রিয়াজ চৌধুরী
দুর্নীতি অনিয়মে ছেয়ে গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। চলছে ঘুষ ও তদবিরবাণিজ্য। প্রাতিষ্ঠানিক ও সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত এখানে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মহাজোট সরকারের দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মাউশির ঘুষ, অনিয়ম ও তদবিরবাণিজ্যের ধরনও। অতীতে মাউশিতে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন হলেও এখন হয় কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রেখে। আশপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসেও অসাধু কর্মকর্তারা অনৈতিক লেনদেন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী আমার দেশকে বলেছেন, মাউশির দুর্নীতি হুট করে বন্ধ করা যাবে না। সময় লাগবে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
জানা যায়, দেশের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, এমপিওভুক্তকরণ, টাইমস্কেলসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তদারকি করে মাউশি। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পাওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবেও বেতন পায়। আর এই এমপিওভুক্তিসহ বদলি ও নিয়োগ নিয়েই শিক্ষাভবনে চলে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম, তদবিরবাজি ও স্বজনপ্রীতি। এছাড়া দিনবদলের সরকারের প্রথম কয়েক মাস মাউশিতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরবর্তী সময়ে আবারও শুরু হয় স্বজনপ্রীতি ও ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায় করার মহাযজ্ঞ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) দফায় দফায় ব্যবস্থা নিয়েও কর্মকর্তাদের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে পারছেন না। তদবিরবাজ ও অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটেশনে কর্মরত কর্মকর্তা মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর একটি সিন্ডিকেট শিক্ষা প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ‘ফেমাস বাড়ৈ’খ্যাত শিক্ষামন্ত্রীর ওই এপিএসের সিন্ডিকেট প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছে মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক দীপক কুমার নাগ, মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর জাকির হোসেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক প্রফেসর ড. সিরাজুল হক, সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান, সরকারি কলেজ শাখার ডিপুটি ডিরেক্টর মইনুল ইসলাম (যিনি দুর্নীতির দায়ে বান্দরবান ও কক্সবাজারে দুইবার বদলি হলেও ফেমাস বাড়ৈ তাকে মাউশিতে পুনরায় নিয়ে এসেছেন), কলেজ ও প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক জাফর আলী, মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক আবদুল কুদ্দুস, বেসরকারি কলেজ শাখার সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন ও প্রশাসনের উপপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর। এরা মাউশিসহ শিক্ষা প্রশাসনের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাউশির এসব কর্মকর্তা নিজেদের কর্মস্থলের কাজ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন তাদের সিন্ডিকেট প্রধান ফেমাস বাড়ৈর সঙ্গে তার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে সাক্ষাত্ করেন। সেখানে তারা কোন জায়গায় কী তদবির রয়েছে সেগুলোর তথ্য আদান-প্রদান করেন। অনৈতিক টাকার ভাগবাটোয়ারা ও কাকে কত দেয়া হবে তা নিয়ে রফা করেন। সন্ধ্যার পর তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি জায়গায় গোপন বৈঠকে বসেন এবং অনৈতিক লেনদেন করেন। মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশি মহাপরিচালক অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষা প্রশাসন সিন্ডিকেট তা কানেই তুলছে না। বরং সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে ঘুষ ও তদবিরবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বুধবার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় উল্লিখিত মাউশির এসব কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় সমিতির ১৬০ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন সভায় একসঙ্গে দাঁড়িয়ে মাউশির এসব কর্মকর্তাকে ভর্ত্সনা করে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের কাছে বলেন, এসব দুর্নীতিবাজ ও তদবিরবাজ কর্মকর্তাদের কারণে শিক্ষকরা চরম হয়রানির শিকার হন। এসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষ নেয়া ছাড়া একটি কাজও করেন না। সমিতির নির্বাচনে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
অন্যদিকে, সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠিত টিচার্স কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট (টিকিউআই) প্রকল্পের অধীনে ‘স্কুল রিডারশিপ’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট নন এমন কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অসন্তোষ প্রকাশের পর বুধবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রণালয়ে তার এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈসহ মাউশির ৪ কর্মকর্তাকে তলব করেন। তিনি তাদের কাছে জানতে চান ‘স্কুল রিডারশিপ’ প্রশিক্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী। কেন তারা বিদেশ ভ্রমণে গেলেন। তারা কোনো প্রশ্নের জবাব ঠিকভাবে দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী এসব কর্মকর্তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত থাকলে কঠিন পরিণাম হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জানা যায়, মাউশির ৪ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছে ‘ফেমাস বাড়ৈ’খ্যাত সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক জাফর আলী, মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক আবদুল কুদ্দুস, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার।
