চার দেশের সঙ্গে উন্মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ : দেশের আয় কমবে ৫ হাজার কোটি টাকা
এমএ নোমান ও সৈয়দ মিজানুর রহমান
ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উন্মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস (গ্যাটস), জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন টেরিফস অ্যান্ড ট্রেড (গ্যাট) এবং এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এপিটিএ) চুক্তি তিনটি সমন্বয় করে নতুন এ চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নতুন এ চুক্তির খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, চুক্তিবদ্ধ দেশগুলো পরস্পরের মধ্যে বিনাশুল্কে পণ্য আমদানি-রফতানি করবে। আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্যের ওপর চুক্তিবদ্ধ দেশগুলো কোনো ধরনের করারোপ করবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এ চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার শুল্ক আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের দেয়া মতামতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ চুক্তি হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। প্রস্তাবিত চুক্তির কয়েকটি বিধান ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্টস (কন্ট্রোল) অ্যাক্টের বিধান এবং দেশি শিল্প সংরক্ষণ
সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চুক্তি সম্পাদনের আগে বাংলাদেশের শুল্ক আয়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চুক্তিতে যা বলা হয়েছে : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা চুক্তির খসড়ায় বলা হয়েছে যে, ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আফটা) চুক্তির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া একটি পৃথক চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্যই হবে এপিটিএ’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের অগ্রগতি ও উদারীকরণ। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে—‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন দি প্রমোশন অ্যান্ড লিবারালাইজেশন অব ট্রেড ইন সার্ভিসেস এমাং এপিটিএ পার্টিসিপেটিং স্টেটস’। প্রস্তাবিত চুক্তির ৫ ধারায় বলা হয়েছে—চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা উদারীকরণ করবে। দেশি বাজারে বিদেশি পণ্য প্রবেশের সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য হ্রাস করবে। ৭(৩) ধারায় বলা হয়েছে—‘জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস’ এবং ‘জেনারেল এগ্রিমেন্ট ইন টেরিফ অ্যান্ড ট্রেডস’-এর শর্ত ও বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে। খসড়া এ চুক্তির ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে—চুক্তিভুক্ত দেশগুলো চুক্তির বাইরের অপর কোনো দেশের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করতে পারবে না, যা বিবেচ্য চুক্তির পরিপন্থী হয়।
বছরে গচ্চা যাবে ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি শুল্ক, বেশি সুবিধা পাবে ভারত : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে নতুন যে বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটি কার্যকর হলে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি শুল্ক, আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০০৮-০৯) আমদানি শুল্ক, আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ বাংলাদেশের আয় ছিল প্রায় ২০ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এ আয়ের বড় একটি উত্স হচ্ছে ভারত, চীন, কোরিয়া। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে আয়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। জানা গেছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে চীন থেকে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯-এর তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট আমদানি ব্যয় (সিআইএফ) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২৩ দশমিক ৮৮ ভাগ।
দেশভিত্তিক আমদানি পণ্যের পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চীনের অবস্থান শীর্ষে। এ সময়ে মোট আমদানির ১৫ দশমিক ৭ ভাগ এসেছে চীন থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। ভারত থেকে এসেছে মোট আমদানির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে ভারতসহ কয়েকটি দেশকে শুল্ক সুবিধায় পণ্য প্রবেশের সুযোগ দেয়া হলে দেশি শিল্পে ধস নামবে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত শুল্ক ছাড়াও ভারত বাংলাদেশী পণ্য ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের অনির্ধারিত শুল্ক আরোপ করছে। ভারতে সাধারণত বেসিক ডিউটি বা নির্ধারিত শুল্ক ৯ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে এর সঙ্গে যোগ করা হয় ৫ থেকে ৭ ভাগ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, ৩ থেকে ৪ ভাগ স্পেশাল সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ৯ থেকে ১৫ ভাগ স্পেশাল কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ১ শতাংশ এডুকেশন ডিউটি এবং ১ শতাংশ অবকাঠামো শুল্ক। সাধারণত তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, জামদানি শাড়ি, ইলিশ, সুপারি, নিটওয়্যারসহ বাংলাদেশের প্রচলিত পণ্যের ওপর এসব শুল্ক আরোপ করে ভারতের কাস্টমস বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে গত ৩ জানুয়ারি শুল্ক বাধার কথা তুলে ধরে তার দফতরে একটি চিঠি দিয়েছিল তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে বলা হয়েছিল, ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি বন্ধ হওয়ার পথে। ভারত সরকার সম্প্রতি শতভাগ কটন গার্মেন্ট পণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বাড়িয়েছে। আগে এ শুল্ক ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হতো, এখন আদায় হচ্ছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃত্রিম সুতায় তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আগে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক নেয়া হতো, এখন তা বাড়িয়ে আদায় হচ্ছে সাড়ে ১৯ শতাংশ।
বিজিএমইএ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেছে, ২০০৭ সালের সাফটা চুক্তির আওতায় ভারত ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক বাংলাদেশ থেকে বিনাশুল্কে নেয়ার চুক্তি করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত এ কোটা পূরণ করা যায়নি ভারতের শুল্ক বিভাগের চাপিয়ে দেয়া বিভিন্ন শর্তের কারণে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, ২০০৮ সালে এ কোটায় ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬২ পিস পোশাক রফতানি হয়েছে; যা প্রাপ্য কোটার ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতবছর রফতানি হয়েছে ৪২ লাখ ২১ হাজার ৩০৩ পিস। বর্তমানে রফতানিকারকরা এ কোটায় পোশাক রফতানির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে বিজিএমইএ।
জানা গেছে, শুল্ক বাধার বাইরে মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বড় একটি বাধা বলে মনে করছে রফতানিকারকরা। বিএসটিআই থেকে মান উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট দেয়া হলেও সেটি মানে না ভারতের কাস্টমস বিভাগ। মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার সার্টিফিকেট আনতে হয় দিল্লির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। স্থলবন্দরগুলোতে কোনো পরীক্ষাগার নেই।
ভারতের শুল্ক বিভাগ এইচএস কোড মানতে চায় না। বাংলাদেশী রফতানিকারকরা কোনো একটি পণ্যের যে দাম দেখায়, সেটি না মেনে যাচাইর জন্য স্থলবন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। কিন্তু স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য সংরক্ষণের কোনো শেডও নেই। ফলে বেশিরভাগ সময়ই এসব পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
সিমেন্ট, স্টিল টিউবস, চামড়াজাত পণ্য ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতি চালানেই ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিয়ার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। তবে এ সার্টিফিকেট আনতে রয়েছে হাজারো জটিলতা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি চালানের মাল খালাস করতে এক্ষেত্রে কয়েক মাস লেগে যায়। ফলে এসব পণ্যের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত রফতানি করা যাচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে কাগজে-কলমে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছে অশুল্ক বাধা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আশ্বাস, অন্যদিকে পণ্য প্রবেশে বাধা—এই দ্বৈত নীতির মুখে ভারতের বাজারে একে একে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি প্রায় বন্ধ হতে বসেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার ৮৬টি পণ্য রফতানি করতে পারলেও বাংলাদেশ কেবল ১৬৮ ধরনের পণ্য রফতানির সুযোগ পায় ভারতে। সাফটার অধীনে ভারত শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত তুলে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭শ’ পণ্য সেদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। পরে এ তালিকার পণ্যসংখ্যা নামিয়ে সাড়ে ৪শ’ করার ঘোষণা দেয় ভারত। কিন্তু যেসব পণ্য প্রবেশে ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর ৯৮ শতাংশই উত্পাদন করে না বাংলাদেশ।
এসব কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫২৪ মিলিয়ন ডলার।
আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত : প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া ভেটিং করে মতামত দেয়ার জন্য এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক শেষে একটি মতামত তৈরি করেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবেচ্য খসড়া চুক্তি ২০০৫ সালে সম্পাদিত এপিটিএ চুক্তির অধীনস্থ কিংবা সাবসিডিয়ারি চুক্তি নয়। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক চুক্তি। যে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন কার্যকর, সংশোধন অবসায়ন, ব্যাখ্যা, বিরোধ মীমাংসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে চুক্তি সংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬৯-এর বিধান অনুসরণ করতে হয়। বিবেচ্য চুক্তিতে এ বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এখানে এপিটিএ’র ২১ ধারা প্রয়োগের কথা বলা হলেও এটি জাতিসংঘের স্বীকৃত বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিবেচ্য চুক্তিটি এপিটিএ’র স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে বলা হলেও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেনারেল অগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসের কিছু বিধান প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে বিধানগুলো কি, তা চুক্তিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিবেচ্য চুক্তির ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলোর ব্যবসা ও সুযোগ-সুবিধা উদারীকরণ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই বাধ্যবাধকতার মধ্যে দেশি বাজারে বিদেশি পণ্য প্রবেশের সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য হ্রাস করতে হবে এবং এ বিষয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না মর্মে বিধান রাখা হয়েছে। এ বিধান ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট (কন্ট্রোল) অ্যাক্ট-১৯৫০-এর বিধান এবং দেশি শিল্প সংরক্ষণ সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পুনরায় নিশ্চিত হতে হবে। চুক্তির পরিপন্থী কোনো চুক্তি করা যাবে না বলে যে বিধান রাখা হয়েছে, তা বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৪ অনুচ্ছেদে সরকারের ব্যবসা বা কারবার চালনায় চুক্তি করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এ চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আইনগত প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। প্রস্তাবিত এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক। এ মন্তব্য ও পরামর্শ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিবেচ্য খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি চূড়ান্ত করার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৫(ক)-এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মোঃ গোলাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চুক্তি সম্পাদনের আগে বাংলাদেশের শুল্ক আয়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চুক্তিতে যা বলা হয়েছে : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা চুক্তির খসড়ায় বলা হয়েছে যে, ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আফটা) চুক্তির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া একটি পৃথক চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্যই হবে এপিটিএ’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের অগ্রগতি ও উদারীকরণ। