি ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এ সাপগুলো এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়। এরা যেকোন সাধারন কোবরা থেকে প্রায় ১৫গুন বেশি বিষাক্ত। দিনের বেলায় নিষ্ক্রিয় থাকলেও এরা রাতের বেলায় বের হয়। মানুষের শ্লিপিং বেগ, বুট বা তাবুর নিচের লুকানো এই সাপের একটি বড় অভ্যস। ইন্ডিয়ান ক্রেইট ইন্ডায়ার সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ।
ফিলিফাইন কোবরা (Philippine Cobra)
ভূমিতে বসবাসকারী পৃথিবীর ৩য় সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ এটি। এরা প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ক্রেইটের পরেই এরা সবচেয় বিষাক্ত প্রজাতির সাপ। শারীরিক অঙ্গভঙ্গির সাথে সবচেয়ে বেশি সাড়া দেয় বলে ফিলিফাইনের সবচেয়ে বিষাক্ত এ সাপগুলো সাপুড়েরা সাপের নাচ দেখানোর সময় বেশি ব্যবহার করে। সকল কোবরার মত এরাও রেগে গেলে মাথার দুইপাশে হুড দেখা যায়।
ইন্ডিয়ান কিং কোবরা (King kobra)
ভূমিতে বসবাসকারী সাপের মধ্যে ৪র্থ বিষাক্ততম সাপ হল ইন্ডিয়ান কোবরা। ফিলিফাইন কোবরার পর এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এর সাধারনত ৩.৫ মিটার থেকে ৫.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর পৃথিবীর বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলেও এরা মানুষকে তুলনামুলক কমই কামড়ায়। এ সাপ ছোবলের ভয়ে অন্য বিষাক্ত সাপগুলোকে আক্রমন করে না। তবে অবিষাক্ত সাপই এদের অন্যতম প্রধান খাদ্য। এর বেশি ক্ষুধার্ত হলে বিষাক্ত সাপকেও এমনকি নিজের প্রজাতির সাপকেও হজম করে। এরা জংলি প্রজাতির এবং সাপের খাদক হিসেবে পরিচিত। এরা ছোবলের সময় যেকোন সাপ থেকে বেশি বিষ নিক্ষেপ করে । স্ত্রী কিং কোবরা এর ডিমের চারপাশে বাসা বাঁধে। এর বাসার কাছাকাছি কিছু এলে এটি অশ্বাভাবিক আক্রমনাত্নক আচরন করে। কিং কোবরা খুবই গভীল জঙ্গলের অধিবাসী।
রাসেলস্ ভাইপার (Russell’s Viper)
ভয়ংকর দর্শন এ সাপটি ভূমিতে বসবাসকারী পৃথিবীর বিষাক্ত সাপগুলো মধ্যে পঞ্চম।এটি খুবই রাগী ধরনের সাপ। সম্ভবত অন্য যেকোন বিষাক্ত সাপের চেয়ে এ সাপই মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এটি কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে এবং এত প্রচন্ড বেগে শিকারকে ছোবল মারে যে পালিয়ে যাওয়ার আর কোন উপায় থাকে না। এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যারা খামার বাড়ি থেকে শুরু কলে গভীর জঙ্গল পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে। এরা সাধারনত ১ মিটার থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে।
ব্লাক মাম্বা (Black Mamba)
আফ্রিকার আতংক এ সাপটি ভূমিতে বসবাসকারী সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলো মধ্যে ৬ষ্ঠ। এরা আক্রমনের জন্য খুবই কুখ্যাত। এরা আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর সাপ এবং সাধারন মানুষ এদের থেকে যথেষ্ট সম্মানের সাথেই দূরে থাকে। এটি শুধু প্রচন্ড বিষাক্তই নয় প্রচন্ড আক্রমনাত্নকও। এর কামড় থেকে শিকারের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। এটি ভূমিতে বসবাসকারী সকল সাপ থেকে দ্রুত গতির এবং ঘন্টায় প্রায় ১৬ থেকে ১৯ কি.মি. যেতে পারে। এর বিভিন্ন প্রজাতিও খামারবাড়ি থেকে গভীর বন পর্যন্ত ছড়িযে ছিটিয়ে বাস করে। এ প্রজাতির সাপগুলো প্রায় ৪.৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
হলুদ চোয়াল বিশিষ্ট্য টম্মিগফ (Bothrops Asper)