জানা যায়, মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া আখ্যায়িত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ গৌরীপুর মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন শিক্ষা সচিব। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাউশিকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু মাউশির প্রশাসন শাখা এখনও বিষয়টি নিয়ে একেবারে নীরব রয়েছে বলে জানা গেছে।
কলেজ শাখা থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কাউকে টাইমস্কেল দেয়া যাবে না। কিন্তু ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের এমপিওভুক্তি ও টাইমস্কেল প্রদানে ইচ্ছেমতো জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এছাড়া ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমপক্ষে ১৭টি জেলার কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাউশির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরাও নিয়মিত এমপিও সুবিধা নিচ্ছেন। তাছাড়া কলেজ শাখায় অদক্ষ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের রাজত্ব চলছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার দেশকে বলেন, মাউশিতে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে, এটা সত্য। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এসব দুর্নীতি অনিয়ম হুট করে দূর করা যাবে না। আস্তে আস্তে হবে, সময় লাগবে। তিনি বলেন, আমি দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। মাউশির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ঝটিকা পরিদর্শন চালিয়েছি। কোনো অনিয়ম দেখলে তাদের চাকরিচ্যুত করেছি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে। আমরা মাউশির ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মাউশি ডিজি অধ্যাপক নোমান উর রশীদ অনিয়ম দুর্নীতির কথা স্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, অফিসে বসার সঙ্গে সঙ্গেই তদবিরবাজদের ভিড় পড়ে যায়। তদবিরবাজদের ঝামেলা এড়াতে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ামাত্র তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধী যে-ই হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। শিক্ষক হয়রানি বন্ধে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এদিকে মাউশির মাধ্যমিক শাখায়ও অনিয়ম দুর্নীতি থেমে নেই। এ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় মাদারীপুর জেলার নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহদেব বাড়ৈ প্রায় দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে এমপিওভুক্তির সুবিধা নিয়েছেন। ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসী মাউশিতে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মাউশি মহাপরিচালক মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর জাকির হোসেনকে নির্দেশ দেন। তদন্ত টিম এরই মধ্যে মাদারীপুরের নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। কিন্তু মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অনৈতিক টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টির মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসনের সিন্ডিকেটের কারণে দেশের কলেজগুলো শিক্ষক স্বল্পতায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলা পর্যায়ের ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে যেখানে একজন শিক্ষকও নেই সেখানে রাজধানীর কলেজগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। তারা বসে বসে সরকারি বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের লাখ লাখ টাকার তদবিরবাণিজ্য ও চাপের জন্য মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারছে না। মাঝে-মধ্যে দু’একজন শিক্ষককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিনিধিদের চাপে তা স্থগিত করতে বাধ্য হয় মাউশি।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকদের নিজ জেলা শিক্ষা অফিসারের (ডিইও) মাধ্যমে মাউশি মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবেদনকারীর এমপিওভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ত নেন। কিন্তু মহাপরিচালকের দফতরে আবেদনপত্র আসার আগেই রহস্যজনক কারণে তা লাপাত্তা হয়ে যায়। আবেদনপত্রের কোনো প্রতিফলন না পেয়ে সংশ্লিষ্টরা আবার আবেদন করেন। এভাবে অসংখ্যবার আবেদন করে কোনো প্রতিফলন না পেয়ে তারা দ্বারস্থ হন ঘুষখোর কেরানি ও কর্মর্তাদের কাছে। তখন অসাধু কর্মকর্তারা এমপিওভুক্ত করে দেয়ার কথা বলে আবেদনকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার এমনকি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। অসাধু কর্মকর্তাদের চাহিদা মাফিক ঘুষ না দিলে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে না পারলে কোনো শিক্ষকই সহজে চাকরি এমপিওভুক্ত করাতে পারেন না। ঘুষের প্রলোভন না দেখালে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত সেকশনে প্রবেশে নানাভাবে হয়রানিও করে কেরানি ও নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা। মাউশিতে শিক্ষকদের হয়রানি রোধ, তদবিরবাজ শিক্ষকদের ঝামেলা এড়াতে এবং কর্মকর্তাদের ঘুষপ্রীতি বন্ধ করতে মহাপরিচালক শিক্ষাভবনে সংশ্লিষ্টদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখানো ছাড়া শিক্ষকরা মাউশিতে ঢুকতে পারতেন না। কিন্তু সেই উদ্যোগও এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলেও মাউশির দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নির্দেশ ছিল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি বা প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কোনো শিক্ষক মাউশিতে ভিড় জমাতে পারবেন না। আর প্রধান শিক্ষককে আসতে হলে সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। এ নিয়মও বেশিদিন পালিত হয়নি।