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে—‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন দি প্রমোশন অ্যান্ড লিবারালাইজেশন অব ট্রেড ইন সার্ভিসেস এমাং এপিটিএ পার্টিসিপেটিং স্টেটস’। প্রস্তাবিত চুক্তির ৫ ধারায় বলা হয়েছে—চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা উদারীকরণ করবে। দেশি বাজারে বিদেশি পণ্য প্রবেশের সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য হ্রাস করবে। ৭(৩) ধারায় বলা হয়েছে—‘জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস’ এবং ‘জেনারেল এগ্রিমেন্ট ইন টেরিফ অ্যান্ড ট্রেডস’-এর শর্ত ও বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে। খসড়া এ চুক্তির ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে—চুক্তিভুক্ত দেশগুলো চুক্তির বাইরের অপর কোনো দেশের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করতে পারবে না, যা বিবেচ্য চুক্তির পরিপন্থী হয়।
বছরে গচ্চা যাবে ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি শুল্ক, বেশি সুবিধা পাবে ভারত : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে নতুন যে বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটি কার্যকর হলে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি শুল্ক, আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০০৮-০৯) আমদানি শুল্ক, আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ বাংলাদেশের আয় ছিল প্রায় ২০ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এ আয়ের বড় একটি উত্স হচ্ছে ভারত, চীন, কোরিয়া। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে আয়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। জানা গেছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে চীন থেকে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯-এর তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট আমদানি ব্যয় (সিআইএফ) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২৩ দশমিক ৮৮ ভাগ।
দেশভিত্তিক আমদানি পণ্যের পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চীনের অবস্থান শীর্ষে। এ সময়ে মোট আমদানির ১৫ দশমিক ৭ ভাগ এসেছে চীন থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। ভারত থেকে এসেছে মোট আমদানির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে ভারতসহ কয়েকটি দেশকে শুল্ক সুবিধায় পণ্য প্রবেশের সুযোগ দেয়া হলে দেশি শিল্পে ধস নামবে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত শুল্ক ছাড়াও ভারত বাংলাদেশী পণ্য ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের অনির্ধারিত শুল্ক আরোপ করছে। ভারতে সাধারণত বেসিক ডিউটি বা নির্ধারিত শুল্ক ৯ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে এর সঙ্গে যোগ করা হয় ৫ থেকে ৭ ভাগ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, ৩ থেকে ৪ ভাগ স্পেশাল সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ৯ থেকে ১৫ ভাগ স্পেশাল কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ১ শতাংশ এডুকেশন ডিউটি এবং ১ শতাংশ অবকাঠামো শুল্ক। সাধারণত তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, জামদানি শাড়ি, ইলিশ, সুপারি, নিটওয়্যারসহ বাংলাদেশের প্রচলিত পণ্যের ওপর এসব শুল্ক আরোপ করে ভারতের কাস্টমস বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে গত ৩ জানুয়ারি শুল্ক বাধার কথা তুলে ধরে তার দফতরে একটি চিঠি দিয়েছিল তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে বলা হয়েছিল, ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি বন্ধ হওয়ার পথে। ভারত সরকার সম্প্রতি শতভাগ কটন গার্মেন্ট পণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বাড়িয়েছে। আগে এ শুল্ক ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হতো, এখন আদায় হচ্ছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃত্রিম সুতায় তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আগে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক নেয়া হতো, এখন তা বাড়িয়ে আদায় হচ্ছে সাড়ে ১৯ শতাংশ।
বিজিএমইএ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেছে, ২০০৭ সালের সাফটা চুক্তির আওতায় ভারত ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক বাংলাদেশ থেকে বিনাশুল্কে নেয়ার চুক্তি করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত এ কোটা পূরণ করা যায়নি ভারতের শুল্ক বিভাগের চাপিয়ে দেয়া বিভিন্ন শর্তের কারণে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, ২০০৮ সালে এ কোটায় ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬২ পিস পোশাক রফতানি হয়েছে; যা প্রাপ্য কোটার ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতবছর রফতানি হয়েছে ৪২ লাখ ২১ হাজার ৩০৩ পিস। বর্তমানে রফতানিকারকরা এ কোটায় পোশাক রফতানির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে বিজিএমইএ।
জানা গেছে, শুল্ক বাধার বাইরে মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বড় একটি বাধা বলে মনে করছে রফতানিকারকরা। বিএসটিআই থেকে মান উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট দেয়া হলেও সেটি মানে না ভারতের কাস্টমস বিভাগ। মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার সার্টিফিকেট আনতে হয় দিল্লির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। স্থলবন্দরগুলোতে কোনো পরীক্ষাগার নেই।
ভারতের শুল্ক বিভাগ এইচএস কোড মানতে চায় না। বাংলাদেশী রফতানিকারকরা কোনো একটি পণ্যের যে দাম দেখায়, সেটি না মেনে যাচাইর জন্য স্থলবন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়। কিন্তু স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য সংরক্ষণের কোনো শেডও নেই। ফলে বেশিরভাগ সময়ই এসব পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
সিমেন্ট, স্টিল টিউবস, চামড়াজাত পণ্য ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতি চালানেই ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিয়ার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। তবে এ সার্টিফিকেট আনতে রয়েছে হাজারো জটিলতা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি চালানের মাল খালাস করতে এক্ষেত্রে কয়েক মাস লেগে যায়। ফলে এসব পণ্যের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত রফতানি করা যাচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে কাগজে-কলমে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা থেকে যাচ্ছে অশুল্ক বাধা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একদিকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আশ্বাস, অন্যদিকে পণ্য প্রবেশে বাধা—এই দ্বৈত নীতির মুখে ভারতের বাজারে একে একে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি প্রায় বন্ধ হতে বসেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার ৮৬টি পণ্য রফতানি করতে পারলেও বাংলাদেশ কেবল ১৬৮ ধরনের পণ্য রফতানির সুযোগ পায় ভারতে। সাফটার অধীনে ভারত শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত তুলে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭শ’ পণ্য সেদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। পরে এ তালিকার পণ্যসংখ্যা নামিয়ে সাড়ে ৪শ’ করার ঘোষণা দেয় ভারত। কিন্তু যেসব পণ্য প্রবেশে ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর ৯৮ শতাংশই উত্পাদন করে না বাংলাদেশ।
এসব কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫২৪ মিলিয়ন ডলার।
আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত : প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া ভেটিং করে মতামত দেয়ার জন্য এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক শেষে একটি মতামত তৈরি করেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবেচ্য খসড়া চুক্তি ২০০৫ সালে সম্পাদিত এপিটিএ চুক্তির অধীনস্থ কিংবা সাবসিডিয়ারি চুক্তি নয়। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক চুক্তি। যে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন কার্যকর, সংশোধন অবসায়ন, ব্যাখ্যা, বিরোধ মীমাংসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে চুক্তি সংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬৯-এর বিধান অনুসরণ করতে হয়। বিবেচ্য চুক্তিতে এ বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এখানে এপিটিএ’র ২১ ধারা প্রয়োগের কথা বলা হলেও এটি জাতিসংঘের স্বীকৃত বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিবেচ্য চুক্তিটি এপিটিএ’র স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে বলা হলেও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেনারেল অগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসের কিছু বিধান প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে বিধানগুলো কি, তা চুক্তিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিবেচ্য চুক্তির ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলোর ব্যবসা ও সুযোগ-সুবিধা উদারীকরণ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই বাধ্যবাধকতার মধ্যে দেশি বাজারে বিদেশি পণ্য প্রবেশের সীমাবদ্ধতা ও বৈষম্য হ্রাস করতে হবে এবং এ বিষয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না মর্মে বিধান রাখা হয়েছে। এ বিধান ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট (কন্ট্রোল) অ্যাক্ট-১৯৫০-এর বিধান এবং দেশি শিল্প সংরক্ষণ সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পুনরায় নিশ্চিত হতে হবে। চুক্তির পরিপন্থী কোনো চুক্তি করা যাবে না বলে যে বিধান রাখা হয়েছে, তা বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৪ অনুচ্ছেদে সরকারের ব্যবসা বা কারবার চালনায় চুক্তি করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এ চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আইনগত প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। প্রস্তাবিত এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক। এ মন্তব্য ও পরামর্শ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিবেচ্য খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত করার ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি চূড়ান্ত করার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৫(ক)-এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মোঃ গোলাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের প্রতিক্রিয়া : হরতাল সরকারের জন্য ‘সতর্ক সঙ্কেত’ হলে দেশ ও জাতির জন্য ইতিবাচক
মাহাবুবুর রহমান
জনগণের ইস্যু নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। লাগাতার ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে না গিয়ে সরকারকে ‘সতর্ক সংকেত’ দিতে এ ধরনের কর্মসূচি দেশ ও জাতির জন্য ইতিবাচক হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
