Blogger news
মোবাইলিংয়ের বিষাক্ত ছোবলে আসক্ত তরুণ সমাজ
0
comments
sofiq
-
মোবাইলিংয়ের বিষাক্ত ছোবলে আসক্ত তরুণ
সমাজ -- মোবাইলে অস্বাভাবিক (বিকৃত)
আলাপ করেন ২৮% তরুণ- সামাজিক
অবক্ষয়ের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে একটি গবেষণা
প্রতিবেদন
শখ- সারারাত প্রেমিকার সাথে ফোনালাপ
মোবাইলের অপব্যবহারের কারনে তরুণ-তরুণীদের উৎপাদনশীলতা ভয়াবহ রকমের কমে গিয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে অসচেতন ও ইন্নোসেন্টরাই অধিক শিকার হচ্ছেন। কারন যারা সচেতন অথবা বাস্তব জগতে প্রকাশ্যে প্রেম করে কিংবা খারাপ জগতের সাথে পরিচিত তাদের মোবাইলের প্রেম কিংবা রাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার কৌতুহল সাধারণত থাকে না। গবেষনার দেখা গেছে অসচেতন ও বাহ্যিকভাবে ইন্নোসেন্টরাই মূলত প্রথম দিকে কৌতুহলবশত: মোবাইলিং এর শিকার হয়। এক পর্যায়ে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকেই অপরিচিত জনের সাথে কয়েকশ কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে হাজার মিনিটও কথা বলে, কিন্তু তাদের সাথে হয়তো কখনো দেখাই হয়নি। তবে বিপদ ঘটে তাদের সাথে প্রথম স্বাক্ষাতের সময়। কারন আর এ ক্ষেত্রে আরো বিস্ময়কর হচ্ছে মোবাইলে যেসব ছেলে-মেয়েরা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাদের ক্ষেত্রে ছেলেদের বাহ্যিক চেহারা সুন্দর কিংবা অসুন্দর সব রকমের হলেও মেয়েদের প্রায় অধিকাংশই বাহ্যিকভাবে অসুন্দর ( যদিও রুপের ঝলক বেশি দিন থাকে না তথা সবাই একদিন দাদাদাদির মত হবে, কিন্তু গুণের ঝলক চিরস্থায়ী)। বাহ্যিকভাবে সুন্দরী যেসব তরুণীরা প্রেম করতে চায় তারা প্রকাশ্য মার্কেটেই করতে পারে। আর যারা বাহ্যিকভাবে অসুন্দরী কিন্তু প্রেম করতে চায় তারাই মূলত মোবাইলিং এর মাধ্যমে কিছু একটা করার চেষ্টা করে। ফলে কয়েকশ মিনিট মোবাইলিং করার পরেও প্রথম স্বা্ক্ষাৎ করতে যাওয়া অধিকাংশই তরুণই কৌশলে দূর থেকে তাদের কল্পিত নায়িকাকে দেখে মাথায় হাত দিয়ে আপসোস করতে করতে চলে আসে কিংবা প্রতারণার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন সম্পর্ক রাখে। কোন কোন ক্ষেত্রে মোবাইলিং টা চরম অসম ও বিকৃত রূপ ধারণ করে। সর্বপ্রথম যখন ডিজুস চালু হয় তখন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি প্রায় ২৫% কমে যায়। আর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কারো কারো ক্লাসে মুরগির মত ঝিমুনের ব্যাপার ছিল লক্ষ্যনীয়।
এক সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ Sentence টি ( আমি তোমাকে ভালবাসি) স্বপ্নের মানুষটিকে বলার জন্য ৭ বছর থেকে শুরু করে সারা জীবন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। কিংবা জীবদ্দশায় কেউ কেউ বলতে পারত না। ( এই কথাটি সর্ব প্রথম বলতে আমার কত বছর লেগেছিল জানেন!!!???) আমার ২৭ বছর লেগেছিল। কারন বিয়ের আগে ওকে চিনতাম না। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল কিংবা ফেসবুকের এই যুগে দেখার আগেই অনেক কিছু.....! মাত্র ১ যুগ আগেও সমাজের ৫% তরুণ-তরুণীর বিবাহপূর্ব সম্পর্ক ছিল কিনা সন্দেহ। তখন তারা পড়াশুনা, খেলাধুলা, সামাজিক ক্লাব-সংঘ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু বর্তমানে তরুণ-তরুণীর বিবাহপূর্ব সম্পর্ক ১০০% নাকি ১২৫%!!! সেটা গবেষণার বিষয়। কারণ যারা এই অসুস্থ পথে যায় তারা অনেক ক্ষেত্রেই ১: অনেক। আর সব কিছু সহজ হওয়ার ফলে এখনকার তরুণ-তরুণীদের প্রেমের সম্পর্ক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মত। যদিও এদের অধিকাংশের সম্পর্কই পরিনতি পর্যন্ত গড়ায় না। ফলে যা হবার তাই হয়।
জানুয়ারি ২০০৯ এ- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিচালিত একটি গবেষণা জরিপে নিন্মোক্ত ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়।
এক নজরে:
- জরিপকৃত মোট শিক্ষার্থী ১০০ জন
- মোবাইল ব্যবহারকারী ৯৩ জন
- তরুণ ৬০ জন
- তরুণী ৪০ জন
- ৪টির বেশি সিম ব্যবহারকারী ৯ জন
- একাধিক সিম ব্যবহারকারী ৪৩ জন
- সরাসরি প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে ৮ জনের
- কোনভাবেই প্রেমের সম্পর্ক নেই ৩৫ জনের
- মোবাইলের মাধ্যমে সম্পর্ক ৫০ জনের
- দুষ্টামী/ কৌতুহলবশত/ মজা করে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেমের/ আড্ডার সম্পর্ক ২৬ জনের
- সিরিয়াসলি মোবাইলের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক ২৪ জনের
- মোবাইলের মাধ্যমে একাধিক জনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ২২ জনের
- অসম বয়সের বিপরীত লিঙ্গের সাথে মোবাইলে কথা বলেন ১৩ জন
- মোবাইলে অস্বাভাবিক (বিকৃত) আলাপ করেন ২৮ জন
- প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ১৫ জন
- প্রতিদিন গড়ে ২ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ২০ জন
- প্রতিদিন গড়ে ১ ঘন্টার বেশি মোবাইলে কথা বলেন ৮ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর সরাসরি স্বাক্ষাৎ করেছেন ৩২ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর একাধিক জনের সাথে সরাসরি স্বাক্ষাৎ করেছেন ১৭ জন
- মোবাইলে পরিচয়ের পর সরাসরি স্বাক্ষাৎ করতে গিয়ে দূর থেকে দেখেই পালিয়েছেন ১৫ জন তরুণ (অনেকেই একাধিক বার)
- প্রতারণার উদ্দেশ্যে সম্পর্ক রেখেছেন ১১ জন
- নিছক গল্প করার জন্যই ফোনালাপ করেন ১৪ জন
- ফোনালাপের মাধ্যমে তরুণীদের সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রতারণা তথা সর্বস্ব খুইয়েছেন ৬ জন।
- শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন ১৯ জন।
তবে মোবাইল প্রেমের সূত্রপাত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলেদের পক্ষ থেকে।
জরিপটি আমরা ৪ জন বন্ধু মিলে সম্পন্ন করি ২০০৯ এর জানুয়ারিতে। সাম্প্রতিক সময়ের তরুণ প্রজন্মের এই চরম অধ:পতনের বিয়টি আমাদের নীতি নির্ধারকদের ভাবনার বাইরেই ছিল। মোবাইলের সর্বনিম্ন একটা রেট করার পেছনে আমাদের জরিপটির একটা ভাল ভূমিকা ছিল।
আর জরিপটি করা হয়েছিল আজ থেকে ২ বছরের অধিক সময় পূর্বে। তাই বর্তমান অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সেটিও ভাববার বিষয়।
সাম্প্রতিক সময়ের তরুণ প্রজন্মের এই চরম অধ:পতনের বিয়টি আমাদের নীতি নির্ধারকদের ভাবনার বাইরেই ছিল। বিভিন্নভাবে বুঝানোর মাধ্যমে অনেক দেরিতে হলেও মোবাইলের সর্বনিম্ন একটা রেট সরকারের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ততদিনে রোগটি যে অনেক ভয়াবহ মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, গবেষণা এবং ছাত্র রাজনীতি অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে পাশ্চাত্য সাংস্কৃতির আগ্রাসন অন্যদিকে তরুণ তরুণীদের অবাধ মিশ্রনের সুযোগ তাদের শিক্ষা গবেষণায় মনোযোগহীনতা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তরুণ- তারুণীদের অবাধ মেলামেশার পেছনে অধিক সময় দেয়া, বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হওয়া (ট্যাবলেটিং, ফেনসিডাইলিং, মোবাইলিং, কম্পিউটারিং), বড় আপু-ভাইয়াদের নোট মুখস্ত করে পরীক্ষা দেয়া এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক দলের লেজুড়বিত্তি তথা টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি অনেকটাই সাধারন রূপ লাভ করেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রদের ভূমিকা দেখে জনৈক ব্যক্তি সেদিন আক্ষেপ করে বলছিলেন- দেশটা বিক্রি হয়ে গেলেও সম্ভবত আমাদের ছাত্রদের ঘুম ভাঙ্গবে না এবং তিনিই বলছিলেন, ঘুম ভাঙ্গবে কি করে, তাদেরকেতো ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের উচ্চক্ষিার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক একাডেমিক মান অর্জনের জন্য নতুন করে ভাবতে হবে। নির্মম হলেও সত্য বিশ্বের কয়েকশত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করা হলেও সেখানে আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না।
বর্তমান বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করেছে সহজ। পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার হলো মোবাইল। বর্তমান যোগাযোগের সহজ মাধ্যম মোবাইল। মোবাইল মানুষের উপকারে ব্যবহার হচ্ছে এ কথাটা ঠিক। কিন্তু তরুণ সমাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, মোবাইলে অযথা অপ্রয়োজনীয় কথা বলছে ঘন্টার পর ঘন্টা। ফোন আলাপনকে বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম মনে করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে মূল্যবান সময় ব্যয় করছে, কষ্টে অর্জিত টাকা হিসাব ছাড়া খরচ করছে। নিজের সুন্দর জীবনকে পিছিয়ে দিচ্ছে অজানা অনিশ্চিত পথে। সৃজনশীল কাজ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। মেধাকে করছে অপব্যবহার। মোবাইলে সম্পর্ক হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত নিজের জানটা বিলিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ কঠিন এক নেশায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন মেয়ে মানুষ বন্ধু বান্ধবীর সঙ্গে এক মুহূর্তে কথা না বলে থাকতে পারে না। নেশা খাচ্ছে তরুণ সমাজকে। আমাদের মতো তরুণদের নিকট দেশ জাতি সমাজ অনেক কিছুর স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করি। আমরা সৃজনশীল কাজ করি। প্রয়োজনীয় কথা বলি। শখের বশে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলি। সময় অর্থ ব্যয় না করি। সময়কে মূল্য দিয়ে সঠিক সময় সঠিক কাজ করি। মোবাইলে ক্ষণিকের শব্দের আনন্দ থেকে দূরে থাকি। আনন্দের ফলাফল শূন্য। আমরা জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে গড়ে তুলি। তাহলেই আমাদের দ্বারা পরিবার সমাজ দেশ জাতি উপকৃত হবে। আসুন তরুণ বন্ধুরা, দেশ ও জাতি পরিচালনা করার জন্য গড়ে উঠি। আমাদের তরুণ সমাজ থেকে দেশ জাতি পরিচালিত হবে। এই তরুণদের মধ্যে থেকে আপনিও হতে পারেন একজন। তাই আর না মোবাইলে অযথা অপ্রয়োজনীয় ফোন আলাপন।
মোবাইলে কথা অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। আমি মনে করি সামগ্রিকভাবে অভিভাবকদের সচেতন ও সতর্ক হওয়া জরুরি। মোবাইল কিংবা ইন্টারনেটের ভালো দিক ৯৯% হলে খারাপ দিক মাত্র ১%। কিন্তু সমস্যা হলো কেউ যদি সেই খারাপ দিক তথা অপব্যবহার নিয়ে পুরো সময় ব্যস্ত থাকে।
- অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ পরামর্শ বা সুপারিশ:
সন্তানের খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করলে আপনার সন্তানকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা ভালো কোথায়ও চান্স পাওয়া পর মোবাইল দিন।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, আমেরিকানরা তাদের এই পতনোন্মুখ অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রোপটে হয়তো সফল হতে না পারলে অন্তত কোনোরকমে টিকে থাকতে পারবে।
কিন্তু বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে এই অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে রা করতে না পারলে আগামী ৫০ বছরে আমাদের অবস্থান হবে ধ্বংসের প্রান্তসীমানায়।
বি:দ্র: মোবাইলিংয়ের বিষাক্ত ছোবলে আসক্ত তরুণ সমাজকে বাঁচাতে আপনার পরামর্শ দিন।
(আপডেট চলবে
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট: আসুন দেখি কি হতে যাচ্ছে।প্রত্যাশা-১
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট: আসুন দেখি কি হতে যাচ্ছে।প্রত্যাশা-১
আর কিছুদিনের মধ্যে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় জাতীয় সংসদে তাঁর বাজেট পেশ করবেন। জাতীয় বাজেট নিয়ে সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের আগ্রহের শেষ নেই।
সাধারণত: বাজেটগুলোর চেহারা যেমন হয়ে থাকে-
নির্বাচনের সময় বা আগে সাধারণ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলে গিয়ে বাজেট প্রণীত হয়।
জাতীয় বাজেটে হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে।
প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে ঘোষণা আসবে। অনেক আসার কথা বলা হবে।
বিদেশী অর্থ সাহায্য প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নতুন নতুন কর আরোপ করা হবে।
''আমাদের কাছে আলাদীনের চেরাগ নেই''..প্রধানমন্ত্রী (তাই কোনো চমক থাকবেনা।)
বাজেটে যত রঙিন ফানুস উড়ানো হয়, তার কোনকিছু বাস্তবে অর্জিত হয় বলে আমার জানা নেই। বাজেটে আর যাই থাক, গরিবের জন্য, দারিদ্রসীমার নীচে যারা বাস করছে, তাদের জন্য কিছু থাকবেনা বলেই আমার ধারণা।
কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার ও কীটনাশকের ওপর শতকরা ১০০ ভাগ ভর্তুকি চাই। বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
বাজেটে কি থাকছে, না থাকছে তা নিয়ে নয়; আজ বরং আসন্ন বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শিক্ষাকে পৃথিবীর সকল দেশ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও শিক্ষা খাতে বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষার প্রসারে এবং আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যে সকল বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, সেগুলো হলো:-
১) কারিগরি শিক্ষার প্রসার (কম্পিউটার, যন্ত্র, বিদ্যুৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, অটোমোবাইল ইত্যাদি সহ সকল কারিগরি শিক্ষা) কে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সর্বত্র কারিগরি শিক্ষালয় খোলার জন্য সরকারী অনুদান রাখা হোক।
২) জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হোক।
৩) বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারী ও বেসরকারি শিক্ষালয়ে ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ ও কারিগরি শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
৪) সকল শিক্ষা উপকরণ, বিশেষত: বই, খাতা, কাগজ (সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট), কলম, পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদির ওপর আমদানি শুল্ক ও মুসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক।
সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের কাগজ কলগুলোকে সরকারী অর্থায়নে পুনরায় চালু করা হোক।
মুদ্রণ শিল্প এবং সংবাদপত্র শিল্পগুলো যেহেতু শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখে, সেহেতু প্রকাশনা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন রং ও কেমিক্যাল, মুদ্রণ যন্ত্র, সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজ ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে সকল কর ও মুসক প্রত্যাহার করা হোক।
৫) সকল আবাসিক স্কুল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
এছাড়া সকল আবাসিক শিক্ষালয়ের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও সরবরাহ বন্ধে এবং স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার যোগানে সরকারী অনুদান দেয়া হোক।
(বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে এদের শিক্ষার অধিকারটি নিশ্চিত করা হবে তো?)