জানা যায়, দেশের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, এমপিওভুক্তকরণ, টাইমস্কেলসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তদারকি করে মাউশি। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পাওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবেও বেতন পায়। আর এই এমপিওভুক্তিসহ বদলি ও নিয়োগ নিয়েই শিক্ষাভবনে চলে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম, তদবিরবাজি ও স্বজনপ্রীতি। এছাড়া দিনবদলের সরকারের প্রথম কয়েক মাস মাউশিতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরবর্তী সময়ে আবারও শুরু হয় স্বজনপ্রীতি ও ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায় করার মহাযজ্ঞ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) দফায় দফায় ব্যবস্থা নিয়েও কর্মকর্তাদের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে পারছেন না। তদবিরবাজ ও অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটেশনে কর্মরত কর্মকর্তা মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর একটি সিন্ডিকেট শিক্ষা প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ‘ফেমাস বাড়ৈ’খ্যাত শিক্ষামন্ত্রীর ওই এপিএসের সিন্ডিকেট প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছে মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক দীপক কুমার নাগ, মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর জাকির হোসেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক প্রফেসর ড. সিরাজুল হক, সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান, সরকারি কলেজ শাখার ডিপুটি ডিরেক্টর মইনুল ইসলাম (যিনি দুর্নীতির দায়ে বান্দরবান ও কক্সবাজারে দুইবার বদলি হলেও ফেমাস বাড়ৈ তাকে মাউশিতে পুনরায় নিয়ে এসেছেন), কলেজ ও প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক জাফর আলী, মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক আবদুল কুদ্দুস, বেসরকারি কলেজ শাখার সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন ও প্রশাসনের উপপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর। এরা মাউশিসহ শিক্ষা প্রশাসনের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাউশির এসব কর্মকর্তা নিজেদের কর্মস্থলের কাজ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন তাদের সিন্ডিকেট প্রধান ফেমাস বাড়ৈর সঙ্গে তার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে সাক্ষাত্ করেন। সেখানে তারা কোন জায়গায় কী তদবির রয়েছে সেগুলোর তথ্য আদান-প্রদান করেন। অনৈতিক টাকার ভাগবাটোয়ারা ও কাকে কত দেয়া হবে তা নিয়ে রফা করেন। সন্ধ্যার পর তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি জায়গায় গোপন বৈঠকে বসেন এবং অনৈতিক লেনদেন করেন। মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশি মহাপরিচালক অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষা প্রশাসন সিন্ডিকেট তা কানেই তুলছে না। বরং সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে ঘুষ ও তদবিরবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বুধবার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় উল্লিখিত মাউশির এসব কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় সমিতির ১৬০ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন সভায় একসঙ্গে দাঁড়িয়ে মাউশির এসব কর্মকর্তাকে ভর্ত্সনা করে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের কাছে বলেন, এসব দুর্নীতিবাজ ও তদবিরবাজ কর্মকর্তাদের কারণে শিক্ষকরা চরম হয়রানির শিকার হন। এসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষ নেয়া ছাড়া একটি কাজও করেন না। সমিতির নির্বাচনে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
অন্যদিকে, সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠিত টিচার্স কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট (টিকিউআই) প্রকল্পের অধীনে ‘স্কুল রিডারশিপ’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট নন এমন কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অসন্তোষ প্রকাশের পর বুধবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রণালয়ে তার এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈসহ মাউশির ৪ কর্মকর্তাকে তলব করেন। তিনি তাদের কাছে জানতে চান ‘স্কুল রিডারশিপ’ প্রশিক্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী। কেন তারা বিদেশ ভ্রমণে গেলেন। তারা কোনো প্রশ্নের জবাব ঠিকভাবে দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী এসব কর্মকর্তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত থাকলে কঠিন পরিণাম হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জানা যায়, মাউশির ৪ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছে ‘ফেমাস বাড়ৈ’খ্যাত সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক জাফর আলী, মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক আবদুল কুদ্দুস, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বিজয় কুমার।