তাদের মতে, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেসব দাবি তুলে ধরে হরতাল ডেকেছেন, তাতে এ কর্মসূচি সবার জন্যই মঙ্গলের। দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে একদিকে দেশ পরিচালনায় সরকারকে সহযোগিতা করা এবং অন্যদিকে
. এভাবে মাঝে মাঝে কর্মসূচি পালন করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে তারা সরকারকেও দেশবিরোধী সব কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে গণতান্ত্রিক ও জনমুখী আচরণ করার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গ্যাস, বিদ্যুত্ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা; সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বন্ধ করা; ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী লাঞ্ছনার বিচার; প্রশাসন দলীয়করণ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও হেনস্থার প্রতিবাদ; ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল; পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ; জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ; শান্তিশৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনজীবনে বিরাজমান সমস্যাগুলো নিরসনের দাবিতে বুধবার পল্টনের মহাসমাবেশে বেগম জিয়া আগামী ২৭ জুন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেন।
এছাড়া বিচার বিভাগকে দলীয়করণ, স্বাধীন বিচার বিভাগে সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আগামী ৯ জুন সুপ্রিমকোর্টের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টকে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের মধ্যে। এই বিষয়টির অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে টার্গেট করেছে। চিহ্নিত দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। এমনকি খুনের মামলার প্রধান আসামিকেও বিচারপতি নিয়োগ দেয় সরকার। যদিও এখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি খুনের মামলার প্রধান আসামি ও সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরকারী আইনজীবীকে বিচারপতি হিসেবে শপথ করাননি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ৯৬ জন বিচারপতি নিয়োগ পান। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরে ৪৬ জনকে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। পরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবারও বিচারপতি নিয়োগে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। মাত্র সোয়া বছরে ৩৯ বিচারপতি নিয়োগ দেয় তারা। এত অল্পসময়ে অতীতে কখনও ৩৯ বিচারপতি নিয়োগ পাননি।
বর্তমান সরকারের আমলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় সবাই বর্তমান শাসক জোটের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাও রয়েছেন এদের মধ্যে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাম হিসেবে পরিচিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা বলেন, সরকার ক্ষমতায় এসেই সুপ্রিমকোর্টকে টার্গেট করেছে। সরকারি দলের সক্রিয় ক্যাডারদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করেছে উচ্চ আদালতকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ শামসুল হুদা, লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিচারপতি থাকা অবস্থায় বৈঠকে যোগদানকারী এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইনায়েতুর রহিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হাসান, আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম নাজমুল আহসান মিজান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও সদস্য হাবিবুল গণি রয়েছেন। এছাড়াও আরও কয়েকজন রয়েছেন যারা কোনো পদে না থাকলেও সুপ্রিমকোর্টে আওয়ামী রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র আড়াই মাইলের মধ্যেই তার বাড়ির অবস্থান। তার বেঞ্চেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সব মামলা বাতিল হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের সাবেক একজন বিচারপতি জানান, বিচারপতিদের আচরণ বিধি অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের মামলা, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মামলা, পাড়া-প্রতিবেশীর মামলাসহ যেসব মামলায় আইনজীবী হিসেবে ছিলেন, সে মামলাগুলোর শুনানি গ্রহণ করায় বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে বিচারপতি হওয়ার আগে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেই দলের শীর্ষ নেতা বা অন্য কোনো নেতার মামলার শুনানি গ্রহণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে একটি দলের জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর সেই দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীর মামলা শুনানি গ্রহণ না করাই উচিত বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বিচারপতি। এছাড়া যেহেতু শেখ হাসিনা ও বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদার বাড়ি একই এলাকায়, সে কারণে বিচার নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ক্ষমতার দেড় বছরের মাথায় হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা ইস্যুতে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেন বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
বদরুদ্দীন উমর : হরতাল হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। যে কেউ তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে হরতাল, অবরোধ, অনশনসহ যে কোনো ধরনের কর্মসূচির ডাক দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে হরতালের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কথায় কথায় হরতাল দিয়েছে, যা জনগণের জন্য কেবল অকল্যাণই বয়ে এনেছে। সেখানে জনগণের দাবির উপস্থিতির চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, কি বিষয়ে হরতাল দেয়া হলো—সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছে, হরতালের মতো আন্দোলন কর্মসূচি তারা ব্যবহার করবে। শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে হরতাল হবে। প্রকৃতপক্ষে জনগণের দাবিগুলো প্রাধান্য পেলে জনগণ হরতালের বিরোধিতা করবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এখন বিএনপির সমাবেশে মানুষের অধিক উপস্থিতি কিংবা তাদের কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন কেবল দলটির জনপ্রিয়তাকেই বোঝাচ্ছে না, তার চেয়ে সরকার ও সরকারি দলের অজনপ্রিয়তাকেই বেশি বোঝাচ্ছে। এটা মূলত আ’লীগের অজনপ্রিয়তারই একটি ব্যারোমিটার।
প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান : জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সাম্প্রতিক চুক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দরকার। তা না হলে সরকার ওই ক্ষতিকর চুক্তি বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারে। অন্তত একটি হরতালের মাধ্যমে সরকার ও আন্তর্জাতিক পক্ষ জানুক, দেশের জনগণ ওই চুক্তির বিরুদ্ধে। এছাড়া সরকার যেভাবে দলীয় দৃষ্টিতে দেশ পরিচালনা করছে, এটাও জনগণ পছন্দ করে না। ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির বিরুদ্ধে আগেই বড় ধরনের প্রতিবাদ দরকার ছিল। দেরিতে হলেও বিরোধী দল কর্মসূচি দিয়েছে, এটা গণতন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র, সরকার ও জনগণের জন্য ইতিবাচক হবে।
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : এই সরকারের আয়ু ১৬ মাস হলো। এ সময়ের মধ্যে জনগণের ভোগান্তি, আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা অনেক। জনগণের দাবি নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা একদিনের হরতাল সাধারণ মানুষ খারাপভাবে নেবে না। জনগণ চায় তাদের দাবি নিয়ে কেউ কথা বলুক। এজন্য এ হরতালকে মন্দের ভালো হিসেবে নেবে তারা। তবে এই হরতাল যেন ২০১০ সালের শেষ হরতাল হয়। আমি আশা করব, যে প্রতিবাদ ও দাবি উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা যেন সঠিক অনুধাবনের পর এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ছাত্রলীগ ও সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছোটখাটো প্রতিবাদ সরকারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। ফল পাওয়া যায়নি। এবারের প্রতিবাদ সঠিকভাবে গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেয়া হোক, এটা দেশের জনগণের মতো আমিও চাই। আমি শিক্ষক হিসেবে হরতাল পছন্দ করি না। তবে এবারের হরতাল বিএনপি বা ছোটখাটো দলের দাবি নিয়ে নয়। শুধুই সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে হরতাল হওয়াটা ভালো। এসব দাবির অধিকাংশ সরকারি দলের অনেক নেতাও করে আসছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ খুব একটা চোখে পড়ছে না। এজন্য এই একদিনের হরতাল কর্মসূচির ফল ভালো হবে বলে আশা করি।
আতাউস সামাদ : আমাদের দেশের প্রতিবাদ সংস্কৃতিতে সাময়িকভাবে কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়ার চেয়ে কম কোনো পন্থাকে কার্যকর প্রতিবাদ বলে বিবেচনা করা হয় না। একই সঙ্গে এও দেখা গেছে, কঠোর কর্মসূচির নতুন উচ্চ মাত্রা স্থির করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ লগি, বৈঠা নিয়ে লাগাতার অবরোধ করে। আর বর্তমানে দলটি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার সমর্থকরা তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন ধারালো অস্ত্র এবং গুলি। এ অবস্থায় বিএনপি কর্মীরা সারাদেশজুড়ে প্রতিবাদের জন্য একদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কম কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হতো বলে মনে হয় না। রাজনীতি করতে হলে বেগম জিয়াকে কর্মীদের কথা তো শুনতেই হবে। লক্ষ্য করে দেখবেন সেজন্য হরতাল ডাকার সময় বেগম জিয়া জনগণের কাছে প্রায় ক্ষমাই চেয়ে নিয়েছেন। আমার কাছে এছাড়া মনে হয়েছে, বিএনপি ধারণা করছে, আগামী বাজেটে বিভিন্ন পন্থায় জনগণের ওপর নানারকম বোঝা চাপানো হবে। তখন হয়তো ধর্মঘট বা হরতাল ডাকতেই হতো। সম্ভবত সেজন্যই হরতালের তারিখটি জুন মাসের শেষদিকে করা হয়েছে। আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, গত দেড় বছরে রাজপথের আন্দোলন হয়নি। এই সুযোগ গ্রহণ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সরকারের নানা কাজের জবাবদিহিতা করতে পারত এবং জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো সমাধানের পথ অনুমোদন করিয়ে নিতে পারত। যেমন : বিনাটেন্ডারে বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র কেনা বা ভাড়া করা, শত শত সরকারি কর্মচারী ওএসডি করা, ’৯৭ সালের ভারত-বাংলাদেশ পানি বণ্টন চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত পদ্মায় বাংলাদেশ তার হিস্যা না পাওয়া, ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া বসানো, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা সংকোচন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। কিন্তু তারা এ কাজটি করেনি। এ অবস্থায় যে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলই রাজপথের আন্দোলনের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হবে। আওয়ামী লীগ বলে থাকে, বিএনপি এক-এগারোর জন্য দায়ী। এবার বিএনপি সহজেই বলতে পারে, আ’লীগ তাদের হরতাল ডাকতে বাধ্য করেছে।
হরতালে জনগণের অবশ্যই অসুবিধা হবে এবং তাই প্রস্তাবিত হরতালে পরীক্ষা হয়ে যাবে বেগম জিয়া এবং বিএনপি তাদের হরতাল ডাকার যথার্থতা জনগণকে বোঝাতে পেরেছেন কিনা।
প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম : নাগরিক হিসেবে হরতাল সমর্থন করি না। তবে নির্যাতন, লুটপাট ও বৈষম্য রুখতে বিরোধীদলীয় নেত্রী যে হরতাল ডেকেছেন, তা মনেপ্রাণে সমর্থন করি। এটা যেমন দেশের মানুষের জন্য ইতিবাচক হবে, তেমনি সরকার ও সরকারি দলের জন্যও শুভ হবে। হরতাল কর্মসূচি যদি তাদের ‘টেন্ডারবাহিনী’কে একটু সচেতন করতে পারে জনগণ খুশি হবে। আর বাকশালী চিন্তা থেকে তাদের নেতাকর্মীরা সরে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া : শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে সবসময়ই অধিকার আদায়ের লড়াইকে সমর্থন করি। সে হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনদাবি নিয়ে সরকারকে ‘সতর্ক সংকেত’ দেয়ার হরতালকেও সমর্থন জানাই। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের অহেতুক হয়রানি যদি কিছুটা কমে তবে শিক্ষাব্যবস্থা লাভবান হবে। তবে এ কর্মসূচি বারবার দিলে তা জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে। তাই এ বিষয়ে বিরোধী দল যাতে সতর্ক থাকে এবং সরকার যাতে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে দেশ পরিচালনা করে এজন্য শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাই।