শিক্ষার প্রসারই পারে আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল জাতিকে স্বাবলম্বী করতে।
সময়ের প্রয়োজনে সকল উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই স্বীকার করছেন।
আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানদের মানসম্পন্ন লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারার কারণে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।
এই দক্ষ জনশক্তি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রেরণ করলে আমাদের বেকারত্বের বোঝা কমবে বলে কী আপনারা একমত?
আপনার কোন সাজেশন আছে কী যা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের কারনে বাদ পড়ে গেছে ?
ছবি:ইন্টারনেট
এখানে দেখুন
গুগল অ্যাডসেন্স
গুগল অ্যাডসেন্স
গুগল অ্যাডসেন্স হল বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন Google এর একটি Advertising program। এর মাধ্যমে উপার্জনের জন্য একটি ওয়েব সাইট থাকতে হবে। ফ্রি ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে উপার্জন করা সম্ভব। গুগল অ্যাডসেন্স যদিও বহুদিন পূর্ব থেকেই সমগ্র বিশ্বে একটি নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উপার্জনের পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টি অনেকের কাছেই নুতন।প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের আইটি জগতে একটা হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। টাকা উপার্জনের জন্য অনেকেই নিজস্ব ওয়েবসাইট কিনে অথবা ফ্রি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেব্যবহার করেছে অ্যাডসেন্স।
গুগল অ্যাডসেন্স এর মূল প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না বুঝার কারনে অনেকের অ্যাডসেন্স একাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে তারা ঠিকই উপার্জন করছে।
মূল বিষয় হচ্ছে, গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে যে কোন ধরনের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে উপার্জন সম্ভব। শর্ত হচ্ছে, সাইটকে জনপ্রিয় করতে হবে। সাইটে প্রচুর ভিজিটর ঢুকতে হবে, ভাল contents থাকতে হবে।ভিজিটর একবার সাইটে প্রবেশ করে পুনরায় প্রবেশ করার আগ্রহ থাকে এ ধরনের contents প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হবে। সাইটে ভিজিটর প্রবেশ করানো এবং তাদেরকে ধরে রাখতে পারলে ভিজিটরদের একটি অংশ স্বাভাবিকভাবেই Google এর বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে। মনে রাখতে হবে, যত বেশি ভিজিটর আপনার সাইটে থাকবে তত আপনার উপার্জনের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। আমি হিসাব করে দেখেছি, প্রতিদিন গড়ে ১০০০ ভিজিটর সাইটে প্রবেশ করলে গড়ে ১০% ভিজিটর Google প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে। এতে গড়ে প্রতিদিন ১০ ডলার উপার্জন হবে। অর্থাৎ মাসে ৩০০ ডলার বা ২০০০০/- টাকা উপার্জন করা সম্ভব শুধুমাত্র একটি মানসন্মত ওয়েব সাইটের মাধ্যমে। একটি সাইট হতে এ ধরনের উপার্জন শুরু হয়ে গেলে ভিন্ন বিষয়ের উপর আরো সাইট আপনি তৈরি করতে পারবেন। অনলাইন উপার্জনের এক বিশাল দ্বার উন্মোচিত হবে আপনার জন্য। প্রয়োজন শুধু পরিশ্রম করার মানসিকতা। ভাবতে পারেন, ক্লিক করলেই যেহেতু ডলার তাহলে চিন্তা কি, সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে শুধু ক্লিক আর ক্লিক.........! Google কি এতই বোকা! বিজ্ঞাপনদাতারা কি এতই বোকা! ক্লিক করলেই টাকা দিবে! না, Fake Click করলে Google তার একাউন্ট বন্ধ করে দিবে। Original ক্লিক করলেই শুধু ডলার জমবে। তাহলে Original ক্লিক কোনটি, যার মাধ্যমে ডলার পাওয়া যাবে? সে কথাই আসছি, যেহেতু সাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে Google বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, সেহেতু ভিজিটর যদি সাইটের contents দেখার পাশাপাশি গুগল অ্যাড এ ক্লিক করে উক্ত বিজ্ঞাপনদাতার সাইটে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে (এক্ষেত্রে ভিজিটর কিন্তু fake ক্লিক করেনি, বরং তার নিজস্ব আগ্রহে উক্ত বিজ্ঞাপন দাতার সাইটে প্রবেশ করেছে) তবেই হবে Original ক্লিক। এ ধরনের স্বাভাবিক ক্লিক করলেই আপনার উপার্জন হবে। Google তার অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামের জন্য এমন টেকনোলজি ব্যবহার করেছে যে কেও fake ক্লিক করলে তা ধরে ফেলতে সক্ষম। অতএব, এ ধরনের অসাধু চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, Google Adsense একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা। এর পুঁজি হচ্ছে, আপনার ব্লগিং পরিকল্পনা ও সঠিকভাবে তার ব্যবহার। নগদ মূলধন বলতে শুধুমাত্র একটি পিসি আর ডোমেইন/হোস্টিং এর জন্য মাত্র ২/৩ হাজার টাকা। সঠিকভাবে ব্লগিং করতে পারলে, পর্যাপ্ত ভিজিটর সাইটে প্রবেশ করাতে পারলে মাসে হাজার ডলার উপার্জন করা সম্ভব-এটা কল্পনা নয়, বাস্তব।
পরিশ্রম করে একটা ভালমানের ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারলে আর ভিজিটর বাড়ানোর সব কৌশল প্রয়োগ করতে পারলে আপনাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন আর আপনার একাউন্টে ডলার জমতে থাকবে। সত্যি অভাবনীয়!
ভিজিটর বাড়ানোর কৌশল জানতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিন।
যারা গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদী উপার্জন করতে চান তাদের জন্য নিচে কতিপয় গাইডলাইন প্রদত্ত হল।
১. যে ধরনের ব্লগিং সাইট করতে চান, তা ভেবে চিন্তে নির্বাচন করুন। অর্থাৎ যেসব সাইটে ভিজিটর বেশি প্রবেশ করে সে ধরনের সাইট তৈরি করুন। ব্লগিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২.সাধারণত শিক্ষামূলক (কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়সহ অন্যান্য শিক্ষা), সাধারণ জ্ঞান, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, ফিটনেস টিপস্, ইত্যাদি বিষয়ের সাইটে ভিজিটর বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের ভালমানের সাইটকে ফলো করে আপনিও অনুরুপ ব্লগিং সাইট তৈরি করতে পারেন।
৩. প্রথমেই টাকা উপার্জনের চিন্তা মাথায় না এনে যথেষ্ট সময় নিয়ে সাইটকে সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করুন।
৪. কখনোই কোন সাইটের contents কপি করে আপনার সাইটে পোস্ট করবেন না। অবশ্য ভাল কোন ব্লগিং সাইটকে অনুকরণ করে নুতন আর্টিক্যাল, টিউটোরিয়াল, টিপস্, ইত্যাদি পোস্ট করতে পারেন।
৫. সাইট পরিপূর্ণভাবে তৈরি হলে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য মনোযোগী হোন। এক্ষেত্রে Seo এর প্রাথমিক বিষয়গুলো প্রয়োগ করুন। ( ব্যাকলিংক তৈরি, ফোরামে পোস্ট, বুকমার্কিং ইত্যাদি)
৬. সবশেষে Google Adsense এর জন্য apply করুন।
তবে এ সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য আগে আমি নিচের ৫টি গাইডলাইন ফলো করার জন্য সাজেষ্ট করছি।
১. পোষ্ট: সম্পূর্ণ ইউনিক, স্ব-হস্তে লিখে কমপক্ষে ৩০টি পোষ্ট করুন। কপি-পেষ্টের ধারে কাছে যাবেন না।
২. ভাষা: সম্পূর্ণ ইংরেজিতে পোষ্ট করুন, বাংলা সাইটে Google Adsense এপ্রুভ হবে না।
৩. বিষয়বস্তু: নিউজ, খেলাধুলা, টিউটোরিয়াল, স্বাস্থ্য-ফিটনেস, সাধারন জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়বস্ত নিয়ে সাইট করলে Adsense এপ্রুভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৪. সাইট ডিজাইন: ওয়ার্ডপ্রেস বা জুমলা দিয়ে সাইট ডিজাইন করুন। কারন, উভয়টি SEO এনাবেলড, যা Google অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
৫. SEO: সাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনসমূহে ইনডেক্স করুন এবং সাইটম্যাপ সাবমিট করুন।
Google Adsense চেক এর একটি প্রুভ কপিঃ
গুগল সার্চ করতে গেলে দেখা যায় ডানে Sponsored Links থাকে, আবার জিমেইলেও বিভিন্ন পন্যের লিংক ব্যবহৃত হয়। এগুলো মূলত গুগলের বিজ্ঞাপন। এখন আপনি যদি গুগলের এসব বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েব সাইটে বা ব্লগে প্রচার করেন তাহলে গুগল নির্দিষ্ট হারে আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। আপনার সাইটে প্রচারিত লিংকে ক্লিক করে কেউ যদি উক্ত সাইটে সাইট ইন/ডাউনলোড/ক্রয় ইত্যাদি করে তাহলে আপনি নির্দিষ্ট কমিশন পাবেন। এছাড়াও গুগল কাষ্টম সার্চ ইঞ্জিন (এডসেন্স ফর সার্চ) এর মাধ্যমে সার্চ করেও আয় করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার ওয়েব সাইট বা ব্লগটি যতটা জনপ্রিয় আপনার আয়ও তত বেশী হবে।
গুগল এডসেন্স
বিশ্বের জনপ্রিয় এই সার্চ ইঞ্জিনের গৃহিত বিজ্ঞাপনগুলো গুগল তার গ্রাহদের সাথে মেয়ার করে থাকে। নির্দিষ্ট নীতিমালার অধিনে পরিচালিত এডসেন্স দুই ভাগে বিভক্ত। এডসেন্স কনটেন্ট এবং এডসেন্স ফর সার্চ।
গুগল এডসেন্স ভাষা: গুগল সার্চ বাংলাতে আসলেও এখন পর্যন্ত এডসেন্স বাংলা ভাষাতে আসেনি। ইংরেজীর পাশাপাশি আরবী, বুলগেরিয়ান, চাইনিজ (সিমপ্লিফাইড), চাইনিজ (ট্রেডিশনাল), হাঙ্গেরীয়ান, ইতালিয়ান, জাপানিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, নরওয়েজিয়ান, পোলিশ, পর্তুগীজ, রোমানিয়ান, ডাচ, ডেনিশ, ফ্রেন্স, ফিনিশ, সার্বিয়ান, জার্মান, গ্রীক, তুর্কিজ, সুইডিজ, স্পেনিশ, চেক, হিব্রু, স্লোবাক এবং ক্রোয়েশিয়ান ভাষাতে এডসেন্স ব্যবহার করা যায়।
রেজিষ্ট্রেশন
এডসেন্স ব্যবহারের আপনার গুগল একাউন্ট থাকতে হবে। না থাকলে গুগল (http://www.gmail.com) থেকে বিনামূল্যে একাউন্ট খুলে নিতে পারেন। এবারhttp://www.google.com/adsense সাইটে ঢুকুন Sign up now>> বাটনে ক্লিক করুন তাহলে গুগল এডসেন্স এর ফরম আসবে যা পূরন করে Submit Information ক্লিক করুন। এখন প্রথম (I have an email address and password …….) অপশন বাটন নির্বাচন করুন এবং নতুন আরেকটি তালিকা আসলে I’d like to use my existing Google account for AdSense অপশন বাটন নির্বাচন করুন তাহলে নিচে লগইন বক্স আসবে। এবার এখানে আপনার জিমেইল এবং পাওয়ার্ড লিখে Continue>> বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে রেজিষ্ট্রেশন শেষ হবে। এরপরে গুগল আপনার জিমেইলে ১-২ দিনের মধ্যে এডসেন্স একটিভ করার জন্য মেইল করবে। মেইলের লিংকে ক্লিক করলে আপনার এডসেন্স একটিভ হবে এবং তা মেইলের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
এডসেন্স কনটেন্ট
একই ভাবে গুগল এডসেন্স লগইন করার পরে উপরে AdSense Setup ট্যাব এর Get Ads সাবট্যাবে থেকে AdSense for Content এ ক্লিক করুন। পরবর্তী পেজ থেকে Ad unit বা Link unit অপশন বাটন সিলেক্ট করে Continue>> বাটনে ক্লিক করুন। এখানে পছন্দমত ফরমেট, রঙ নিয়ে Continue>> বাটনে ক্লিক করুন। (এখানে আপনি চ্যানেল তৈরী করে যুক্ত করতে পারেন।) এবার Continue>> বাটনে ক্লিক করে Submit and Get Code বাটনে ক্লিক করলে জাভা স্ক্রিপ্টের কোড পেয়ে যাবেন যা আপনার ওয়েব পেজে বা ব্লগে ব্যবহার করলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হবে।
পরবর্তীতে আপনি নতুন করে এক বা একাধিক অ্যাডসেন্স কনটেন্ট, এডসেন্স ফর সার্চ এবং রিফারেলস ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও পূর্বের তৈরী করা এডসেন্স পরিবর্তন করতে পারবেন। জেনে নিতে পারবেন একাউন্টের যাবতিয় তথ্য।
এডসেন্স ফর সার্চ
গুগল এডসেন্স লগইন করার পরে উপরে AdSense Setup ট্যাবে ক্লিক করুন এবং Get Ads সাবট্যাবে থাকা অবস্থায় AdSense for Search লিংকে ক্লিক করুন। পেজ লোড হবার পরে Search Type থেকে Google WebSearch (বা Google WebSearch + SiteSearch সিলেক্ট করলে আপনার ওয়েব সাইটের নাম লিখতে হবে নিয়ে, যেখান থেকে সার্চ করা যাবে) সিলেক্ট করুন। এবার Search box style থেকে পছন্দমত পরিবর্তন করুন এবং Continue>> বাটনে ক্লিক করুন। পরবর্তী পেজ থেকে পছন্দমত লগো এবং অনান্য অপশন নিতে পারেন। এবার Continue>> বাটনে ক্লিক করলে জাভা স্ক্রিপ্টের কোড পেয়ে যাবেন যা আপনার ওয়েব পেজে বা ব্লগে ব্যবহার করলে গুগল কাষ্টমাইজ সার্চ বক্স পাবেন। এই কাষ্টমাইজ সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে সার্চ করলে আপনার একাউন্টে ডলার যোগ হবে।
এডসেন্স এবং আলজবস ফোরাম
গুগলের এ্যাডসেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ নিয়ে এলো আলজবস ফোরাম । এই ফোরাম এ লিখে এডসেন্স থেকে আয় করতে পারেন। আলজবস ফোরামে নিবন্ধিত হয়ে এ্যাডসেন্স শেয়ারিং অপশনে নিজের পি.ইউ.বি নাম্বার দিতে হবে (পি.ইউ.বি নাম্বার এডসেন্স এ লগিন করলে সাইন আউট বাটন এর কাছে পাওয়া যাবে, পি.ইউ.বি নাম্বারটির উদাহরনঃ pub-1234569567225566 )। তাহলে এ ফোরামের তিনটি ইউনিটেই প্রদর্শিত হবে ব্যাবহারকারীর এ্যাড। ফলে তিনি নিজ ওয়েব সাইট ছাড়াও তাঁর এ্যাড প্রদর্শনের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ থেকে এটাই প্রথম গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে আয় ভাগাভাগির ফোরাম। এখানে যত বেশি লেখা পাঠানো যাবে, আয়ও তত বেশি হবার সম্ভাবনা থাকবে। বাংলাদেশের বৈদিশিক আয় বাড়ানোর এ এক অনন্য সুযোগ; যা গুগল কর্তৃক স্বীকৃত। সাইটের ঠিকানা forum.alljobsbd.com
টাকা পাবেন যেভাবে
গুগলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার যদি প্রতি মাসে ১০০ ডলারের বেশী একাউন্টে জমা হয় তাহলে পরবর্তী মাসে আপনাকে চেকের মাধ্যমে পরিশোষ করবে। আর যদি ১০০ ডলারের কম হয় তাহলে ১০০ ডলার পূর্ণ হওয়ার পরের মাসে পরিশোধ করবে। যেমন, আপনি জানুয়ারী মাসে ৪০ ডলার এবং ফেব্রুয়ারী মাসে ৭০ ডলার আয় করলেন তাহলে গুগল মার্চের শেষে আপনাকে ১১০ ডলারের চেক প্রদান করবে।
এডসেন্স সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে http://www.google.com/adsense/support সাইট থেকে।
"চড়াই আর কাকের কথা"
কাক আর চড়াইপাখিতে খুব ভাব ছিল।
গৃহস্থদের উঠানে চাটাই ফেলে ধান আর লঙ্কা রোদে দিয়েছে। চড়াই তা দেখে কাককে বললে, ‘বন্ধু, তুমি আগে লঙ্কা খেয়ে শেষ করতে পারবে, না আমি আগে ধান খেয়ে শেষ করতে পারব?’