স্থানীয় ভাবে ফার-ডি-ল্যান্স নামে পরিচিত এ সাপটি ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলো মধ্যে ৭ম বিষাক্ত। এরা প্রচন্ড রাগী ধরনের সাপ এবং সামান্য উত্তেজিত করলেও প্রচন্ড ছোবল মারতে পারে। এ সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর হার খুবই বেশি।এ সাপের কামড়ে মানুষের দেহকোষ এত মারাত্নক ভাবে ধ্বংস হতে থাকে যে শরীরে পঁচন দেখা দেয়। সাধারণত কৃষি জমি এবং খামার বাড়িতে এদের দেখা যায়। এর গড়ে ১.৪ মিটার থেকে ২.৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
মাল্টি-ব্র্যান্ডেড ক্রেইট (Multibanded krait)
এটি ভূমিতে বসবাসকারী পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের মধ্যে ৮ম। সাধারন ক্রেইটের মত এরাও রাতের বেলা খুবই সক্রিয় হয়ে উঠে। এদেরকে সাধারণত জলাভূমিতে মাছ, ব্যঙ্গ বা অন্য সাপের সন্ধানে বের হতে দেখা যায়। এরা গড়ে ১.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চীন ও ফিজিতে এদের বেশি দেখা যায়।
টাইগার স্নেক(Tiger Snake)
এরা ভূমিভিত্তিক পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে ৯ম। এরা অস্ট্রেলিয়া বসবাসকারী একধরনের সাপ যারা শরীর প্রচুর পরিমানে বিষ তৈরী করতে পারে। এদেরকে শুষ্ক অঞ্চল, তৃনভূমি, জলাভূমি, মানববসতি সব জায়গায়ই দেখা যায়। এরা সাধারণত ১.২ মিটার থেকে ১.৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
যারারারকুসসু (Jarararcussu)
এরা ভূমিতে বসবাসকারী সাপের মধ্যে বিষাক্ততার দিক দিয়ে ১০ম। এরা প্রতি কামড়ে ৮০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বিষ ডুকিয়ে দিতে পারে। এর এক ছোবলে ব্যবহৃত বিষ ৩২ লোক মারার জন্য যথেষ্ট। এদেরকে প্রায়ই গাছে সর্পিলভাবে পেঁছিয়ে থাকতে দেখা যায়। এরা সর্বোচ্চ ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
বিষাক্ত সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে করনীয়:
- বড় ঝোপ , বড় বড় ঘাস, বড় পাথর, বড় গাছ ইত্যাদির পাশে ঘুমানো উচিত নয়। কারনে এসব জায়াগায় সাপ লুকিয়ে থাকতে পারে।
- স্লিপিং ব্যাগ অন্ধকারে না রেখে আলো বাতাসযুক্ত খোলা জায়গায় রাখা উচিত। মশারি শক্তভাবে বেঁধে বেগের নিচে চাপা দিয়ে রাখতে হবে।
- আগে পরীক্ষা না করে কোন অন্ধকার জায়গা, পাথরের ফাঁকা জায়গা বা গাছের ছিদ্রে হাত দেয়া উচিত নয়।
- ফেলে রাখা কোন গাছের অপর পাশে নজর না দিয়ে পা রাখা উচিত নয়, কারন অপর পাশে ছায়ায় কোন সাপ ঘুমিয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আগে গাছের উপর উঠে অপর পাশ দেখে নেয়া উচিত।
- নিচের দিকে লক্ষ না করে কোন বড় ঝোপ বা ঘাসের মধ্য দিয়ে হাঁটা উচিত নয়।
- বিষাক্ত নয় এটা নিশ্চিত না হয়ে কোন সাপ ধরা উচিত নয়।
- কিছুক্ষন আগে মারা কোন সাপ ধরতে যাওয়া উচিত নয়। ধরলেও এর আগে সাপের মাথা ভালোভাবে ভেঙ্গে দিতে হবে। কারন মরার আগে সাপটি সর্বশেষ প্রচন্ড একটি ছোবল মারতে পারে।
- কখনো কোন বিষাক্ত সাপ দেখলে আতঙ্কিত না হয়ে কোন নড়াচড়া বা শব্দ করা উচিত নয় এবং এটিকে তার পথে চলে যেতে কোন বাঁধা দেয়া উচিত নয়।
- পাথরের সাহায্যে কোন সাপ মারতে যাওয়া উচিত নয়। কারন এক্ষেত্রে সাপটি আকস্মিকভাবে জাম্প করে আপনাকে ছোবল মারতে পারে বা বিষ ছুড়ে দিতে পারে। বিষ ছুড়ে মারা কোবরা খুব নির্ভূলভাবে শিকারের চোখে বিষ ছুড়ে দিতে পারে। যা স্থায়ীভাবে চোখকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
- সবসময় বনেজঙ্গলে ঘুরার সময় শক্ত এবং উচু বুট পরা উচিত যা সাপের কামড় হতে আপনাকে রক্ষা করবে।
- কোথাও বেড়াতে গেলে আগে ঐ এলাকায় হাসপাতাল কোথায় তা জেনে রাখা উচিত।
উপরিউক্ত টিউনের বেশির ভাগ তথ্য নিচের সাইটটি থেকে অনুবাদ করা