সাধারণের অভিমত : ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রী পপি বলেন, সবসময়ই হরতাল অপছন্দ করি। কিন্তু ছাত্রলীগের অশ্লীলতা, ভর্তি ও সিট বাণিজ্য, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি বন্ধের দাবিতে এর চেয়ে কঠিন কর্মসূচিও ইডেন কলেজের ছাত্রী হিসেবে সমর্থন করি। যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের বাসচালক রহিম তালুকদার বলেন, জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি ও চাঁদাবাজি থামাতে কঠিন হরতাল দরকার। ছোটখাটো হরতালে কাজ হবে না। জাতীয় কিডনি হাসপাতালের কর্মচারী বাবুল (ছদ্মনাম) বলেন, সরকারি দলের লুটপাট থামানোর দাবি নিয়ে বড় কিছু করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী ও মিরপুরের অধিবাসী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানি নিয়ে যে ভোগান্তি তা যদি হরতালের কারণে কমে, তবে হরতাল সমর্থন করি। এসব বিষয়ে সরকারকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কঠিন চাপ দেয়া উচিত। প্রতিদিন এ নিয়ে কথা বললে অন্তত গ্যাস ও পানির সমস্যাটা সমাধান হলেও খুশি।
তাদের মতে, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেসব দাবি তুলে ধরে হরতাল ডেকেছেন, তাতে এ কর্মসূচি সবার জন্যই মঙ্গলের। দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে একদিকে দেশ পরিচালনায় সরকারকে সহযোগিতা করা এবং অন্যদিকে
. এভাবে মাঝে মাঝে কর্মসূচি পালন করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে তারা সরকারকেও দেশবিরোধী সব কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে গণতান্ত্রিক ও জনমুখী আচরণ করার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গ্যাস, বিদ্যুত্ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা; সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বন্ধ করা; ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী লাঞ্ছনার বিচার; প্রশাসন দলীয়করণ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও হেনস্থার প্রতিবাদ; ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল; পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ; জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ; শান্তিশৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনজীবনে বিরাজমান সমস্যাগুলো নিরসনের দাবিতে বুধবার পল্টনের মহাসমাবেশে বেগম জিয়া আগামী ২৭ জুন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেন।
এছাড়া বিচার বিভাগকে দলীয়করণ, স্বাধীন বিচার বিভাগে সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আগামী ৯ জুন সুপ্রিমকোর্টের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টকে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের মধ্যে। এই বিষয়টির অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে টার্গেট করেছে। চিহ্নিত দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। এমনকি খুনের মামলার প্রধান আসামিকেও বিচারপতি নিয়োগ দেয় সরকার। যদিও এখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি খুনের মামলার প্রধান আসামি ও সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরকারী আইনজীবীকে বিচারপতি হিসেবে শপথ করাননি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ৯৬ জন বিচারপতি নিয়োগ পান। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরে ৪৬ জনকে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। পরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবারও বিচারপতি নিয়োগে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। মাত্র সোয়া বছরে ৩৯ বিচারপতি নিয়োগ দেয় তারা। এত অল্পসময়ে অতীতে কখনও ৩৯ বিচারপতি নিয়োগ পাননি।
বর্তমান সরকারের আমলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় সবাই বর্তমান শাসক জোটের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাও রয়েছেন এদের মধ্যে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাম হিসেবে পরিচিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা বলেন, সরকার ক্ষমতায় এসেই সুপ্রিমকোর্টকে টার্গেট করেছে। সরকারি দলের সক্রিয় ক্যাডারদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করেছে উচ্চ আদালতকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ শামসুল হুদা, লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিচারপতি থাকা অবস্থায় বৈঠকে যোগদানকারী এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইনায়েতুর রহিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হাসান, আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম নাজমুল আহসান মিজান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও সদস্য হাবিবুল গণি রয়েছেন। এছাড়াও আরও কয়েকজন রয়েছেন যারা কোনো পদে না থাকলেও সুপ্রিমকোর্টে আওয়ামী রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র আড়াই মাইলের মধ্যেই তার বাড়ির অবস্থান। তার বেঞ্চেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সব মামলা বাতিল হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের সাবেক একজন বিচারপতি জানান, বিচারপতিদের আচরণ বিধি অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের মামলা, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মামলা, পাড়া-প্রতিবেশীর মামলাসহ যেসব মামলায় আইনজীবী হিসেবে ছিলেন, সে মামলাগুলোর শুনানি গ্রহণ করায় বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে বিচারপতি হওয়ার আগে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেই দলের শীর্ষ নেতা বা অন্য কোনো নেতার মামলার শুনানি গ্রহণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে একটি দলের জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর সেই দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীর মামলা শুনানি গ্রহণ না করাই উচিত বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বিচারপতি। এছাড়া যেহেতু শেখ হাসিনা ও বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদার বাড়ি একই এলাকায়, সে কারণে বিচার নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ক্ষমতার দেড় বছরের মাথায় হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা ইস্যুতে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেন বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
বদরুদ্দীন উমর : হরতাল হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। যে কেউ তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে হরতাল, অবরোধ, অনশনসহ যে কোনো ধরনের কর্মসূচির ডাক দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে হরতালের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা হয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কথায় কথায় হরতাল দিয়েছে, যা জনগণের জন্য কেবল অকল্যাণই বয়ে এনেছে। সেখানে জনগণের দাবির উপস্থিতির চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, কি বিষয়ে হরতাল দেয়া হলো—সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছে, হরতালের মতো আন্দোলন কর্মসূচি তারা ব্যবহার করবে। শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে হরতাল হবে। প্রকৃতপক্ষে জনগণের দাবিগুলো প্রাধান্য পেলে জনগণ হরতালের বিরোধিতা করবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এখন বিএনপির সমাবেশে মানুষের অধিক উপস্থিতি কিংবা তাদের কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন কেবল দলটির জনপ্রিয়তাকেই বোঝাচ্ছে না, তার চেয়ে সরকার ও সরকারি দলের অজনপ্রিয়তাকেই বেশি বোঝাচ্ছে। এটা মূলত আ’লীগের অজনপ্রিয়তারই একটি ব্যারোমিটার।
প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান : জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সাম্প্রতিক চুক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ দরকার। তা না হলে সরকার ওই ক্ষতিকর চুক্তি বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারে। অন্তত একটি হরতালের মাধ্যমে সরকার ও আন্তর্জাতিক পক্ষ জানুক, দেশের জনগণ ওই চুক্তির বিরুদ্ধে। এছাড়া সরকার যেভাবে দলীয় দৃষ্টিতে দেশ পরিচালনা করছে, এটাও জনগণ পছন্দ করে না। ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির বিরুদ্ধে আগেই বড় ধরনের প্রতিবাদ দরকার ছিল। দেরিতে হলেও বিরোধী দল কর্মসূচি দিয়েছে, এটা গণতন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র, সরকার ও জনগণের জন্য ইতিবাচক হবে।
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : এই সরকারের আয়ু ১৬ মাস হলো। এ সময়ের মধ্যে জনগণের ভোগান্তি, আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা অনেক। জনগণের দাবি নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা একদিনের হরতাল সাধারণ মানুষ খারাপভাবে নেবে না। জনগণ চায় তাদের দাবি নিয়ে কেউ কথা বলুক। এজন্য এ হরতালকে মন্দের ভালো হিসেবে নেবে তারা। তবে এই হরতাল যেন ২০১০ সালের শেষ হরতাল হয়। আমি আশা করব, যে প্রতিবাদ ও দাবি উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা যেন সঠিক অনুধাবনের পর এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ছাত্রলীগ ও সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছোটখাটো প্রতিবাদ সরকারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। ফল পাওয়া যায়নি। এবারের প্রতিবাদ সঠিকভাবে গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেয়া হোক, এটা দেশের জনগণের মতো আমিও চাই। আমি শিক্ষক হিসেবে হরতাল পছন্দ করি না। তবে এবারের হরতাল বিএনপি বা ছোটখাটো দলের দাবি নিয়ে নয়। শুধুই সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে হরতাল হওয়াটা ভালো। এসব দাবির অধিকাংশ সরকারি দলের অনেক নেতাও করে আসছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ খুব একটা চোখে পড়ছে না। এজন্য এই একদিনের হরতাল কর্মসূচির ফল ভালো হবে বলে আশা করি।
আতাউস সামাদ : আমাদের দেশের প্রতিবাদ সংস্কৃতিতে সাময়িকভাবে কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়ার চেয়ে কম কোনো পন্থাকে কার্যকর প্রতিবাদ বলে বিবেচনা করা হয় না। একই সঙ্গে এও দেখা গেছে, কঠোর কর্মসূচির নতুন উচ্চ মাত্রা স্থির করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ লগি, বৈঠা নিয়ে লাগাতার অবরোধ করে। আর বর্তমানে দলটি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার সমর্থকরা তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন ধারালো অস্ত্র এবং গুলি। এ অবস্থায় বিএনপি কর্মীরা সারাদেশজুড়ে প্রতিবাদের জন্য একদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কম কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হতো বলে মনে হয় না। রাজনীতি করতে হলে বেগম জিয়াকে কর্মীদের কথা তো শুনতেই হবে। লক্ষ্য করে দেখবেন সেজন্য হরতাল ডাকার সময় বেগম জিয়া জনগণের কাছে প্রায় ক্ষমাই চেয়ে নিয়েছেন। আমার কাছে এছাড়া মনে হয়েছে, বিএনপি ধারণা করছে, আগামী বাজেটে বিভিন্ন পন্থায় জনগণের ওপর নানারকম বোঝা চাপানো হবে। তখন হয়তো ধর্মঘট বা হরতাল ডাকতেই হতো। সম্ভবত সেজন্যই হরতালের তারিখটি জুন মাসের শেষদিকে করা হয়েছে। আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, গত দেড় বছরে রাজপথের আন্দোলন হয়নি। এই সুযোগ গ্রহণ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সরকারের নানা কাজের জবাবদিহিতা করতে পারত এবং জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো সমাধানের পথ অনুমোদন করিয়ে নিতে পারত। যেমন : বিনাটেন্ডারে বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র কেনা বা ভাড়া করা, শত শত সরকারি কর্মচারী ওএসডি করা, ’৯৭ সালের ভারত-বাংলাদেশ পানি বণ্টন চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত পদ্মায় বাংলাদেশ তার হিস্যা না পাওয়া, ভারত বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া বসানো, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা সংকোচন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। কিন্তু তারা এ কাজটি করেনি। এ অবস্থায় যে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলই রাজপথের আন্দোলনের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হবে। আওয়ামী লীগ বলে থাকে, বিএনপি এক-এগারোর জন্য দায়ী। এবার বিএনপি সহজেই বলতে পারে, আ’লীগ তাদের হরতাল ডাকতে বাধ্য করেছে।