কাক বললে, ‘না, আমি লঙ্কা আগে খাব।’
চড়াই বললে, ‘না, আমি ধান আগে খাব।’
কাক বললে, ‘যদি না খেতে পার, তবে কি হবে?’
চড়াই বললে, ‘যদি না খেতে পারি, তবে তুমি আমার বুক খুঁড়ে খাবে। আর যদি তুমি না খেতে পার, তবে কি হবে?’
কাক বললে, ‘তুমি আমার বুক খুঁড়ে খাবে।’
এই বলে তো দুজনে ধান আর লঙ্কা খেতে লাগল। চড়াই কুট-কুট করে এক-একটি ধান খায়, আর কাক খপ-খপ করে একটি-একটি লঙ্কা খায়। দেখতে-দেখতে কাক সব লঙ্কা খেয়ে শেষ করলে, চড়াইয়ের তখন ধানের সিকিও খাওয়া হয়নি।
তখন কাক বললে, ‘কি বন্ধু, এখন?’
চড়াই বললে, ‘এখন আর কি হবে। বন্ধু হয়ে যদি আমার বুক খেতে চাও, তবে খাবে। তবে ঠোঁট দুটো ধুয়ে নিও, তুমি নোংরা জিনিস খাও।’
কাক বললে, ‘আমি ঠোঁট ধুয়ে আসছি।’ বলে সে গঙ্গায় ঠোঁট ধুতে গেল।
তখন গঙ্গা তাকে বললেন, ‘তোর নোংরা ঠোঁট আমার গায়ে ছোঁয়াসনে। জল তুলে নিয়ে ঠোঁট ধো।’
তাতে কাক বললে, ‘আচ্ছা, আমি ঘটি নিয়ে আসছি।’ বলে সে কুমোরের কাছে গিয়ে বললে-
কুমোর, কুমোর! দে তো ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
কুমোর বললে, ‘ঘটি তো নেই। মাটি আন, গড়ে দি।’ শুনে কাক মোষের কাছে তার শিং চাইতে গেল, সেই শিং দিয়ে মাটি খুঁড়বে। কাক বললে-
মোষ, মোষ! দে তো শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।
শুনে মোষ রেগে তাকে এমনি গুঁতোতে এল যে সে সেখান থেকে দে ছুট! তারপর সে কুকুরের কাছে গিয়ে বললে-
কুত্তা, কুত্তা! মারবি মোষ,
লব শিং, কুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।
কুকুর বললে, ‘আগে দুধ আন, খেয়ে গায়ে জোর করি, তবে মোষ মারব এখন।’ শুনে কাক গাইয়ের কাছে গিয়ে বললে-
গাই, গাই! দে তো দুধ,
খাবে কুত্তা, হবে তাজা,
মারবে মোষ, লব শিং,
কুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।
গাই বলরে, ‘আগে ঘাস আন খাই, তারপর দুধ দেব।’
শুনে কাক মাঠের কাছে গিয়ে বললে-
মাঠ, মাঠ! দে তো ঘাস,
খাবে গাই, দেবে দুধ,
খাবে কুত্তা, হবে তাজা
মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইব বুক।
মাঠ বললে, ‘ঘাস তো রয়েছে, নিয়ে যা না!’
তখন কাক কামারের বাড়ি গিয়ে বললে-
কামার, কামার! দে তো কাস্তে,
কাটব ঘাস, খাবে গাই,
দেবে দুধ, খাবে কুত্তা,
হবে তাজা, মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।
কামার বললে, ‘আগুন নেই। আগুন নিয়ে আয়, কাস্তে গড়ে দি।’ তা শুনে কাক গৃহস্থদের বাড়ি গিয়ে বললে-
গেরস্ত ভাই, দাও তো আগুন,
গড়বে কাস্তে, কাটব ঘাস,
খাবে গাই, দেবে দুধ, খাবে কুত্তা,
হবে তাজা, মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইব বুক।
তখন গৃহস্থ এক হাঁড়ি আগুন এনে বললে, ‘কিসে করে নিবি?’
বোকা কাক তার পাখা ছড়িয়ে বললে, ‘এই আমার পাখার উপরে ঢেলে দাও।’
গৃহস্থ সেই হাঁড়িসুদ্ধ আগুন কাকের পাখার উপর ঢেলে দিলে, আর সে বেটা তখুনি পুড়ে মরে গেল। তার আর চড়াইর বুক খাওয়া হল না।
জুমের আগুনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
জুমের আগুনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
মো. নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এর বিকল্প কোনো চাষের উদ্ভব না হওয়ায় প্রতি বছর আগুনে প্রত্যন্ত পাহাড়ের ৭০ শতাংশ সবুজ বনভূমি পুড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাটি শুকিয়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। ক্ষয় হয়ে যাওয়া মাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ঝিরি, খাল, বিল ও নদী। আর এ কারণে বর্ষা মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। বিলুপ্ত হয় পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য, পাশাপাশি পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুম চাষের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে পাহাড় বাছাই ও গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা কেটে ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু পাহাড়গুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পালা। গত এক মাসে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবান জেলায় এ জুমের আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক পাহাড়। শুধু এ আগুনে পাহাড় পুড়ছে না, এখানে বসবাস করা বহু ঘরবাড়িও পুড়ছে। স্থানীয়রা জানান, জুমে আগুনে পোড়ার সময় আকাশে কালো ধোঁয়া উত্তপ্ত বাতাস প্রবাহিত হয়। প্রচণ্ড দাবদাহে নদী, খাল, বিল ও ঝিরির পানি শুকিয়ে যায়। এতে পেটের পীড়াসহ ডায়রিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে এলাকার লোকজনের মাঝে। আগুনে পুড়ে সাময়িকভাবে মাটি উর্বর হলেও পরোক্ষণে দ্রুত শুকিয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হচ্ছে মাটি। ১৯৯৯ সালে সরকার জুমচাষের বিকল্প হিসেবে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ভূমিহীন কৃষকদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি বন্দোবস্তি প্রক্রিয়া আইনগত জটিলতার কারণে এখনও পর্যন্ত সফলভাবে শুরু করা যায়নি। ফলে এ প্রথা থেকে এখনও উপজাতি জুমিয়ারা ফিরে আসছে না। গজালিয়া বটতলী পাহাড়ের জুমিয়া অংহ্লাপ্রম্ন মারমা জানান, এক পাহাড়ে পর পর দুইবার জুমচাষ করা হয় না। কারণ এক পাহাড়ে বারবার ফসল ভালো হয় না। তাই একেক বছর একেক পাহাড়ে জুমচাষ করা হয়।
তিনি জানান, এখন পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা পোড়ানো হচ্ছে। এরপর সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসল রোপণ শুরু হবে। তিনি জানান, এখনও এ চাষের বিকল্প কোনো চাষের ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ চাষ করছেন। সরকারি হিসাবমতে এবার জেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে জুমচাষ করা হবে বলে জানা গেলেও বেসরকারিভাবে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এ তিন জেলায় জুমচাষের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করেছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) নামের এক প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, প্রথাগত চাষ পদ্ধতি হিসেবে জুমচাষ কয়েকশ’ বছর ধরে চলে এলেও পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর এটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাহাড় থাকলে জুমচাষের সময়ের আবর্তনটা সঠিকভাবে রক্ষা করা সম্ভব। আর এ সময় আবর্তনটা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ধরে রাখা গেলে যেটুকু বিরূপ প্রভাব ফেলে তা প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। এখন যে হারে জুমচাষ হচ্ছে তাতে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মৃত্তিকা ক্ষয়ও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক ছড়া-নালা বর্ষাকালে ধুয়ে আসা মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানীয়জলের সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। তবে সংগঠনটি জুমচাষের জন্য কোনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অপরাধের দৃষ্টিতে না দেখে বিকল্প চাষাবাদ পদ্ধতি চালুর ওপর জোর দিয়েছে।
জুমচাষ থেকে বিরত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম নিয়ন্ত্রণ নামে বনবিভাগের একটি শাখা রয়েছে। এছাড়া আশির দশকে সরকারি উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জুমিয়া পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কয়েক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। স্থায়ীভাবে জীবনযাপনের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এ প্রকল্পটি কোনো কাজে আসেনি। অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, জুমচাষের ফলে পাহাড়ে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের বায়ুও দূষিত হয়ে পড়ে। জুম পোড়ানোর সময় বাতাসে ছাইয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নানা ধরনের শ্বাসজনিত ব্যাধি দেখা দেয়। অন্যদিকে পাহাড়ি মাটির রস দ্রুত শুকিয়ে শত শত পাহাড় ধসে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত নানা জীবজন্তু। ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হুমকি মুখে পড়ছে।
লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, তিন পার্বত্য জেলায় ৩৬ হাজার পরিবার এখনও জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার একর টিলা জমিতে অপরিকল্পিতভাবে জুমচাষ করা হয়। এ চাষের বিকল্প হিসেবে কমলাসহ মিশ্র ফসল চাষে জুমিয়াদের উত্সাহিত করা হলে আগুনে পোড়ানোর হাত থেকে সবুজ পাহাড়, নদী রক্ষা করাসহ জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় রোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুম চাষের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে পাহাড় বাছাই ও গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা কেটে ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু পাহাড়গুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পালা। গত এক মাসে লামা, আলীকদমসহ গোটা বান্দরবান জেলায় এ জুমের আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক পাহাড়। শুধু এ আগুনে পাহাড় পুড়ছে না, এখানে বসবাস করা বহু ঘরবাড়িও পুড়ছে। স্থানীয়রা জানান, জুমে আগুনে পোড়ার সময় আকাশে কালো ধোঁয়া উত্তপ্ত বাতাস প্রবাহিত হয়। প্রচণ্ড দাবদাহে নদী, খাল, বিল ও ঝিরির পানি শুকিয়ে যায়। এতে পেটের পীড়াসহ ডায়রিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে এলাকার লোকজনের মাঝে। আগুনে পুড়ে সাময়িকভাবে মাটি উর্বর হলেও পরোক্ষণে দ্রুত শুকিয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হচ্ছে মাটি। ১৯৯৯ সালে সরকার জুমচাষের বিকল্প হিসেবে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ভূমিহীন কৃষকদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি বন্দোবস্তি প্রক্রিয়া আইনগত জটিলতার কারণে এখনও পর্যন্ত সফলভাবে শুরু করা যায়নি। ফলে এ প্রথা থেকে এখনও উপজাতি জুমিয়ারা ফিরে আসছে না। গজালিয়া বটতলী পাহাড়ের জুমিয়া অংহ্লাপ্রম্ন মারমা জানান, এক পাহাড়ে পর পর দুইবার জুমচাষ করা হয় না। কারণ এক পাহাড়ে বারবার ফসল ভালো হয় না। তাই একেক বছর একেক পাহাড়ে জুমচাষ করা হয়।
তিনি জানান, এখন পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে গাছপালা, গুল্ম ও লতাপাতা পোড়ানো হচ্ছে। এরপর সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসল রোপণ শুরু হবে। তিনি জানান, এখনও এ চাষের বিকল্প কোনো চাষের ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এ চাষ করছেন। সরকারি হিসাবমতে এবার জেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে জুমচাষ করা হবে বলে জানা গেলেও বেসরকারিভাবে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এ তিন জেলায় জুমচাষের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করেছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) নামের এক প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, প্রথাগত চাষ পদ্ধতি হিসেবে জুমচাষ কয়েকশ’ বছর ধরে চলে এলেও পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর এটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাহাড় থাকলে জুমচাষের সময়ের আবর্তনটা সঠিকভাবে রক্ষা করা সম্ভব। আর এ সময় আবর্তনটা ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ধরে রাখা গেলে যেটুকু বিরূপ প্রভাব ফেলে তা প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। এখন যে হারে জুমচাষ হচ্ছে তাতে প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মৃত্তিকা ক্ষয়ও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক ছড়া-নালা বর্ষাকালে ধুয়ে আসা মাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে পানীয়জলের সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। তবে সংগঠনটি জুমচাষের জন্য কোনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অপরাধের দৃষ্টিতে না দেখে বিকল্প চাষাবাদ পদ্ধতি চালুর ওপর জোর দিয়েছে।
জুমচাষ থেকে বিরত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম নিয়ন্ত্রণ নামে বনবিভাগের একটি শাখা রয়েছে। এছাড়া আশির দশকে সরকারি উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জুমিয়া পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় কয়েক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। স্থায়ীভাবে জীবনযাপনের মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এ প্রকল্পটি কোনো কাজে আসেনি। অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, জুমচাষের ফলে পাহাড়ে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের বায়ুও দূষিত হয়ে পড়ে। জুম পোড়ানোর সময় বাতাসে ছাইয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নানা ধরনের শ্বাসজনিত ব্যাধি দেখা দেয়। অন্যদিকে পাহাড়ি মাটির রস দ্রুত শুকিয়ে শত শত পাহাড় ধসে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত নানা জীবজন্তু। ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হুমকি মুখে পড়ছে।
লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, তিন পার্বত্য জেলায় ৩৬ হাজার পরিবার এখনও জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার একর টিলা জমিতে অপরিকল্পিতভাবে জুমচাষ করা হয়। এ চাষের বিকল্প হিসেবে কমলাসহ মিশ্র ফসল চাষে জুমিয়াদের উত্সাহিত করা হলে আগুনে পোড়ানোর হাত থেকে সবুজ পাহাড়, নদী রক্ষা করাসহ জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় রোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ভিন্ন খবর : গুলিটি ২৩ বছর মাথায় ছিল!
