About

ABC Radio

Blogger news

জুমের আগুনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে জীববৈচিত্র্য


জুমের আগুনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এর বিকল্প কোনো চাষের উদ্ভব না হওয়ায় প্রতি বছর আগুনে প্রত্যন্ত পাহাড়ের ৭০ শতাংশ সবুজ বনভূমি পুড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাটি শুকিয়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। ক্ষয় হয়ে যাওয়া মাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ঝিরি, খাল, বিল ও নদী। আর এ কারণে বর্ষা মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। বিলুপ্ত হয় পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য, পাশাপাশি পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুম চাষের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে পাহাড় বাছাই ও গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা কেটে ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু পাহাড়গুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পালা। গত এক মাসে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবান জেলায় এ জুমের আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক পাহাড়। শুধু এ আগুনে পাহাড় পুড়ছে না, এখানে বসবাস করা বহু ঘরবাড়িও পুড়ছে। স্থানীয়রা জানান, জুমে আগুনে পোড়ার সময় আকাশে কালো ধোঁয়া উত্তপ্ত বাতাস প্রবাহিত হয়। প্রচণ্ড দাবদাহে নদী, খাল, বিল ও ঝিরির পানি শুকিয়ে যায়। এতে পেটের পীড়াসহ ডায়রিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে এলাকার লোকজনের মাঝে। আগুনে পুড়ে সাময়িকভাবে মাটি উর্বর হলেও পরোক্ষণে দ্রুত শুকিয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হচ্ছে মাটি। ১৯৯৯ সালে সরকার জুমচাষের বিকল্প হিসেবে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ভূমিহীন কৃষকদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি বন্দোবস্তি প্রক্রিয়া আইনগত জটিলতার কারণে এখনও পর্যন্ত সফলভাবে শুরু করা যায়নি। ফলে এ প্রথা থেকে এখনও উপজাতি জুমিয়ারা ফিরে আসছে না। গজালিয়া বটতলী পাহাড়ের জুমিয়া অংহ্লাপ্রম্ন মারমা জানান, এক পাহাড়ে পর পর দুইবার জুমচাষ করা হয় না। কারণ এক পাহাড়ে বারবার ফসল ভালো হয় না। তাই একেক বছর একেক পাহাড়ে জুমচাষ করা হয়।
তিনি জানান, এখন পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা পোড়ানো হচ্ছে। এরপর সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসল রোপণ শুরু হবে। তিনি জানান, এখনও এ চাষের বিকল্প কোনো চাষের ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ চাষ করছেন। সরকারি হিসাবমতে এবার জেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে জুমচাষ করা হবে বলে জানা গেলেও বেসরকারিভাবে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এ তিন জেলায় জুমচাষের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করেছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) নামের এক প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, প্রথাগত চাষ পদ্ধতি হিসেবে জুমচাষ কয়েকশ’ বছর ধরে চলে এলেও পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর এটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাহাড় থাকলে জুমচাষের সময়ের আবর্তনটা সঠিকভাবে রক্ষা করা সম্ভব। আর এ সময় আবর্তনটা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ধরে রাখা গেলে যেটুকু বিরূপ প্রভাব ফেলে তা প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। এখন যে হারে জুমচাষ হচ্ছে তাতে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মৃত্তিকা ক্ষয়ও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক ছড়া-নালা বর্ষাকালে ধুয়ে আসা মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানীয়জলের সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। তবে সংগঠনটি জুমচাষের জন্য কোনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অপরাধের দৃষ্টিতে না দেখে বিকল্প চাষাবাদ পদ্ধতি চালুর ওপর জোর দিয়েছে।
জুমচাষ থেকে বিরত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম নিয়ন্ত্রণ নামে বনবিভাগের একটি শাখা রয়েছে। এছাড়া আশির দশকে সরকারি উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জুমিয়া পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কয়েক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। স্থায়ীভাবে জীবনযাপনের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এ প্রকল্পটি কোনো কাজে আসেনি। অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, জুমচাষের ফলে পাহাড়ে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের বায়ুও দূষিত হয়ে পড়ে। জুম পোড়ানোর সময় বাতাসে ছাইয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নানা ধরনের শ্বাসজনিত ব্যাধি দেখা দেয়। অন্যদিকে পাহাড়ি মাটির রস দ্রুত শুকিয়ে শত শত পাহাড় ধসে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত নানা জীবজন্তু। ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হুমকি মুখে পড়ছে।
লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, তিন পার্বত্য জেলায় ৩৬ হাজার পরিবার এখনও জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার একর টিলা জমিতে অপরিকল্পিতভাবে জুমচাষ করা হয়। এ চাষের বিকল্প হিসেবে কমলাসহ মিশ্র ফসল চাষে জুমিয়াদের উত্সাহিত করা হলে আগুনে পোড়ানোর হাত থেকে সবুজ পাহাড়, নদী রক্ষা করাসহ জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় রোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)