হরতালে জনগণের অবশ্যই অসুবিধা হবে এবং তাই প্রস্তাবিত হরতালে পরীক্ষা হয়ে যাবে বেগম জিয়া এবং বিএনপি তাদের হরতাল ডাকার যথার্থতা জনগণকে বোঝাতে পেরেছেন কিনা।
প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম : নাগরিক হিসেবে হরতাল সমর্থন করি না। তবে নির্যাতন, লুটপাট ও বৈষম্য রুখতে বিরোধীদলীয় নেত্রী যে হরতাল ডেকেছেন, তা মনেপ্রাণে সমর্থন করি। এটা যেমন দেশের মানুষের জন্য ইতিবাচক হবে, তেমনি সরকার ও সরকারি দলের জন্যও শুভ হবে। হরতাল কর্মসূচি যদি তাদের ‘টেন্ডারবাহিনী’কে একটু সচেতন করতে পারে জনগণ খুশি হবে। আর বাকশালী চিন্তা থেকে তাদের নেতাকর্মীরা সরে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া : শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে সবসময়ই অধিকার আদায়ের লড়াইকে সমর্থন করি। সে হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনদাবি নিয়ে সরকারকে ‘সতর্ক সংকেত’ দেয়ার হরতালকেও সমর্থন জানাই। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের অহেতুক হয়রানি যদি কিছুটা কমে তবে শিক্ষাব্যবস্থা লাভবান হবে। তবে এ কর্মসূচি বারবার দিলে তা জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে। তাই এ বিষয়ে বিরোধী দল যাতে সতর্ক থাকে এবং সরকার যাতে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে দেশ পরিচালনা করে এজন্য শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাই।
সাধারণের অভিমত : ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রী পপি বলেন, সবসময়ই হরতাল অপছন্দ করি। কিন্তু ছাত্রলীগের অশ্লীলতা, ভর্তি ও সিট বাণিজ্য, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি বন্ধের দাবিতে এর চেয়ে কঠিন কর্মসূচিও ইডেন কলেজের ছাত্রী হিসেবে সমর্থন করি। যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের বাসচালক রহিম তালুকদার বলেন, জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি ও চাঁদাবাজি থামাতে কঠিন হরতাল দরকার। ছোটখাটো হরতালে কাজ হবে না। জাতীয় কিডনি হাসপাতালের কর্মচারী বাবুল (ছদ্মনাম) বলেন, সরকারি দলের লুটপাট থামানোর দাবি নিয়ে বড় কিছু করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী ও মিরপুরের অধিবাসী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানি নিয়ে যে ভোগান্তি তা যদি হরতালের কারণে কমে, তবে হরতাল সমর্থন করি। এসব বিষয়ে সরকারকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কঠিন চাপ দেয়া উচিত। প্রতিদিন এ নিয়ে কথা বললে অন্তত গ্যাস ও পানির সমস্যাটা সমাধান হলেও খুশি।
বিএনপির হরতাল কঠোর হাতে দমন করা হবে : সাহারা
স্টাফ রিপোর্টার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, ২৭ জুন বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কঠোর হাতে দমন করা হবে। বাংলার মানুষ এর জবাব দেবে। আমরা বাংলার মানুষের রায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি, তাদের সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সাহারা খাতুন আরও বলেন, বিরোধী দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচিকে জনগণ যদি যৌক্তিক মনে করে তাহলে জনগণ তা মেনে নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে। আর অযৌক্তিক মনে করলে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। আমরা দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। একটি কুচক্রী মহল দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে সফল হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল দুপুরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ দশমিক ৫ একর জমিতে মধুমতি নদীর চরে নির্মিত গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের ফলক উন্মোচন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাহারা খাতুন কারা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, সরকার আপনাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। কারা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আপনাদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। অনিয়ম দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। বন্দিদশা শেষে ছোট অপরাধী যেন বড় অপরাধী না হয়ে একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আশরাফুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী খান আবু মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এরপর মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সাহারা খাতুন আরও বলেন, বিরোধী দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচিকে জনগণ যদি যৌক্তিক মনে করে তাহলে জনগণ তা মেনে নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে। আর অযৌক্তিক মনে করলে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। আমরা দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। একটি কুচক্রী মহল দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে সফল হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল দুপুরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ দশমিক ৫ একর জমিতে মধুমতি নদীর চরে নির্মিত গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের ফলক উন্মোচন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাহারা খাতুন কারা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, সরকার আপনাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। কারা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আপনাদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। অনিয়ম দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। বন্দিদশা শেষে ছোট অপরাধী যেন বড় অপরাধী না হয়ে একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আশরাফুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী খান আবু মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এরপর মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নজরুলকে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়
শবনম মুশতারী
ক’দিন পরেই আমাদের প্রিয়তম কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১১তম জন্মদিন। জ্যৈষ্ঠের এমনি একদিনে ‘নূতনের কেতন’ উড়িয়ে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন কবি। তাঁর আগমনী বার্তা জানিয়েছিল বৈশাখী ঝড়। বলেছিল, আসছে সে, তোমাদের মাঝে। তোমাদের সব মলিনতা, দীনতা, ভীরুতা, গ্লানি মুছিয়ে, উড়িয়ে দিয়ে, নতুন দিনের নতুন সূর্য উপহার দিতে।
উপমহাদেশের এক ক্রান্তিলগ্নে তাঁর উত্থান ঘটেছিল—ঠিক যখন তাঁকে ভীষণ প্রয়োজন ছিল মানুষের। তিনি এলেন। শৈশব-কৈশোরে মসজিদের মিনার থেকে সুমধুর আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি গান বাঁধলেন, গাইলেন, শোনালেন। যুদ্ধের ময়দানে গেলেন, যৌবনে, সৈনিক বেশে অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়তে। ‘বিদ্রোহী’র বাণী ছড়িয়ে দিলেন, সমস্যাসঙ্কুল দেশ, সমাজের মানুষের মেরুদণ্ডে শক্তির সঞ্চার করতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে। তাঁর বাণী হয়ে উঠল জীবনকে জয় করার হাতিয়ার। একইসঙ্গে তাঁর কাব্য আর সুর আশ্চর্য আনন্দময় এক জগতের দুয়ার খুলে দিল সবার সামনে। যে ভাব, যে ভাষা, যে সুর কোনোদিন শোনেনি বাঙালি জাতি, তার অপূর্ব জোয়ারে ভেসে গেল সবার মন-প্রাণ।
সেই প্রাণের কবি, গানের কবি, যিনি ছিলেন হৃদয়ে—তিনি এলেন আমাদের প্রিয়, তাঁরই বাংলাদেশে। তাঁর কৈশোরে, যৌবনে যে দেশের পাখি, গাছ, প্রকৃতি, ফুল, মানব-মানবী তাঁর বাঁশি, তাঁর কবিতা, তাঁর গান শুনেছে, ভালোবেসেছে বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে আপামর মানুষ, আকাশ, মাটি সে কবিকে বুকে টেনে নিল। বলল, কবির দেয়া ভাষায়, ‘পরদেশী বঁধুয়া এলে কি এতদিনে!...
আসিলে এতদিনে, কেমনে পথ চিনে...!!’
আমাদের এই সুন্দর প্রাণের দেশ, গানের দেশ, বাংলাদেশ তাঁকে পেয়ে পাগল হয়ে উঠল। তাঁকে কবিতা শোনাল আমাদের কবিরা, গান শোনাল গানের মানুষরা। কৈশোরে, যৌবনে যে কবি বার বার ছুটে এসেছেন এ দেশে, এখানেই অধিষ্ঠান হয়েছে তাঁর রাজার আসনে, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। মানুষ নিমিত্ত মাত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় আমাদের ভালোবাসার নজরুল চিরনিদ্রায় শায়িত তাঁর ভালোবাসার বাংলাদেশের মাটিতে। তিনি রইলেন জাতির মাথার মুকুট হয়ে, জাতির কবি, জাতীয় কবি নজরুল।
আমরা জানি সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর অপরূপ সৃষ্টি কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভার, অবদানের সবটুকু আমরা ধারণ করতে পারিনি। আজও পারিনি তাঁর সে শান্তির, সুন্দরের বাণী পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু আমরা আশাহত নই। এ দেশের শিল্পী, কবি, সাধারণ মানুষ কবির গান ভালোবেসে গায়, কবিতা পড়ে। আরও গাইবে, আরও পড়বে। আমাদের শ্রদ্ধেয়, যাঁরা কবিকে ভালোবেসেছেন, তাঁদের কথা স্মরণ করে, যাঁরা আছেন আমাদের মাঝে, তাঁদের সহযোগিতায় পথনির্দেশনায় আমরা পারব কবির গান, কবিতা সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে, মানুষ আর মানবতার বৃহত্তর প্রয়োজনে। আমরা প্রেমাকুল, আবেগাকুল হয়েছি নজরুলের গান গেয়ে, শুনে, শুনিয়ে, কবিতা পড়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বেলিত, উদ্বুদ্ধ করেছি দেশের সোনার ছেলেদের, নজরুলের জাগরণী গান গেয়ে। আজ জন্মদিনের প্রাক্কালে এই প্রত্যয় ব্যক্ত হোক—শুধু এ দেশ, জাতি, সমাজ, মানুষ নয়, বরং ক্রমেই উত্তপ্ত, অস্থির, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, এই পৃথিবীর প্রকৃতি, জলবায়ু, মানুষ—তার জন্য আমরা কবির সুন্দর, শান্তির বাণী বার বার উচ্চারণ করব, দোয়া করব সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে সর্বতো মঙ্গলের জন্য। আমরা যেন সব কালিমা সরিয়ে রাজাধিরাজ, প্রিয়তম সুন্দর কবিকে জন্মদিনে, হৃদয়ের গভীরে নিয়ে নির্মল, ফুলেল অভিবাদন জানাতে পারি। তা না হলে তাঁরই দেয়া ভাষা আর সুরে অবনত, লজ্জিতভাবে গাইতে হবে—
‘আসিলে কে গো অতিথি,
উড়ায়ে নিশান সোনালী,
ও চরণ ছুঁই কেমনে,
দুই হাতে মোর মাখা যে কালি...।’
উপমহাদেশের এক ক্রান্তিলগ্নে তাঁর উত্থান ঘটেছিল—ঠিক যখন তাঁকে ভীষণ প্রয়োজন ছিল মানুষের। তিনি এলেন। শৈশব-কৈশোরে মসজিদের মিনার থেকে সুমধুর আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি গান বাঁধলেন, গাইলেন, শোনালেন। যুদ্ধের ময়দানে গেলেন, যৌবনে, সৈনিক বেশে অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়তে। ‘বিদ্রোহী’র বাণী ছড়িয়ে দিলেন, সমস্যাসঙ্কুল দেশ, সমাজের মানুষের মেরুদণ্ডে শক্তির সঞ্চার করতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে। তাঁর বাণী হয়ে উঠল জীবনকে জয় করার হাতিয়ার। একইসঙ্গে তাঁর কাব্য আর সুর আশ্চর্য আনন্দময় এক জগতের দুয়ার খুলে দিল সবার সামনে। যে ভাব, যে ভাষা, যে সুর কোনোদিন শোনেনি বাঙালি জাতি, তার অপূর্ব জোয়ারে ভেসে গেল সবার মন-প্রাণ।
সেই প্রাণের কবি, গানের কবি, যিনি ছিলেন হৃদয়ে—তিনি এলেন আমাদের প্রিয়, তাঁরই বাংলাদেশে। তাঁর কৈশোরে, যৌবনে যে দেশের পাখি, গাছ, প্রকৃতি, ফুল, মানব-মানবী তাঁর বাঁশি, তাঁর কবিতা, তাঁর গান শুনেছে, ভালোবেসেছে বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে আপামর মানুষ, আকাশ, মাটি সে কবিকে বুকে টেনে নিল। বলল, কবির দেয়া ভাষায়, ‘পরদেশী বঁধুয়া এলে কি এতদিনে!...
আসিলে এতদিনে, কেমনে পথ চিনে...!!’