ভিন্ন খবর : গুলিটি ২৩ বছর মাথায় ছিল!
ডেস্ক রিপোর্ট
কথায় আছে, ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে?’ চীনের এক কৃষকের ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হিবি’র জংজিয়াকুইন শহরে বসবাসকারী ওয়াং তিয়ানকিং নামে ওই কৃষক দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে মাথার ভেতর গুলি নিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সম্প্রতি তা বের করার আগ পর্যন্ত। দুই সেন্টিমিটার লম্বা ওই গুলিটি বের করার পর দেখা গেল অনেক আগেই সেটিতে মরিচা ধরেছে মাথার ভেতরে। ঘটনাটি অন্তত চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় বেশ আশ্চর্যজনকই বটে। তবে এর জন্য কৃতিত্বের দাবিদার জংজিয়াকুইন শহরের স্থানীয় হাসপাতালের এক অখ্যাত অ্যাটেনডেন্ট সার্জন ওয়াংজিমিং।
ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের। এ সময় তিনি ওই শহরে বাস করতেন। একদিন পাহাড়ি পথ বেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাত্ মাথায় একটা কিছুর আঘাত অনুভব করলেন ওয়াং। পেছনে ফিরে দেখলেন, পাহাড়ের ওপরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াং ভাবলেন, সেই লোকই গুলতি দিয়ে কিছু একটা ছুড়ে মারায় তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। হাসপাতালে গেলেন এর চিকিত্সা নিতে। চিকিত্সকের দেয়া সামান্য ব্যথানিরাময়ক ওষুধ সেবন করেই বাড়ি ফিরে গেলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মাথায় স্নায়বিক সমস্যা দেখা গেল। এ নিয়ে কাটিয়ে দিলেন গত দুই দশকেরও বেশি সময়।
এবার মাথায় খিচুনি রোগ পেয়ে বসল তাকে। উপায় না দেখে আবারও চিকিত্সকের শরণাপন্ন হলেন ওয়াং তিয়ানকিং। এবার আঁতকে উঠলেন চিকিত্সকের কথায়। ২৩ বছর আগে তাকে কেউ গুলতি দিয়ে কিছু ছুড়ে মারেনি, বরং বন্দুকের গুলি মেরেছিল। মাথায় ওই গুলির উপস্থিতি শনাক্ত করে চিকিত্সকের শক্তিশালী সিটি স্ক্যান যন্ত্র।
জংজিয়াকুইন শহরের স্থানীয় হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল ওনোকোলজি ডিপার্টমেন্টের শল্যচিকিত্সক অ্যাটেনডেন্ট সার্জন ওয়াং জিমিং সফল অস্ত্রোপচার শেষে বের করে আনলেন ওয়াং তিয়ানকিংয়ের মাথা থেকে মরচেধরা গুলিটি। এ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সার্জন ওয়াংজিমিং অস্ত্রোপচার শেষে বললেন, মাথায় গুলি খেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা হাজার গুণেরও বেশি হলেও ওয়াং তিয়ানকিং দিব্বি বেঁচে আছেন। গুলিটি তার মস্তিষ্কের প্রধান শিরায় আঘাত করতে পারেনি। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ ও স্কাই নিউজ
ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের। এ সময় তিনি ওই শহরে বাস করতেন। একদিন পাহাড়ি পথ বেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাত্ মাথায় একটা কিছুর আঘাত অনুভব করলেন ওয়াং। পেছনে ফিরে দেখলেন, পাহাড়ের ওপরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াং ভাবলেন, সেই লোকই গুলতি দিয়ে কিছু একটা ছুড়ে মারায় তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। হাসপাতালে গেলেন এর চিকিত্সা নিতে। চিকিত্সকের দেয়া সামান্য ব্যথানিরাময়ক ওষুধ সেবন করেই বাড়ি ফিরে গেলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মাথায় স্নায়বিক সমস্যা দেখা গেল। এ নিয়ে কাটিয়ে দিলেন গত দুই দশকেরও বেশি সময়।
এবার মাথায় খিচুনি রোগ পেয়ে বসল তাকে। উপায় না দেখে আবারও চিকিত্সকের শরণাপন্ন হলেন ওয়াং তিয়ানকিং। এবার আঁতকে উঠলেন চিকিত্সকের কথায়। ২৩ বছর আগে তাকে কেউ গুলতি দিয়ে কিছু ছুড়ে মারেনি, বরং বন্দুকের গুলি মেরেছিল। মাথায় ওই গুলির উপস্থিতি শনাক্ত করে চিকিত্সকের শক্তিশালী সিটি স্ক্যান যন্ত্র।
জংজিয়াকুইন শহরের স্থানীয় হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল ওনোকোলজি ডিপার্টমেন্টের শল্যচিকিত্সক অ্যাটেনডেন্ট সার্জন ওয়াং জিমিং সফল অস্ত্রোপচার শেষে বের করে আনলেন ওয়াং তিয়ানকিংয়ের মাথা থেকে মরচেধরা গুলিটি। এ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সার্জন ওয়াংজিমিং অস্ত্রোপচার শেষে বললেন, মাথায় গুলি খেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা হাজার গুণেরও বেশি হলেও ওয়াং তিয়ানকিং দিব্বি বেঁচে আছেন। গুলিটি তার মস্তিষ্কের প্রধান শিরায় আঘাত করতে পারেনি। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ ও স্কাই নিউজ
মা হ মু দু র র হ মা ন কারা বরনের কাহীনি
জেলের কঠিন জীবনযাপন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ
মা হ মু দু র র হ মা ন
শবেবরাতে ছিলাম গোপালগঞ্জ জেলে
কেবল জামিন মঞ্জুরের আনুষ্ঠানিকতার জন্য আমাকে গোপালগঞ্জে নেয়ার কী প্রয়োজন ছিল, জানি না। শবেবরাতের রাত গোপালগঞ্জ জেলেই কাটল। গৃহের কথা বড় মনে পড়ছিল। মিষ্টান্নের প্রতি আমার ভয়ানক দুর্বলতা রয়েছে। পারভীন রান্নাঘরে সচরাচর না গেলেও প্রতি শবেবরাতে আমার পছন্দের কয়েক ধরনের হালুয়া তৈরি করে। এবার নিশ্চয়ই রান্নাবান্না বাদ দিয়ে শাশুড়ি-বৌ কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। ...
(গতকালের পর)
জেলগেট পার হতেই চেনা প্রিজন ভ্যানের পরিবর্তে এক সুদৃশ্য মাইক্রোবাস অপেক্ষমাণ দেখে বিস্মিত হলাম। গাড়িতে উঠে জানলাম, আমাকে পাহারা দিয়ে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৩ জন পুলিশ এসকর্ট সঙ্গে যাচ্ছে। এই পুলিশ দলটির দায়িত্ব আমাকে গোপালগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সহি-সালামতে হস্তান্তর করা। সকাল সাড়ে ১০টায় নাজিমউদ্দিন রোড থেকে রওনা হয়ে মাওয়াঘাটে পৌঁছাতে ঘণ্টা দেড়েক লাগল। ভরা বর্ষায় একদা প্রমত্তা পদ্মার শীর্ণ রূপ পরম বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর অপার বন্ধুত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। শ্রাবণের এই পদ্মা দেখে মনে পড়ল, গ্রেফতার হওয়ার ঠিক দু’সপ্তাহ আগে ১৬ মে’র ফারাক্কা দিবসে রাজশাহীর পদ্মার চরে এক গণজমায়েতে প্রধান অতিথি ছিলাম। সেই সভায় পানিযুদ্ধ চালিয়ে আমার মাতৃভূমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মরুভূমিতে পরিণত করার অপরাধে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছিলাম।
গত দু’মাসের বন্দিজীবনে অনেকবারই মনে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সম্পর্কে আমার সরাসরি বক্তব্য ও লেখালেখি এই বন্দিত্বকে ত্বরান্বিত করেছে। মাঝেমধ্যে তর্জনগর্জন করলেও আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরাশক্তির তাঁবেদার কোনো সংবাদপত্রকে আমার দেশ-এর মতো করে বন্ধ করার ক্ষমতা এই সরকারের কোনোদিনই হবে না। দেশের স্বাধীনতা, জনগণের স্বার্থ এবং নিজ ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে লড়াই করার পরিণতিতে জেলে আসায় আমার কোনোরকম অনুশোচনা নেই। এই পথ আমি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি। মহান আল্লাহতায়ালাই তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। পদ্মার বুকে ফেরিতে দুই ঘণ্টা কাটিয়ে গোপালগঞ্জ জেলে পৌঁছাতে বিকেল ৪টা বেজে গেল। নবনির্মিত জেলখানার চাকচিক্য দেখে ভালোই লাগল। জেল কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনায় সৌজন্যের কোনো ঘাটতি নেই। ছোট একটি সমস্যার কথা শুনলাম। গোপালগঞ্জ জেলে কোনো ডিভিশন ওয়ার্ড না থাকার কারণে আমাকে কারা হাসপাতালে থাকতে হবে। প্রসন্ন চিত্তে ভারপ্রাপ্ত জেলারকে আশ্বস্ত করে ঢাকা জেলে দুই মাস ধরে সাত সেলে অবস্থানের কথা জানালাম। সাত সেলের বন্দিজীবনে অভ্যস্ত হওয়ার পর ডিভিশন ওয়ার্ডের প্রসঙ্গই এখন আমার কাছে অবান্তর। হাসপাতাল ওয়ার্ডে গিয়ে রীতিমত মুগ্ধ হলাম। বিশাল একটি কক্ষে আমার থাকার আয়োজন করা হয়েছে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, এখানে লাগোয়া টয়লেট রয়েছে। দুটো দিন আমাকে নিজহাতে গণটয়লেট পরিষ্কার করতে হবে না জেনেই আমি পুলকিত। কারা প্রশাসনের লোকজন একে একে পরিচিত হতে এলো। তাদের কাছ থেকেই জানলাম, ২০১০ সালের প্রথম দিকে গোপালগঞ্জের নতুন জেলটি উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
