About

ABC Radio

Blogger news

নেপাল-ভুটানের মোড়কে ভারতকে ট্রানজিট




নেপাল-ভুটানের মোড়কে ভারতকে ট্রানজিট

আহসান হাবীব রাসেল
ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটানকে ট্রানজিট দেয়ার মাধ্যমে বড় অঙ্কের মাশুল আদায়ের ব্যবস্থা হবে বলে সরকার যে দাবি করছে, তা আসলে কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে অভিজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে, না আসলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করিডোর দেয়া হয়েছে এ প্রশ্নটি নতুন করে দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, নেপাল ও ভুটানের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম। নেপাল ও ভুটানের এক বছরে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ওই দুই দেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৬৭ শতাংশ হয়ে থাকে ভারতের সঙ্গে, যে বাণিজ্যের জন্য তাদের বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করতে হবে না। ফলে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেয়ার কথা বলা হলেও তার ব্যবহার হবে খুবই সামান্য এবং তা থেকে ‘ফি’ বাবত বাংলাদেশের আয়ের পরিমাণ হবে নগণ্য। এই হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন আসলে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে ভারতকে।
এদিকে ভারতের উত্তরাঞ্চলে জনগণের মাথাপিছু আয় মাত্র ৩০০ ডলারের মতো। ফলে সেখান থেকে বহিঃবাণিজ্যের পরিমাণ যে নগণ্য হবে অথবা বাংলাদেশে উত্পাদিত কোনো পণ্য অতি সামান্য পরিমাণে যে সেখানে রফতানি হবে তা সহজবোধ্য। অথচ ট্রানজিট বা করিডোর দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে অবকাঠামো খাতে। ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশ যে বিনিয়োগ করবে, তা শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে উঠে আসবে কিনা সেটি নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) নিয়ম প্রয়োগ করে ‘ফি’ আদায়ের হিসাব করা যায় কিনা। সম্প্রতি একজন বহির্বাণিজ্য বিশ্লেষক বলেছেন, ডব্লিউটিও’র সংজ্ঞা মতে ট্রানজিট হচ্ছে একটি দেশ থেকে দ্বিতীয় একটি দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য ও মানুষ চলার ব্যবস্থা। কিন্তু যেহেতু ভারতের ক্ষেত্রে সে দেশের পণ্য সে দেশ থেকেই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্য একটি অংশে পরিবহন করা হচ্ছে তাই এই সুবিধার বিপরীতে মাশুল আদায় করার হিসাব ডব্লিউটিও’র ফর্মুলা বা শর্ত দিয়ে করা যায় না। এই হিসাব হতে হবে অন্যভাবে এবং বাংলাদেশের পাওনা হতে হবে উচ্চহারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মাহবুব উল্লাহ এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, সামরিক প্রয়োজন ছাড়া অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ট্রানজিট দেয়ার কথা বলা হলেও এর ভিত্তি দেখে তা মনে হচ্ছে না। কারণ একদিকে নেপাল ও ভুটানের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ; অন্যদিকে ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারতের যেসব অঞ্চলে পণ্য আনা-নেয়া করা হবে সেসব অঞ্চলের মধ্যে সেভেন সিস্টারসহ অন্যান্য অঞ্চলে বার্ষিক মাথাপিছু আয় মাত্র ৩০০ ডলারের মতো। উপরন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণও খুব কম। তাদের ট্রানজিট দেয়ার কি ভিত্তি থাকতে পারে সেটিই প্রশ্নের বিষয়।
ভুটানের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৮ সালে ভুটানের মোট রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ভারতেই রফতানি করা হয় ৮৬ শতাংশ। একই সময়ে দেশটির আমদানির পরিমাণও অনেক কম। ২০০৮ সালে মাত্র ৫৩৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে দেশটি। যার মধ্যে ৬৩ শতাংশই আমদানি করে ভারত থেকে। অর্থাত্ আমদানি রফতানি মিলিয়ে দেশটির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ভাগ ৭৫ শতাংশ। যেহেতু ভুটানের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই করে থাকে ভারতের সঙ্গে। সুতরাং ট্রানজিটের মাধ্যমে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পরিবহন হতে পারে।
নেপালকেও ট্রানজিট দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী নেপালের মোট রফতানির পরিমাণ ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ভারতেই রফতানি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। একই সঙ্গে ২০০৯ সালে দেশটির আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ৫৭ শতাংশই এসেছিল ভারত থেকে। যেখানে দেশটির মোট আমদানি ও রফতানি মূল্য দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নেরও কম। এর মধ্যে ভারতেই বাণিজ্য হয়ে থাকে ৬১ শতাংশ। সুতরাং এক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ‘ফি’ আদায়ের পরিমাণ অনেক কম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে উচ্চহারের সুদে ভারতের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেবে বলে চুক্তি করেছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবকাঠামো তৈরি করতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লেগে যেতে পারে। সুতরাং এত টাকা এই খাতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ আসলে কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ নেপাল এবং ভুটান মিলে মাত্র ৩ বিলিয়ন মূল্যমানের পণ্য পরিবহনের জন্য তারা ট্রানজিট ব্যবহার করবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ট্রানজিট দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশের লাভক্ষতি হিসাব করা দরকার। বাংলাদেশ ট্রানজিট দিয়ে কি পাবে তা হিসাব না করে ট্রানজিট দেয়া বাংলাদেশের জন্য কোনোভাবেই ভালো হবে না। তাছাড়া ট্রানজিট দেয়ার জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। অথচ সরকার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা না করেই তাদের ট্রানজিট দেয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছে। অবকাঠামো তৈরির জন্য ভারতের কাছ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়ার চুক্তিও করে ফেলেছে। এ কাজটি কোনোভাবেই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হয়নি।
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দরকার হবে তার খরচ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। সুতরাং এত টাকা বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ এ খাত থেকে কত টাকা মাশুল পাবে এটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অথচ এই পরিমাণ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করে বাংলাদেশ হয়তো আরও বেশি লাভবান হতে পারে। অথচ তা বিবেচনা করছে না সরকার। নেপাল বা ভুটানকে ভারত আদৌ তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে কিনা সে ব্যাপারেও যথেষ্ট সন্দেহ এখনও রয়ে গেছে

Leave a Reply

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Alertpay

You can replace this text by going to "Layout" and then "Page Elements" section. Edit " About "

সরাসরি চ্যাট করার জন্য পেজ এর নিচে যান

a

ইংরেজী বিজয় ফনেটিক অভ্র ফনেটিক ইউনিজয়

Widget by: Bangla Hacks

b

পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি 
2 June 2010

এখানে ক্লিক করুন ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করুন।

WELL-COME TO BD ADDA(বিনামূল্যে ওয়েব সাইড তৈরির জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ওয়েব ডেভোলাপার- মোঃ শফিকুর রহমান, মোবাইল নং-8801812465879)