আমাদের এই সুন্দর প্রাণের দেশ, গানের দেশ, বাংলাদেশ তাঁকে পেয়ে পাগল হয়ে উঠল। তাঁকে কবিতা শোনাল আমাদের কবিরা, গান শোনাল গানের মানুষরা। কৈশোরে, যৌবনে যে কবি বার বার ছুটে এসেছেন এ দেশে, এখানেই অধিষ্ঠান হয়েছে তাঁর রাজার আসনে, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। মানুষ নিমিত্ত মাত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় আমাদের ভালোবাসার নজরুল চিরনিদ্রায় শায়িত তাঁর ভালোবাসার বাংলাদেশের মাটিতে। তিনি রইলেন জাতির মাথার মুকুট হয়ে, জাতির কবি, জাতীয় কবি নজরুল।
আমরা জানি সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর অপরূপ সৃষ্টি কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভার, অবদানের সবটুকু আমরা ধারণ করতে পারিনি। আজও পারিনি তাঁর সে শান্তির, সুন্দরের বাণী পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু আমরা আশাহত নই। এ দেশের শিল্পী, কবি, সাধারণ মানুষ কবির গান ভালোবেসে গায়, কবিতা পড়ে। আরও গাইবে, আরও পড়বে। আমাদের শ্রদ্ধেয়, যাঁরা কবিকে ভালোবেসেছেন, তাঁদের কথা স্মরণ করে, যাঁরা আছেন আমাদের মাঝে, তাঁদের সহযোগিতায় পথনির্দেশনায় আমরা পারব কবির গান, কবিতা সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে, মানুষ আর মানবতার বৃহত্তর প্রয়োজনে। আমরা প্রেমাকুল, আবেগাকুল হয়েছি নজরুলের গান গেয়ে, শুনে, শুনিয়ে, কবিতা পড়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বেলিত, উদ্বুদ্ধ করেছি দেশের সোনার ছেলেদের, নজরুলের জাগরণী গান গেয়ে। আজ জন্মদিনের প্রাক্কালে এই প্রত্যয় ব্যক্ত হোক—শুধু এ দেশ, জাতি, সমাজ, মানুষ নয়, বরং ক্রমেই উত্তপ্ত, অস্থির, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, এই পৃথিবীর প্রকৃতি, জলবায়ু, মানুষ—তার জন্য আমরা কবির সুন্দর, শান্তির বাণী বার বার উচ্চারণ করব, দোয়া করব সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে সর্বতো মঙ্গলের জন্য। আমরা যেন সব কালিমা সরিয়ে রাজাধিরাজ, প্রিয়তম সুন্দর কবিকে জন্মদিনে, হৃদয়ের গভীরে নিয়ে নির্মল, ফুলেল অভিবাদন জানাতে পারি। তা না হলে তাঁরই দেয়া ভাষা আর সুরে অবনত, লজ্জিতভাবে গাইতে হবে—
‘আসিলে কে গো অতিথি,
উড়ায়ে নিশান সোনালী,
ও চরণ ছুঁই কেমনে,
দুই হাতে মোর মাখা যে কালি...।’
ম্যারাডোনার সেরা ২৩
স্পোর্টস ডেস্ক
আগেই ছেঁটে ফেলা হয়েছিল এস্তেবান কামবিয়াসো, হ্যাভিয়ার জেনেত্তি এবং গ্যাব্রিয়েল মিলিতোর নাম। এবার দুর্ভাগা ফুটবলারের তালিকায় যোগ হলো ফাব্রিকো কোলোনিচির নাম। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের জন্য ডিয়েগো ম্যারাডোনা ঘোষণা করেছেন ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল। সেই দলে অবশ্য কিছুটা বিতর্কিতভাবেই রেখেছেন ‘বাতিলের খাতায়’ চলে যাওয়া মার্টিন পালেরমোকে। অবশ্য বাছাইপর্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে তার দেয়া গোলেই বৈতরণী পার হয়েছিল আর্জেন্টাইনরা। এছাড়া বাদ পড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের মিডফিল্ডার ফার্নান্দো গাগো এবং বার্সার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল মিলিতো।
এর আগেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে চমক দেখিয়েছিল কার্লোস ডুঙ্গার ব্রাজিল। এবার সেই পথে হাঁটলেন ম্যারাডোনা। দ্বিতীয় দল হিসেবে ঘোষণা করলেন ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল। গতকাল দল ঘোষণা করতে গিয়ে ম্যারাডোনা জানিয়ে দিলেন, লিওনেল মেসিকে ঘিরেই দল সাজাবেন তিনি—‘আমি একটা ব্যাপার স্পষ্ট জানিয়ে রাখতে চাই, মেসিই আমার দলের প্রাণ। ও ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি সেখানে খেলতে পারবে। ওর মতো ফুটবলারকে পজিশন ঠিক করে দেয়ার কোনো মানে হয় না।’ ম্যারাডোনা আশা করছেন, এবার বার্সায় যে ছন্দে খেলেছেন মেসি, জাতীয় দলেও তার ছোঁয়া থাকবে। এই বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে গ্রিস, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে।
আর্জেন্টিনা দল
গোলকিপার : সার্জিও রোমারো, মার্টিন অ্যানডোয়ার, ডিয়েগো পোজো।
ডিফেন্ডার : নিকোলাস বোরদিসো, মার্টিন ডেমিচেলিস, ওয়াল্টার স্যামুয়েল, গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ, নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্লেমেন্তে রডরিগুয়েজ, অ্যারিয়েল গ্রাস।
মিডফিল্ডার : হ্যাভিয়ার ম্যাসচেরানো, হুয়ান স্যাবাস্টাইন ভেরন, ম্যাক্সি রডরিগুয়েজ, মারিও বোলেত্তি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, জোনাস গুতিরেজ, হ্যাভিয়ার পাসটোরে।
ফরোয়ার্ড : সার্জিও অ্যাগুরো, ডিয়েগো মিলিতো, মার্টিন পালেরমো, কার্লোস তেভেজ, গনজালো হিগুয়ান এবং লিওনেল মেসি
এর আগেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে চমক দেখিয়েছিল কার্লোস ডুঙ্গার ব্রাজিল। এবার সেই পথে হাঁটলেন ম্যারাডোনা। দ্বিতীয় দল হিসেবে ঘোষণা করলেন ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল। গতকাল দল ঘোষণা করতে গিয়ে ম্যারাডোনা জানিয়ে দিলেন, লিওনেল মেসিকে ঘিরেই দল সাজাবেন তিনি—‘আমি একটা ব্যাপার স্পষ্ট জানিয়ে রাখতে চাই, মেসিই আমার দলের প্রাণ। ও ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি সেখানে খেলতে পারবে। ওর মতো ফুটবলারকে পজিশন ঠিক করে দেয়ার কোনো মানে হয় না।’ ম্যারাডোনা আশা করছেন, এবার বার্সায় যে ছন্দে খেলেছেন মেসি, জাতীয় দলেও তার ছোঁয়া থাকবে। এই বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে গ্রিস, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে।
আর্জেন্টিনা দল
গোলকিপার : সার্জিও রোমারো, মার্টিন অ্যানডোয়ার, ডিয়েগো পোজো।
ডিফেন্ডার : নিকোলাস বোরদিসো, মার্টিন ডেমিচেলিস, ওয়াল্টার স্যামুয়েল, গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ, নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্লেমেন্তে রডরিগুয়েজ, অ্যারিয়েল গ্রাস।
মিডফিল্ডার : হ্যাভিয়ার ম্যাসচেরানো, হুয়ান স্যাবাস্টাইন ভেরন, ম্যাক্সি রডরিগুয়েজ, মারিও বোলেত্তি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, জোনাস গুতিরেজ, হ্যাভিয়ার পাসটোরে।
ফরোয়ার্ড : সার্জিও অ্যাগুরো, ডিয়েগো মিলিতো, মার্টিন পালেরমো, কার্লোস তেভেজ, গনজালো হিগুয়ান এবং লিওনেল মেসি
evsjv‡`‡k wewb‡qvM Ki“b wekvj evRv‡ii my‡hvM wbb
Lyiig Rvgvb I wg_yb gvndzR:
wek¦e¨vcx mv¤úÖwZK A_©‰bwZK g›`v m‡Ë¡I MZ eQi evsjv‡`‡k cªvq Qq kZvsk cªe…w× n‡q‡Q| wek¦ evRv‡ii Av¯’v Abyhvqx cieZ©x 11wU m¤¢vebvgq †`‡ki ZvwjKvq evsjv‡`k ¯’vb †c‡q‡Q| G QvovI evsjv‡`‡k i‡q‡Q 16 †KvwU RbmsL¨vi wekvj Af¨šÍixY evRvi|
evsjv‡`‡k we`¨gvb wewb‡qvMevÜe cwi‡e‡ki my‡hvM Kv‡R jvMv‡Z gvj‡qwkqvi D‡`¨v³v‡`i‡K cÖwZ AvnŸvb Rvwb‡q cªavbgš¿x †kL nvwmbv Gme e‡jb| MZKvj Kzqvjvjvgcy‡i †nv‡Uj B¯ÍvbvÕi eji“‡g gvj‡qwkqvi wewb‡qvMKvix‡`i m‡½ †Mvj‡Uwej ˆeV‡K wZwb Gme K_v e‡jb| gvj‡qwkqvi GmGgGg MÖ“‡ci †cªwm‡W›U Zvb kªx `vZyK gy¯Ídv gbmyi Abyôv‡b mfvcwZZ¡ K‡ib|
cÖavbgš¿x evsjv‡`‡ki kªgNb ˆZwi †cvkvK wkí, †U·UvBj, nvjKv BwÄwbqvwis, B‡jKU«wb·, K…wlwfwËK cY¨, AvBwmwU, we`¨yr I AeKvVv‡gv Lv‡Z wewb‡qv‡Mi Avnevb Rvbvb| †kL nvwmbv cvi¯úvwiKfv‡e jvfevb nIqvi Rb¨ gvj‡qwkqvi e¨emvqx‡`i‡K evsjv‡`k †_‡K cvU, PvgovRvZ cY¨, ˆZwi †cvkvK, wmivwgKm I Ilya mvgMªx Aby‡iva Rvbvb|
cÖavbgš¿x miKv‡ii evwYR¨ bxwZi D‡jøL‡hvM¨ w`K¸‡jv Zz‡j a‡i e‡jb, evsjv‡`k gy³evRvi bxwZ AbymiY Ki‡Q Ges miKvi evwYR¨ wewa D`vi Kivmn wewb‡qvM bxwZ MÖnY, my‡`i nvi Kgv‡bv, I AeKvVv‡gvMZ evav `~i Kivi cvkvcvwk e›`i myweavi Dbœqb NwU‡q‡Q|
cªavbgš¿x e‡jb, fviZ Qvov `w¶Y Gwkqvq me †`‡ki Zyjbvq evsjv‡`k GmGÛwc I †gv`xi i¨vswKs‡q GwM‡q| †kL nvwmbv e‡jb, eZ©gv‡b gvj‡qwkqv n‡”Q evsjv‡`‡k wewb‡qvMKvix cÂg e…nËg †`k| gvj‡qwkqvi †gvU wewb‡qvM cªvq 150 †KvwU gvwK©b Wjvi Ges G‡Z 13 nvRvi †jv‡Ki Kg©ms¯’v‡bi my‡hvM ˆZwi n‡q‡Q|
c‡i †kL nvwmbv gvj‡qwkqvi wewb‡qvMKvix‡`i wewfbœ cÖ‡kœi Reve †`b| Abyôv‡b evwYR¨gš¿x K‡b©j (Ae:) dvi“K Lvb, cÖavbgš¿xi Dc‡`óv W. gwkDi ingvb, wewb‡qvM †ev‡W©i (weIAvB) wbe©vnx †Pqvig¨vb ˆmq` Ave`ym mvgv` cÖgyL Dcw¯’Z wQ‡jb| AvR cÖavbgš¿xi †`‡k †divi K_v i‡q‡Q|
রেকর্ডের পাতা থেকে : ভিতোরিও পোজ্জোর রেকর্ডের পেছনে লিপ্পি
স্পোর্টস ডেস্ক
তার নামটা হয়তো অনেকেরই অজানা। অথচ বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে তার মতো কৃতিত্ব আর কারও নেই। তিনি খেলোয়াড় নন, কোচ। ইতালির কোচ ভিতোরিও পোজ্জো। কি তার কৃতিত্ব? পোজ্জোই বিশ্বকাপ ফুটবলে একমাত্র কোচ, যার অধীনে ইতালি দু’বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখনতক ১৮ বারের মধ্যে বিশ্বকাপ ব্রাজিল জিতেছে সর্বাধিক পাঁচবার। তারপরেই রয়েছে ইতালি, সোনার কাপ চারবার জিতে। তার মধ্যে প্রথম দু’বার ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে টানা বিশ্বসেরা হয়েছিল ইতালি পোজ্জোর অধীনে। যে কৃতিত্ব আর কোনো কোচের নেই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে ঠিক এমনই ইতিহাস গড়ার হাতছানি রয়েছে পোজ্জোরই উত্তরসূরি মার্সেলো লিপ্পির। তার অধীনেই ২০০৬ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্যাবিও কানাভারোরা। এবারও কানাভারোদের দায়িত্বে লিপ্পিই। আর তাই লিপ্পির সামনে ঠিক একইভাবে পোজ্জোর পাশে বসার সুবর্ণ সুযোগ।