কয়েদি এবং হাজতি মিলে মোট বন্দির সংখ্যা মাত্র সাড়ে তিনশ’। এখানে এমন ওয়ার্ডও আছে যেখানে আজ পর্যন্ত কোনো বন্দি ওঠেনি। উদাহরণস্বরূপ এই দোতলা হাসপাতালে আমিই সর্বপ্রথম বন্দি। একেবারেই নির্জন এই ওয়ার্ডে রাতে আমার জন্যে কোনো পাহারা লাগবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলারকে বললাম, আমি একা থাকতেই বরং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব। ফার্মাসিস্ট রক্তচাপ মাপার যন্ত্র নিয়ে এলে তাকেও জানালাম, আমার রক্তচাপ স্বাভাবিকই আছে, কষ্ট করে পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। দীর্ঘপথ চলার ক্লান্তিতে রাত ১০টার মধ্যেই রাতের আহার শেষ করে হাসপাতালের পরিষ্কার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফজরের নামাজ পড়ে জেলজীবনের অভ্যাসমত সকাল ৬টার মধ্যেই গোসল শেষ করে নিজহাতে কাচা লুঙ্গি আর গেঞ্জি শুকানোর ব্যবস্থা করছি, এমন সময় গত রাত থেকে নিয়োজিত সেবক মোস্তফা এসে হাজির। আমি নিজহাতে কাপড় ধুয়েছি দেখে রীতিমত চোটপাট শুরু করে দিল। প্রায় কুড়ি বছর ধরে সাজাখাটা অভিজ্ঞ মেট মোস্তফার এই অসন্তোষের মধ্যে আন্তরিকতার ছোঁয়া খুঁজে পেয়ে ভালোই লাগল। অঙ্গীকার করতে হলো, যে কদিন গোপালগঞ্জে আছি অন্তত সে ক’দিন এমন গর্হিত কাজ আর করব না। সকাল সাড়ে ৯টায় সুবেদার এলো প্রিজন ভ্যান আসার খবর নিয়ে। জেল থেকে বেরিয়ে দেখলাম, অন্যরকম আকৃতির এক প্রিজন ভ্যান। পেছনটা খোলা যেখানে সাধারণ কয়েদিরা চাপাচাপি করে বসে আছে, তাদের পাহারা দেয়ার জন্যে অস্ত্রহাতে তিন-চারজন সেন্ট্রি ডালার কাছে দাঁড়িয়ে। আমাকে বলা হলো সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে। আমি গাড়িতে ওঠার পর আমাকে মাঝখানে ঠেলে দরজার দিকে বসলেন একজন এসআই। জেল থেকে আদালত মিনিট দশেকের পথ। সোজা কোর্ট গারদে আমাকে নিয়ে তোলা হলো। মুখোমুখি দুটো গারদ। একটায় সব বন্দিকে ঢোকানো হলো এবং অপরটায় আমি একাই। ঘণ্টাখানেক ধরে অবিরত পায়চারি করে আমার পাদুটো আর চলছে না। কোর্ট ইন্সপেক্টরের বোধহয় মায়া হলো। একটু বিব্রত মুখেই একটা চেয়ার এনে ভদ্রলোক গারদের ভেতরেই আমার বসার ব্যবস্থা করলেন। আরও আধঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ডাক পড়ল। এজলাসে গিয়ে মনটা উত্ফুল্ল হয়ে গেল। প্রকৌশলী রিজু, হাসিন, রিপন, চুন্নু, নজরুল, সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, অ্যাডভোকেট মেসবাহ এবং আরও কয়েকজন পেশাজীবী ঢাকা থেকে এতদূর এসেছেন আদালতে আমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। আমি অপরিসীম কৃতজ্ঞতাবোধে আপ্লুত হলাম। আজ শবেবরাত হওয়া সত্ত্বেও আপনজনদের ফেলে এতগুলো মানুষ গোপালগঞ্জে এসেছেন আমার কুশল জানতে। দেশপ্রেমিক পেশাজীবীদের এই সমর্থন প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। কাঠগড়ায় দশ আসামি বেশ গাদাগাদি করে দাঁড়ালাম। বাদী আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা। তার পরিবারের রাজাকারি অতীতের সংবাদ আমার দেশসহ তিন-চারটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় সেই নেতা মানহানি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সবাই সাংবাদিক, তবে সম্পাদক আমি একাই।
দশ আসামির মধ্যে নয়জনকে এরই মধ্যে জামিন দেয়া হয়েছে। এক আমার জন্যেই নাকি আজকের এত আয়োজন। আমি পেশায় যেহেতু আইনজীবী নই, কাজেই আইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ বোঝা আমার কর্ম নয়। তবে একজন সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে মনে হলো, এই অপচয়ের কোনো প্রয়োজন ছিল না। মামলার ধারা জামিনযোগ্য, আমি কারাগারে বন্দি, অর্থাত্ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে আছি। এরকম পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বহীন, বানোয়াট মামলায় কেবল জামিন মঞ্জুরের আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার জন্যে আমাকে ঢাকা থেকে টেনে আনবার কী প্রয়োজন ছিল, সেটা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকল না। আমার পক্ষে স্থানীয় একজন আইনজীবী দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করে জামিনের আবেদন করলেই তো জামিন মঞ্জুর হওয়া উচিত ছিল। আমি যেহেতু সরকারের রোষানলে আছি, তাই আমার ব্যক্তিগত হয়রানির কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম, তবে আমাকে টানাহ্যাঁচড়া না করলে সরকারের অনেকগুলো টাকারও তো সাশ্রয় হতো। আমাকে আনা-নেয়ার জন্য দুই দফায় গাড়ি ভাড়া, ডজনখানেক পুলিশের পুরো দুই দিনের কর্মঘণ্টা নষ্ট, তাদের খোরাকির অর্থব্যয়—তা সে যতই সামান্য হোক, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশ প্রশাসনে সতর্কাবস্থা, এসব করে কার কী লাভ হচ্ছে আল্লাহই জানেন! জামিন হয়ে গেলে আদালত থেকে গোপালগঞ্জ জেলে ফিরলাম। ফেরার সময় জেলা পুলিশ প্রশাসন একটা পিক-আপের ব্যবস্থা করায় সকালের প্রিজন ভ্যানে চড়তে হলো না। জেলার সরাসরি না বললেও হাবেভাবে বুঝলাম, কালই ঢাকায় ফেরত চালানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেল প্রশাসন আবার চালান নিয়ে নাটক করতে পছন্দ করে। আগে থেকে কিছু না বলে চালানের সকালবেলা আসামিকে তৈরি হতে বলাটাই এদের রীতি। আকস্মিক নির্দেশে আসামি বেচারার যথেষ্ট মানসিক নির্যাতন হয় এবং এতেই কর্তৃপক্ষের বোধহয় অপার আনন্দ।
শবেবরাতের রাত গোপালগঞ্জ জেলেই কাটল। নিজ গৃহের কথা বড় মনে পড়ছিল। মিষ্টান্নের প্রতি আমার ভয়ানক দুর্বলতা রয়েছে। পারভীন রান্নাঘরে সচরাচর না গেলেও প্রতি শবেবরাতে আমার বিশেষ পছন্দের কয়েক ধরনের হালুয়া তৈরি করে। এবার নিশ্চয়ই রান্নাবান্না বাদ দিয়ে শাশুড়ি-বৌ কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সারা রাত প্রায় অনিদ্রায় কাটিয়ে সকাল থেকে প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ৯টার দিকে ভারপ্রাপ্ত জেলার নূর মোহাম্মদ এসে জানালেন পুলিশ এসকর্ট এসে গেছে, আমি যাত্রা শুরু করতে পারি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুপুর আড়াইটার দিকে ফিরলাম। সাত সেলের বন্ধুরা আমাকে সুস্থ শরীরে ফিরতে দেখে আনন্দ প্রকাশ করল। শবেবরাতের দিন যার যার বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খাওয়ার সময় আমার অনুপস্থিতি তাদের পীড়া দিয়েছে শুনে বড় ভালো লাগল। ভাবলাম, জীবন কত বিচিত্র! ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা এই সাত সেলের বারো বন্দি কত অল্প সময়ের মধ্যে স্বজনে পরিণত হয়েছি।
দেখতে দেখতে জুলাই মাসের শেষ দিন চলে এলো। মাসের শেষ দিন শুরুই হলো ভারী বর্ষণের মধ্যে। ফজরের আজান আর বৃষ্টির মিলিত শব্দে ঘুম ভেঙেছে। একটু শীত-শীতও বোধ হচ্ছে। একবার মনে হলো, দৈনন্দিন জেল রুটিনে না হয় ব্যতিক্রম ঘটাই। কী হবে আর এত ভোরে উঠে? চাদর মুড়ি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাই। পরক্ষণেই মনের দুর্বলতা ঝেড়ে এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠলাম। জেলখানার এই কঠিন জীবনযাপন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহাজোটের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে মনের জোর দিয়েই পরাজিত করতে হবে। বালতি এবং মগ নিয়ে চৌবাচ্চার কাছে যখন এলাম, ততক্ষণে বৃষ্টি অনেকটা ধরে এলেও একেবারে থামেনি। আমি দীর্ঘদিনের সাইনাসের রোগী, মাথায় বৃষ্টির পানি পড়লে সমস্যা বাড়ে। জেলে আসার পর থেকে শরীরকে আস্কারা দেয়া যথাসম্ভব বন্ধ করেছি। জেল কর্তৃপক্ষ যে খাদ্যই দেয়, বিনা প্রতিবাদে গলাধঃকরণ করি, যেখানে-সেখানে শুয়ে পড়তে অস্বস্তিবোধ করি না। পরিষ্কারের সব বাতিক ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আজ বৃষ্টির পানিতে আমার কেশবিহীন মাথা ভেজালাম। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই টয়লেট পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি শেষ করে গোসল শুরু করার আগেই বৃষ্টির বেগ আবার বেড়ে গেল। বারান্দায় চেয়ার পেতে বৃষ্টি দেখার ফাঁকেই মনে হলো আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতৃভূমি সফরের কথা রয়েছে। মাত্র দু’দিন আগে সরকার আমাকে গোপালগঞ্জ জেল দেখিয়ে এনেছে। জেলের খুব কাছেই প্রধানমন্ত্রীর মরহুম ভাই শেখ কামালের নামে জেলা স্টেডিয়াম। সেই শেখ কামাল স্টেডিয়ামেই শেখ হাসিনার জনসভা করার কথা। জেলখানায় যাওয়া-আসার পথে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে এসেছিলাম। এই বৈরী আবহাওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জে যাওয়া হবে তো?
বৃষ্টির মধ্যেই ১০টার খানিক পর আমার পড়শি মেজর (অব.) জয়নাল আবেদিনকে পিজি হাসপাতালে নেয়ার জন্য জেলের লোকজন এসে হাজির। ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়েই দিনের পর দিন অনেক কষ্টে কোরআনের তাফসির লিখে চলেছেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ তার প্রয়োজনীয় চিকিত্সার ব্যবস্থা করছিল না। তারা গোঁ ধরে বসে ছিল, জেলের বাইরে জয়নাল ভাইকে নেয়া যাবে না। চিকিত্সা যা হবে, সেটা জেলের মধ্যেই হবে। অথচ চোখের চিকিত্সার সুব্যবস্থা এই জেলে নেই। মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টর কমান্ডারকে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। আদালত চিকিত্সার নির্দেশ দেয়ার পরও প্রশাসন বেশ কিছুদিন ওপরের নির্দেশে টালবাহানা করে কাটিয়েছে। মার্কিন-ভারত সমর্থিত সরকার মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই প্রকৃতির শাসকশ্রেণীকে উদ্দেশ করেই মহান আল্লাহতায়ালা সুরা আশ-শুরা’র ৪২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার ধর্মপরায়ণ রূপটি জনগণের কাছে বেশ দেখাতে আগ্রহী বলেই আমার সর্বদা মনে হয়েছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যবহৃত তার হিজাবপরিহিত, দু’হাত তুলে মোনাজাতরত পোস্টারের স্মৃতি দেশের অনেক নাগরিকের মনেই আশা করি এখনও উজ্জ্বল। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রচারাভিযান আরম্ভ করেন হজরত শাহজালাল (র.)-এর রওজা জিয়ারতের মধ্য দিয়ে। প্রায় প্রতিবছর ওমরাহ পালন করেন, তাও দেখতে পাই। কিন্তু এগুলো সবই ধর্মের বাহ্যিক রূপ। পবিত্র গ্রন্থের মর্মবাণী হৃদয়ে প্রবেশ না করলে এসব করে কোনো ফায়দা নেই। জয়নাল ভাই যে সারারাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করেন এবং তাফসির লেখেন তার উল্লেখ আগেই করেছি। ধর্মপ্রাণ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চোখের চিকিত্সা শেষে আজ হয়তো একটা চশমা নিয়ে ফিরতে পারবেন। (চলবে)
admahmudrahman@gmail.com
কেবল জামিন মঞ্জুরের আনুষ্ঠানিকতার জন্য আমাকে গোপালগঞ্জে নেয়ার কী প্রয়োজন ছিল, জানি না। শবেবরাতের রাত গোপালগঞ্জ জেলেই কাটল। গৃহের কথা বড় মনে পড়ছিল। মিষ্টান্নের প্রতি আমার ভয়ানক দুর্বলতা রয়েছে। পারভীন রান্নাঘরে সচরাচর না গেলেও প্রতি শবেবরাতে আমার পছন্দের কয়েক ধরনের হালুয়া তৈরি করে। এবার নিশ্চয়ই রান্নাবান্না বাদ দিয়ে শাশুড়ি-বৌ কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। ...