জানা যায়, মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া আখ্যায়িত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ গৌরীপুর মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন শিক্ষা সচিব। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাউশিকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু মাউশির প্রশাসন শাখা এখনও বিষয়টি নিয়ে একেবারে নীরব রয়েছে বলে জানা গেছে।
কলেজ শাখা থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কাউকে টাইমস্কেল দেয়া যাবে না। কিন্তু ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের এমপিওভুক্তি ও টাইমস্কেল প্রদানে ইচ্ছেমতো জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এছাড়া ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমপক্ষে ১৭টি জেলার কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাউশির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরাও নিয়মিত এমপিও সুবিধা নিচ্ছেন। তাছাড়া কলেজ শাখায় অদক্ষ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের রাজত্ব চলছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার দেশকে বলেন, মাউশিতে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে, এটা সত্য। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এসব দুর্নীতি অনিয়ম হুট করে দূর করা যাবে না। আস্তে আস্তে হবে, সময় লাগবে। তিনি বলেন, আমি দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। মাউশির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ঝটিকা পরিদর্শন চালিয়েছি। কোনো অনিয়ম দেখলে তাদের চাকরিচ্যুত করেছি। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে। আমরা মাউশির ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মাউশি ডিজি অধ্যাপক নোমান উর রশীদ অনিয়ম দুর্নীতির কথা স্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, অফিসে বসার সঙ্গে সঙ্গেই তদবিরবাজদের ভিড় পড়ে যায়। তদবিরবাজদের ঝামেলা এড়াতে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ামাত্র তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধী যে-ই হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। শিক্ষক হয়রানি বন্ধে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এদিকে মাউশির মাধ্যমিক শাখায়ও অনিয়ম দুর্নীতি থেমে নেই। এ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় মাদারীপুর জেলার নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহদেব বাড়ৈ প্রায় দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে এমপিওভুক্তির সুবিধা নিয়েছেন। ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসী মাউশিতে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মাউশি মহাপরিচালক মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর জাকির হোসেনকে নির্দেশ দেন। তদন্ত টিম এরই মধ্যে মাদারীপুরের নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। কিন্তু মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অনৈতিক টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টির মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসনের সিন্ডিকেটের কারণে দেশের কলেজগুলো শিক্ষক স্বল্পতায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলা পর্যায়ের ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে যেখানে একজন শিক্ষকও নেই সেখানে রাজধানীর কলেজগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। তারা বসে বসে সরকারি বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের লাখ লাখ টাকার তদবিরবাণিজ্য ও চাপের জন্য মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারছে না। মাঝে-মধ্যে দু’একজন শিক্ষককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিনিধিদের চাপে তা স্থগিত করতে বাধ্য হয় মাউশি।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকদের নিজ জেলা শিক্ষা অফিসারের (ডিইও) মাধ্যমে মাউশি মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আবেদনকারীর এমপিওভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ত নেন। কিন্তু মহাপরিচালকের দফতরে আবেদনপত্র আসার আগেই রহস্যজনক কারণে তা লাপাত্তা হয়ে যায়। আবেদনপত্রের কোনো প্রতিফলন না পেয়ে সংশ্লিষ্টরা আবার আবেদন করেন। এভাবে অসংখ্যবার আবেদন করে কোনো প্রতিফলন না পেয়ে তারা দ্বারস্থ হন ঘুষখোর কেরানি ও কর্মর্তাদের কাছে। তখন অসাধু কর্মকর্তারা এমপিওভুক্ত করে দেয়ার কথা বলে আবেদনকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার এমনকি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। অসাধু কর্মকর্তাদের চাহিদা মাফিক ঘুষ না দিলে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে না পারলে কোনো শিক্ষকই সহজে চাকরি এমপিওভুক্ত করাতে পারেন না। ঘুষের প্রলোভন না দেখালে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত সেকশনে প্রবেশে নানাভাবে হয়রানিও করে কেরানি ও নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা। মাউশিতে শিক্ষকদের হয়রানি রোধ, তদবিরবাজ শিক্ষকদের ঝামেলা এড়াতে এবং কর্মকর্তাদের ঘুষপ্রীতি বন্ধ করতে মহাপরিচালক শিক্ষাভবনে সংশ্লিষ্টদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখানো ছাড়া শিক্ষকরা মাউশিতে ঢুকতে পারতেন না। কিন্তু সেই উদ্যোগও এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলেও মাউশির দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নির্দেশ ছিল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি বা প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কোনো শিক্ষক মাউশিতে ভিড় জমাতে পারবেন না। আর প্রধান শিক্ষককে আসতে হলে সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। এ নিয়মও বেশিদিন পালিত হয়নি।