পোজ্জোর জন্ম ১৮৮৬ সালে। মারা যান ৮২ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন সুইজারল্যান্ডের গ্রসহপারে তারপর স্বদেশে তুরিনো ক্লাবে। ১৯১২ সালে সেই ক্লাবেরই কোচ হন। জাতীয় দলে অবশ্য অনেক পরে। ১৯২৮ সালে দায়িত্ব পান ইতালির অলিম্পিক দলের। সেবার ইতালি অলিম্পিক ফুটবলে ব্রোঞ্জ জেতে। সেই সুবাদেই ১৯২৯ সালে মূল জাতীয় দলের দায়িত্ব পান। সেটি পালন করেছেন ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। তার মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ তো বটেই তার অধীনে ইতালি ১৯৩৬ সালে অলিম্পিক ফুটবলেও স্বর্ণপদক জেতে। তার অধীনে ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত ছিল ইতালি। তার অধীনে ইতালি শেষ খেলেছিল ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালি ৫-৩ গোলে হেরে যায় ডেনমার্কের কাছে। সেটাই কোচ হিসেবে পোজ্জোর শেষ ম্যাচ। কোচিং ক্যারিয়ার ছেড়ে দেয়ার পর সাংবাদিকতায় ঢুকেছিলেন পোজ্জো। ১৯৬৮ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি। সেটি মাঠে বসেই দেখেছিলেন তিনি। তারপর মারা যান সে বছরই। এবার তার পূর্বসূরির পথেই হাঁটতে চলেছেন লিপ্পি। হিসেবের বাইরে থাকা ইতালিকে ২০০৬-এর বিশ্বকাপ জিতিয়ে নায়ক হয়েছিলেন তিনি। তারপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্ব। নতুন কোচ হয়েছিলেন রবার্তো ডোনাডুনি। কিন্তু তার অধীন ইতালি ক্রমশ পিছলে পড়াতে ২০০৮ সালে ফের জাতীয় দলের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় লিপ্পিকে। তিনি ফের দলকে পথে ফিরিয়েছেন। ৬২ বছর বয়সী এই কোচের সামনে এবার শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেটি করতে গিয়ে লিপ্পি যে দল বেছেছেন তাতে বিতর্কই চলছে। বাদ দিয়েছেন ফ্রান্সেসকো টোট্টি, গ্রসোদের। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বয়সীদের নিয়ে দল গড়েছেন। কিন্তু লিপ্পি অনড়। তার সাফকথা, ‘মিডিয়া কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি সেরা দলই গড়েছি, যাদের ওপর আমার আস্থা আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে কোনো গ্যারান্টি নেই।’
পাশাপাশি ঝুঁকিও নিতে হয়। আমিও তাই নিয়েছি
পোজ্জোর জন্ম ১৮৮৬ সালে। মারা যান ৮২ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন সুইজারল্যান্ডের গ্রসহপারে তারপর স্বদেশে তুরিনো ক্লাবে। ১৯১২ সালে সেই ক্লাবেরই কোচ হন। জাতীয় দলে অবশ্য অনেক পরে। ১৯২৮ সালে দায়িত্ব পান ইতালির অলিম্পিক দলের। সেবার ইতালি অলিম্পিক ফুটবলে ব্রোঞ্জ জেতে। সেই সুবাদেই ১৯২৯ সালে মূল জাতীয় দলের দায়িত্ব পান। সেটি পালন করেছেন ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। তার মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ তো বটেই তার অধীনে ইতালি ১৯৩৬ সালে অলিম্পিক ফুটবলেও স্বর্ণপদক জেতে। তার অধীনে ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত ছিল ইতালি। তার অধীনে ইতালি শেষ খেলেছিল ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালি ৫-৩ গোলে হেরে যায় ডেনমার্কের কাছে। সেটাই কোচ হিসেবে পোজ্জোর শেষ ম্যাচ। কোচিং ক্যারিয়ার ছেড়ে দেয়ার পর সাংবাদিকতায় ঢুকেছিলেন পোজ্জো। ১৯৬৮ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি। সেটি মাঠে বসেই দেখেছিলেন তিনি। তারপর মারা যান সে বছরই। এবার তার পূর্বসূরির পথেই হাঁটতে চলেছেন লিপ্পি। হিসেবের বাইরে থাকা ইতালিকে ২০০৬-এর বিশ্বকাপ জিতিয়ে নায়ক হয়েছিলেন তিনি। তারপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্ব। নতুন কোচ হয়েছিলেন রবার্তো ডোনাডুনি। কিন্তু তার অধীন ইতালি ক্রমশ পিছলে পড়াতে ২০০৮ সালে ফের জাতীয় দলের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় লিপ্পিকে। তিনি ফের দলকে পথে ফিরিয়েছেন। ৬২ বছর বয়সী এই কোচের সামনে এবার শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেটি করতে গিয়ে লিপ্পি যে দল বেছেছেন তাতে বিতর্কই চলছে। বাদ দিয়েছেন ফ্রান্সেসকো টোট্টি, গ্রসোদের। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বয়সীদের নিয়ে দল গড়েছেন। কিন্তু লিপ্পি অনড়। তার সাফকথা, ‘মিডিয়া কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি সেরা দলই গড়েছি, যাদের ওপর আমার আস্থা আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে কোনো গ্যারান্টি নেই।’
পাশাপাশি ঝুঁকিও নিতে হয়। আমিও তাই নিয়েছি
গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে মেসির আগে ভিলা
স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই দুনিয়াজোড়া উত্তেজনা। সেই টেনশন কাঁধে চাপে ফুটবলারদেরও। সেটা সামলে কেউ নায়ক, কেউ বা ফ্লপ। সোনার কাপ তো বটেই, তার চেয়ে কোনো অংশেই কম দামি নয় সর্বাধিক গোলদাতার ‘গোল্ডেন বুট’ ট্রফিটাও। সেই বুটের লড়াইয়ে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় কারা এগিয়ে? তারই জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে একটি ওয়েবসাইট। তাতে রায় দিয়েছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরাই। এই মানদণ্ডে কমপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পারে এমন দলগুলোকেই বেছে নেয়া হয়েছে। এবার দেখে নিন ‘গোল্ডেন বুট’ জেতার পাঁচ দাবিদারকে। যারা বাজির দরেও এগিয়ে রয়েছেন।
ডেভিড ভিলা : ১১/১, স্পেন
এবারের স্প্যানিশ প্রিমেরা লীগায় তিনি হয়তো সর্বাধিক গোলদাতা হতে পারেননি, কিন্তু স্প্যানিশ তারকা ডেভিড ভিলা তার গোলদক্ষতা ঠিকই প্রমাণ করেছেন। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ৩২ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। তার সৌজন্যেই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার টিকিট পেয়েছে ভ্যালেন্সিয়া। তবে আগামী মৌসুমে তাকে দেখা যাবে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাতে। কারণ এমন গোল মেশিনকে হাতছাড়া করতে রাজি নয় বার্সা। স্পেনের হয়ে তার গোলের পরিসংখ্যানও দারুণ। ৩৬ ম্যাচে করেছেন ২৪ গোল। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সব ম্যাচ জিতেই চূড়ান্তপর্বে উঠেছে ইউরো ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন স্পেন। তাদের শেষ চারে না ওঠার কোনো কারণই দেখছে না বোদ্ধারা। কাজেই ভিলার সেরা গোলদাতা হওয়ার সুযোগ থাকছেই।
লিওনেল মেসি : ১২/১, আর্জেন্টিনা
লিওনেল মেসিকে নতুন করে ফুটবলামোদীদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারটি এ মৌসুমে রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। লা লীগায় বার্সেলোনার হয়ে গোল করেছেন ৩৪টি। সেটাই লীগে সর্বাধিক। মোট গোল করেছেন ৪২টি। সেটা বার্সেলোনার ইতিহাসে এক মৌসুমে গোল করার যৌথ রেকর্ড। সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদোও করেছিলেন ৪২ গোল। দুরন্ত আক্রমণভাগ নিয়ে এবার বিশ্বকাপে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। তার নিউক্লিয়াস মেসি। কাজেই তারও রয়েছে সেরা গোলদাতা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। ভাবনা একটাই, বার্সার মেসিকে আর্জেন্টিনার হয়ে দেখা যায় না। তবে এই মেগাস্টার বলেছেন, এবার বিশ্বকাপে বার্সার দুর্দান্ত মেসিকেই দেখা যাবে। কোনো চাপে নেই তিনি।
ওয়েন রুনি : ১৩/১, ইংল্যান্ড
বেশ কিছুদিন পর এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ঘিরে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে সে দেশের সমর্থকদের মধ্যে। আশায় বুক বাঁধছে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। তার মূলে ওয়েন রুনি। যিনি একাই ম্যাচের ফারাক গড়ে দিতে পারেন গোল করে। ম্যানইউয়ের হয়ে এবার প্রিমিয়ার লীগে ৩২ ম্যাচে ২৬ গোল করেছেন রুনি। সব মিলিয়ে মৌসুমে তার গোলসংখ্যা ৩৪। বাছাইপর্বে ইংল্যান্ডের হয়ে ৯ গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। দেশের হয়ে তার গোল পরিসংখ্যানও দুরন্ত। প্রতি দুই ম্যাচে প্রায় একটি গোল। বিশেষ গুণ প্রতিপক্ষের অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে গোল করতে পারা। এছাড়া উঁচু হয়ে আসা ক্রসেও মাথা ঠেকাতে দক্ষ রুনি। সেরা গোলদাতা হতেই পারেন তিনি।
লুইস ফ্যাবিয়ানো : ১৪/১, ব্রাজিল
অন্য তারকাদের মধ্যে তিনি একটু কমই থাকেন স্পটলাইটে। এখন খেলছেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতে। ইনজুরির জন্য মৌসুমে সব ম্যাচ খেলতে পারেননি। তারপরও ২২ ম্যাচে গোল করেছেন ১৪টি। তবে জাতীয় দলের হয়ে ফ্যাবিয়ানোর রুদ্র মূর্তি। ৩৬ ম্যাচে গোল সংখ্যা ২৫। গত কনফেডারেশন কাপে ব্রাজিলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ৫ গোল করে। ব্রাজিলের হয়ে গত আটটি ম্যাচে আট গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। তাকে দলে না খেলানোর কথা ভাবতেও পারেন না কোচ কার্লোস ডুঙ্গা। বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথমপর্বে পড়েছে বেশ কঠিন গু্রপে। সেখান থেকে প্রথম হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ফ্যাবিয়ানোর গোলই ভরসা ব্রাজিলের। তার জন্য তৈরি তিনি।