(গতকালের পর)
জেলগেট পার হতেই চেনা প্রিজন ভ্যানের পরিবর্তে এক সুদৃশ্য মাইক্রোবাস অপেক্ষমাণ দেখে বিস্মিত হলাম। গাড়িতে উঠে জানলাম, আমাকে পাহারা দিয়ে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৩ জন পুলিশ এসকর্ট সঙ্গে যাচ্ছে। এই পুলিশ দলটির দায়িত্ব আমাকে গোপালগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সহি-সালামতে হস্তান্তর করা। সকাল সাড়ে ১০টায় নাজিমউদ্দিন রোড থেকে রওনা হয়ে মাওয়াঘাটে পৌঁছাতে ঘণ্টা দেড়েক লাগল। ভরা বর্ষায় একদা প্রমত্তা পদ্মার শীর্ণ রূপ পরম বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর অপার বন্ধুত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। শ্রাবণের এই পদ্মা দেখে মনে পড়ল, গ্রেফতার হওয়ার ঠিক দু’সপ্তাহ আগে ১৬ মে’র ফারাক্কা দিবসে রাজশাহীর পদ্মার চরে এক গণজমায়েতে প্রধান অতিথি ছিলাম। সেই সভায় পানিযুদ্ধ চালিয়ে আমার মাতৃভূমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মরুভূমিতে পরিণত করার অপরাধে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছিলাম।
গত দু’মাসের বন্দিজীবনে অনেকবারই মনে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সম্পর্কে আমার সরাসরি বক্তব্য ও লেখালেখি এই বন্দিত্বকে ত্বরান্বিত করেছে। মাঝেমধ্যে তর্জনগর্জন করলেও আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরাশক্তির তাঁবেদার কোনো সংবাদপত্রকে আমার দেশ-এর মতো করে বন্ধ করার ক্ষমতা এই সরকারের কোনোদিনই হবে না। দেশের স্বাধীনতা, জনগণের স্বার্থ এবং নিজ ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে লড়াই করার পরিণতিতে জেলে আসায় আমার কোনোরকম অনুশোচনা নেই। এই পথ আমি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি। মহান আল্লাহতায়ালাই তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। পদ্মার বুকে ফেরিতে দুই ঘণ্টা কাটিয়ে গোপালগঞ্জ জেলে পৌঁছাতে বিকেল ৪টা বেজে গেল। নবনির্মিত জেলখানার চাকচিক্য দেখে ভালোই লাগল। জেল কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনায় সৌজন্যের কোনো ঘাটতি নেই। ছোট একটি সমস্যার কথা শুনলাম। গোপালগঞ্জ জেলে কোনো ডিভিশন ওয়ার্ড না থাকার কারণে আমাকে কারা হাসপাতালে থাকতে হবে। প্রসন্ন চিত্তে ভারপ্রাপ্ত জেলারকে আশ্বস্ত করে ঢাকা জেলে দুই মাস ধরে সাত সেলে অবস্থানের কথা জানালাম। সাত সেলের বন্দিজীবনে অভ্যস্ত হওয়ার পর ডিভিশন ওয়ার্ডের প্রসঙ্গই এখন আমার কাছে অবান্তর। হাসপাতাল ওয়ার্ডে গিয়ে রীতিমত মুগ্ধ হলাম। বিশাল একটি কক্ষে আমার থাকার আয়োজন করা হয়েছে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, এখানে লাগোয়া টয়লেট রয়েছে। দুটো দিন আমাকে নিজহাতে গণটয়লেট পরিষ্কার করতে হবে না জেনেই আমি পুলকিত। কারা প্রশাসনের লোকজন একে একে পরিচিত হতে এলো। তাদের কাছ থেকেই জানলাম, ২০১০ সালের প্রথম দিকে গোপালগঞ্জের নতুন জেলটি উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
কয়েদি এবং হাজতি মিলে মোট বন্দির সংখ্যা মাত্র সাড়ে তিনশ’। এখানে এমন ওয়ার্ডও আছে যেখানে আজ পর্যন্ত কোনো বন্দি ওঠেনি। উদাহরণস্বরূপ এই দোতলা হাসপাতালে আমিই সর্বপ্রথম বন্দি। একেবারেই নির্জন এই ওয়ার্ডে রাতে আমার জন্যে কোনো পাহারা লাগবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলারকে বললাম, আমি একা থাকতেই বরং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব। ফার্মাসিস্ট রক্তচাপ মাপার যন্ত্র নিয়ে এলে তাকেও জানালাম, আমার রক্তচাপ স্বাভাবিকই আছে, কষ্ট করে পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। দীর্ঘপথ চলার ক্লান্তিতে রাত ১০টার মধ্যেই রাতের আহার শেষ করে হাসপাতালের পরিষ্কার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফজরের নামাজ পড়ে জেলজীবনের অভ্যাসমত সকাল ৬টার মধ্যেই গোসল শেষ করে নিজহাতে কাচা লুঙ্গি আর গেঞ্জি শুকানোর ব্যবস্থা করছি, এমন সময় গত রাত থেকে নিয়োজিত সেবক মোস্তফা এসে হাজির। আমি নিজহাতে কাপড় ধুয়েছি দেখে রীতিমত চোটপাট শুরু করে দিল। প্রায় কুড়ি বছর ধরে সাজাখাটা অভিজ্ঞ মেট মোস্তফার এই অসন্তোষের মধ্যে আন্তরিকতার ছোঁয়া খুঁজে পেয়ে ভালোই লাগল। অঙ্গীকার করতে হলো, যে কদিন গোপালগঞ্জে আছি অন্তত সে ক’দিন এমন গর্হিত কাজ আর করব না। সকাল সাড়ে ৯টায় সুবেদার এলো প্রিজন ভ্যান আসার খবর নিয়ে। জেল থেকে বেরিয়ে দেখলাম, অন্যরকম আকৃতির এক প্রিজন ভ্যান। পেছনটা খোলা যেখানে সাধারণ কয়েদিরা চাপাচাপি করে বসে আছে, তাদের পাহারা দেয়ার জন্যে অস্ত্রহাতে তিন-চারজন সেন্ট্রি ডালার কাছে দাঁড়িয়ে। আমাকে বলা হলো সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে। আমি গাড়িতে ওঠার পর আমাকে মাঝখানে ঠেলে দরজার দিকে বসলেন একজন এসআই। জেল থেকে আদালত মিনিট দশেকের পথ। সোজা কোর্ট গারদে আমাকে নিয়ে তোলা হলো। মুখোমুখি দুটো গারদ। একটায় সব বন্দিকে ঢোকানো হলো এবং অপরটায় আমি একাই। ঘণ্টাখানেক ধরে অবিরত পায়চারি করে আমার পাদুটো আর চলছে না। কোর্ট ইন্সপেক্টরের বোধহয় মায়া হলো। একটু বিব্রত মুখেই একটা চেয়ার এনে ভদ্রলোক গারদের ভেতরেই আমার বসার ব্যবস্থা করলেন। আরও আধঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ডাক পড়ল। এজলাসে গিয়ে মনটা উত্ফুল্ল হয়ে গেল। প্রকৌশলী রিজু, হাসিন, রিপন, চুন্নু, নজরুল, সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, অ্যাডভোকেট মেসবাহ এবং আরও কয়েকজন পেশাজীবী ঢাকা থেকে এতদূর এসেছেন আদালতে আমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। আমি অপরিসীম কৃতজ্ঞতাবোধে আপ্লুত হলাম। আজ শবেবরাত হওয়া সত্ত্বেও আপনজনদের ফেলে এতগুলো মানুষ গোপালগঞ্জে এসেছেন আমার কুশল জানতে। দেশপ্রেমিক পেশাজীবীদের এই সমর্থন প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। কাঠগড়ায় দশ আসামি বেশ গাদাগাদি করে দাঁড়ালাম। বাদী আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা। তার পরিবারের রাজাকারি অতীতের সংবাদ আমার দেশসহ তিন-চারটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় সেই নেতা মানহানি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সবাই সাংবাদিক, তবে সম্পাদক আমি একাই।
দশ আসামির মধ্যে নয়জনকে এরই মধ্যে জামিন দেয়া হয়েছে। এক আমার জন্যেই নাকি আজকের এত আয়োজন। আমি পেশায় যেহেতু আইনজীবী নই, কাজেই আইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ বোঝা আমার কর্ম নয়। তবে একজন সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে মনে হলো, এই অপচয়ের কোনো প্রয়োজন ছিল না। মামলার ধারা জামিনযোগ্য, আমি কারাগারে বন্দি, অর্থাত্ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে আছি। এরকম পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বহীন, বানোয়াট মামলায় কেবল জামিন মঞ্জুরের আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার জন্যে আমাকে ঢাকা থেকে টেনে আনবার কী প্রয়োজন ছিল, সেটা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকল না। আমার পক্ষে স্থানীয় একজন আইনজীবী দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করে জামিনের আবেদন করলেই তো জামিন মঞ্জুর হওয়া উচিত ছিল। আমি যেহেতু সরকারের রোষানলে আছি, তাই আমার ব্যক্তিগত হয়রানির কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম, তবে আমাকে টানাহ্যাঁচড়া না করলে সরকারের অনেকগুলো টাকারও তো সাশ্রয় হতো। আমাকে আনা-নেয়ার জন্য দুই দফায় গাড়ি ভাড়া, ডজনখানেক পুলিশের পুরো দুই দিনের কর্মঘণ্টা নষ্ট, তাদের খোরাকির অর্থব্যয়—তা সে যতই সামান্য হোক, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশ প্রশাসনে সতর্কাবস্থা, এসব করে কার কী লাভ হচ্ছে আল্লাহই জানেন! জামিন হয়ে গেলে আদালত থেকে গোপালগঞ্জ জেলে ফিরলাম। ফেরার সময় জেলা পুলিশ প্রশাসন একটা পিক-আপের ব্যবস্থা করায় সকালের প্রিজন ভ্যানে চড়তে হলো না। জেলার সরাসরি না বললেও হাবেভাবে বুঝলাম, কালই ঢাকায় ফেরত চালানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেল প্রশাসন আবার চালান নিয়ে নাটক করতে পছন্দ করে। আগে থেকে কিছু না বলে চালানের সকালবেলা আসামিকে তৈরি হতে বলাটাই এদের রীতি। আকস্মিক নির্দেশে আসামি বেচারার যথেষ্ট মানসিক নির্যাতন হয় এবং এতেই কর্তৃপক্ষের বোধহয় অপার আনন্দ।
শবেবরাতের রাত গোপালগঞ্জ জেলেই কাটল। নিজ গৃহের কথা বড় মনে পড়ছিল। মিষ্টান্নের প্রতি আমার ভয়ানক দুর্বলতা রয়েছে। পারভীন রান্নাঘরে সচরাচর না গেলেও প্রতি শবেবরাতে আমার বিশেষ পছন্দের কয়েক ধরনের হালুয়া তৈরি করে। এবার নিশ্চয়ই রান্নাবান্না বাদ দিয়ে শাশুড়ি-বৌ কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সারা রাত প্রায় অনিদ্রায় কাটিয়ে সকাল থেকে প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ৯টার দিকে ভারপ্রাপ্ত জেলার নূর মোহাম্মদ এসে জানালেন পুলিশ এসকর্ট এসে গেছে, আমি যাত্রা শুরু করতে পারি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুপুর আড়াইটার দিকে ফিরলাম। সাত সেলের বন্ধুরা আমাকে সুস্থ শরীরে ফিরতে দেখে আনন্দ প্রকাশ করল। শবেবরাতের দিন যার যার বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খাওয়ার সময় আমার অনুপস্থিতি তাদের পীড়া দিয়েছে শুনে বড় ভালো লাগল। ভাবলাম, জীবন কত বিচিত্র! ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা এই সাত সেলের বারো বন্দি কত অল্প সময়ের মধ্যে স্বজনে পরিণত হয়েছি।
দেখতে দেখতে জুলাই মাসের শেষ দিন চলে এলো। মাসের শেষ দিন শুরুই হলো ভারী বর্ষণের মধ্যে। ফজরের আজান আর বৃষ্টির মিলিত শব্দে ঘুম ভেঙেছে। একটু শীত-শীতও বোধ হচ্ছে। একবার মনে হলো, দৈনন্দিন জেল রুটিনে না হয় ব্যতিক্রম ঘটাই। কী হবে আর এত ভোরে উঠে? চাদর মুড়ি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাই। পরক্ষণেই মনের দুর্বলতা ঝেড়ে এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠলাম। জেলখানার এই কঠিন জীবনযাপন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহাজোটের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে মনের জোর দিয়েই পরাজিত করতে হবে। বালতি এবং মগ নিয়ে চৌবাচ্চার কাছে যখন এলাম, ততক্ষণে বৃষ্টি অনেকটা ধরে এলেও একেবারে থামেনি। আমি দীর্ঘদিনের সাইনাসের রোগী, মাথায় বৃষ্টির পানি পড়লে সমস্যা বাড়ে। জেলে আসার পর থেকে শরীরকে আস্কারা দেয়া যথাসম্ভব বন্ধ করেছি। জেল কর্তৃপক্ষ যে খাদ্যই দেয়, বিনা প্রতিবাদে গলাধঃকরণ করি, যেখানে-সেখানে শুয়ে পড়তে অস্বস্তিবোধ করি না। পরিষ্কারের সব বাতিক ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আজ বৃষ্টির পানিতে আমার কেশবিহীন মাথা ভেজালাম। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই টয়লেট পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি শেষ করে গোসল শুরু করার আগেই বৃষ্টির বেগ আবার বেড়ে গেল। বারান্দায় চেয়ার পেতে বৃষ্টি দেখার ফাঁকেই মনে হলো আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতৃভূমি সফরের কথা রয়েছে। মাত্র দু’দিন আগে সরকার আমাকে গোপালগঞ্জ জেল দেখিয়ে এনেছে। জেলের খুব কাছেই প্রধানমন্ত্রীর মরহুম ভাই শেখ কামালের নামে জেলা স্টেডিয়াম। সেই শেখ কামাল স্টেডিয়ামেই শেখ হাসিনার জনসভা করার কথা। জেলখানায় যাওয়া-আসার পথে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে এসেছিলাম। এই বৈরী আবহাওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জে যাওয়া হবে তো?