রবিন ফন পার্সি : ৩৪/১, হল্যান্ড
প্রথম চারজনের চেয়ে বাজির দরে একটু পিছিয়ে পাঁচ নম্বরের ডাচ তারকা রবিন ফন পার্সি। কিন্তু তিনিও লড়তে পারেন ‘গোল্ডেন বুটের’ জন্য। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আর্সেনালের তিনিই প্রাণভোমরা। এখন হল্যান্ডের সহঅধিনায়ক। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন। তার কারণ মাঝেমধ্যে একটু নিচে নেমে মাঝ মাঠেরও হাল ধরেন পার্সি। দলের পেনাল্টি শট বিশেষজ্ঞ তিনি। একই সঙ্গে পায়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর ফ্রিকিক নেয়ার ক্ষমতা। তার সঙ্গে পার্সির হেডের দক্ষতাও দারুণ। এবারের বিশ্বকাপে হল্যান্ডকে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। বিশ্বকাপ ২০০৬ এবং ইউরো ২০০৮-এ খেলার অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পার্সি। তার প্রমাণ মিলবে মাঠে।
ডেভিড ভিলা : ১১/১, স্পেন
এবারের স্প্যানিশ প্রিমেরা লীগায় তিনি হয়তো সর্বাধিক গোলদাতা হতে পারেননি, কিন্তু স্প্যানিশ তারকা ডেভিড ভিলা তার গোলদক্ষতা ঠিকই প্রমাণ করেছেন। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ৩২ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। তার সৌজন্যেই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার টিকিট পেয়েছে ভ্যালেন্সিয়া। তবে আগামী মৌসুমে তাকে দেখা যাবে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাতে। কারণ এমন গোল মেশিনকে হাতছাড়া করতে রাজি নয় বার্সা। স্পেনের হয়ে তার গোলের পরিসংখ্যানও দারুণ। ৩৬ ম্যাচে করেছেন ২৪ গোল। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সব ম্যাচ জিতেই চূড়ান্তপর্বে উঠেছে ইউরো ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন স্পেন। তাদের শেষ চারে না ওঠার কোনো কারণই দেখছে না বোদ্ধারা। কাজেই ভিলার সেরা গোলদাতা হওয়ার সুযোগ থাকছেই।
লিওনেল মেসি : ১২/১, আর্জেন্টিনা
লিওনেল মেসিকে নতুন করে ফুটবলামোদীদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারটি এ মৌসুমে রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। লা লীগায় বার্সেলোনার হয়ে গোল করেছেন ৩৪টি। সেটাই লীগে সর্বাধিক। মোট গোল করেছেন ৪২টি। সেটা বার্সেলোনার ইতিহাসে এক মৌসুমে গোল করার যৌথ রেকর্ড। সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদোও করেছিলেন ৪২ গোল। দুরন্ত আক্রমণভাগ নিয়ে এবার বিশ্বকাপে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। তার নিউক্লিয়াস মেসি। কাজেই তারও রয়েছে সেরা গোলদাতা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। ভাবনা একটাই, বার্সার মেসিকে আর্জেন্টিনার হয়ে দেখা যায় না। তবে এই মেগাস্টার বলেছেন, এবার বিশ্বকাপে বার্সার দুর্দান্ত মেসিকেই দেখা যাবে। কোনো চাপে নেই তিনি।
ওয়েন রুনি : ১৩/১, ইংল্যান্ড
বেশ কিছুদিন পর এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ঘিরে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে সে দেশের সমর্থকদের মধ্যে। আশায় বুক বাঁধছে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। তার মূলে ওয়েন রুনি। যিনি একাই ম্যাচের ফারাক গড়ে দিতে পারেন গোল করে। ম্যানইউয়ের হয়ে এবার প্রিমিয়ার লীগে ৩২ ম্যাচে ২৬ গোল করেছেন রুনি। সব মিলিয়ে মৌসুমে তার গোলসংখ্যা ৩৪। বাছাইপর্বে ইংল্যান্ডের হয়ে ৯ গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। দেশের হয়ে তার গোল পরিসংখ্যানও দুরন্ত। প্রতি দুই ম্যাচে প্রায় একটি গোল। বিশেষ গুণ প্রতিপক্ষের অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে গোল করতে পারা। এছাড়া উঁচু হয়ে আসা ক্রসেও মাথা ঠেকাতে দক্ষ রুনি। সেরা গোলদাতা হতেই পারেন তিনি।
লুইস ফ্যাবিয়ানো : ১৪/১, ব্রাজিল
অন্য তারকাদের মধ্যে তিনি একটু কমই থাকেন স্পটলাইটে। এখন খেলছেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতে। ইনজুরির জন্য মৌসুমে সব ম্যাচ খেলতে পারেননি। তারপরও ২২ ম্যাচে গোল করেছেন ১৪টি। তবে জাতীয় দলের হয়ে ফ্যাবিয়ানোর রুদ্র মূর্তি। ৩৬ ম্যাচে গোল সংখ্যা ২৫। গত কনফেডারেশন কাপে ব্রাজিলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন টুর্নামেন্টে সর্বাধিক ৫ গোল করে। ব্রাজিলের হয়ে গত আটটি ম্যাচে আট গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। তাকে দলে না খেলানোর কথা ভাবতেও পারেন না কোচ কার্লোস ডুঙ্গা। বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথমপর্বে পড়েছে বেশ কঠিন গু্রপে। সেখান থেকে প্রথম হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ফ্যাবিয়ানোর গোলই ভরসা ব্রাজিলের। তার জন্য তৈরি তিনি।
রবিন ফন পার্সি : ৩৪/১, হল্যান্ড
প্রথম চারজনের চেয়ে বাজির দরে একটু পিছিয়ে পাঁচ নম্বরের ডাচ তারকা রবিন ফন পার্সি। কিন্তু তিনিও লড়তে পারেন ‘গোল্ডেন বুটের’ জন্য। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আর্সেনালের তিনিই প্রাণভোমরা। এখন হল্যান্ডের সহঅধিনায়ক। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন। তার কারণ মাঝেমধ্যে একটু নিচে নেমে মাঝ মাঠেরও হাল ধরেন পার্সি। দলের পেনাল্টি শট বিশেষজ্ঞ তিনি। একই সঙ্গে পায়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর ফ্রিকিক নেয়ার ক্ষমতা। তার সঙ্গে পার্সির হেডের দক্ষতাও দারুণ। এবারের বিশ্বকাপে হল্যান্ডকে নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। বিশ্বকাপ ২০০৬ এবং ইউরো ২০০৮-এ খেলার অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পার্সি। তার প্রমাণ মিলবে মাঠে।
যুদ্ধের হুমকি উত্তর কোরিয়ার জাহাজডুবি নিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে
রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়া গতকাল তাদের যুদ্ধজাহাজ ডুবির পেছনে উত্তর কোরিয়ার ছোড়া টর্পেডোকে দায়ী করায় দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের একমাত্র মিত্র চীনের আন্তর্জাতিক অবস্থানও পরীক্ষার মধ্যে পড়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, তারা এর সমুচিত জবাব দেবে। পক্ষান্তরে উত্তর কোরিয়াও ছেড়ে কথা বলছে না। তারাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি সিউল ও তার মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে যুদ্ধের জন্য পিয়ংইয়ং প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও সুইডেনসহ দক্ষিণ কোরিয়ার তদন্তকারীদের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার একটি সাবমেরিন থেকে ছোড়া টর্পেডোর আঘাতেই গত মার্চে ডুবে গেছে দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধজাহাজ চিওনান কর্ভেত্তি। এ ঘটনায় জাহাজের ৪৬ নাবিক মারা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আপাতদৃষ্টিতে এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই।’ উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় সিউলের অর্থবাজারে সামান্য প্রভাব ফেললেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশ ভীতভাবেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এসকে সিকিউরিটিসের এক বিশ্লেষক চই সিওং-লাক বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় আর উত্তর কোরিয়া কীভাবে তার জবাব দেয়, সেটাই প্রধান ব্যাপার হবে। যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়, তবে তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
তাত্ক্ষণিকভাবে চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার নিন্দা জানায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়াকে বাঁচাতে চীনের মরিয়া অবস্থান এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে বিনষ্ট করবে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, হামলাটিকে গত বছর দু’দেশের বিতর্কিত সমুদ্র সীমান্তে গোলাগুলির প্রতিশোধস্বরূপ মনে হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দক্ষিণ কোরিয়ার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে ‘গভীরভাবে সমস্যাযুক্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফলকে সমর্থন দিয়েছে এবং হোয়াইট হাউস বলেছে, এটা উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।
তাত্ক্ষণিকভাবে চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার নিন্দা জানায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়াকে বাঁচাতে চীনের মরিয়া অবস্থান এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে বিনষ্ট করবে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, হামলাটিকে গত বছর দু’দেশের বিতর্কিত সমুদ্র সীমান্তে গোলাগুলির প্রতিশোধস্বরূপ মনে হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দক্ষিণ কোরিয়ার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে ‘গভীরভাবে সমস্যাযুক্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফলকে সমর্থন দিয়েছে এবং হোয়াইট হাউস বলেছে, এটা উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।