বৃষ্টির মধ্যেই ১০টার খানিক পর আমার পড়শি মেজর (অব.) জয়নাল আবেদিনকে পিজি হাসপাতালে নেয়ার জন্য জেলের লোকজন এসে হাজির। ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়েই দিনের পর দিন অনেক কষ্টে কোরআনের তাফসির লিখে চলেছেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ তার প্রয়োজনীয় চিকিত্সার ব্যবস্থা করছিল না। তারা গোঁ ধরে বসে ছিল, জেলের বাইরে জয়নাল ভাইকে নেয়া যাবে না। চিকিত্সা যা হবে, সেটা জেলের মধ্যেই হবে। অথচ চোখের চিকিত্সার সুব্যবস্থা এই জেলে নেই। মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টর কমান্ডারকে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। আদালত চিকিত্সার নির্দেশ দেয়ার পরও প্রশাসন বেশ কিছুদিন ওপরের নির্দেশে টালবাহানা করে কাটিয়েছে। মার্কিন-ভারত সমর্থিত সরকার মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই প্রকৃতির শাসকশ্রেণীকে উদ্দেশ করেই মহান আল্লাহতায়ালা সুরা আশ-শুরা’র ৪২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার ধর্মপরায়ণ রূপটি জনগণের কাছে বেশ দেখাতে আগ্রহী বলেই আমার সর্বদা মনে হয়েছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যবহৃত তার হিজাবপরিহিত, দু’হাত তুলে মোনাজাতরত পোস্টারের স্মৃতি দেশের অনেক নাগরিকের মনেই আশা করি এখনও উজ্জ্বল। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রচারাভিযান আরম্ভ করেন হজরত শাহজালাল (র.)-এর রওজা জিয়ারতের মধ্য দিয়ে। প্রায় প্রতিবছর ওমরাহ পালন করেন, তাও দেখতে পাই। কিন্তু এগুলো সবই ধর্মের বাহ্যিক রূপ। পবিত্র গ্রন্থের মর্মবাণী হৃদয়ে প্রবেশ না করলে এসব করে কোনো ফায়দা নেই। জয়নাল ভাই যে সারারাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করেন এবং তাফসির লেখেন তার উল্লেখ আগেই করেছি। ধর্মপ্রাণ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চোখের চিকিত্সা শেষে আজ হয়তো একটা চশমা নিয়ে ফিরতে পারবেন। (চলবে)
admahmudrahman@gmail.com
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনের ঘোষণা
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনের ঘোষণা
বাছির জামাল ও মাহাবুবুর রহমান
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী এ সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যাবে না। সরকারকে হঠাতে লংমার্চ, রোডমার্চ এবং জেলায় জেলায় গণমিছিলসহ আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়ার কথা তিনি ঘোষণা করেন।
গতকাল রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী কমিটির সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার সভায় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক, সদস্য ও জেলা সভাপতিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার বক্তব্য শোনেন তিনি। নেতাদের বক্তব্যের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে বেগম জিয়া তার সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন এখন জনগণের দাবি। এ নির্বাচন আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে কারচুপির কৌশল হিসেবেই সরকার ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে। এ পদ্ধতি আমরা মানি না। বিএনপি ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি করতে দেবে না। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে টালবাহানা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পদ্ধতি অবশ্যই বহাল থাকতে হবে। তবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি তা মেনে নেবে না। কারণ তিনি দলীয় লোক। নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি তা প্রতিরোধ করবে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, বিএনপিতে এর কথায়, ওর কথায় কমিটি নয়। সবাইকে নিয়ে কমিটি করা হবে। পকেট কমিটি আর সহ্য করা হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি জেলায় জেলায় যাব। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি কর্মসূচি আশানুরূপ পালন করতে না পারলে সেই জেলা কমিটি তাত্ক্ষণিকভাবে ভেঙে দেয়া হবে। তিনি দলে নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটিতে কারা সক্রিয় ও কারা নিষ্ক্রিয় তাদের তালিকা তৈরির জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দিয়ে বলেন, এর আলোকে প্রয়োজনে নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হতে পারে।
নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, খালেদা জিয়া দলকে শক্তিশালী করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটির নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবক্ষেত্রেই ব্যর্থ। এজন্য তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের ষড়যন্ত্র রুখতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ জনগণের ভোটকে রক্ষা করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন অবশ্যই প্রয়োজন।
খালেদা জিয়া এজন্য নিজেদের মধ্যে দলাদলি, চক্রান্ত, ল্যাংমারা ইত্যাদি বাদ দিয়ে এক হয়ে দলকে শক্তিশালী করায় মনোনিবেশ করতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পৌর নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনারাই বলেছেন, সংগঠন শক্তিশালী বলে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনায় দল ভালো করেছে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে বরিশাল অঞ্চলে দল ভালো করতে পারেনি। প্রার্থীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দলকে শক্তিহীন করলে কোনো লাভ হবে না।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিল অধিবেশনের পর ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। ২০১০ সালের ৩১ জুলাই নতুন নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা হয়। এটি হচ্ছে দ্বিতীয় সভা।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির এ সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমে উদ্বোধনী পর্ব হয়। এতে খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন। এর আগে লন্ডনে চিকিত্সাধীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বাণী পড়ে শোনানো হয়। বাণীটি পাঠ করেন বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয় রুদ্ধদ্বার সভা। মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে নির্বাহী সভার মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১৯ সদস্যের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডনে চিকিত্সাধীন এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে থাকায় সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। এছাড়াও এম. শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অনুপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি অসুস্থ। সবেমাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। এজন্য নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এম. শামসুল ইসলাম ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির ৩৮৬ জন সদস্য ছাড়াও সহ-সভাপতি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাসহ কাউন্সিলর ও ৭৪ জেলা কমিটির সভাপতিরা। কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে নির্বাহী সভার উদ্বোধনী পর্বের সূচনা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক।
পরে দলের মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ কমরউদ্দিন আহমেদ, সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম, চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি দস্তগীর চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, শাহ আবদুল করিম, সাহিত্যিক আবদুল মান্নান সৈয়দ, চিত্রপরিচালক শিবলী সাদিক, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী ও লুত্ফুল হাই সাচ্চু, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো, হলিউডের অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর, সাংবাদিক অচিন্ত্য সেনগুপ্ত, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহাসহ গত ৯ মাসে মারা যাওয়া দলীয় নেতাকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে একটি শোকপ্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। শোক প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। পরে মরহুম নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সমাপনী বক্তব্যে দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে গণমাধ্যমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। কারণ, বর্তমান গণমাধ্যমের অধিকাংশই সরকারি দলের তোয়াজে ব্যস্ত। এজন্য জনগণ প্রকৃত সংবাদ পাচ্ছে না। জনগণকে সরকারের প্রতিটি ব্যর্থতার কথা জানাতে হবে। তাহলে আমরা যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি, তাতে জনগণ অংশ নেবে।
তিনি দ্রব্যমূল্য, পানি, গ্যাস সঙ্কটসহ বিভিন্ন সঙ্কট নিরসনে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কথা নিজেদের জেনে জনগণকে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি সরকারের নিষ্পেষণে অতিষ্ঠ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্কট উত্তরণে জনগণকে ভরসা দিতে হবে। সরকারি দল ও প্রশাসনের নির্যাতনের জবাব দিতে হবে সংগঠনকে শক্তিশালী করে, মাঠে কর্মসূচি পালন করে। নিজেদের মধ্যে দলাদলি থাকলে কখনোই শক্তিশালী হওয়া যায় না।
খালেদা জিয়া কে ত্যাগী আর কে বেঈমান—সবকিছু বিবেচনা করেই কমিটি দেয়া বলে জানিয়ে বলেন, তবে তা হতে হবে শক্তিশালী ও আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত। যারা পদ পেয়েও দলে নিষ্ক্রিয়, কাজ না করে শুধু ঘোরাঘুরি করছেন, তারা কাজ করুন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটিতে কারা সক্রিয় ও কারা নিষ্ক্রিয় তাদের তালিকা তৈরির জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেন। এ তালিকা অনুযায়ীই কেউ কমিটিতে থাকবে কেউ বাদ যাবে উল্লেখ করে বলেন, যারা বাদ যাবেন তারা যেন মন খারাপ না করেন। আর যারা থাকবেন তারা নিজ যোগ্যতা বলেই টিকেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই অংশকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হতে দেয়া হবে না। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।
এর আগে সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর লড়াইয়ের দায়িত্ব পড়েছে বিএনপির ওপর। আজ দেশ ও জনগণ বিপন্ন। বর্তমান সরকারের অপশাসন, অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও নিপীড়নে জনগণ ক্ষুব্ধ ও পরিবর্তনের প্রত্যাশায় অধীর। তাদের সংগঠিত করে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা বিএনপির আছে। তাই জনগণের এই দুঃসময়ে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া তার উদ্বোধনী বক্তব্যে সরকারের অপশাসন ও নানা ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, শেয়ারবাজার বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি সঙ্কটে জনগণের চরম দুর্ভোগের চিত্র বর্ণনা করে তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। ১০ টাকায় চাল ও বিনামূল্যে সার দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা সরকারি দল আজ অস্বীকার করছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার মতো চটকদার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা বেকার জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করেছে। দেশ-বিদেশে শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছেন। বিনিয়োগ নেই বলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ২০০৬ সালের ১৭ টাকার কেজির চাল এখন ৪০ টাকার ওপরে। একই অবস্থা ডাল, তেল, মাছ ও মাংসে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও সাংঘাতিক অবনতি ঘটেছে বলে উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সীমান্ত আজ অরক্ষিত। ফেলানীর লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। তাঁবেদার সরকার এ ঘটনার প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার গদি রক্ষার জন্য সব অন্যায় মেনে নিতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী এদেশের জনগণ কারও আগ্রাসনের কাছে নতিস্বীকারে রাজি নয়। দেশের জনগণ বর্তমান সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। তারা ক্রোধে ফুঁসছে। কাজেই জনস্বার্থে গৃহীত সব কর্মসূচিতে আমরা জনগণকে পাশে পাব।
খালেদা জিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যত দিন যাবে, আন্দোলন ও বিজয়ের মূলশক্তি হবে দলের সাংগঠনিক ঐক্য এবং জনগণের সমর্থন। আমরা যত বেশি ও দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হতে পারব, ততই আমাদের প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়বে। এজন্য দলের ঐক্য ও সংহতি জোরদার করার তাগিদ দেন চেয়ারপার্সন।
দীর্ঘ বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে প্রতিবেশী দেশ ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে যারা লাভবান হয়েছে, তাদের আগামীতে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদেরও আগামীতে বিচার করার কথা বলেন তিনি।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি করে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্ত হত্যা ও মানুষ গুম করার মতো নৃশংসতা।
নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর সরকারের প্রতিহিংসার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, এখন আর শুধু প্রতিবাদ করলে চলবে না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে সব অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়নের।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত্, গ্যাস, পানির অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই যে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে, তাতে আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা ঠিকমত চলছে না। উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত শত শত শিল্প উত্পাদনে যেতে পারছে না। এসবের বেশিরভাগই আমাদের আমলে শুরু হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই ঢাকা শহরে হাজার হাজার ফ্ল্যাট বাড়ি বসবাসের জন্য প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ না পাওয়ায় শূন্য পড়ে আছে। বিনিয়োগকারী ও যারা এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা সবাই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। অথচ ২০০৬ সালে তো এমন অবস্থা ছিল না।
খালেদা জিয়া তার সরকারের আমলের বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আমলে নাকি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও উত্পাদন করা হয়নি। অথচ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রকাশনায়ই স্বীকার করা হয়েছে যে, বিগত জোট সরকারের আমলে ১২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই হিসেবে শুধু বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড ও তার আওতাধীন কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আমাদের সরকারের আমলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং আরপিসিএলের মাধ্যমে আরও আড়াইশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও ১২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল, যার অধিকাংশ অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিয়েছে। এর বাইরেও ২৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা আমরা করে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এবং তাদের আন্দোলনের ফসল অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেসব বাস্তবায়ন না করে রেন্টাল বিদ্যুত্ উত্পাদনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে কিছু ব্যক্তি লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় অর্থনীতি ও দেশের জনগণ। আমাদের সরকারের আমলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালন ব্যয় ছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা মাত্র এবং বছরে এই খাতে ভর্তুকি দেয়া হতো ৫-৬শ’ কোটি টাকা। অথচ বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালনে ব্যয় হচ্ছে ৪ টাকা ৬৮ পয়সা এবং গত অর্থবছরে বিদ্যুত্ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই সরকারের আমলে বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানোর পরও এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ে জনগণের কোনো কল্যাণ হয়নি। লোডশেডিং বেড়েই চলেছে। শিল্প-বাণিজ্য-কৃষি কোনো খাতেই অতিরিক্ত কিংবা কম দামে বিদ্যুত্ দেয়া হচ্ছে না। তাহলে লাভবান হলো কারা?
তিনি বলেন, এতদিন পর সরকার গ্যাসকূপ খননের কথা বলছে। এরই মধ্যে নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সরকারি ঘোষণা এসেছে। জনগণকে অনেক বেশি দামে এলপিজি কিনতে হলে তাদের প্রকৃত উপার্জন কমে যাবে। অর্থাত্ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেখানে গ্যাস নেই, সেখানে গ্যাস দেয়ার সরকারি প্রতিশ্রুতি ভাঁওতা বলেই প্রমাণিত হচ্ছে।
পানি সঙ্কট সমাধানেরও কোনো লক্ষণ নেই, উদ্যোগও নেই। খাল, বিল, নদী, নালা সরকারি দল দখল করে এমন সব প্রতিষ্ঠান গড়ছে যাতে পানি দূষণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানি সরবরাহ ক্রমাগত কমতে থাকায় নদীপথ সঙ্কুচিত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে, নদীপৃষ্ঠ উঁচু হওয়ায় বন্যার প্রকোপ বাড়ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল মরূকরণ দ্রুততর হচ্ছে। এ ব্যাপারেও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরসহ আশুগঞ্জ নৌবন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হলো, কিন্তু বিনিময়ে কঠিন শর্তে ও বেশি সুদে কিছু অর্থ ঋণ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনবিঘা করিডোর সমস্যারও সমাধান হয়নি। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টিকেও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা কারা নির্যাতিত আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি সত্য কথা বলার জন্য আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে এ সরকার।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, এমন একজন নির্ভীক সম্পাদক ও কলামিস্টের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতন দেশবাসী তথা সারাবিশ্বের নজর কেড়েছে।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪৩টি পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়েছে। ১০টি বাকি রয়েছে। আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে সবগুলো জেলা কমিটি করা সম্ভব হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, দলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। ওয়েবসাইটের ঠিকানা : www.bangladeshnationalistparty-bnp.org
জনগণের সংগ্রামে দেশের বর্তমান দুঃসময় কেটে যাবে—তারেক রহমান : জনগণের সংগ্রামে দেশের বর্তমান দুঃসময় কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন লন্ডনে চিকিত্সাধীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল দলের নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ সভায় পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, আমি দূর থেকে আপনাদের কঠিন সংগ্রামের কথা ভেবে আলোড়িত ও আন্দোলিত হই। আমি সাহসে উদ্দীপ্ত হয়ে ভাবি, এই দুঃসময় কেটে যাবে বীর জনগণের দুর্জয় সংগ্রামে।
এক পৃষ্ঠার লিখিত বাণীটি পাঠ করে শোনান খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। এ সময় পুরো সভাস্থলে ছিল পিনপতন নীরবতা। ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চতর আদালত থেকে জামিন নিয়ে লন্ডনে চিকিত্সার জন্য যান তারেক রহমান। ওই বছরের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে।
বাণীতে তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের দুর্জয় সংগ্রামে নতুন সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় আমরা সবাই গভীর অমানিশার প্রহর যাপন করছি। সংগ্রামের প্রস্তুতি ও পথনির্দেশনায় এ সভা সফল হোক।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক কমরউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, লন্ডনে তিনি আমার পরম সুহৃদ ছিলেন। অকস্মাত্ তার এই মৃত্যু আমার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এবং স্বজন হারানোর বেদনার মতো।
তিনি নির্বাহী কমিটির সদস্যদের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আপনারা যখন এই সভায় মিলিত হয়েছেন, আমি তখন অনেক দূরে বিদেশ বিভূঁইয়ে চিকিত্সাধীন রয়েছি।
তারেক রহমান নির্বাহী কমিটির সফলতা কামনা করেন।
গতকাল রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী কমিটির সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার সভায় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক, সদস্য ও জেলা সভাপতিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার বক্তব্য শোনেন তিনি। নেতাদের বক্তব্যের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে বেগম জিয়া তার সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন এখন জনগণের দাবি। এ নির্বাচন আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে কারচুপির কৌশল হিসেবেই সরকার ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে। এ পদ্ধতি আমরা মানি না। বিএনপি ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি করতে দেবে না। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে টালবাহানা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পদ্ধতি অবশ্যই বহাল থাকতে হবে। তবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি তা মেনে নেবে না। কারণ তিনি দলীয় লোক। নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি তা প্রতিরোধ করবে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, বিএনপিতে এর কথায়, ওর কথায় কমিটি নয়। সবাইকে নিয়ে কমিটি করা হবে। পকেট কমিটি আর সহ্য করা হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি জেলায় জেলায় যাব। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি কর্মসূচি আশানুরূপ পালন করতে না পারলে সেই জেলা কমিটি তাত্ক্ষণিকভাবে ভেঙে দেয়া হবে। তিনি দলে নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটিতে কারা সক্রিয় ও কারা নিষ্ক্রিয় তাদের তালিকা তৈরির জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দিয়ে বলেন, এর আলোকে প্রয়োজনে নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হতে পারে।
নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, খালেদা জিয়া দলকে শক্তিশালী করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটির নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবক্ষেত্রেই ব্যর্থ। এজন্য তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের ষড়যন্ত্র রুখতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ জনগণের ভোটকে রক্ষা করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন অবশ্যই প্রয়োজন।
খালেদা জিয়া এজন্য নিজেদের মধ্যে দলাদলি, চক্রান্ত, ল্যাংমারা ইত্যাদি বাদ দিয়ে এক হয়ে দলকে শক্তিশালী করায় মনোনিবেশ করতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পৌর নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনারাই বলেছেন, সংগঠন শক্তিশালী বলে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনায় দল ভালো করেছে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে বরিশাল অঞ্চলে দল ভালো করতে পারেনি। প্রার্থীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দলকে শক্তিহীন করলে কোনো লাভ হবে না।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিল অধিবেশনের পর ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। ২০১০ সালের ৩১ জুলাই নতুন নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা হয়। এটি হচ্ছে দ্বিতীয় সভা।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির এ সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমে উদ্বোধনী পর্ব হয়। এতে খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন। এর আগে লন্ডনে চিকিত্সাধীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বাণী পড়ে শোনানো হয়। বাণীটি পাঠ করেন বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয় রুদ্ধদ্বার সভা। মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে নির্বাহী সভার মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১৯ সদস্যের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডনে চিকিত্সাধীন এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে থাকায় সভায় উপস্থিত হতে পারেননি। এছাড়াও এম. শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অনুপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি অসুস্থ। সবেমাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। এজন্য নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এম. শামসুল ইসলাম ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির ৩৮৬ জন সদস্য ছাড়াও সহ-সভাপতি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাসহ কাউন্সিলর ও ৭৪ জেলা কমিটির সভাপতিরা। কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে নির্বাহী সভার উদ্বোধনী পর্বের সূচনা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক।
পরে দলের মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ কমরউদ্দিন আহমেদ, সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম, চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি দস্তগীর চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, শাহ আবদুল করিম, সাহিত্যিক আবদুল মান্নান সৈয়দ, চিত্রপরিচালক শিবলী সাদিক, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী ও লুত্ফুল হাই সাচ্চু, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো, হলিউডের অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর, সাংবাদিক অচিন্ত্য সেনগুপ্ত, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহাসহ গত ৯ মাসে মারা যাওয়া দলীয় নেতাকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে একটি শোকপ্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। শোক প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। পরে মরহুম নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সমাপনী বক্তব্যে দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে গণমাধ্যমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। কারণ, বর্তমান গণমাধ্যমের অধিকাংশই সরকারি দলের তোয়াজে ব্যস্ত। এজন্য জনগণ প্রকৃত সংবাদ পাচ্ছে না। জনগণকে সরকারের প্রতিটি ব্যর্থতার কথা জানাতে হবে। তাহলে আমরা যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলেছি, তাতে জনগণ অংশ নেবে।
তিনি দ্রব্যমূল্য, পানি, গ্যাস সঙ্কটসহ বিভিন্ন সঙ্কট নিরসনে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কথা নিজেদের জেনে জনগণকে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি সরকারের নিষ্পেষণে অতিষ্ঠ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্কট উত্তরণে জনগণকে ভরসা দিতে হবে। সরকারি দল ও প্রশাসনের নির্যাতনের জবাব দিতে হবে সংগঠনকে শক্তিশালী করে, মাঠে কর্মসূচি পালন করে। নিজেদের মধ্যে দলাদলি থাকলে কখনোই শক্তিশালী হওয়া যায় না।
খালেদা জিয়া কে ত্যাগী আর কে বেঈমান—সবকিছু বিবেচনা করেই কমিটি দেয়া বলে জানিয়ে বলেন, তবে তা হতে হবে শক্তিশালী ও আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত। যারা পদ পেয়েও দলে নিষ্ক্রিয়, কাজ না করে শুধু ঘোরাঘুরি করছেন, তারা কাজ করুন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাহী কমিটিতে কারা সক্রিয় ও কারা নিষ্ক্রিয় তাদের তালিকা তৈরির জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেন। এ তালিকা অনুযায়ীই কেউ কমিটিতে থাকবে কেউ বাদ যাবে উল্লেখ করে বলেন, যারা বাদ যাবেন তারা যেন মন খারাপ না করেন। আর যারা থাকবেন তারা নিজ যোগ্যতা বলেই টিকেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই অংশকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হতে দেয়া হবে না। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।
এর আগে সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর লড়াইয়ের দায়িত্ব পড়েছে বিএনপির ওপর। আজ দেশ ও জনগণ বিপন্ন। বর্তমান সরকারের অপশাসন, অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও নিপীড়নে জনগণ ক্ষুব্ধ ও পরিবর্তনের প্রত্যাশায় অধীর। তাদের সংগঠিত করে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা বিএনপির আছে। তাই জনগণের এই দুঃসময়ে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া তার উদ্বোধনী বক্তব্যে সরকারের অপশাসন ও নানা ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, শেয়ারবাজার বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি সঙ্কটে জনগণের চরম দুর্ভোগের চিত্র বর্ণনা করে তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। ১০ টাকায় চাল ও বিনামূল্যে সার দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা সরকারি দল আজ অস্বীকার করছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার মতো চটকদার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা বেকার জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করেছে। দেশ-বিদেশে শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছেন। বিনিয়োগ নেই বলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ২০০৬ সালের ১৭ টাকার কেজির চাল এখন ৪০ টাকার ওপরে। একই অবস্থা ডাল, তেল, মাছ ও মাংসে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও সাংঘাতিক অবনতি ঘটেছে বলে উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সীমান্ত আজ অরক্ষিত। ফেলানীর লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। তাঁবেদার সরকার এ ঘটনার প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার গদি রক্ষার জন্য সব অন্যায় মেনে নিতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী এদেশের জনগণ কারও আগ্রাসনের কাছে নতিস্বীকারে রাজি নয়। দেশের জনগণ বর্তমান সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। তারা ক্রোধে ফুঁসছে। কাজেই জনস্বার্থে গৃহীত সব কর্মসূচিতে আমরা জনগণকে পাশে পাব।
খালেদা জিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যত দিন যাবে, আন্দোলন ও বিজয়ের মূলশক্তি হবে দলের সাংগঠনিক ঐক্য এবং জনগণের সমর্থন। আমরা যত বেশি ও দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হতে পারব, ততই আমাদের প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়বে। এজন্য দলের ঐক্য ও সংহতি জোরদার করার তাগিদ দেন চেয়ারপার্সন।
দীর্ঘ বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে প্রতিবেশী দেশ ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে যারা লাভবান হয়েছে, তাদের আগামীতে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদেরও আগামীতে বিচার করার কথা বলেন তিনি।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি করে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্ত হত্যা ও মানুষ গুম করার মতো নৃশংসতা।
নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর সরকারের প্রতিহিংসার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, এখন আর শুধু প্রতিবাদ করলে চলবে না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে সব অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়নের।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত্, গ্যাস, পানির অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই যে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে, তাতে আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা ঠিকমত চলছে না। উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত শত শত শিল্প উত্পাদনে যেতে পারছে না। এসবের বেশিরভাগই আমাদের আমলে শুরু হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই ঢাকা শহরে হাজার হাজার ফ্ল্যাট বাড়ি বসবাসের জন্য প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ না পাওয়ায় শূন্য পড়ে আছে। বিনিয়োগকারী ও যারা এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা সবাই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। অথচ ২০০৬ সালে তো এমন অবস্থা ছিল না।
খালেদা জিয়া তার সরকারের আমলের বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আমলে নাকি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ও উত্পাদন করা হয়নি। অথচ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রকাশনায়ই স্বীকার করা হয়েছে যে, বিগত জোট সরকারের আমলে ১২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই হিসেবে শুধু বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড ও তার আওতাধীন কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আমাদের সরকারের আমলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং আরপিসিএলের মাধ্যমে আরও আড়াইশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও ১২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল, যার অধিকাংশ অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিয়েছে। এর বাইরেও ২৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা আমরা করে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এবং তাদের আন্দোলনের ফসল অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেসব বাস্তবায়ন না করে রেন্টাল বিদ্যুত্ উত্পাদনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে কিছু ব্যক্তি লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় অর্থনীতি ও দেশের জনগণ। আমাদের সরকারের আমলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালন ব্যয় ছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা মাত্র এবং বছরে এই খাতে ভর্তুকি দেয়া হতো ৫-৬শ’ কোটি টাকা। অথচ বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালনে ব্যয় হচ্ছে ৪ টাকা ৬৮ পয়সা এবং গত অর্থবছরে বিদ্যুত্ খাতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই সরকারের আমলে বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানোর পরও এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ে জনগণের কোনো কল্যাণ হয়নি। লোডশেডিং বেড়েই চলেছে। শিল্প-বাণিজ্য-কৃষি কোনো খাতেই অতিরিক্ত কিংবা কম দামে বিদ্যুত্ দেয়া হচ্ছে না। তাহলে লাভবান হলো কারা?
তিনি বলেন, এতদিন পর সরকার গ্যাসকূপ খননের কথা বলছে। এরই মধ্যে নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সরকারি ঘোষণা এসেছে। জনগণকে অনেক বেশি দামে এলপিজি কিনতে হলে তাদের প্রকৃত উপার্জন কমে যাবে। অর্থাত্ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেখানে গ্যাস নেই, সেখানে গ্যাস দেয়ার সরকারি প্রতিশ্রুতি ভাঁওতা বলেই প্রমাণিত হচ্ছে।
পানি সঙ্কট সমাধানেরও কোনো লক্ষণ নেই, উদ্যোগও নেই। খাল, বিল, নদী, নালা সরকারি দল দখল করে এমন সব প্রতিষ্ঠান গড়ছে যাতে পানি দূষণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানি সরবরাহ ক্রমাগত কমতে থাকায় নদীপথ সঙ্কুচিত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে, নদীপৃষ্ঠ উঁচু হওয়ায় বন্যার প্রকোপ বাড়ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল মরূকরণ দ্রুততর হচ্ছে। এ ব্যাপারেও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরসহ আশুগঞ্জ নৌবন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হলো, কিন্তু বিনিময়ে কঠিন শর্তে ও বেশি সুদে কিছু অর্থ ঋণ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনবিঘা করিডোর সমস্যারও সমাধান হয়নি। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টিকেও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা কারা নির্যাতিত আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি সত্য কথা বলার জন্য আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে এ সরকার।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, এমন একজন নির্ভীক সম্পাদক ও কলামিস্টের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতন দেশবাসী তথা সারাবিশ্বের নজর কেড়েছে।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪৩টি পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়েছে। ১০টি বাকি রয়েছে। আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে সবগুলো জেলা কমিটি করা সম্ভব হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, দলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। ওয়েবসাইটের ঠিকানা : www.bangladeshnationalistparty-bnp.org
জনগণের সংগ্রামে দেশের বর্তমান দুঃসময় কেটে যাবে—তারেক রহমান : জনগণের সংগ্রামে দেশের বর্তমান দুঃসময় কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন লন্ডনে চিকিত্সাধীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল দলের নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ সভায় পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, আমি দূর থেকে আপনাদের কঠিন সংগ্রামের কথা ভেবে আলোড়িত ও আন্দোলিত হই। আমি সাহসে উদ্দীপ্ত হয়ে ভাবি, এই দুঃসময় কেটে যাবে বীর জনগণের দুর্জয় সংগ্রামে।
এক পৃষ্ঠার লিখিত বাণীটি পাঠ করে শোনান খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। এ সময় পুরো সভাস্থলে ছিল পিনপতন নীরবতা। ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চতর আদালত থেকে জামিন নিয়ে লন্ডনে চিকিত্সার জন্য যান তারেক রহমান। ওই বছরের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে।
বাণীতে তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের দুর্জয় সংগ্রামে নতুন সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় আমরা সবাই গভীর অমানিশার প্রহর যাপন করছি। সংগ্রামের প্রস্তুতি ও পথনির্দেশনায় এ সভা সফল হোক।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক কমরউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, লন্ডনে তিনি আমার পরম সুহৃদ ছিলেন। অকস্মাত্ তার এই মৃত্যু আমার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এবং স্বজন হারানোর বেদনার মতো।
তিনি নির্বাহী কমিটির সদস্যদের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আপনারা যখন এই সভায় মিলিত হয়েছেন, আমি তখন অনেক দূরে বিদেশ বিভূঁইয়ে চিকিত্সাধীন রয়েছি।
তারেক রহমান নির্বাহী কমিটির সফলতা কামনা করেন।
You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "
সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান
a
এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।
সাম্প্রতিক লেখা
Blog Archive
-
▼
2011
(146)
- ► সেপ্টেম্বর (29)
-
▼
এপ্রিল
(12)
- মোবাইলিংয়ের বিষাক্ত ছোবলে আসক্ত তরুণ সমাজ
- বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট: আসুন দেখি কি হতে যাচ্ছে।প...
- গুগল অ্যাডসেন্স
- "চড়াই আর কাকের কথা"
- জুমের আগুনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে জীব...
- ভিন্ন খবর : গুলিটি ২৩ বছর মাথায় ছিল!
- হুদার কার্টুন
- মা হ মু দু র র হ মা ন কারা বরনের কাহীনি
- মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলনের ঘ...
- শুভ নববর্ষ ১৪১৮ সন
- বাংলা গানের সাইট
- অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া মাউশি
- ► ফেব্রুয়ারী (2)
Look for BD ADDA
Labels
- Bhoot-FM (3)